পিরিয়ড কালার ও সতর্কতা( Period Colors and Cautions)

পিরিয়ড কালার ও সতর্কতা
Period's Colors

পিরিয়ড( Period) নারীদেহের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পিরিয়ডকে বাংলায় বলা হয় মাসিক আর শুদ্ধ ইংরেজিতে বলা হয় Menstrual Cycle। উপযুক্ত বয়স হলে মেয়েদের জীবনে পিরিয়ড আসে আবার বন্ধও হয়ে যায়। কারও পিরিয়ডের ধরণ হালকা আবার কারও হয় ভারী। মেয়েদের মাসিক বা পিরিয়ডের রঙ/কালার দেখে বোঝা যায় যে, সে কতটা সুস্থ। পিরিয়ড কালার ও সতর্কতা নিয়ে  বিস্তারিত জানতে পারবেন এই আর্টিকেলে।

এই আর্টিকেলে

  • পিরিয়ডের রঙ কেন আলাদা হয়,
  • কোন রঙ ভালো আর কোনটি খারাপ,
  •  পিরিয়ডের কোন রঙের রক্ত কী নির্দেশ করে ,
  • এবং কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। 
পিরিয়ডের রঙ বা কালার বিভিন্ন রকম হয়। যেমন, উজ্জ্বল লাল, ঘন লাল, কালচে বা গাঢ় লাল, কালো, ধুসর, গোলাপি, বাদামি ইত্যাদি রঙের। মাসিকের রক্তের এমন বিভিন্ন রঙের জন্য অনেকের মাঝে ভয় ও উদ্বিগ্নতার সৃষ্টি হয়। এটা কি স্বাভাবিক, সুস্থ পিরিয়ড নাকি কোনো বিপদজনক অবস্থা - এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আর ভয়ে থাকে অনেক মেয়েই।

 পিরিয়ডের রঙ/কালার কেন বিভিন্ন রকমের হয়ঃ মেয়েদের পিরিয়ডের রক্তের রঙ ভিন্ন রকমের হওয়া নির্ভর করে সেই রক্ত কত সময় ধরে জরায়ু ও যৌনাঙ্গ( যোনি)তে অবস্থান করে। অর্থাৎ, জরায়ু ও যোনিতে রক্ত কতটা সময় ধরে অবস্থান করে সেটার উপর নির্ভর করে পিরিয়ডের রঙ বিভিন্ন রকম হয়। জরায়ু ও যোনিতে অবস্থানরত রক্ত অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসলে রক্তের রঙ গাঢ় হতে থাকে। পিরিয়ডের রক্ত যত সময় দেহের ভিতরে থাকবে, রক্তের রঙ তত গাঢ় হতে থাকে। মূলত অক্সিজেনের সংস্পর্শের জন্য এমন হয়।


পিরিয়ড কালার ( Period Colors)

পিরিয়ডের বিভিন্ন রঙের রক্তের বর্ণনাঃ

কালো(Black)/গাঢ়(Dark)/বাদামি(Brown): পিরিয়ডের রক্তের রঙ কালো হয়ে থাকে সাধারণত পিরিয়ড শুরু হওয়ার মুহুর্তে অথবা পিরিয়ড শেষ হওয়ার মুহুর্তে। কালো বা গাঢ় লাল রঙের রক্ত হওয়ার কারণ হলো- পিরিয়ডের রক্ত দীর্ঘ সময় ধরে জরায়ু ও যোনিতে অবস্থান করা এবং অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসা। রক্ত যত বেশি সময় ধরে ভিতরে থাকে, রক্তের রঙ তত গাঢ় বা কালো হতে থাকে। প্রথমে বাদামি, তারপর গাঢ় লাল এবং পরে কালো রক্ত। রক্ত জরায়ু ও যোনিতে যত সময় ধরে অবস্থান করবে, এভাবে পর্যায়ক্রমে রক্ত বাদামি থেকে কালো হতে থাকবে। 

তাই বলা যায়, বাদামি, গাঢ় লাল এবং কালো রঙের রক্ত পিরিয়ডের স্বাভাবিক অবস্থা নির্দেশ করে। তার মানে সেটি সুস্থ, স্বাভাবিক পিরিয়ড। 

কিন্তু, কালো রক্ত আবার যোনি বা যৌনাঙ্গে কোনো কিছু আটকা পড়লে বা কোনো বাঁধার সৃষ্টি হলেও কালো রক্ত আসে। 

কীভাবে বোঝা যাবে যৌনাঙ্গতে কোনো কিছু আঁটকে আছে বা কোনো বাঁধার সৃষ্টি হয়েছে কি না -

> যৌনাঙ্গ থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকলে।

> জ্বর হলে।

> প্রস্রাব করতে সমস্যা। 

> যৌনাঙ্গের আশেপাশে চুলকানো এবং ফোলা থাকা।

আবার, বাদামি ও গাঢ় লাল রক্ত প্রেগন্যান্সির বা গর্ভধারণও নির্দেশ করে থাকে। সন্তান জন্ম দেওয়ার পর বা প্রসবোত্তর সময়ে পিরিয়ডের রক্তের রঙ বাদামি বা গাঢ় রঙের অবস্থাকে Lochia( লোসিয়া) বলা হয়। একে প্রসব পরবর্তী পিরিয়ডের অবস্থা বলা হয়। Lochia একেকজনের একেক রকম হয়।কারও কম সময় ধরে এই অবস্থা চলে, আবার কারও বেশি সময় ধরে। 

