কীভাবে ওজন বাড়াবেন? স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়ানোর খাবার তালিকা

ওজন বাড়ানোর খাবার তালিকা


ওজন কম হোক বা বেশি হোক- সবার মূল কাজ হচ্ছে ফিট থাকা ও সুস্থ, সবল দেহের অধিকারী হওয়া। ওজন কমানো এবং ওজন বাড়ানো নিয়ে আমাদের ওয়েবসাইটে একাধিক বিস্তারিত আর্টিকেল রয়েছে, যা আপনি দেখে নিতে পারে। কীভাবে ওজন বাড়াবেন? স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়ানোর খাবার তালিকা দেখে নিন।


জাঙ্কফুড, ফাস্টফুড খেয়ে তাড়াতাড়ি ওজন বাড়িয়ে মোটা হতে চাচ্ছেন? এটা কি ভেবে দেখেছেন যে, তা আপনার শরীরের জন্য ভালো হবে নাকি খারাপ হবে? বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে আপনার শরীরের ভেতরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর ক্ষতিসাধন হতে পারে। 

তাই, ওজন বাড়াতে হবে স্বাস্থ্যকর উপায়ে। মোট হতে হবে স্বাস্থ্যকর উপায়ে। 

কীভাবে ওজন বাড়াবেন?

ওজন বাড়ানোর আসল কাজ হচ্ছে আপনাকে প্রতিদিন বেশি বেশি ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে অর্থাৎ খেতে হবে। প্রতিদিন বিভিন্ন কাজ করার মাধ্যমে আপনার যে পরিমাণ ক্যালরি বার্ন (Burn) হয় বা খরচ হয়, তার চেয়ে বেশি পরিমাণ ক্যালরি আপনাকে খেতে হবে। ৭০০-১০০০ ক্যালরি বেশি গ্রহণ করতে হবে। আপনার বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন বাড়ানোর ডায়েট চার্ট ( Diet chart) তৈরি করে সেভাবে খাবার অভ্যাস করতে হবে। এই আর্টিকেলে বিভিন্ন পুষ্টিবিদ ও ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী সুবিধাজনক একটি ডায়েট চার্ট বা খাবার তালিকা দিবো যা ধৈর্য্য সহকারে মেনে চললে অবশ্যই সুফল পাবেন। 

বেশি বেশি ক্যালরি গ্রহণ করতে চাইলে বেশিক্ষণ খিদে নিয়ে থাকা যাবে না, ঘনঘন খেতে হবে। ২-৩ ঘণ্টা পরপর খেতে চেষ্টা করবেন। হোক হালকা খাবার স্ন্যাকস অথবা ভারী কোনো খাবার।

শুরু করা যাক -

স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়ানোর খাবার তালিকা

সকালে যা খাবেন ( Morning's Foods):

সকালের নাস্তা অবশ্যই ৭ টা থেকে ৯ টার মধ্যে খেতে হবে। যা যা খাবেন-

২-৩ টি ডিম, ১ গ্লাস দুধ, ১ কাপ দই, ২ টি করে টোস্ট, পরোটা, রুটি, যব বা গমের তৈরি ১ বাটি খাবার যেটাকে Porridge ও ওটস বলে, ৩-৪ টি কাজুবাদাম (Almonds), ২ টা আখরোট (Walnut), চাটনি। 

সকালে এই খাবারগুলো খাবেন। সবগুলো যদি সম্ভব না হয়,  এগুলোর মধ্যে থেকে আপনার সুবিধা অনুযায়ী ৪-৫ পদের খাবার বেছে নিবেন। 

সকাল ও দুপুরের মধ্যবর্তী সময় যা খাবেন (Snacks for Mid-morning):

যেহেতু দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকা যাবে না, সেহেতু সকালের নাস্তার ২-৩ ঘণ্টা পর  ১১ টা থেকে ১২ টার মধ্যে হালকা খাবার বা স্ন্যাকস (Snacks) খাবেন। যা যা খাবেন-

১ /২ টা ফল (যেমন- আপেল, কলা, স্ট্রবেরি, আম ইত্যাদি ফল), 

বিভিন্ন ফলের জুস ( যেমন- তরমুজ, আপেল, কলা, আম, নারিকেলের পানি)

দুধের তৈরি মিল্কশেক বা লাচ্ছি( Milkshake), ঘোল ( মাখন ও দুধের তৈরি) 

১/২ টা কাজুবাদাম, আখরোট। 


দুপুরের খাবার ( Lunch):

দুপুরে ভারী খাবার খাবেন। দুপুর ২ টা থেকে ৩ টার মধ্যে লাঞ্চ খেয়ে নিবেন। যা যা খাবেন-

১ বাটি/ প্লেট ভাত, ২-৩ টি রুটি, মাছের তরকারি, মুরগির মাংস, ডিম, ডাল ( মুগডাল, মসুরের ডাল), বিভিন্ন শাক-সবজি, দই, সালাদ। 

গরু,ছাগল, মহিষের মাংস অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত হওয়ায় কোলেস্টেরল ( Cholesterol) এর মাত্রা বেশি থাকে যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না। তবে চর্বিমুক্ত মাংস খেতে পারেন, যেগুলোতে চর্বি কম থাকে।

