ওজন কমানোর গুরুত্বপূর্ণ টিপস্। নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য।
শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে শরীরের ওজন কমানো (Lose Weight)। ওজন কম থাকলে যেমন শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা যায়, তেমনি মানসিকভাবেও সুস্থ ও প্রফুল্ল থাকা যায়। বাড়তি ওজনের জন্য শারীরিক অনেক সমস্যা ও রোগ হয়ে থাকে। শারীরিক ও মানসিকভাবে ফিট থাকতে অবশ্যই ওজন কমানোর প্রতি মনোযোগী হতে হবে। ওজন কমানো নারী-পুরুষ সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং সুস্থ থাকতে সবাইকে ওজন কমানোর প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত। এই আর্টিকেলে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য ওজন কমানোর গুরুত্বপূর্ণ টিপস্ ও পদক্ষেপ নিয়ে বলা হয়েছে।
Important tips to lose weight.
বাড়তি ওজনের জন্য শরীরে জমা ফ্যাট ( Fat) বা চর্বির কারণে সৃষ্টি হওয়া মেদ শারীরিক গঠন পরিবর্তন করে দেয়, যা অনেককে সৌন্দর্য নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগায়। নির্দিষ্ট বয়সের পর ওজন কমানো অনেক কঠিন কাজ হয়ে যায়। তাই যত সম্ভব তাড়াতাড়ি ওজন কমানোর পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে সুস্থ, সবলভাবে থাকা যায়।
সহজ ও ঘরোয়া উপায়ের বাইরে যদি শারীরিকভাবে পরিশ্রমের মাধ্যমে ওজন কমাতে চান, তাহলে এই লিংকে ঢুকে দেখে নিতে পারেন ওজন কমানোর সেরা ব্যায়াম গুলো- ওজন কমানোর সেরা ব্যায়াম গুলো ।
ওজন কমানোর গুরুত্বপূর্ণ টিপস্
ওজন কমানোর জন্য কিছু সহজ উপায় ও পদক্ষেপ রয়েছে। এ নিয়ে এই লিখাতে বলা হয়েছে। চলুন সেই পদক্ষেপগুলো কী কী তা দেখে নেওয়া যাক-
১. মনকে স্থির রাখাঃ মনকে স্থির করা হচ্ছে বড় একটা চ্যালেঞ্জ। দেখা গেল পদক্ষেপ নেওয়ার পর প্রথম কয়েকদিন ওজন কমানোর জন্য ভালোভাবেই কাজ করে যাচ্ছেন, আবার কিছুদিন যেতে না যেতেই হঠাৎ করে সেই কাজ চালিয়ে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেললেন। যা আপনাকে ওজন কমানোর পথে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই ওজন কমানোর প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে নিজের মনকে স্থির রাখা। "আমি ওজন কমানোর জন্য চেষ্টা ও কাজ করে যাবো যতদিন পর্যন্ত না সফল হতে পারি"- এই ইচ্ছার উপর মনকে পরিপূর্ণভাবে স্থির রেখে কাজ করে যেতে হবে। তবেই ওজন কমানোর পথে অনেক এগিয়ে যাবেন।
২. কার্বোহাইড্রেটঃ শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার বড় কারণ কার্বোহাইড্রেটযুক্ত (Carbohydrate) খাবার। অতিমাত্রায় ক্যালরি রয়েছে এমন কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। ভাত, রুটি- এরকম খাবারগুলো অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেটযুক্ত। তাই এই খাবারগুলো অতিরিক্ত না খেয়ে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ খেতে হবে। এর জন্য বিভিন্ন ডায়েট চার্ট (Diet Chart) অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করতে হবে। বয়স ও ওজনভেদে ডায়েট চার্ট অনুসরণ করে চলতে হয়। তাই আপনার বয়স, ওজন, উচ্চতা অনুযায়ী কেমন ডায়েট চার্ট অনুসরণ করতে হবে তা নিজেই ইন্টারনেটে খোঁজে নিতে পারেন অথবা কোনো পুষ্টিবিদ ও ডাক্তারের কাছে যেতে পারেন। উপযোগী খাবার দেখুন এখানে।
