মানসিকভাবে ভালো থাকার উপায়গুলো ( Ways to stay mentally well)

বলা হয়ে থাকে পেটের দাবি না মেটালে, পেটে খাবার না দিলে মানুষের শরীর দূর্বল হয়ে পড়ে, শরীরের মৃত্যু হয়। কিন্তু মানুষের মন সুস্থ না থাকলে, মনের দাবি না মেটালে মৃত্যু হয় আত্মার। তাই তো যুগে যুগে জ্ঞানী, গুণী, ডাক্তার, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দিতে বলেন। ভালো থাকতে চাইলে অবশ্যই মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে হবে। এই আর্টিকেলে আপনারা মানসিকভাবে ভালো থাকার উপায়গুলো কী সে সম্পর্কে জানতে পারবেন।

মানসিকভাবে ভালো থাকার উপায়গুলো
stay mentally well

মন সুস্থ না থাকলে শরীর সুস্থ থাকতে পারে না। শরীর ও মন একে অপরের সাথে জড়িত। একটি ভালো না থাকলে, অন্যটির ভালো থাকা কঠিন। তাই, মানসিক স্বাস্থ্য যেন ভালো থাকে সেদিকে যথেষ্ট যত্নবান ও মনোযোগী হওয়া খুবই প্রয়োজন। মন যদি ভালো না থাকে, তাহলে কোনো কাজ করার জন্য শরীর সায় দিতে চায় না। শরীরকে কাজে লাগাতে দরকার সুস্থ, সবল মন। এই মন বা মানসিক স্বাস্থ্য যাতে ভালো থাকে, তার জন্য অনেক উপায় রয়েছে। 

বিশেষজ্ঞরা মানসিকভাবে ভালো থাকতে ও নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে অনেক পরামর্শ দেন। অবস্থা বোঝে ঔষধ বা মেডিসিনও দিতে হয়। অনেকেই বলে সবকিছুর জন্য ঔষধ বা মেডিসিন থাকলেও মনের অসুখের জন্য কোনো ওষুধ নেই। আসলে অনেকটা তা-ই। মানসিক স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে দরকার কিছু উপায় ও কৌশল অবলম্বন করা। 




মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার সেরকম কিছু উপায় পাঠকদের জন্য আলোচনা করা হলো- 

মানসিকভাবে ভালো থাকার উপায়গুলো
ways to stay mentally well


মানসিকভাবে ভালো থাকার উপায়গুলো

১. নিজেকে ব্যস্ত রাখাঃ মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপকারী ও গুরুত্বপূর্ণ একটি কৌশল হচ্ছে নিজেকে ব্যস্ত রাখা। কারণ ব্যস্ত থাকলে মন খারাপ করার সময় হবে না, কোনো দুশ্চিন্তা আসবে না। কোনো চিন্তা না আসলে মনের উপর চাপ পড়ে না। চিন্তা যেন না আসে তার জন্য উচিত মনকে ব্যস্ত রাখা। যখন কোনো কিছু নিয়ে বা কোনো কাজ নিয়ে চিন্তা আসবে, তখন সাথে সাথে ঐ কাজটি শেষ করার জন্য লেগে পড়তে হবে। তাহলেই আর ঐ কাজটির জন্য চিন্তারা ডালপালা মেলবে না। কোনো কাজ ফেলে রাখলেই সেটার জন্য পরে চিন্তা ভর করে, আর তাতে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। সময়ের কাজ সময়ে করে রাখলে মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা যায় । এতে করে মনও ভালো থাকে। 

কোনো কিছু করার না থাকলে কোনো সৃজনশীল কাজে মনোনিবেশ করতে হবে, নতুন কিছু শিখতে চেষ্টা করতে হবে। এতে করে মনকে ব্যস্ত রাখা যায়। নতুন কিছু শিখতে ও সৃজনশীল কিছু করতে মস্তিষ্ক "ডোপামিন" হরমোন নিঃসরণ করে থাকে। "ডোপামিন" মনে ভালো লাগার উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে ভূমিকা রাখে। পারসোনালিটি বা ব্যক্তিত্ব ডেভেলপ করতেও হবে।


