পিরিয়ডের বিস্তারিত: পিরিয়ডে কী কী খাওয়া উচিত, সতর্কতা

পিরিয়ডে কী কী খাওয়া উচিত
Period and Menstrual cycle


নারীদেহের একটি প্রাকৃতিক ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হচ্ছে মাসিক বা পিরিয়ড (Period)। এই আর্টিকেলে-পিরিয়ডের বিস্তারিতঃ পিরিয়ড কী? পিরিয়ড কেন হয়? পিরিয়ডের সময় করণীয়: পিরিয়ডে কী কী খাওয়া উচিত, সতর্কতা,পিরিয়ড নিয়ে কুসংস্কার ও ভুল ধারণাগুলো সম্পর্কেও বলা হবে।
Details of the period.

যা যা থাকছে,
- পিরিয়ড কী?
- পিরিয়ড কেন হয়?
- পিরিয়ডের সময় করণীয় 
- পিরিয়ডের সময় সতর্কতা
- পিরিয়ডের সময় কী কী খাওয়া উচিত আর কী কী উচিত না
- পিরিয়ড নিয়ে কুসংস্কার 
- সচেতনতা


পিরিয়ড কী?

প্রতি মাসে বয়ঃসন্ধিতে পা রাখা ও পরিণত বয়সী মেয়েদের জরায়ু এক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় এবং সে সময় মেয়েদের যোনিপথ বা ভ্যাজাইনা দিয়ে রক্ত ও জরায়ু থেকে তরল নিঃসৃত হয়ে বের হয়, সেই অবস্থাকে মাসিক বা পিরিয়ড বলা হয়। ইংরেজিতে যাকে Menstruation বলা হয়। আর সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াকে Menstrual Cycle বলা হয়। যা প্রতি মাসে হয়ে থাকে এবং ৫-৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। অবস্থা অনুযায়ী ২৮ দিন পর্যন্তও স্থায়ী হয়ে থাকে।
 
প্রতিটি মেয়ে মোটকথা সকল নারীদেরকে এই অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, এবং এটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। মাসিক বা পিরিয়ড হচ্ছে নারীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। ১৩ বছর বয়স থেকে অথবা একেক অবস্থান ও আবহাওয়াভেদে ভিন্ন ভিন্ন দেশের মেয়েদের এই শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া টি অর্থাৎ পিরিয়ড শুরু হয়।  এবং এটি ৪০-৫৫ বছর বয়সী নারীদের পর্যন্ত চলমান থাকে । এরপর তা সারাজীবনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। পিরিয়ড দশা বন্ধ হওয়াকে মেনোপজ ( Menopause)  বলা হয়, যা ৪০-৫৫ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে হয়।। 

মাসিক বা পিরিয়ড হচ্ছে একটি মেয়ের নারীসুলভ জীবনের একটি অংশ। সন্তানধারণ এর উপর পিরিয়ডের ভূমিকা রয়েছে। নিয়মিত ও সঠিকভাবে পিরিয়ড হওয়ার মাধ্যমে বোঝা যায় মেয়েটি সন্তান ধারণ করতে সক্ষম। অতএব,  নারীদেহের অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো পিরিয়ড।

পিরিয়ড কীভাবে শুরু হয়?

মাসিক বা পিরিয়ডের প্রক্রিয়াটি ডিম্বাশয় ও জরায়ুর সমন্বয়ে ঘটে।  আমরা জানি,  পুরুষদের দেহে থাকে শুক্রাশয়, যেখানে শুক্রাণু থাকে। আর নারীদেহে থাকে ডিম্বাশয়। ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণু উৎপাদন হয়। প্রতি মাসে ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণু উৎপন্ন হয়।এবং পরিপক্ক  ডিম্বাণু ডিম্বনালীর মধ্য দিয়ে জরায়ুতে পৌঁছে যায়। জরায়ু থেকে পরিপক্ব ডিম্বাণু টি পরে ডিম্বনালীতে অবস্থান নেয়। এই দশাকে " ডিম্বাণু উৎপাদন প্রক্রিয়া" বলা হয়। ডিম্বনালীতে ডিম্বাণু টি শুক্রাণুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। উপযুক্ত শুক্রাণু এসে ডিম্বাণুটি কে নিষিক্ত করে,  যাকে নিষিক্তকরণ প্রক্রিয়া বলে। 

