ওজন কমাবো কী করে? করতে হবে এই ব্যায়াম গুলো
স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে অবশ্যই সবার উচিত শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার প্রতি নজর দেওয়া। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে ওজন কমানো। বাড়তি ওজন নানা সমস্যা ও রোগ বয়ে আনে। তাই ওজন কমিয়ে ফিট থাকা সবার জন্য অতি প্রয়োজনীয়। ওজন কমাতে চাইলে সঠিক খাবার বিন্যাস (Diet Chart) ও ব্যায়াম অবশ্যকরণীয় কাজ। সঠিক ডায়েট চার্ট ও পর্যাপ্ত ব্যায়ামই পারে আপনার ওজন কমিয়ে আপনাকে সুস্থ ও ফিট করে তুলতে।
আপনার প্রশ্ন যদি হয় ওজন কমাবো কী করে? তখন আপনাকে করতে হবে এই ব্যায়াম গুলো। সেরা কিছু ব্যায়াম থেকে বাছাই করে সহজ এবং ওজন কমানোর কার্যকর কিছু ব্যায়াম নিয়ে জেনে নিতে এই লিখাটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
তার আগে যদি ওজন কমানোর সহজ ও ঘরোয়া পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন।
শুরু করা যাক ওজন কমানোর সেরা ব্যায়াম গুলো সম্পর্কে-
ওজন কমানোর সেরা ব্যায়াম গুলো
Best exercises to lose weight.
১. হাঁটা ( Walking): সবচেয়ে সহজ ও উত্তম ব্যায়াম হচ্ছে হাঁটা। হাঁটতে কোনো যন্ত্রপাতি বা কোনো উপকরণ লাগে না। যেখানে-সেখানে হাঁটা যায়। ওজন কমাতে হলে চেষ্টা করতে হবে যত সম্ভব ক্যালরি ঝরানোর ( Burning Calories)। যত খাবেন বা খাওয়ার মাধ্যমে যত ক্যালরি জমা হবে৷ তার চেয়ে বেশি ক্যালরি খরচ করতে হবে বা ঝরাতে হবে। হাঁটার মতো সহজ ব্যায়ামের মাধ্যমে ক্যালরি ঝরানো যায় কোনো কষ্ট ছাড়াই। ৩০ মিনিট হাঁটার মাধ্যমে ১৬০-১৭০ ক্যালরি ঝরানো বা বার্ন (Burn) করা যায়। ওজন কমাতে যা খুবই প্রয়োজন। শুধু ওজন কমানো নয়, হাঁটার ফলে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি বা ফ্যাট (Fat) কমানো যায়।
একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, সপ্তাহে ৩ বার ৫০-৭০ মিনিট হাঁটার মাধ্যমে একজন মহিলা তার শরীরের অতিরিক্ত চর্বি বা ফ্যাট কমিয়ে আনতে পারে এবং কোমরের মাপও কমিয়ে আনতে সক্ষম।
চেষ্টা করতে হবে যত সম্ভব বেশি বেশি হাঁটার। হাঁটা একটি নিরাপদ ও সহজ ব্যায়াম যা ঘরেই করা যায়। চেষ্টা করুন সপ্তাহে কমপক্ষে ৩ বার করে ৩০ মিনিট হাঁটার। যেকোনো জায়গায় হাঁটতে পারেন ঘরে অথবা বাইরের কোনো নিরাপদ জায়গায়।
২. জগিং এবং দৌঁড়ানো ( Jogging and Running): হাঁটার মতোই সহজ ও কোনো যন্ত্রপাতি ছাড়া ব্যায়াম হচ্ছে জগিং করা এবং দৌঁড়ানো। জগিং ও দৌঁড়ানো একই। শুধু গতিতে পার্থক্য। জগিংয়ে হালকাভাবে দৌঁড়ানো হয় যা হাঁটার মতোই। আর দৌঁড়ানো হচ্ছে গতিময়।
একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, ১ ঘণ্টা (১০ মিনিট করে ৫-৬ বার) দৌঁড়ানোর মাধ্যমে ৫৬০- ৮৫০ ক্যালরি বার্ন করা যায়। যা ওজন ও ফ্যাট কমাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
