প্রতিদিন গোসল করলে কী হয়? গোসলের ভালো ও খারাপ দিক।
Bathing ways |
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে আমরা গোসল করি। শুধু আমরা মানবজাতিই না, অনেক প্রজাতির প্রাণীই গোসল করে থাকে। গোসল করা স্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই ভালো একটি কাজ। গোসল করলে শরীর ও মন শান্ত হয়। কিন্তু, অনেকেরই প্রশ্ন থাকে যে, নিয়মিত মানে প্রতিদিন গোসল করা ভালো নাকি খারাপ? আপনি কি প্রতিদিন গোসল করেন? প্রতিদিন গোসল করলে কী? ভালো ও খারাপ দিক ,গোসল করা ভালো নাকি খারাপ? এসব কিছুর জবাব পাবেন এই লিখনিতে।
কী কী থাকছে-
- প্রতিদিন গোসল করলে কী হয়?
- কী কী রোগ হতে পারে
- গোসল না করলে কী হয়
- কাদের নিয়মিত গোসল করা উচিত
- কী কী করণীয়
স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অনেকেই অনেক কিছু করে থাকে। স্বাস্থ্য ভালো রাখার মাধ্যম হিসেবে অনেকেই নিয়মিত গোসল করেন। আবার কেউ কেউ দিনে একাধিক বার এমনকি ২-৩ বারও গোসল করে থাকেন। কিন্তু এত গোসল করা কি উপকার করে নাকি অপকার করে?
প্রতিদিন গোসল করলে কী হয়?
গোসলের ভালো ও খারাপ দিক
আমাদের দেহের আয়না হচ্ছে ত্বক বা স্কিন ( Skin)। যাকে ইংরেজিতে "Mirror of body" বলা হয়। শরীরে কোনো কিছু হলে তার প্রভাব ত্বক দেখে বোঝা যায়। অর্থাৎ একজন মানুষ সুস্থ না অসুস্থ তা তার দেহের চামড়া (Skin) দেখে অনেকটা বোঝা যায়। মানুষের ত্বক ৩ প্রকারের হয়ে থাকে। শুষ্ক ত্বক (Dry skin), তৈলাক্ত ত্বক( Oily skin) ও মিশ্র ত্বক ( Mixed skin)।
স্বাভাবিক, সুস্থ ত্বকে প্রতিরক্ষামূলক তেলের আবরণ বা স্তর ( Protective layer) থাকে এবং সেখানে ত্বকের জন্য উপকারী অনেক ব্যাকটেরিয়া থাকে। সেই ব্যাকটেরিয়াগুলো ত্বককে শুষ্কতা ও অনেক জীবাণুর সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। আপনি যদি নিয়মিত গোসল করতে ক্ষারীয় সাবান ও অন্যান্য ক্ষারজাতীয় সামগ্রী ব্যবহার করেন, তাহলে সেই ক্ষারীয় বস্তুগুলো আপনার ত্বকের সেই উপকারী ব্যাকটেরিয়া গুলোকে ধ্বংস করে দেয়। যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হয়ে যায়। যার ফলে ত্বক শুষ্ক বা শুকনো হয়ে যায়।
ত্বকে থাকা তেলগ্রন্থি আমাদের ত্বককে উজ্জ্বল, মসৃণ ও আকর্ষণীয় রাখে। আমাদের ত্বকে যেসমস্ত উপকারী ও স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু বাস করে, সেগুলো আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ( Immune system) কে আরও উন্নত করতে সাহায্য করে। আপনার চামড়ায় যেসকল জীবাণু আছে, এই জীবাণুগুলো আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
আপনি নিয়মিত জীবাণু প্রতিরোধী( Antibacterial), ক্ষারীয় সাবান ও অন্যান্য রাসায়নিক দিয়ে শরীর পরিষ্কার করলে আপনার চামড়ায় থাকা সেই উপকারী ব্যাকটেরিয়া আর জীবাণু গুলো নষ্ট হয়ে যায়। উপকারী সেই জীবাণু গুলো মারা যায় ও তেলগ্রন্থি থেকে তেল নিঃসরণ কমে যায়, যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক।
তেলগ্রন্থির তেল নিঃসরণ কমে গেলে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী জীবাণু নষ্ট হয়ে গেলে ত্বকে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়। নিয়মিত গোসল করায় তেলগ্রন্থি থেকে নিঃসরণ হওয়া প্রাকৃতিক তেল বা ন্যাচারাল অয়েল ( Natural oil) কমে যেতে থাকে এবং তেলগ্রন্থির প্রতিরক্ষামূলক আবরণ ভেঙে পড়ে।
তাই, নিয়মিত গোসল না করে ১-২ দিন পরপর গোসল করতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া, নিয়মিত গোসলের ফলে পানি, সাবান, শ্যাম্পু এসবের অপচয় হয়। অপচয় করা নিশ্চয় ভালো কাজ না।
যে সমস্যা ও রোগগুলি হওয়ার পসিবিলিটি থাকে
- ত্বকের শুষ্কতা দেখা দেয়, যার ফলে চামড়া অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায় এবং চামড়া ফেটে যাওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
- ত্বকে চুলকানি, জ্বালাপোড়া করা।
- বিভিন্ন সংক্রমণ যেমন- দাঁদ, ফোঁড়া, ঘা দেখা দেয়।
- ত্বকের ন্যাচারাল তেলগ্রন্থির প্রতিরক্ষামূলক স্তর ভেঙে যাওয়া। এর জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ও বিভিন্ন চর্মরোগ দেখা দিতে পারে।
ত্বককে শুষ্কতা এর হাত থেকে বাঁচাতে উদ্যোগী হোন।
গোসল না করলে কী হয়?