যদি ডিম্বাণু টি শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয়, তাহলে মেয়েরা গর্ভবতী হয় এবং ডিম্বাণু টি জরায়ুতে অবস্থান নেয়। কিন্তু যদি শুক্রাণু না আসে অর্থাৎ শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত না হয়, তাহলে ডিম্বাণু টি ভেঙ্গে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। আর জরায়ুর আবরণটিও ভেঙ্গে যায়। পরবর্তীতে ভেঙ্গে যাওয়া ডিম্বাণু তরল আকারে বা রক্ত হয়ে জরায়ু থেকে নিঃসৃত হয়ে যোনিপথ দিয়ে বের হয়ে আসে যাকে পিরিয়ডের রক্ত ( Period's blood) বলা হয়। এভাবেই পিরিয়ডের শুরু হয়। পুরো প্রক্রিয়া টি ৫-৭ দিনের মধ্যে ঘটে থাকে। জরায়ুর মাধ্যমেই পিরিয়ড বা মেনস্ট্রুয়েশন দশাটি সম্পন্ন হয়, যা ডিম্বাশয়ে শুরু হয়। 

জরায়ুতে নিষিক্ত ও নিষিক্ত না হওয়া ডিম্বাণুর কাজটিই মাসিকের জন্য দায়ী। তাই এই দশাকে জরায়ুর সাইকেল বা ইংরেজিতে Uterine Cycle বলা হয়। পিরিয়ডের জন্য জরায়ুতে তিনটি ধাপ সম্পন্ন হয়।  সেই ধাপগুলো হচ্ছে- 
  • মেনস্ট্রুয়াল ধাপ ( Menstrual Phase) 
  • প্রোলিফেরাটিভ ধাপ ( Proliferative Phase)
  • সেক্রেটরি ধাপ ( Secretory Phase)

পিরিয়ডের ধাপ সমূহঃ


১. মেনস্ট্রুয়াল ধাপঃ পিরিয়ড শুরু হওয়ার প্রথম পর্যায় হচ্ছে এই ধাপ। অর্থাৎ এই ধাপের মাধ্যমেই মেয়েদের মাসিক শুরু হয়। পিরিয়ডের মেনস্ট্রুয়াল ধাপটি নারীদেহের এস্ট্রোজেন (Estrogen) ও প্রজেস্টেরন (Progesterone) হরমোনের সমন্বয়ে ঘটে,  যা প্রোস্টাগ্লানডিনস্( Prostaglandins) নিঃসৃত করে। প্লাজমিন ( Plasmin) নামক একটি এনজাইমের প্রভাবে জরায়ু থেকে জমাট বাঁধা রক্ত কণিকা ভেঙ্গে যায় এবং তা যোনিপথ দিয়ে বের হয়ে আসে। 

প্রোস্টাগ্লানডিনস্ ও প্লাজমিন ছাড়াও এসময় শ্বেত রক্তকণিকা, জরায়ুর মিউকাস ( Mucus), ব্যাকটেরিয়া ও নিষিক্ত না হওয়া ডিম্বাণু থাকে সেই জমাট বাঁধা রক্ত কণিকায়। এসময় ২-৬ দিন পর্যন্ত সেই রক্ত বের হতে থাকে এবং ৩০-৬০ মিলিলিটার এর আশেপাশে পরিমাণের রক্ত বের হয়। এর মাধ্যমে অর্থাৎ এই ধাপের মাধ্যমে বোঝা যায় যে, প্রেগন্যান্সি বা গর্ভধারণ হয় নাই। 

২. প্রোলিফেরাটিভ ধাপঃ এটি পিরিয়ডের দ্বিতীয় ধাপ। এই ধাপটি শুধু এস্ট্রোজেন( Estrogen) হরমোনের প্রভাবে ঘটে। এ সময় জরায়ুর সার্ভিক্স( Cervix) অংশের সেল বা কোষগুলোতে একধরণের মিউকাস ( Mucus) উৎপন্ন হয়, যাকে জরায়ুর মিউকাস বা "সারভিকাল মিউকাস ( Cervical Mucus) " বলা হয়। এই সারভিকাল মিউকাসটি উচ্চমানের  PH সমৃদ্ধ এবং এটি শুক্রাণুর সাথে মিলিত হতে পারে। এর কারণেই জরায়ু তখন নিষিক্ত ডিম্বাণু গ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকে। এর সময়কাল স্থায়ী হয় ১০-১৪ দিন পর্যন্ত। 

