কীভাবে সহজেই স্তন বা ব্রেস্ট সুরক্ষিত রাখবেন?
প্রতিটি নারীর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে তার স্তন বা ব্রেস্ট (Breasts)। তাই এটা সুরক্ষিত রাখা প্রতিটি নারীরই খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কর্তব্য। স্তনজনিত মারাত্মক একটি রোগ হচ্ছে স্তন ক্যান্সার বা ব্রেস্ট ক্যান্সার। ন্যাচারাল এবং সহজ কিছু উপায় অবলম্বন করেই ব্রেস্ট এর সুরক্ষা করা যায়। কীভাবে সহজে স্তন বা ব্রেস্টের সুরক্ষিত রাখবেন, এই আর্টিকেল শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন উপায় পেয়ে যাবেন।
এই আর্টিকেলে নারীদের স্তন বা ব্রেস্ট সুস্থ ও সুরক্ষিত রাখার কিছু ন্যাচারাল এবং সহজ উপায় সম্পর্কে আলোচনা করবো, যা মেনে চললে নিজে এবং নিজের স্তনের সুস্থতা আনয়ন করা সম্ভব।
আপনারা জানেন হয়তো যে, বিশ্বে নারীদের মৃত্যুর জন্য যত কারণ রয়েছে সেগুলোর মধ্যে ব্রেস্ট ক্যান্সার ( Breast Cancer) হচ্ছে দ্বিতীয় মারাত্মক কারণ। নারীদের মারাত্মক রোগগুলির তালিকা দেখুন।
নিজে সুস্থ থাকতে এবং নিজের স্তন সুরক্ষিত রাখতে প্রতিটি নারীর উচিত নিজের স্তনের প্রতি যথেষ্ট যত্নশীল হওয়া। সচেতনতার সাথে যত্ন নিলে স্তন ক্যান্সারের ( Breast Cancer) মতো মারাত্মক রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়। কারণ,বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্তন ক্যান্সার থেকে মুক্ত থাকতে নিয়ন্ত্রণ এর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নারীরা নিজে থেকেই নিতে পারে।
দৈনন্দিন জীবনযাপনের কিছু রুটিন বা অভ্যাস যেমন স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে, তেমনি কিছু অভ্যাস তৈরি করার মাধ্যমে নারীদেহের গুরুত্বপূর্ণ অংশ স্তনের সুরক্ষা করা যায়।
সহজেই স্তন বা ব্রেস্ট সুরক্ষিত রাখতে
স্তনের সুস্থতা ও সুরক্ষার জন্য ন্যাচারাল এবং সহজ কিছু কাজ বা বিধিনিষেধ হচ্ছে -
১. স্বাস্থ্যকর ওজনঃ বাড়তি ওজন প্রতিটি মানুষের জন্য ক্ষতিকারক। তেমনি স্তনের সুস্থতার জন্য নারী অথবা মেয়েদেরকে নিজের ওজনের দিকে মনোযোগী হতে হবে। নিজের জন্য সঠিক ও স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে কাজ করতে হবে যাতে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, মেনোপজ হওয়া নারীদের যাতে বাড়তি ওজন থাকে, তাদের মধ্যে স্তন বা ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ৩০%-৬০% বেশি। তাছাড়া বাড়তি ওজনের জন্য মানুষের মৃত্যু ঝুঁকিও ৫০% এর বেশি।
সুতরাং, সুস্থ থাকতে চাইলে অবশ্যই নিজের শারীরিক ওজনের দিকে সচেতন হতে হবে।
২. ফলমূল, শাকসবজিঃ এটা এতদিনে প্রমাণিত হয়েছে যে, উদ্ভিদ জাতীয় খাবার যেমন, ফলমূল ও শাকসবজি প্রাণিদেহের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান। মানুষের সুস্থতা বজায় রাখতে ফলমূল, শাকসবজি জাতীয় খাবারগুলো খুব প্রয়োজনীয়। প্রাণিজ আমিষ বা প্রাণীজ খাদ্য উপাদান গুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এমনকি প্রাণীজ উপাদানের খাবারগুলো মানুষের ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে। তাই, শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকতে এবং স্তনের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অবশ্যই খাদ্য তালিকায় উদ্ভিদ জাতীয় খাবার যেমন, ফলমূল ও শাকসবজি রাখতে হবে।
৩. শারীরিক পরিশ্রমঃ শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে শারীরিক পরিশ্রমের বিকল্প নেই। শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি ১০%-২০% পর্যন্ত কমে যায়। অর্থাৎ, যেসকল নারীরা নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করেন, তাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি ১০%-২০% কম।