আর মাছ খেতে পারেন বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছগুলো। কারণ, সামুদ্রিক মাছগুলোতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান ও ক্যালরি থাকে।


সন্ধ্যার সময়ের খাবার ( Evening snacks):

সন্ধ্যায় খেতে পারেন হালকা খাবার বা স্ন্যাকস। খাবার খেতে হবে ৫ টা থেকে ৬ টার মধ্যে। যা যা খাবেন-

২-৩ টি টোস্ট, ফলমূল, ফলের জুস, বাদাম ( বিশেষ করে কাজুবাদাম), টমেটোর সস দিয়ে পাউরুটি, শাক-সবজি, দই, পনির।


রাতের খাবার (Dinner):

দুপুরের ভারী খাবারে যা যা খান, সেগুলোই খেতে পারেন রাতের জন্য। খাবার খেয়ে নিবেন রাত ৮ টা- ৯ টার মধ্যে। 

দুপুরের খাবারে ভাত, মাছ, মাংস, ডাল, শাক-সবজি, রুটি যা যা খেয়েছেন সেগুলো রাতেও খাবেন।

ইচ্ছে হলে কিছু খাবার বাড়তি খেতে পারেন যেমন, মাশরুম। 

প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ দৈনিক ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। এবং ৮-৯ ঘণ্টা পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।  

ঘুমোতে যাওয়ার আগে ১ গ্লাস দুধ পান করুন, ২ টি কাজুবাদাম খান।


আর যা যা করবেন

১. কিছুক্ষণ পরপরই খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন। হালকা খাবার হোক আর ভারী খাবারই হোক। কারণ, আপনার দরকার বেশি বেশি ক্যালরি। 

২. দুধ পান করুন বেশি বেশি। 

৩. খাবার খাওয়ার জন্য বড় থালা বা প্লেট ব্যবহার করুন, এতে খাওয়ার আগ্রহ বাড়বে।

৪. ক্রিম (Cream) যোগ করতে পারেন কিছু তরল খাবারের সাথে। যেমন, কফিতে।

৫. আগে আমিষ ( Protein)  খাবেন আর খাওয়ার শেষে শাক-সবজি খাবেন।


যা যা করবেন না-

খাবার খাওয়ার আগে পানি খাবেন না। কারণ, খাওয়ার আগে পানি খেলে পরে খাবার খাওয়ার জন্য খিদে কমে যায়। 

অ্যালকোহল, তামাকজাত পণ্য ব্যবহার করবেন না। এসব থেকে বিরত থাকবেন।


এই হলো বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন পুষ্টিবিদ ও ডাক্তারদের মতে একটি উপযুক্ত ডায়েট চার্ট, যা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে স্বাস্থ্যকর উপায়ে। ওয়েইট লসের জন্য ডায়েট নিয়ে এটি পড়ুন।

আপনি এর বাইরেও আরও কিছু খাবার যোগ করতে পারেন যেগুলোতে বেশি বেশি ক্যালরি আছে। উপরে বলা সব খাবার খাওয়া সম্ভব না হলে এগুলোর মধ্যে থেকে আপনার সুবিধা অনুযায়ী বেছে নিয়ে খাবেন।

দুই দিন ডায়েট চার্ট মেনে চলার পর আবার অনিয়ম হয়ে যাবেন, ডায়েট চার্ট ও ব্যায়াম বাদ দিয়ে দিবেন- এমন করলে কখনোই ফল পাবেন না। ধৈর্য্য আর মনস্থির রেখে চেষ্টা করে যেতে হবে। 

মনে রাখবেন, যা-ই খান না কেন তাতে যেন ক্যালরির হিসাব টা মাথায় থাকে। কমপক্ষে ৭০০-১০০০ ক্যালরি বেশি খেতে হবে প্রতিদিন। 

বাইরের ভাজাপোড়া, খোলামেলা খাবার খেয়ে অস্বাস্থ্যকরভাবে থাকা মোটেই ঠিক না। স্বাস্থ্যকর অনেক খাবার আর উপায় আছে সেগুলো অবলম্বন করুন।

আর হ্যা, শুধু খাবার খেয়ে গেলেই ওজন বাড়ানো যাবে না। আপনি যা খেয়েছেন সেগুলোর ক্যালরি, শক্তি তো আপনার শরীরে পাঠাতে হবে। না-কি? 

সেজন্য নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। 

স্বাস্থ্যকর খাবার ও পর্যাপ্ত ব্যায়াম আপনার ওজন বাড়িয়ে আপনাকে আপনার মনমতো শারীরিক অবস্থায় নিতে সক্ষম হবে। 


শেষ করছি

কীভাবে ওজন বাড়াবেন? স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়ানোর খাবার তালিকা সম্পর্কে যা বলো সে অনুযায়ী চলতে থাকুন। ৩ সপ্তাহ, ১ মাস অথবা ২ মাস ধৈর্য্য ধরে এবং মনকে ওজন বাড়ানোর জন্য স্থির করে চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকুন, অবশ্যই ধৈর্য্য আর চেষ্টার ফল পাবেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url