৩. সেক্রেটরি ধাপঃ এই ধাপটি পিরিয়ডের সর্বশেষ ধাপ। এর সাথে ডিম্বাশয়ের সর্বশেষ ধাপে ঘটা লুটিয়াল ( Luteal) ধাপের মিল আছে বলে একে লুটিয়াল ধাপও (Luteal phase) বলা হয়। এসময় প্রোজেস্টেরন ( Progesterone) হরমোন উৎপন্ন হয়, যা জরায়ুকে নিষিক্ত ডিম্বাণু গ্রহণ করানোর জন্য সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করে। এ সময় জরায়ু থেকে গ্লাইকোজেন ( Glycogen), লিপিড(Lipids) ও প্রোটিন (Protein) নিঃসৃত হয় এবং জরায়ুর মিউকাসটি মোটা ও শক্ত হতে থাকে। 

এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গর্ভধারণ হয়।  এই পর্যায়ে যদি ডিম্বাশয় থেকে কোনো ডিম্বাণু শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত না হয়, তাহলে গর্ভধারণ ঘটবে না এবং জরায়ু পুনরায় প্রথম ধাপ অর্থাৎ মেনস্ট্রুয়াল ধাপে চলে যাবে। এভাবেই চক্রাকারে চলতে থাকবে পিরিয়ড।


পিরিয়ডের সময় করণীয় 

পিরিয়ডের সময় কী কী করা উচিত এবং কী কী করা উচিত নয়- এ বিষয়ে আলোচনা করা হলোঃ-

পিরিয়ডের সময় যা করা উচিত


১. সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। বেশি বেশি পানি পান করা।

২. কুসুম গরম পানিতে গোসল করা। এতে আরাম পাওয়া যায়।
 
৩. অস্বাস্থ্যকর কাপড়ের টুকরা, ময়লা কাপড় ব্যবহার না করে পরিষ্কার নরম কাপড়, স্যানিটারি প্যাড বা ন্যাপকিন ব্যবহার করা।

৪. স্যানিটারি প্যাড দীর্ঘসময় ধরে ব্যবহার না করা। একটি প্যাড সর্বোচ্চ ৪-৬ ঘণ্টার বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়।

৫. তলপেটে গরম ভাপ নেওয়া। গরম পানির বোতল এবং কাপড় গরম করে নিয়ে ভাপ নেওয়া যায়। এটা করলে স্বস্তি অনুভব হয় ও ব্যথা কম অনুভূত হয়।

৬. তলপেটে হালকা মালিশ বা ম্যাসেজ করা।

৭. হালকা ব্যায়াম করা। যেমন- স্ট্রেচিং, হাঁটা।
 
৮. পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো। কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
 
৯. তীব্র ব্যথা হতে থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ও পরামর্শ অনুযায়ী অন্যান্য ওষুধ খাওয়া। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ বা মেডিসিন খাওয়া যাবে না।

এই কাজগুলো পিরিয়ডের সময় প্রতিটি মেয়ের করা উচিত এবং কর্তব্য। তাতে নিজের জন্যই ভালো হবে।


পিরিয়ডের সময় যা করা উচিত নয়

১. অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগানো। বেশিক্ষণ খিদে নিয়ে থাকা যাবে না।
 
২. ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল জাতীয় খাবার খাওয়া । যেমন, কফি ও নেশা জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে।
  
৩. ধুমপান করা। তামাকজাত পণ্য পরিহার করতে হবে।
 
৪. অনিরাপদ যৌনসম্পর্ক (Unprotected Sex)। পিরিয়ড চলাকালীন সেক্স না করা সবচেয়ে ভালো। যদি করতেই হয় তাহলে কনডম ও অন্যান্য নিরাপদ উপায়ে করতে হবে।
 