আমেরিকার ক্যান্সার সোসাইটির এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, সপ্তাহে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো যায়। সেই শারীরিক পরিশ্রম হতে পারে সহজ কিছু ব্যায়াম। যেমন, হাঁটাহাটি।
সময় কম অথবা বেশির দিকে নজর না রেখে, নজর রাখতে হবে যত সম্ভব পরিশ্রম করা যায়। হাঁটা একটি সহজ ব্যায়াম, হালকা জগিং করা, সিঁড়ি বেয়ে ওঠা-নামা করার মতো সহজ ও কম সময়ের ব্যায়াম গুলো হতে পারে উৎকৃষ্ট এবং অনেক উপকারী। তাই চেষ্টা করুন, প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ মিনিট করে হলেও শারীরিক পরিশ্রম করার।
৪. অ্যালকোহল পরিত্যাগ করাঃ অ্যালকোহল বা অ্যালকোহলজাত যেসকল ড্রিংকস্ বা পানীয় রয়েছে তা সবগুলোই মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অ্যালকোহলের ক্ষতির কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ নেই। যেকোনো পরিমাণের অ্যালকোহল শরীরের ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে। নিয়মিত অ্যালকোহল গ্রহণের ফলে নারীদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি ৭% পর্যন্ত বেড়ে যায়। তাই, সকলকে সচেতন হতে হবে। সবচেয়ে ভালো হবে অ্যালকোহল জাতীয় কোনো খাদ্য না খাওয়া।
৫. ধুমপান ত্যাগ করাঃ অ্যালকোহল এর মতো ধুমপান ও তামাকজাত পণ্য সেবন করাও মানুষের জন্য ক্ষতিকারক। বিড়ি, সিগারেট, গুল, জর্দা ইত্যাদি তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার ও ধুমপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৬. সন্তানকে স্তনপান করানোঃ যেসকল মেয়েদের বিয়ে হয়েছে এবং সন্তান জন্ম দিয়েছে, সেসকল নারীদের জন্য উপকারী একটি কাজ হলো সন্তানকে নিজের স্তন থেকে দুধ পান করানো। যাকে ইংরেজিতে ব্রেস্ট ফিডিং( Breastfeeding) বলে। কারণ, গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, যেসকল নারীরা ৬ মাস বা এরও বেশি সময় ধরে সন্তানকে নিজের স্তন থেকে দুধ খাওয়ায় সেসকল নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক অনেক কমে যায়। এমনকি ঝুঁকি থাকে না বললেই চলে। তাই সকল সন্তান জন্ম দেওয়া নারীদেরকে মাতৃত্বের প্রতি মনোযোগী হওয়া খুব প্রয়োজন।
৭. প্রতিরোধ করাই সবচেয়ে ভালো সুরক্ষাঃ স্তন বা ব্রেস্ট ভালো রাখতে ও এর সুরক্ষার জন্য সব মেয়েদের বা নারীদের উচিত একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর নির্দিষ্ট সময় পরপর স্তন চেক-আপ (Breast Check-up) করা। নির্দিষ্ট সময় পরপর চেক-আপের মাধ্যমে নিজে সচেতন থাকা যায় এবং কোনো সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে প্রতিরোধ করা যায়।
যেসব নারীর বয়স ৪০-৫০ বছরের উপরে এবং যাদের মেনোপজ হয়ে গেছে, তাদের উচিত দুই বছরের মধ্যে অন্তত একবার চেক-আপ করানো। যেটাকে ম্যামোগ্রাম (Mammogram) বলা হয়।
আর কমবয়সী মেয়ে অর্থাৎ তরুণী, যুবতীদের উচিত তাদের প্রতিমাসে পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে ও পিরিয়ড শেষ হওয়ার পরবর্তী সময়ে নিজের স্তন ভালোভাবে চেক করা। ব্রেস্ট এরিয়ায় কোনো পরিবর্তন, কোনো গোটা (Lump) হয়েছে কি-না, চামড়ার রঙ পরিবর্তন হয়েছে কি-না তা নিজে নিজে ভালোভাবে চেক করা। নিজে বুঝতে না পারলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
এভাবেই স্তন সুরক্ষা করার জন্য প্রতিরোধী ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
সর্বশেষ কথা হচ্ছে-
সুস্থ থাকাটা সবাই চায়। কিন্তু সুস্থ থাকতে তো কিছু কাজ করতে হবে। বিনা উপায়ে তো কোনো কিছু সম্ভব না। সুস্থ থাকতে হলে সেদিকে মনোযোগী হতে হয়। স্তন বা ব্রেস্ট ( Breast) নারীদের স্পর্শকাতর, বিশেষ একটি অঙ্গ। এই বিশেষ অঙ্গটির সুস্থতা তাই অত্যাবশ্যক। উপরে আলোচনা করা বিষয় আর উপায়গুলো হচ্ছে ন্যাচারাল এবং সহজ কিছু উপায়, যেগুলো মেনে চললে এবং সে অনুযায়ী কাজ করলে নিজের সুস্থতা ,স্তন বা ব্রেস্ট সুরক্ষিত রাখা সম্ভব।