সাঁতার কাটা ভালো ব্যায়াম হলে তিমি এত মোটা কেন?
কারও ওজন কম হোক বা বেশি হোক - সেটা কখনোই তার মোটা ও চিকন শারীরিক অবস্থা নির্দেশ করে না। কেউ মোটা না চিকন দেখতে সেটা নির্ভর করে তার শরীরে চর্বি বা ফ্যাট (Fat) এর মাত্রার উপর। তাহলে বুঝতে পারছেন, তিমি এত মোটা কেন? সাঁতার কাটা ভালো ব্যায়াম হলে তিমি এত মোটা কেন? চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন-
সাঁতার কাটা ভালো ব্যায়াম হলে তিমি এত মোটা হওয়ার ব্যাখ্যা
মানবদেহে কত-শত অস্থি, তরুণাস্থি রয়েছে। কিন্তু মৎস্যজাতির কি তা আছে? নেই তো।
মানুষের বেঁচে থাকার জন্য চর্বি বা ফ্যাট প্রয়োজন। মানুষ তার দেহের ৬০% ক্যালরি গ্রহণ করে চর্বি বা ফ্যাট থেকে। আপনি যখন দীর্ঘ সময় ধরে না খেয়ে থাকবেন, তখন আপনার শরীরে নিজে থেকেই প্রয়োজনীয় ক্যালরি উৎপন্ন হতে থাকে যা মূলত আপনার দেহে থাকা চর্বির অবদান। আর তিমির মতো বিরাট আকারের প্রাণীর চর্বিই হচ্ছে তার বেঁচে থাকার সঙ্গী। সমুদ্রে বসবাস করার জন্য তিমির ত্বকের নিচে রয়েছে বিশাল চর্বি স্তর ( Layers of fat) রয়েছে, যাকে ব্লাবার ( Blubber) বলা হয়। এই চর্বি স্তরই তিমিকে এত বড় দৈহিক গঠনের দেখায়।
সাঁতার অবশ্যই ভালো ও কার্যকর ব্যায়াম। সুস্থ ও সবল থাকতে সাঁতার কাটা কার্যকরী একটি ব্যায়াম। মানুষ সাঁতার কাটে ব্যায়ামের জন্য, ফিট থাকার জন্য। কিন্তু তিমি সাঁতার কাটে কারণ সেটা তার স্বাভাবিক জীবনযাপনের অংশ, ব্যায়াম না। মানুষ জলজ প্রাণী নয়। মানুষ সাঁতার কাটে ঠিক আছে, কিন্তু তারা সমুদ্রে বাস করে না। একজন সাঁতারু কতক্ষণ আর কতদূর সাঁতার কাটতে পারবে? ঘণ্টায় ৩ মাইল বা বড়জোর ৫-৬ মাইল।
কিন্তু তিমি ঘণ্টায় ৩০-৪০ মাইল চলতে পারে। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য হাঁটাচলা করতে হয়, যা মানুষের স্বাভাবিক অবস্থা। তিমিকেও বেঁচে থাকতে হাঁটাচলা করতে হয়, কিন্তু পরিবেশ আর স্থান আলাদা হওয়ায় সাঁতার কেটে চলাফেরা করাই তিমির স্বাভাবিক অবস্থা। শুধু তিমি নয়, হাঙর সহ আরও বড় বড় যেসকল স্তন্যপায়ী জলজ প্রাণী আছে সবার ক্ষেত্রেই এটা।
মানুষ সর্বোচ্চ ৬০ ডিগ্রি ঠাণ্ডায় থাকলে মারা যায়, যেটাকে Hypothermia অবস্থা বলে। কিন্তু তিমির মতো স্তন্যপায়ী জলজ প্রাণী ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় স্বাভাবিকভাবেই চলতে পারে। এর কারণ? তিমির দেহে থাকা ব্লাবার ( Blubber) তিমিকে এই সক্ষমতা দেয়।