৫. ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত শরীরে অন্য কোনো ওষুধ খাওয়া ও ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে তরল প্রবেশ করানো। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ বা মেডিসিন খাওয়া ও নেওয়া যাবে না।

৬. ওয়াক্স ও শেইভিং করে লোম তোলা বা ফেলে দেওয়া। পিরিয়ডের সময় গোপনাঙ্গের লোম শেইভ না করা ও তুলে না ফেলা ভালো। পিরিয়ডের পর তা পরিষ্কার করতে পারবেন।

৭. একই স্যানিটারি প্যাড বা ন্যাপকিন দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করা ও প্যাড পরিধান না করে ঘুমানো। ৪-৬ ঘণ্টার বেশি একটি স্যানিটারি প্যাড পরা যাবে না। ঘুমানোর আগে অবশ্যই প্যাড পরিধান করে  ঘুমাতে হবে।

এসমস্ত কাজগুলো পিরিয়ডের সময় করা যাবে না এবং করা উচিত নয়। এ ব্যাপারে মেয়েদেরকে সচেতন থাকতে হবে। 


Sanitary pads and pills
Sanitary pads and pills



পিরিয়ডের সময় যে সমস্যা গুলো হয় 


মাসিক বা পিরিয়ড একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। একজন মেয়ে ও নারীর জন্য এটি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। একজন মেয়েকে বয়ঃসন্ধিকালের শুরু থেকে অর্থাৎ জীবনে প্রথম বার পিরিয়ড শুরু হওয়ার পর থেকে ৪০-৫৫ বছর বয়স পর্যন্ত এটি সহ্য করে থাকতেই হয়। পিরিয়ডের সময় হওয়া সমস্যা গুলো কারও কারও দৈনন্দিন জীবনে তেমন প্রভাব ফেলে না। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে তা যুদ্ধ করার পর্যায়ের অবস্থা হয়ে যায়, যা দৈনন্দিন জীবনে ভয়ংকর প্রভাব ফেলে। 

পিরিয়ডের সময় সাধারণত যে সমস্যা গুলো হয়ে থাকে,  তা হচ্ছে - 
  • হাত-পা ব্যথা ও যন্ত্রণা, 
  • ক্লান্তিবোধ, 
  • পেট ফাঁপা বা পেট ভরা আছে অনুভূত হওয়া,
  • স্তনবৃন্ত বা নিপলে (Nipple) ব্যথা, 
  • তলপেটে ব্যথা, মাথাধরা
  • হতাশা,অবসাদ, (হতাশা মুক্ত থাকুন)
  • ঘনঘন মেজাজ পরিবর্তন হওয়া ইত্যাদি।  
ঘনঘন মেজাজ পরিবর্তন হওয়াকে "মুড সুইং( Mood Swing)" বলা হয়। প্রতিটি মেয়ের মধ্যেই এই মুড সুইংয়ের প্রবণতা আছে, যা পিরিয়ডের সময় বেশি দেখা যায়। এ সময় হঠাৎ ভালো মেজাজ থাকতে থাকতেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়, বিরক্তি আসে, কান্নাকাটি করা- এরকম  অবস্থা হয়। এর কারণে " প্রি মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম (Pre-Menstrual Syndrome) " নামক একটি মানসিক রোগের দেখা দেয়, যাকে সংক্ষেপে "পিএমএস (PMS)" বলা হয়। 

হতাশা, অবসাদজনিত সমস্যা,  অনিচ্ছা, হঠাৎ মুড সুইং - এর মতো সমস্যা হয় পিএমএস এর সময়। পিএমএস এর একটি ধরণ হচ্ছে " প্রি মেনস্ট্রুয়াল ডিসফোর্বিক ডিসঅর্ডার( Pre-Menstrual Dysphoric Disorder "), যা সংক্ষেপে "পিএমডিডি (PMDD)" বলা হয়ে থাকে।