ঘণ্টায় ৮ কিলোমিটার বেগে ৩০ মিনিট জগিংয়ের মাধ্যমে ৩০০ ক্যালরি পর্যন্ত ঝরানো যায়। এবং আপনি যদি ৯ কিলোমিটার বেগে ৩০ মিনিট দৌঁড়ান, তাহলে ৩৭০- ৩৮০ ক্যালরি বার্ন করতে সক্ষম হবেন।
প্রতিদিন হালকা গতিতে বা কম বেগে জগিং ও দৌঁড়ানোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন, তাতে আপনার ওজন কমতে এবং ফ্যাট কমাতে দারুণ কাজে লাগবে। এছাড়াও শরীরের পরিপাকতন্ত্র বা বিপাক কার্য সম্পাদনে ভূমিকা রাখে জগিং করা ও দৌঁড়ানো।
৩. সাঁতার কাটা (Swimming): আমাদের শরীরে রয়েছে কয়েকশো জয়েন্ট বা জোড়া। জয়েন্ট এর কার্যক্ষমতা বাড়াতে উত্তম ব্যায়াম সাঁতার কাটা। সাঁতার কাটার মাধ্যমে শরীরের জয়েন্টগুলো স্বাভাবিকভাবে কাজ করার উপযোগী হয়। ওজন কমানোর জন্য সেরা ব্যায়াম এর মধ্যে সাঁতার কাটা একটি। সাঁতারের মাধ্যমে ওজন কমিয়ে শরীরকে দৃঢ়, ফ্লেক্সিবল বা নমনীয় করে তোলা যায়।
সাঁতারের মাধ্যমে ২৯০- ৪০০ ক্যালরি পর্যন্ত বার্ন করা সম্ভব, যা ওজন কমাতে অধিক সহায়ক। তবে সাঁতারের ধরণের ভিন্নতা অনুযায়ী ক্যালরি বার্নিংও ভিন্ন হয়। যেমন- ৩০ মিনিট চিৎ সাঁতার (Backstroke) এর মাধ্যমে ২৯৮ ক্যালরি বার্ন করা যায়, বুক সাঁতার (Breaststroke) এর মাধ্যমে ৩৭২ ক্যালরি এবং প্রজাপতি সাঁতার (Butterfly Stroke) এর মাধ্যমে ৪০০ ক্যালরি পর্যন্ত বার্ন করা যায়।
শুধু ওজন কমানো নয়, সাঁতারের মাধ্যমে শরীরের ফ্যাট কমানো, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা, হার্ট সুস্থ রাখা, ডায়বেটিস থেকে মুক্ত থাকা যায়।
৪. সাইক্লিং (Cycling): সাইক্লিং হচ্ছে শরীরকে ফিট রাখার দারুণ একটি কার্যকরী ব্যায়াম। সাইক্লিং করতে হয় জিমে গিয়ে, অথবা নিজস্ব বাইসাইকেল থাকলে। ৩০ মিনিট বাইসাইকেল চালানোর মাধ্যমে ২৯০- ৩০০ ক্যালরি বার্ন করা যায়। আর যদি নিজস্ব বাইসাইকেল না থাকে, তাহলে জিমে গিয়ে সাইক্লিং করা যায়। জিমে ৩০ মিনিট সাইক্লিং এর মাধ্যমে ২৬০ ক্যালরি পর্যন্ত বার্ন করা যায়।
সুতরাং ওজন কমানোর জন্য সহায়ক একটি ব্যায়াম হচ্ছে সাইক্লিং করা। শুধু ওজন কমানোই না, সাইক্লিং করার ফলে শরীরে ইনসুলিন( Insulin) এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, হার্ট সুস্থ ও সবল রাখতে সাইক্লিং অত্যন্ত কার্যকর ব্যায়াম। ফিটনেস লেভেল বাড়াতে সাইক্লিং খুব কার্যকর।
৫. সিঁড়ি বেয়ে ওঠা-নামা ( Stairs): খালি হাতের ব্যায়াম বা Free-hand exercise এর একটি হলো সিঁড়ি বেয়ে ওঠা-নামা করা। এর ফলে পায়ের বেশি ও কোমরের জয়েন্ট পেশি গুলো কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত ওঠা-নামার মাধ্যমে অনেক ক্যালরি বার্ন হয়। মিনিটে ৭০- ৮০ কদম বা স্টেপ গতিতে ওঠা-নামা করলে ৪৫০- ৬৭০ ক্যালরি পর্যন্ত বার্ন করা সম্ভব হয়।