উজ্জ্বল লাল( Bright Red): পিরিয়ডের রক্তের রঙ উজ্জ্বল লাল হওয়া মানে সুস্থ ও স্বাভাবিক পিরিয়ড এবং স্বচ্ছ, পরিষ্কার রক্ত। উজ্জ্বল লাল রঙের রক্ত জরায়ুতে রক্ত বেশি সময় অবস্থান করে না এবং অক্সিজেনের সংস্পর্শে কম আসে, সেজন্য পিরিয়ডের রক্ত উজ্জ্বল লাল হয়ে থাকে। 

গোলাপি( Pink): পিরিয়ডের শুরুতে রক্তের রঙ গোলাপি হতে পারে। যোনি থেকে রক্ত নির্গমনের সময় যৌনাঙ্গের মিউকাস স্বচ্ছ ও উজ্জ্বল লাল রঙের রক্তের সাথে মিশে গেলেও রক্তের রঙ গোলাপি হতে দেখা যায়। এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। আবার, জন্ম নিয়ন্ত্রণ ( Birth Control) কোনো উপাদান বা মেডিসিন গ্রহণের ফলে দেহে এস্ট্রোজেন( Estrogen)এর মাত্রা কমে গেলে পিরিয়ডে গোলাপি রক্ত আসে। গোলাপি রক্ত আসার আরও কিছু কারণ হতে পারে- অতিরিক্ত ওজন কমে যাওয়া, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, রক্তস্বল্পতা। 

উক্ত আলোচনায় বলা রক্তের বর্ণ বা রঙ দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তবে সচেতন থাকতে হবে। 

সাদা স্রাবের ক্ষতি

PCOS দূর করতে

সতর্কতা (Cautions)


কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবেঃ 
পিরিয়ডের রক্ত কমলা ও ধুসর রঙের হলে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
কারণ, এই রঙের রক্ত যৌনাঙ্গের বিভিন্ন সংক্রমণ ও রোগের লক্ষ্যণ নির্দেশ করে। Bacterial Vaginosis
নামক যৌন সংক্রমণ এর নির্দেশ হতে পারে পিরিয়ডের রক্ত কমলা ও ধুসর হওয়া।
Bacterial Vaginosis এর কিছু লক্ষ্যণ -

  • যৌনাঙ্গের আশেপাশে ও ভিতরে চুলকানি।
  • যৌনাঙ্গে দুর্গন্ধ, যা অনেকটা মাছের গন্ধের মতো হয়ে থাকে।
  • প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ও প্রস্রাবে কষ্ট।
এছাড়া আরও যেসকল সমস্যার দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে, সেগুলো হচ্ছে-

  • Lochia অবস্থায় অর্থাৎ সন্তান জন্ম দেওয়ার পরবর্তী সময়ে পিরিয়ডে অতিরিক্ত রক্তপাত হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। 
  • যোনি থেকে অপরিপক্ক ও অস্বাভাবিক রক্ত নির্গমন হলে।
  • পিরিয়ড ৭ দিনের বেশি স্থায়ী হলে।
  • পিরিয়ড চলাকালীন অতিরিক্ত রক্তপাত হতে থাকলে।১ ঘণ্টা পরপর বা ২ ঘণ্টার মধ্যে স্যানিটারি প্যাড বা ন্যাপকিন পরিবর্তন করতে হলে তা অতিরিক্ত রক্তপাত নির্দেশ করে। 
  • পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে খিঁচুনি, মাথা ঘোরানো, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও দূর্বলতা অনুভব করলে। 
  • পিরিয়ডের রক্তের জমাটবদ্ধ অংশ বা রক্তের চাকা চার ভাগের এক ভাগের বেশি বড় হলে। অর্থাৎ রক্তের চাকা এক-চতুর্থাংশের বেশি হলে।
  • অনিয়মিত মাসিক বা পিরিয়ড। প্রেগন্যান্ট বা গর্ভবতী হওয়া ছাড়া ৩-৪ মাস পিরিয়ড বন্ধ থাকলে।
  • প্রস্রাবে কষ্ট, জ্বালাপোড়া হলে।
  • যৌনাঙ্গ থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকলে। যৌনাঙ্গের আশেপাশে ও ভিতরে চুলকানি হলে।
  • বেশি জ্বর অনুভব হলে। 
  • মেনোপজ হয়ে যাওয়ার পরও রক্তক্ষরণ হতে থাকলে।
সর্বশেষ

আপনার পিরিয়ড রক্তের রঙ বা পিরিয়ড কালার কেমন হচ্ছে তা নিজে নিজে পর্যবেক্ষণ করুন এবং সর্বোচ্চ সতর্ক থাকুন। রক্তের রঙ ব্যতিক্রম বা খারাপ কিছু নির্দেশ করলে ভয় না পেয়ে আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং ডাক্তারের নির্দেশনা মেনে চলুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url