তাই মেজাজ ভালো রাখার জন্য চেষ্টা করতে হবে।


পিরিয়ডের সময় সতর্কতা

পিরিয়ডের সময় করণীয় ও পিরিয়ডের কালার সম্পর্কে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে মেয়েদের। শুধু মেয়েদেরই নয়, মেয়ের পরিবারের অন্য সদস্যদেরকেও সতর্ক ও সচেতন থাকা উচিত। স্যানিটারি প্যাড বা ন্যাপকিন ব্যবহার করার সময়ও খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।  এক প্যাড, দীর্ঘ সময় পরিধান করে থাকা উচিত না। একটি প্যাড সর্বোচ্চ ৪-৬ ঘণ্টা ব্যবহার করতে হবে। নিম্নমানের স্যানিটারি প্যাড সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। কারণ, বাজারে পাওয়া অনেক প্যাড নিরাপদ না। কিছু প্যাডে রাসায়নিক (Chemicals) ব্যবহার করা হয় যা অত্যন্ত ক্ষতিকর।  

অনিরাপদ প্যাড ব্যবহার করতে থাকলে এবং সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে বিভিন্ন রোগের দেখা দিতে পারে। ভ্যাজাইনাল ইনফেকশন ( Vaginal infection) এর অনেক রোগ হতে পারে। দীর্ঘ সময় বা ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় একই প্যাড পরিধান করে থাকলে যৌনাঙ্গে চুলকানি, ফোঁড়া, যৌনাঙ্গের বিভিন্ন রোগ হতে পারে। কিছু স্যানিটারি প্যাডে দীর্ঘসময় ব্যবহারের জন্য  সেলুলোজের একপ্রকার উপাদান ব্যবহার করা হয়,  যা জরায়ুর ক্যান্সারের সৃষ্টি করতে পারে। তাই এসব ব্যাপারে সর্বোচ্চ সচেতন হতে হবে এবং সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।


পিরিয়ডে কী কী খাওয়া উচিত



কী কী খাওয়া উচিত?

নারীদের জন্য মাসিক বা পিরিয়ড  অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। পর্যাপ্ত সচেতনতা অবলম্বন না করলে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন সমস্যা, এমনকি মারাত্মক সমস্যারও সৃষ্টি হতে পারে। পিরিয়ডের সময় সচেতন থাকতে খাবারের তালিকায় সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে হবে। অনেকেরই মাসিকের সময় বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। খাবারের তালিকায় কিছু খাবার থাকে যা পিরিয়ডের সমস্যাগুলো কমিয়ে দেয় এবং ভালো করে দেয় ,  আবার কিছু খাবার থাকে যা পিরিয়ডের সময় অসহনীয় পর্যায়ের ও মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করে। পিরিয়ডের সময় হওয়া সমস্যাগুলো হচ্ছে-

১. তলপেটে ব্যথা এবং খিঁচুনি 
২. মাথা ব্যথা 
৩. বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া 
৪. অবসাদজনিত সমস্যা 
৫. মেজাজ পরিবর্তন বা মুড সুইং 

এছাড়াও আরও কিছু সমস্যা হয়ে থাকে অনেকের। এই সকল সমস্যাগুলো কমাতে খাবারের তালিকায় মনোযোগী হতে হবে। কী কী খাওয়া ঠিক হবে এবং কী কী খাওয়া ঠিক না, এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে। পিরিয়ডের সময় খাবার নিয়ে এখানে বিস্তারিত বলা হয়েছে। 

পিরিয়ডের সময় যা খাওয়া উচিত

পানিঃ পানির অপর নাম জীবন বলা হয়। মানবদেহের জন্য পানির প্রয়োজনীয়তা সবাই জানি। নারীদের মাসিক বা পিরিয়ডের সময় অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। পিরিয়ডের সময় শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়, যা পিরিয়ডের সময়ে একটি সাধারণ সমস্যা। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে পানিশূন্যতা ও পেট ফাঁপার মতো সমস্যাগুলো থেকে মুক্ত থাকা যায়। 

ফলঃ ফলমূল পিরিয়ডের সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার। কারণ, ফলমূলে প্রচুর ভিটামিন ও প্রয়োজনীয় অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা পিরিয়ডের সময় খুবই দরকারী। পানিসমৃদ্ধ ফল যেমন- তরমুজ, শসা শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে ব্যাপক সহায়ক। পিরিয়ডের সময় চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া উচিত না, তাই মিষ্টিজাতীয় ফলগুলো হতে পারে দারুণ সহায়ক। কারণ, শরীরের পুষ্টির জন্য দরকারী একটি খাদ্য উপাদান হচ্ছে গ্লুকোজ। পিরিয়ডের সময় মিষ্টিজাতীয় ফলগুলি শরীরে গ্লুকোজের ঘাটতি পূরণ করে। তাই মিষ্টি স্বাদযুক্ত ফলগুলো খেতে পারেন। 