নিয়মিত গোসল তখনই ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়ায় যখন আপনি ত্বকে বেশি বেশি রাসায়নিক ব্যবহার করবেন। বেশি গরম পানি দিয়ে গোসল করলে, বেশি বেশি সাবান, শ্যাম্পু ব্যবহার করা, পারফিউম লাগানো- এগুলো ত্বককে দূর্বল করে তুলে। এসব রাসায়নিক বেশিরভাগই ক্ষারীয় পদার্থ, যা তেলের সাথে বিক্রিয়া করে ত্বকের ক্ষতি করে।
কিন্তু যদি আপনি স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে ও রাসায়নিক ছাড়া গোসল করেন তাহলে তা আপনার জন্য ক্ষতিকারক হবে না। গরম পানি দিয়ে গোসল করলে ত্বক শুকনো হয়ে যায়। তাই গোসল করা উচিত কুসুম গরম ও স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে। রাসায়নিক বস্তু ব্যবহার না করে ঘরোয়া উপায়ে স্বাস্থ্য সম্মত, ভেষজ উপাদানে তৈরি অর্গানিক (Organic) সাবান ও কম ক্ষারীয় সাবান ব্যবহার করা উচিত।
আবার ঠিকমতো গোসল না করলেও বিভিন্ন সমস্যা দেখে দেয়।
- গোসল না করলে তেলগ্রন্থির স্তর বেড়ে যায় এবং বাড়তি স্তর সৃষ্টি করে যাতে ত্বকের স্বাভাবিকতা হারায়, যার ফলে কিছু চর্মরোগ হয়ে থাকে। যেমন- ব্রণ (Acne), ফুসকুড়ি (Pimple) হয়ে থাকে।
- শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হয়।
- মাথায় খুশকি বেড়ে যায়।
- ত্বকে ময়লার আস্তরণ জমে।
কাদের নিয়মিত গোসল করা উচিত ও করতে হয়
- বাইরে বেশি সময় ধরে সূর্যের তাপ, ময়লা,ধুলোর পরিবেশে থাকে যারা ।
- যারা স্যাঁতসেঁতে ও আদ্র আবহাওয়ায় বসবাস করেন।
- যারা নিয়মিত শরীরচর্চা ও বিভিন্ন শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করেন।
- যেসকল বাচ্চা ও ছেলেমেয়েরা ধুলা, ময়লা, কাদামাটি দিয়ে খেলাধুলা করে এবং নিজেদের শরীর নোংরা করে।
- যারা Psoriasis নামক রোগে আক্রান্ত, তাদের সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে গোসল করতে হয়।
এদেরকেই নিয়মিত গোসল করতে হয় এবং করা উচিত। তাছাড়া অন্যদের নিয়মিত গোসল করার প্রয়োজন নেই। আর যাদের বিভিন্ন চর্মরোগ ও হাঁপানি রোগের সমস্যা আছে, তাদের জন্য নিয়মিত গোসল করা মোটেই ঠিক না।
গোসল করতে করণীয়
গোসল অবশ্যই করবেন। কারণ, গোসল করলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা যায় এবং শরীর ও মন সুস্থ রাখা যায়। তবে নিয়মিত পানি, সাবান, শ্যাম্পু, পারফিউম অপচয় না করে বিরতি নিয়ে নিয়ে গোসল করবেন। সাবান, শ্যাম্পু কম ব্যবহার করবেন।
আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত ত্বক ( Oily skin) হয় এবং এলার্জি (Allergy) জনিত সমস্যা থাকে, তাহলে ১ দিন পর বা ২ দিন পরপর গোসল করতে পারেন। আর আপনার যদি শুষ্ক ত্বক (Dry skin) হয়, তাহলে সপ্তাহে ২-৩ বার গোসল করতে পারেন। শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে প্রতিদিন বা ১-২ দিন পরপর গোসল না করলেও কাপড় বা তোয়ালে ভিজিয়ে শরীর মুছে নিতে পারেন।
কোনো শক্ত স্পঞ্জ বা এরকম কোনো বস্তু দিয়ে শরীরে জোরে জোরে ঘষবেন না। নরম কাপড় দিয়ে আলতোভাবে ঘষে পরিষ্কার করবেন। কনুই, হাঁটু, গোড়ালি, বগল এসব জায়গা পরিষ্কার করলেই যথেষ্ট।
গোসলের পর আপনার ত্বকের উপযোগী ময়েশ্চারাইজার (Moisturizers), ক্রিম (Cream) ব্যবহার করুন।
উপসংহার
একেবারে গোসল না করার চাইতে ২/১ দিন বিরতি নিয়ে গোসল করা ভালো। প্রতিদিন গোসল করার প্রয়োজন নেই এবং একাধিক বারও গোসল করার প্রয়োজন নেই। সাবান, শ্যাম্পু, পারফিউম এসব রাসায়নিক ব্যবহারে সচেতন হতে হবে।
প্রতিদিন গোসলের প্রয়োজনীয়তা, ভালো ও খারাপ দিক বিষয়ে আপনাদেরকে সঠিকভাবে বোঝাতে চেষ্টা করা হয়েছে। আপনার চামড়ার ধরণ মেনে গোসল করুন।