মানুষের তুলনায় তিমি মোটা হওয়ার অন্যতম কারণ এর বাস্তুসংস্থান। তিমি দৈনিক যে পরিমাণ খাবার খায়, একজন মানুষ কিন্তু তা পারে না। মানুষও শাক-সবজি খায়, গরু-ছাগলও শাক-সবজি খায়। কিন্তু তারপরও মানুষ কেন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়? গরু-ছাগল কেন তেমন পরিমাণে অসুস্থ হয় না? এই উদাহরণটি তিমি ও অন্যান্য বিশাল আকৃতির জলজ প্রাণীর বেলায়ও ভেবে দেখুন।
মানুষের দেহের যে চর্বি, তিমির দেহে কিন্তু সেই চর্বি না। তিমির দেহে থাকে ব্লাবার। যার জন্যই তিমি এত মোটা। একজন মানুষের শরীরে চর্বি কমবেশি হওয়া তাকে মোটা ও চিকন শারীরিক গঠন দেখায়, তেমনি তিমির বেলায়ও। শুধু পার্থক্য হচ্ছে, তিমির দেহের চর্বি আর মানুষের চর্বি এক না। মানুষ সুস্থ থাকতে, মাংসপেশির উন্নতি করতে সাঁতার কাটে ব্যায়াম হিসেবে। তিমির ক্ষেত্রে তা তার জীবন কাটানোর মাধ্যম। তিমি সাঁতারকে ব্যায়াম হিসেবে করে না, স্বাভাবিক জীবনযাপন হিসেবে করে। যেমন মানুষ হাঁটাচলা করে স্বাভাবিক জীবনযাপনে।
পানির অবস্থান, তাপমাত্রা মানুষের কাছে সমস্যা হয়ে থাকে। কিন্তু তিমির কাছে এসব কোনো সমস্যা না। সে যত সাঁতার কাটবে, তত মোটা হতে থাকবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে। ব্লাবার ( Blubber) চর্বি স্তর ছাড়া তিমি বাঁচতে পারবে না। এই ব্লাবারের কারণেই তিমি সমুদ্রের গভীর তলদেশে চলতে পারে অত্যধিক ঠাণ্ডায়, যা তিমির কাছে কোনো কষ্টকর ব্যাপার না। কারণ, ঠাণ্ডায় সুরক্ষা দিয়ে থাকে তার ব্লাবার। মানুষের চর্বি স্তরের চেয়ে তিমির চর্বি স্তর অর্থাৎ Blubber অনেক বেশি মোটা ও ঘন। তাই তিমি এত এত বিশাল আকৃতির হয়।
সুতরাং, আপনি বলতে পারেন সাঁতার কাটা ( Swimming) মানুষের জন্য খুব ভালো একটি ব্যায়াম। কিন্তু তাই বলে এটা বলতে পারবেন না যে এটা সবার কাছেই ব্যায়াম। মানুষের কাছে ব্যায়াম, কিন্তু তিমির কাছে সেটা ব্যায়াম না। শুধু তিমি নয়, মানুষের কাছে যেটা যেমন, অন্যান্য প্রাণীদের কাছে সেটা তা নয়। মানুষ সাঁতার কেটে ব্যায়াম করে ফলে ক্যালরি বার্ন (Burn) হয়, কিন্তু তিমি ব্যায়াম করে না। তাই তিমির ক্যালরিও বার্ন করতে হয় না। বুঝতে পারছেন, তিমি এত মোটা কেন?
উপরে বলা কারণগুলোর জন্যই তিমি আকৃতিতে এত বড় আর মোটা।
এখানে সহজেই বোঝাতে চেষ্টা করা হয়েছে যে, সাঁতার কাটা ভালো ব্যায়াম হলে তিমি এত মোটা কেন যা গবেষণা থেকে প্রমাণিত।
তারপরও কোনো তথ্য বাদ পড়ে থাকলে কমেন্ট করে জানান।
Nice post