শাকসবজি ও আঁশজাতীয় খাবারঃ পিরিয়ডের গুরুত্বপূর্ণ সময়টিতে নারীদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান হচ্ছে আয়রন (Iron) বা লৌহ। সবুজ ও রঙিন শাকসবজি শরীরের আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে। তাছাড়া ম্যাগনেশিয়াম খাদ্য উপাদানটিও বিভিন্ন রঙিন শাকসবজি থেকে পাওয়া যায়। ম্যাগনেশিয়াম পিরিয়ডের সময় মাথা ব্যথা, পেট ব্যথার মতো সমস্যাগুলো কমাতে সাহায্য করে।

শাকসবজির মতো ফাইবার বা আঁশজাতীয় খাবারগুলো শরীরের বিভিন্ন অন্ত্রের চলাচল নিয়মিত বজায় রাখে এবং হজমে সহায়তা করে। পিরিয়ডের সময় সুস্থ থাকতে খাবারের হজমশক্তি খুব প্রয়োজন। আঁশযুক্ত খাবারগুলো হজমশক্তি উন্নত করে।

মুরগির মাংসঃ মুরগির মাংস হচ্ছে আয়রন বা লৌহ সমৃদ্ধ একটি খাবার। পিরিয়ডের সময়ে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে মুরগির মাংস খুবই ভালো একটি খাদ্য উপাদান। তাছাড়া মুরগির মাংসে আছে গুরুত্বপূর্ণ আমিষ বা প্রোটিন ( Protein), যা শরীরের জন্য খুব প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান। 

মাছঃ প্রোটিন, আয়রন, ওমেগা- থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এর  মতো গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদানের ভরপুর খাদ্য হচ্ছে মাছ। সামুদ্রিক মাছসহ অন্যান্য মাছগুলোও শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় এই পুষ্টি উপাদান গুলো সরবরাহ করে থাকে। মাছকে বলা হয় সবচেয়ে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার। মাছে থাকা ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড (Omega-3 fatty acids) উপাদানটি মানবদেহের জন্য খুবই কার্যকর ও প্রয়োজনীয় একটি খাদ্য উপাদান। 

কারণ,  পিরিয়ডের সময় হওয়া ব্যথা ও অবসাদজনিত সমস্যাগুলো দূর করতে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড কার্যকর ভূমিকা পালন করে। একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ডিপ্রেশন বা হতাশা, বিষণ্ণতা কাটাতে সাহায্য করে।  পিরিয়ডের সময় ব্যথা ও মুড সুইং এর মতো সমস্যাগুলো কমাতে ওমেগা-থ্রি অনেক কার্যকরী। তাই পিরিয়ডের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে এই খাদ্য উপাদানটি খেতে হবে। বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছগুলো থেকে ওমেগা-থ্রি পাওয়া যায়। 

বাদাম ও বাদামজাতীয় খাবারঃ ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ আরও একটি সহজ খাদ্য উপাদান হচ্ছে বাদাম। বিভিন্ন ধরণের বাদাম আছে, যা দিয়ে বিভিন্ন বাদামজাতীয় খাবার তৈরি করা হয়। এছাড়াও এতে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম সহ আরও অন্যান্য ভিটামিন, যা শরীরের জন্য দরকার হয়। কাজুবাদাম ( Almonds), চিনাবাদাম (Peanuts), আখরোট (Walnuts) খাবেন পিরিয়ডের সময়। 

ডাল ও বীজজাতীয় খাবারঃ মসুরের ডাল,  মটরশুঁটি, শিম, মিষ্টি কুমড়ার বিচি - এই খাবারগুলো তে রয়েছে প্রোটিন, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম। পিরিয়ডের সময় আয়রন এর ঘাটতি মেটাতে এই খাবারগুলো খাওয়া ভালো। কুমড়ার বিচি, গমের বীজ, সূর্যমুখীর বীজের মতো উপাদানগুলোতে রয়েছে ভিটামিন-ই।  


