প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের যত্ন নেওয়া যায় কীভাবে?
মানবদেহের বহিঃ আবরণ হচ্ছে ত্বক। দেহের ভিতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলোকে সুষ্ঠুভাবে নিরাপদে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ত্বক বা স্কিন। তাই ত্বক(Skin) এর যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকের অবস্থা দেহের বিভিন্ন সুস্থতা, অসুস্থতা নির্দেশ করে। এই আর্টিকেলে কীভাবে শীতকালে ও অন্যান্য সময়ে এককথায় সকল ঋতুতে প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের যত্ন নেওয়া যায়- এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
ত্বক একেক জনের একেক রকম হয়ে থাকে। ত্বক সাধারণ ৩ ধরণের -
- তৈলাক্ত ত্বক (Oily Skin) ,
- শুষ্ক বা শুকনো ত্বক( Dry Skin)
- মিশ্র বা মিক্সড ত্বক(Mixed Skin)।
মিশ্র(Mixed) ত্বক হচ্ছে তৈলাক্ত ও শুষ্ক ত্বকের মিলিত রুপ। আবহাওয়ার পরিবর্তন হওয়া ত্বকের উপর প্রভাব ফেলে, যার জন্য ত্বকও পরিবর্তন হয়। বিশেষ করে শীতকালে ত্বকের উপর একপ্রকার দূর্যোগ বয়ে যায় বলা চলে।
সুস্থ ত্বকের জন্য অবশ্যই পর্যাপ্ত যত্ন নিতে হবে ত্বকের। যত্ন নেওয়া যায় প্রাকৃতিক বা ঘরোয়া উপায়ে এবং বিভিন্ন রাসায়নিক(Chemical) সামগ্রী ও স্কিন কেয়ার পণ্য ব্যবহারের মাধ্যমে। স্কিন কেয়ার পণ্যগুলো বেশিরভাগই হয় কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি। কেমিক্যাল ব্যবহার করলে ত্বকের জন্য ক্ষতিকর ও সমস্যার কারণ হয়ে যায় অনেক সময়। তাই প্রাকৃতিক বা ঘরোয়া উপায়ে ত্বকের যত্ন নেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ ও উপযোগী।
ত্বকের যত্নে সেরকম কিছু প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের যত্ন নিতে
হাইড্রেটেড বা পানি যোজিত থাকা( Stay Hydrated): এর মানে হচ্ছে শরীর যাতে শুষ্ক বা শুকনো হয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখা। এর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। পানিই শরীরের শুষ্কতা প্রতিরোধে কাজ করে। শরীরকে সুস্থ রাখতে পানি অতি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। ঠিক তেমনি শরীরকে পানিশূন্যতা ও শুষ্ক ত্বক থেকে মুক্ত থাকতে হলে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি (কমপক্ষে দৈনিক ৭-৮ গ্লাস) পান করতে হবে।
ময়েশ্চারাইজিং(Moisturising): শীতের সময় শরীরের তেল গ্রন্থি থেকে তেল নিঃসরণ কমে যায়, যার জন্য শরীর শুষ্ক হয়ে যায়। এই শুষ্কতা দূরীকরণের জন্য তেল দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা যায়। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারে শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় তেল গ্রন্থি থেকে তেল নিঃসৃত না হলেও, ত্বককে সুস্থ ও শুষ্কতা মুক্ত রাখা যায়। তেলযুক্ত ময়েশ্চারাইজারগুলো ত্বককে ময়েশ্চারাইজিং রাখতে কার্যকর। বাজারে বিভিন্ন রকম ময়েশ্চারাইজার পাওয়া যায় তরল, ক্রিম ধরণের। ত্বকের জন্য সুবিধা অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বক শুষ্কতা প্রতিরোধী হবে।
শাকসবজি খাওয়া(Eat Vegetables): মানবদেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান হচ্ছে শাকসবজি। বিভিন্ন রঙের ও বিভিন্ন ধরণের শাক ও সবজি পাওয়া যায়, যা শরীরের জন্য দরকারী। শসা একটি সবজি যা পানিতে ভরপুর একটি খাদ্য উপাদান। শরীরের পানির অভাব পূরণে শসা কার্যকরী উপাদান। মিষ্টি আলু, গাজর, লাল মরিচ, কুমড়ার মতো খাবারগুলো ত্বককে শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও শরীরের ভিটামিন-এ, ভিটামিন-ই ও আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতেও বিভিন্ন শাকসবজি খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড(Omega-3 Fatty Acids): শরীর সুস্থ রাখার অতি প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান হলো ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ ও অন্যান্য মাছ থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানটি পাওয়া যায়। শরীরে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এর অভাব রয়েছে তা বোঝা যায় হাতের নরম ও মসৃণ অবস্থা দেখে। যদি হাত যথেষ্ট মসৃণ ও নরম না হয়, তাহলে বুঝতে হবে শরীরে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এর অভাব। তাই দরকারী এই খাবারের পুষ্টি উপাদানটি অবশ্যই খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। এতে ত্বকের সুস্থতা যেমন রক্ষা করা যাবে, তেমনি দেহের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোও পাওয়া যাবে।
কেমিক্যালযুক্ত সাবান পরিহার করা(Avoid Chemical Soaps): আমাদের দেহের ত্বক এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা শরীরের অন্যান্য অংশ ও রক্ত চলাচলের সাথেও জড়িত। আপনি আপনার স্কিনে বা চামড়ায় যা ব্যবহার করবেন, তার প্রভাব পড়বে আপনার অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও রক্তের চলাচলের উপর। এজন্য ত্বককে শরীরের আয়না(Mirror of body) বলা যায়। বাজারে পাওয়া বেশিরভাগ সাবান অ্যালকোহলের উপাদান। মানে সেই সাবানগুলো অ্যালকোহল ও অন্যান্য কিছু কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী সাবান, অ্যালকোহল ও সুগন্ধিযুক্ত এই সাবান গুলো মানুষের শরীরের স্বাভাবিক মসৃণতা ও তৈলাক্ত ভাব নষ্ট করে দেয়। যার ফলে ত্বকে দাগ, শুষ্কতা ও বিভিন্ন ত্বকের রোগ দেখা দেয়। তাই এই ধরণের সাবান ব্যবহার না করে, ভালো মানের প্রাকৃতিক ও অর্গানিক সাবান ব্যবহার করা উচিত।
নারিকেল তেল(Coconut Oil): ত্বকের জন্য উপকারী একটি উপাদান হচ্ছে কোকোনাট ওয়েল বা নারিকেল তেল। এটি শরীরের অনেক জৈবিক সমস্যার সাথে কাজ করে, দেহকে সবল রাখতে সাহায্য করে। নারিকেল তেলে রয়েছে উচ্চমাত্রার পি- কিউমেরিক( P-coumeric) অ্যাসিড ও ফেরুলিক( Ferulic) অ্যাসিড, এন্টিঅক্সিডেন্ট নামক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা ত্বককে সুস্থ ও সতেজ রাখতে ভূমিকা রাখে।
ফেইস প্যাক(Face Pack): শীতে স্বাভাবিকভাবেই প্রায় সবার ত্বক বা স্কিন শুষ্কতার শিকার হয়। মুখের ত্বকে শুষ্কতা মুক্ত থাকার জন্য কিছু ফেইস প্যাক মুখে লাগানো যায়। ফেইস প্যাক হতে পারে কলা, মধু, ডিম দিয়ে তৈরি। এই উপাদান গুলো দিয়ে তৈরি ফেইস প্যাক মুখের স্কিন শুষ্কতা মুক্ত রাখতে উপকারী। ফেইস প্যাক নিজে নিজে ঘরে তৈরি করা যায়। অথবা নিজে তৈরি করতে সম্ভব না হলে বাজারে ভালো মানের দেখে ফেইস প্যাক কিনে এনে ব্যবহার করা যায়।
ঘরের আদ্রতা বজায় রাখা(Maintain room's humidity): শীতকালে প্রকৃতি আদ্রতা হারায়। যার প্রভাব পড়ে প্রকৃতির উপাদানগুলোর মধ্যে। যেমন, মানুষের ত্বক বা চামড়ার শুষ্কতা। প্রকৃতিতে আদ্রতা বিরাজ করলে মানুষের শরীরেও এর প্রভাব দেখা যায়, যার ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। ঘরের আশেপাশে গাছপালা থাকলে সেখানে আদ্রতা বজায় থাকে প্রাকৃতিক ভাবেই। তবে ঘরগুলো যদি গাছপালা থেকে দূরে ও কোনো শুকনো জায়গায় হয়, তাহলে ঘরের আদ্রতা রক্ষা করতে হবে। ঘরের আদ্রতা মানুষের ত্বকের উপর প্রভাব ফেলে। তাই ঘরের আদ্র অবস্থা বজায় রাখতে ঘরের পরিবেশ ঠাণ্ডা রাখার জন্য প্রয়োজনীয় কাজ করতে হবে।
ত্বক বা চামড়া(Skin) প্রাণিদেহের অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ত্বক সুস্থ না থাকলে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে দেহের ভিতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে। ত্বক যাতে সুস্থ থাকে, সুস্থ রাখা যায় সেদিকে মনোযোগী হতে হবে। আধুনিকতার যুগে বিভিন্ন দূষণের কারণে ত্বকের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। তাই, ত্বক সুস্থ রাখতে দূষণ থেকে দূরে থাকতে হবে, ঘরের আদ্রতা বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে, নিজেকে পুষ্টি যোগানো খাবার খেতে হবে। সবার উচিত নিজ নিজ দেহের প্রতি যত্নশীল হওয়া।