২. নিজের মতো বৈশিষ্ট্যের মানুষের সাথে থাকাঃ আপনি যেমন থাকতে পছন্দ করেন এবং আপনার যেসব ভালো লাগে, সেসবের সাথে মিল আছে এমন বৈশিষ্ট্যের মানুষ সঙ্গী হিসেবে খুব ভালো হয়। কারণ, দুজন মানুষ একই রকম বৈশিষ্ট্যের হলে বোঝাপড়া ভালো হয়। আর বোঝাপড়া ভালো হলে নিজের মধ্যে ভালো লাগা কাজ করে, স্বস্তি পাওয়া যায়। যার বা যাদের সাথে নিজের মিল পাওয়া যায় না, তাদের সাথে নিজের সবকিছু নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা যায় না। কারণ তারা বুঝতে পারবে না। আপনার যেটা অপছন্দ, সেটা অন্য কারও পছন্দের হলে তাহলে তাতে মনোমালিন্য হওয়াটা স্বাভাবিক। 

তাই, নিজের সাথে মিল আছে এমন সঙ্গী দের সঙ্গ নেওয়া মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এতে যেমন নিজের অনেক সমস্যার সমাধান হয়, তেমনি মনের জন্যও ভালো। কথায় আছে- "If you find someone like as your mental behaviour, try to keep them always." 



৩.পরিবার, আত্মীয় দের সাথে যোগাযোগঃ এই কাজটি মানসিক ভাবে ভালো থাকার বড় একটি উপায়। কারণ নিজের পরিবার সবার কাছেই মুখ্য বিষয়। নিজের যেকোনো প্রয়োজনে সৎ ও সঠিক পরামর্শ, সাহস পাওয়া যায় পরিবার থেকেই বেশি। নিজের সমস্যার কথা পরিবারের সদস্যদের সাথে শেয়ার করলে মানসিক ভাবে অনেক সাপোর্ট পাওয়া যায়, যা মনকে স্বস্তি দিতে অনেক কার্যকর। তাছাড়া কাছের বন্ধু ও আত্মীয়দের কারও সাথে কথা বলা, যোগাযোগ করাও ভালো ভূমিকা পালন করে। একজন ডাক্তার যতোটা না সাহায্য করে মানসিক অবস্থা ভালে রাখতে, তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি সাহায্য করে বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার। 

আধুনিক বিশ্বে মানুষ প্রযুক্তির কারণে পরিবার ও আত্মীয় দের থেকে দূরে সরে যায়, যা মানসিক স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলছে। বিষন্নতা, সামাজিকতার অভাব, সরাসরি কোনো সাহায্য পাওয়ার অভাব- এসব কিছু তিলে তিলে একজন মানুষকে শেষ করে দিতে পারে। এর থেকে বের হয়ে আসাটা খুবই জরুরি। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় দের সাথে সরাসরি কথা বললে, যোগাযোগ করলে মনটা অনেক হালকা হয়ে যায়। 


৪. ঘুরতে বের হওয়াঃ ভ্রমণ হচ্ছে নতুনকে জানার এক মহৎ উদ্যোগ। ভ্রমণ করতে বের হলে অফিসের চাপ, পারিবারিক চাপ, মানসিক চাপ সহ অন্যসব চাপ থেকে চিন্তামুক্ত থাকা যায়। নতুন জায়গা, নতুন জিনিস, নতুন অভিজ্ঞতা পেলে মন ফুরফুরে হয়ে যায়। ভ্রমণ নিয়ে অনেক জ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ, বিখ্যাত মানুষরা অনেক অনেক উক্তি ও পরামর্শ দিয়েছেন। দূরে কোথাও সম্ভব না হলেও অন্তত কাছের কোনো জায়গায় ঘুরতে যাওয়া উচিত। 

নতুন জায়গায় গেলে মন ব্যস্ত হয়ে পড়বে নতুন অভিজ্ঞতা নিতে। যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য দরকারি। প্রযুক্তির এই যুগে ঘরে বসে থাকতে থাকতে বিষন্নতা, হতাশা চেপে বসে। এই বিষন্নতা, হতাশা দূর করতে প্রয়োজন নতুন মোটিভেশন, নতুন প্রেরণা। আপনি কোথাও ঘুরতে বের হলে বিভিন্ন বিষয়বস্তু থেকে আপনার অজানা অনেক কিছু জানতে পারবেন এবং তা থেকে নিজেকে অনুপ্রাণিত করতে পারবেন।
 