নিয়মিত পিরিয়ডের জন্য খাবার 

যাদের পিরিয়ড নিয়মিত হয় না তারা আনারস,  আদা, দারুচিনি, কাঁচা পেঁপে, ধনেপাতার মতো খাবারগুলো খেলে নিয়মিত পিরিয়ড হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।  আদা ও দারুচিনি চা বানিয়ে খাওয়া যায়। আদা চা  মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব  কমাতেও সহায়ক।

মুড সুইং এর জন্য খাবার

পিরিয়ডের সময় সাধারণ একটি সমস্যা হচ্ছে মুড সুইং। এই সমস্যা টি মারাত্মক প্রভাব ফেলে মেয়েদের দৈনন্দিন জীবনে।ডিম, টমেটো, লেবু, ব্রুকলি, হলুদের গুঁড়া, কমলা, ডার্ক চকোলেট- এই খাবারগুলো মনে উৎফুল্লতা আনতে সাহায্য করে এবং মুড সুইং রোধ করে। 

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর খাবার

পাকা পেঁপে,  সবুজ চা বা গ্রিন টি, আঁশজাতীয় খাবার যেমন বিভিন্ন শাকসবজি পিরিয়ডের সময় ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

এছাড়াও আয়রনের জন্য কলা, পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, ফুলকপি, তেঁতুল, মাছ, মাংস, ডিম, কলিজা খাওয়া যায়। লেবু, কলা, কামরাঙা, আমড়া ইত্যাদি খাবারগুলো ভিটামিন-সি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টিতে সহায়তা করে। দই ইস্ট ও অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া জনিত বিভিন্ন ভ্যাজাইনাল ইনফেকশন বা যৌনাঙ্গের রোগগুলো থেকে মুক্ত থাকতে সহায়তা করে।

পিরিয়ডের সময় যা খাওয়া উচিত না

কিছু খাবার যেমন পিরিয়ডের জন্য উপকারী,  তেমনি কিছু খাবার আছে যা ক্ষতিকর। তাই পিরিয়ডের সময় সেই খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। নইলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

লবণ ও সোডিয়ামজাত খাবারঃ পিরিয়ড চলাকালীন লবণ পরিহার করে চলতে হবে খাবার তালিকায়৷ কারণ, লবণ পেট ফাঁপা সহ অন্যান্য কিছু সমস্যার সৃষ্টি করে যা পিরিয়ডে ভোগান্তির কারণ হয়ে থাকে। তাই লবণ ও যে সকল খাবারে বেশি মাত্রায় সোডিয়াম আছে, সেই খাবারগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে। 

চিনিজাতীয় খাবারঃ মুড সুইং ভয়ংকর একটি সমস্যা। পিরিয়ডের সময় চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার এই মুড সুইং এর সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। অতএব,  মেজাজ ভালো রাখতে চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে পিরিয়ড চলাকালীন।

ক্যাফেইনঃ ক্যাফেইনজাত খাবার গুলো মাথা ব্যথা, পেট ফাঁপা, পাতলা পায়খানা ও ডায়রিয়ার মতো সমস্যাগুলো সৃষ্টি করে। তাই পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে কফি এবং ক্যাফেইন আছে এমন খাবার পরিহার করতে হবে। 

অ্যালকোহলঃ সুস্থ, অসুস্থ সবার জন্যই অ্যালকোহল ক্ষতিকর। এজন্য চিকিৎসকরা অ্যালকোহল জাতীয় খাবার ও ড্রিংকস নিতে নিষেধ করেন। অ্যালকোহলের কারণে মাথা ব্যথা, পেট ফাঁপা, পানিশূন্যতা, অবসাদ, বমি ও ডায়রিয়া হয়ে থাকে। তাই পিরিয়ডের সময় এই ধরণের খাবার একদমই এড়িয়ে চলতে হবে। নাহলে পিরিয়ডের সমস্যাগুলোকে বাড়িয়ে তুলবে অ্যালকোহলজাত খাবার।