৩. প্রোটিনঃ দেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান হচ্ছে প্রোটিন বা আমিষ। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম এসমস্ত খাবারগুলো প্রোটিনের মূল উৎস। ওজন কমানোর জন্য একটি কার্যকরী উপায় প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া। প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় প্রোটিন রাখতে হবে। তবে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন খাওয়া উচিত না। ৬০% এর বেশি প্রোটিন আছে এমন খাবার যত কম খাওয়া যায়, তত ভালো।
৪. নিয়মিত ও সময়মতো খাওয়াঃ প্রতিদিন অবশ্যই সকালের নাস্তা করতে হবে। ওজন বেড়ে যাওয়ার আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে খিদে বেশি থাকা। দীর্ঘক্ষণ যদি আপনি না খেয়ে থাকেন, তাহলে পরবর্তী তে সেই খিদে মেটানোর জন্য খেতে হয় অতিরিক্ত খাবার, যা ওজন বাড়িয়ে তুলে। তাই ওজন কমাতে চাইলে খিদে লাগানো যাবে না। খিদে যেন না লাগে তার প্রথম পদক্ষেপ হলো সকালের নাস্তা খাওয়া। সকালের নাস্তা বা ব্রেকফাস্ট সারাদিনের জন্য শরীরকে কর্ম উপযোগী করে রাখে।
ওজন কমাতে চাইলে শরীরের ক্যালরির মাত্রা কমাতে হবে। যত খাবেন, তারচেয়ে বেশি ক্যালরি ঝরাতে হবে। নিয়মিত ও সময়মতো খাবার খেলে শরীরের ক্যালরি বার্নিং (Burning) হয়, মানে ক্যালরির মাত্রা কমতে থাকে। নিয়মিত ৩-৪ বেলা খাবার অবশ্যই সময়মতো খেতে হবে। অল্প অল্প খান, তবে সময়মতো খেতে হবে।
৫. পানিঃ সুস্থ, সবল থাকার অন্যতম প্রধান বিষয় হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা। পানি একটি নিরাপদ খাবার। পানিতে ক্ষতিকারক কোনো খাদ্য উপাদান নেই। ওজন কমাতে ও শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুস্থ থাকতে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থাৎ দৈনিক ৭-৮ গ্লাস পানি পান করতে হবে।
৬. ঘুমঃ সুস্থ, সতেজ থাকার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অবশ্যই দরকারি। সঠিক ও পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব আপনার ওজন বাড়িয়ে তুলে। সেই সাথে খাবারের অভ্যাসেও প্রভাব ফেলে। সঠিক ও স্বাস্থ্যকর ঘুম শরীরকে সতেজ করে তুলে। তাই বয়স অনুযায়ী অবশ্যই সবাইকে পর্যাপ্ত ঘুম দিতে হবে। ঘুম ভালো হলে শরীর ও মন উভয়ই ভালো থাকে।
৭. ফলমূল খাওয়াঃ ফলমূলে কম পরিমাণ ক্যালরি ও ফ্যাট থাকে যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। ফলমূলে থাকে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক ভিটামিন (Vitamins)। তবে চিনিযুক্ত অর্থাৎ অতি মিষ্টি স্বাদের ফলমূল এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ, চিনি বা Sugar ওজনের উপর প্রভাব ফেলে।