৫. ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রমঃ ব্যায়াম ও পরিশ্রম করা শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যই ভালো না, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। পরিশ্রম করলে শরীর সুস্থ, সবল থাকে এবং মন ভালো রাখতেও কাজ করে। আমরা শরীরের অসুস্থতার দিকে বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়ালই করি না। কিন্তু শুধু শারীরিক সুস্থতা নিয়েই ভালো থাকা যায় না, মানসিক সুস্থতাও অতীব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন ব্যায়াম করতে কম দূরত্ব হাঁটতে ও জগিং করতে বের হলে প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকা যায়। প্রকৃতি মন ভালো রাখার বড় একটি নিয়ামক।
 

৬. সঠিক খাদ্যাভ্যাসঃ প্রোটিন ও ওমেগা খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান মানবদেহের জন্য। এই খাবারগুলো মানুষকে শারীরিক ভাবে সুস্থ রাখতে যেমন সহায়তা করে, তেমনি মস্তিষ্কের জন্যও সহায়ক। সুষম খাদ্যাভ্যাস প্রতিটি মানুষের ভালো থাকার মূল। তাই সুযম ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুযায়ী নিজেকে খাবার দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধুমপান, তামাক, বিভিন্ন নেশাজাত দ্রব্য পরিহার করে চলতে হবে।
 

৭. ধর্ম চর্চা করাঃ মন খারাপ থাকলে, জীবন নিয়ে হতাশ হলে অনেকে ধর্মে মনোযোগ দিতে পরামর্শ দেয়। ধর্মকর্মে মন দিলে মনের যাবতীয় ময়লা, দুশ্চিন্তা, পাপ ঝরে যায়। স্রষ্টার উপর বিশ্বাস মজবুত হয়। স্রষ্টার উপর বিশ্বাস মানেই দুনিয়ার সব চিন্তা, বাধা-বিপত্তি, হতাশা থেকে মুক্তি। কারণ একমাত্র স্রষ্টাই তাঁর সৃষ্টির সবকিছুর সমাধান করেন। একেক ধর্মের একেক রকম ধর্ম বিশ্বাস। কিন্তু সব ধর্মেই স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস হলো মূল। 

নিজ নিজ ধর্মীয় অনুশাসন, বিধিবিধান, ব্যবস্থা অনুযায়ী নিজেকে ব্যস্ত রাখলে, স্রষ্টার আনুগত্য লাভ করতে চেষ্টা করলে মন নরম হয়ে যায়। তখন সবকিছুতেই তৃপ্তি নিয়ে থাকা যায়। ধর্মীয় বই পড়া এমন একটি কাজ, যেটা করলে অজান্তেই মনের মধ্যে ভালো লাগার সৃষ্টি হয়। তাই মন খারাপের সময় চেষ্টা করুন ধর্মে মনোযোগ দিতে, ধর্মীয় বই পড়তে। 

" A negative mind will never give a positive life." - এই কথাটি সবসময় মনে রাখতে হবে। মনের মধ্যে খারাপ চিন্তা, খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে থাকলে তা মনকে অস্থিরতা ও অশান্তির মধ্যে রাখে। ভিতর থেকে জ্বালিয়ে দিতে থাকে। তাই সব ধরণের খারাপ চিন্তা, খারাপ কাজ, নেগেটিভ ধারণা থেকে মনকে মুক্ত রাখতে হবে।
 

উপসংহার

শেষ করবো একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের একটি উক্তি দিয়ে। তিনি বলেছিলেন - " মানসিক স্বাস্থ্য ছাড়া কোনো স্বাস্থ্য হয় না। মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে মনোযোগী হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক স্বাস্থ্যই প্রত্যেকের আসল কাজ, আসল সম্পদ।" তাই সবার উচিত শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতির দিকে মনোযোগ না দিয়ে মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও মনোযোগী হওয়া, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কাজ করা এবং মানসিক সুস্থতা বজায় রাখা। 

মানসিকভাবে ভালো থাকার উপায়গুলো উপরে যেগুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলো বাস্তবিকভাবেই কার্যকর। এগুলো মেনে চললে মানসিকভাবে ভালো থাকা সহজ হবে। মনের যত্ন নিন।

Next Post
2 Comments
  • Unknown
    Unknown April 5, 2022 at 11:14 PM

    Ma sha Allah 😍....onk valo vabe guchiye likhsen apni....onk dur egiye jaben In sha Allah ❤️

    • RhnBook
      RhnBook April 19, 2022 at 2:54 PM

      Thank You very much . InshaAllah

Add Comment
comment url