এছাড়া এই ব্যায়ামের মাধ্যমে পা ও কোমরের পেশির উন্নতি হয়, হার্টের সুস্থতা বজায় রাখা যায়, কোলেস্টেরলের মান নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সর্বোপরি শারীরিকভাবে ফিট থাকা যায়।
৬. দঁড়ি লাফ ( Jumping Rope): সারা শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ব্যায়ামের জন্য দঁড়ি লাফ উত্তম কার্যকর একটি ব্যায়াম। মিনিটে ১২০ বার লাফানোর মাধ্যমে ঘণ্টায় ৬৬০- ৮০০ ক্যালরি পর্যন্ত বার্ন করা যায়। যা ওজন কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
এছাড়াও শরীরের জয়েন্ট ও পেশির কার্যকারিতা বাড়াতে, হার্টের সুস্থতায়, হার্ট রেট বৃদ্ধিতে দঁড়ি লাফ অনেক কার্যকর।
৭. যোগব্যায়াম ( Yoga): শরীরের পেশিগুলো দৃঢ় ও নমনীয় করতে এবং হতাশা কাটাতে ইয়োগা বা যোগব্যায়ামের জুড়ি নেই। দিনদিন ইয়োগা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এটির মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি লাভ করা যায়। সাথে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট ও পেশির ব্যায়ামও করা যায় এর মাধ্যমে।
যোগব্যায়ামের মাধ্যমে ৩০ মিনিটে ১৫০ ক্যালরির মতো বার্ন হয়। যা ওজন কমাতে ভূমিকা পালন করে থাকে।
একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, সপ্তাহে ২ বার ৯০ মিনিটের ইয়োগা বা যোগব্যায়ামের সেশন করলে কোমরের মাপ অর্থাৎ কোমরের পরিধি কমে। যা শারীরিকভাবে আকর্ষণীয় হতে সহায়তা করে।
এগুলো সেরা কিছু ব্যায়াম নিয়ে বলা হয়েছে। তবে ওজন কমাতে হলে শুধু ব্যায়াম যথেষ্ট না। কারণ, ওজন কমানোর ৮০% নির্ভর করে ডায়েট চার্টের উপর, অর্থাৎ আপনি আপনার খাবার তালিকায় প্রতিদিন কী খাচ্ছেন না খাচ্ছেন তার উপর। আর বাকি ২০% নির্ভর করে ফিটনেস অর্থাৎ ব্যায়ামের উপর। সুতরাং, শুধু ব্যায়াম করলেই হবে না, সেই সাথে আপনার ডায়েট চার্টের কথাও খেয়াল রাখতে হবে।
আপনার বয়স, ওজন অনুযায়ী ডায়েট চার্ট কেমন হবে তা ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করে নিজে জানতে পারবেন অথবা কোনো পুষ্টিবিদ এর সাথে পরামর্শ করে সে অনুযায়ী চার্ট মেনে চলবেন। ওজন কমাতে এই খাবারগুলো পুষ্টিবিদগণ সাজেস্ট করে থাকে।
শেষকথা
উপরে যে ব্যায়াম গুলো নিয়ে কথা হলো এগুলো ওজন কমানোর জন্য সেরা কিছু ব্যায়াম এবং অনেক কার্যকরী। আরও কিছু ব্যায়াম নিয়ে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেগুলো করা কষ্টসাধ্য হয় এবং সবার জন্য নিরাপদ না-ও হতে পারে। কারণ, কিছু ব্যায়াম আছে যেগুলো করতে হলে যন্ত্রপাতি লাগে। উপরে যেগুলো নিয়ে বলা হয়েছে এগুলো করতে তেমন কিছু লাগে না, বাইরেও যেতে হয় না।
ওজন কমানোর জন্য আপনি প্রতিদিন সম্ভব না হয়, সপ্তাহে ২-৩ দিন করে হলেও ব্যায়াম করতে চেষ্টা করুন। দেখবেন আপনি সুফল পেতে সক্ষম হয়েছেন। শুধু কি ওজন কমানোই? শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতেও ব্যায়াম করা প্রয়োজন।