৮. আঁশযুক্ত খাবার খাওয়াঃ আঁশযুক্ত খাবারগুলোতেও ক্যালরি এবং ফ্যাট এর মাত্রা কম থাকে। আঁশযুক্ত খাবার খেলে শরীরে বিপাক ক্রিয়া সঠিকভাবে হয়, ফলে পরিপাকতন্ত্র সুস্থ থাকে। ওজন কমাতে চাইলে খিদে/ক্ষুদা লাগানো যাবে না। এক্ষেত্রে আঁশযুক্ত খাবার হচ্ছে উপযুক্ত সহায়ক। আঁশযুক্ত খাবার খেলে খিদের মাত্রা কম ও নিয়ন্ত্রণে থাকে। এতে ওজন কমাতে সাহায্য করে। শাকসবজি, বীজজাতীয় খাবারে ফাইবার (Fiber) বা আঁশ থাকে। বিভিন্ন রকমের শাকসবজি থেকে ফাইবার বা আঁশ পাওয়া যায়। তাই ওজন কমাতে চাইলে খাবার তালিকায় নিয়ন্ত্রিত ও সচেতন হতে হবে।
৯. মশলাযুক্ত খাবার ও অ্যালকোহলঃ সুস্থ থাকতে সবারই উচিত অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে এবং বিভিন্ন অ্যালকোহল (Alcohol), তামাকজাত পণ্য গ্রহণ করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা। মশলাযুক্ত খাবারে পরিপাকতন্ত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। আর অ্যালকোহল ও তামাক সবার শরীরের জন্যই ক্ষতিকর। সুস্থ থাকতে চাইলে অবশ্যই এই দিকটা মেনে চলতে হবে।
১০. পরিশ্রম করাঃ যত বেশি পরিশ্রম করা হয়, তত বেশি ক্যালরি ক্ষয় হয়। আর যত বেশি ক্যালরি ক্ষয় করা সম্ভব, তত উপকার। অতিরিক্ত ক্যালরির জন্য ফ্যাট জমা হয় যা শরীরের ওজন বাড়ায়। তাই শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করতে হবে বেশি বেশি যাতে শরীরে জমা হওয়া অতিরিক্ত ফ্যাট ও ক্যালরি ঝরানো যায়। এর জন্য ব্যায়াম ও অন্যান্য অনেক শারীরিক পরিশ্রমের কাজ আছে সেগুলো করা যায়। বাইরে যাওয়া সম্ভব না হলে ঘরে বা বাড়িতেই ব্যায়াম করা যায়।
ঘরের কাজগুলো দ্রুত করার চেষ্টা করার মাধ্যমে ক্যালরি বার্ন করা যায়। কিছু ফ্রি-হ্যান্ড বা খালি হাতের ব্যায়াম আছে যা ঘরেই করা যায়। সেগুলো করতে হবে। যেমন, হাঁটা, সিঁড়ি বেয়ে উঠানামা ও স্ট্রেচিং। সবচেয়ে উত্তম ও সহজ ব্যায়াম হচ্ছে হাঁটা। বাইরে হাঁটা সম্ভব না হলে ঘরের বিভিন্ন জায়গায় অনেকক্ষণ হাঁটতে হবে নিয়মিত।
উপরে আলোচনা করা পদক্ষেপগুলো ওজন কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ওজন কমানোর গুরুত্বপূর্ণ টিপস্ গুলো নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই উপযোগী এবং সহজসাধ্য। ওজন কমাতে চাইলে এই পদক্ষেপগুলো মেনে চলতে থাকলে ঠিকই সুফল পেতে থাকবেন। এই পদক্ষেপগুলোই সহজ। বিভিন্ন ডাক্তার ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা উক্ত পদক্ষেপগুলো মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে থাকেন তাদের বাড়তি ওজন নিয়ে চিন্তিত রোগীদের।
সর্বশেষ
উপরে বর্ণনা করা ওজন কমানোর গুরুত্বপূর্ণ টিপস্ ও পদক্ষেপগুলো নিলে আপনি কতটা ফলাফল পাচ্ছেন তা আপনি নিজে নিজেই বুঝতে পারবেন। একটা নির্দিষ্ট সময়ের লক্ষ্য বা টার্গেট নিয়ে পদক্ষেপগুলো মেনে দেখুন, তারপর সেই টার্গেট করা সময় পার হলে নিজের ওজন মেপে নিশ্চিত হোন তা কতটা উপকারী হয়েছে আপনার জন্য। হতাশ না হয়ে পরিশ্রম করে যেতে থাকুন, ফলাফল পেয়ে যাবেন।
ওজন কমান, সুস্থ থাকুন।