মসলাদার খাবারঃ মসলাযুক্ত খাবার থেকে অনেকের পেট ব্যথা, পেট ফাঁপা,  বমি বমি ভাব, পাকস্থলীর ব্যথা, ডায়রিয়া হয়। সেইসাথে অবসাদজনিত সমস্যাও হয়ে থাকে। তাই মসলাদার ও ঝাল খাবারগুলো পিরিয়ডের সময় না খাওয়াই ভালো। 

দুগ্ধ জাত খাবারঃ পিরিয়ডের সময়টুকুতে দুধ খাওয়া ঠিক নয়। দুগ্ধজাত আরও যেসকল খাবার আছে যেমন- পনির, আইসক্রিম এসব অতিরিক্ত খাওয়া উচিত না।  তবে ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটাতে দুধ দিয়ে তৈরি খাবার যেমন, টোফু, সয়া মিল্ক খাওয়া যেতে পারে। দুধ খেতে হলে দুধের সাথে হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে খাওয়া উপকারী। 

লাল মাংসঃ চারপায়া প্রাণী যেমন- গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, উট, শুকর এর মাংস লাল হয়। এই লাল মাংস পিরিয়ডের সময় না খাওয়া ভালো। কারণ,  এতে অতিরিক্ত আয়রন বা লৌহ রয়েছে এবং সাথে অতিমাত্রায় প্রোস্টাগ্লানডিনস( Prostaglandins) নামক একটি উপাদানও রয়েছে যা পিরিয়ডে বিরূপ ও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। 

Menstrual Cycle বা পিরিয়ডের সময় চলাকালীন খাবারের তালিকায় যথেষ্ট লক্ষ্য রাখতে হবে।



পিরিয়ড নিয়ে কুসংস্কার

পিরিয়ড এর ব্যাপারে অতীতকাল থেকে বিভিন্ন ভুল ধারণা ও কুসংস্কার চালু হয়ে আসছে যা এই যুগে এসেও অনেক দেশে প্রচলিত।

পিরিয়ড হওয়ায় মেয়েদের অপবিত্র ও নোংরা হিসেবে দেখা, পিরিয়ড হলে ৫-৭ দিন আলাদা ঘরে থাকতে দেওয়া, রান্নাঘরে ঢুকতে না দেয়া, অন্যরা খাবে এমন খাবার স্পর্শ করতে না দেওয়া, পুকুরে ও নদীতে গোসল করতে না দেওয়া, তুলসি গাছ ধরতে না দেওয়া ইত্যাদি কাজগুলো ভুল কাজ। মানুষ না জেনে এসব ভুল কাজ করে আসছে যা কুসংস্কার। 

পিরিয়ড সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক একটি ব্যাপার। এতে কারও হাত নেই। তাহলে পিরিয়ড হওয়া মেয়ের বা নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা এবং তাদেরকে খারাপভাবে নেওয়া একদমই ঠিক না। পিরিয়ড হলে প্যাড ব্যবহার করাটাও স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু কিছু সমাজে কাউকে প্যাড ব্যবহার করতে দেখলে বাঁকা চোখে দেখে।
আমাদের এই কুসংস্কার ও ভুল ধারণাগুলো থেকে বের হয়ে আসতে হবে। 


পিরিয়ড হলে শুধু মেয়ে বা নারীকেই নয়, তার পরিবারের সকল সদস্যকে পিরিয়ড সম্পর্কে জানাতে হবে, বোঝাতে হবে, সবার ভুল ধারণা ভাঙতে হবে। শুধু মেয়ে বা নারীরা সচেতন থাকলে হবে না,  পরিবারের পুরুষ সদস্যদেরও সচেতন হতে হবে। সবাইকে সচেতন করতে হবে।


শেষে

আপনাদেরকে এতক্ষণ যা যা বলা হলো পিরিয়ড নিয়ে খুঁটিনাটি, করণীয়গুলো ও বর্জনীয়গুলো মেনে চলে স্বাস্থ্যকর পিরিয়ড বজায় রাখুন। পিরিয়ডের সময় করণীয় কী, পিরিয়ডে কী কী খাওয়া উচিত, সতর্কতা ও পিরিয়ড নিয়ে কুসংস্কার সম্পর্কে পিরিয়ডের বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
নিজে সচেতন হোন এবং অপরকেও সচেতন করুন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url