চিরতরে ডার্ক সার্কেল দূর করার ঘরোয়া উপায় ও চিকিৎসা
remove dark circle under eyes |
চোখের নিচের কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেল নিয়ে অনেকেই বিরক্তিকর ও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে থাকেন। পাণ্ডার মতো চোখ দেখে মানুষের হাস্যরসের শিকারও হতে হয় অনেককে। এটি সহজেই দূর করা যায়, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে তা কঠিন ও ক্ষতিকারক হতে পারে। এই আর্টিকেলে চোখের নিচের কালো দাগ দূর করার উপায় কী? চিরতরে ডার্ক সার্কেল দূর করার ঘরোয়া উপায় ও চিকিৎসা সম্পর্কিত বিষয়বস্তু জানতে পড়তে থাকুন শেষ পর্যন্ত।
যা যা থাকছে-
- চোখের নিচে কালো দাগ কেন হয়?
- চোখের নিচের কালো দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায় ও চিকিৎসা।
- এটি কতটা ক্ষতিকারক?
- সাবধানতা।
চোখের নিচের কালো দাগ কেন হয়?
বয়স, বংশগত, জীবনযাপনের ধরণ এসব কারণে চোখের ডার্ক সার্কেল হয়ে থাকে। এর কারণে বয়সের তুলনায় নিজেকে আরও বেশি বয়স্ক দেখা যায়। নারী-পুরুষ যে কারও চোখের নিচের কালো দাগ হওয়ার সমস্যা হতে পারে। তবে বয়স্কদের মধ্যে এটা বেশি দেখা যায়। এর পেছনে বেশকিছু কারণ থাকে। কারণগুলো হলো-
- ঘুম ও অবসাদজনিত কারণে চোখের রক্ত চলাচলে সমস্যা হলে ত্বকের নিচে থাকা রক্তের কালো টিস্যু বের হয়ে আসে, চোখের নিচের ত্বক অনেক পাতলা হওয়ায় সেখানে ডার্ক সার্কেল বা চোখের নিচের কালো দাগ সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত ঘুম, কম ঘুম দুটোই এই সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে এবং ত্বককে ফ্যাকাসে দেখায়। ঘুমের ঘাটতির কারণে চোখের নিচের অংশে তরল জমে চোখ ফোলা হয়ে যায়, চোখের আশেপাশের চামড়া ঝুলে যায়।
- বংশগত কারণও ডার্ক সার্কেল হওয়ার পেছনে দায়ী। পরিবারে কারও ডার্ক সার্কেল থাকলে সন্তানসন্ততিদের মাঝেও তা হয়ে যায় এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে তা আরও খারাপ আকার ধারণ করতে পারে আবার আস্তে আস্তে ভালো হয়ে যেতেও পারে।
- কিছু রোগ যেমন থাইরয়েডের রোগের কারণেও লক্ষ্যণ হিসেবে চোখের নিচের কালো দাগ পড়তে পারে।
- বয়সের কারণে ডার্ক সার্কেল হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার বলা যায়, তবে সবক্ষেত্রে না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষ চামড়া পাতলা হয়ে যেতে থাকে, শরীরের ফ্যাট কমে গিয়ে ত্বকের নিচের কালো রক্তনালীগুলোকে দৃশ্যমান করে তুলে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করলে পানিশূন্যতা হয়েও ডার্ক সার্কেল দেখা দিতে পারে। আপনি নিশ্চয় জানেন যে, পানি শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করে।
- এলার্জির ইফেক্ট বা প্রতিক্রিয়া ও চোখ শুষ্ক হলেও চোখের নিচের কালো দাগ দেখা দেয়। সর্দি ও এলার্জির কারণে রক্ত চলাচল কমে গিয়ে চোখের নিচের এরিয়ায় কালো দাগ তৈরি হয়।
- দীর্ঘসময় ধরে ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেমন- মোবাইল, টিভি, কম্পিউটার ব্যবহার করতে থাকতে চোখের পেশির উপর চাপ পড়ে এবং চোখের আশেপাশের রক্তের নালিকাগুলো প্রকাশ্যে নিয়ে আসে। ফলে চোখের নিচে কালো দাগ হয়।
- অতিরিক্ত সূর্যের তাপে মেলানিনের মাত্রা বাড়তে পারে যা ত্বকের রঙ ও গঠন পরিবর্তন করে দিতে পারে। এতে চোখের আশেপাশের চামড়ার বর্ণও পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে অর্থাৎ ডার্ক সার্কেল হতে পারে।
চোখের নিচের কালো দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়
এই সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে অনেকেই অনেক উপায় অবলম্বন করে। কেউ ঘরোয়া উপায় আবার কেউ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা ও মেডিসিন নিয়ে। চেহারার সৌন্দর্য নষ্ট করা এই সমস্যার সমাধান খুব সহজ কিছু ঘরোয়া উপায়ে করা যায়। কী কী উপায় আছে -
ঘুমঃ অবশ্যই পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের জন্য প্রয়োজন। ঘুমের ফলে শুধু শরীর বিশ্রামই পায় না, সাথে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা উন্নত করতেও ঘুম খুব দরকারী। ঘুমের ঘাটতির কারণে চেহারায় একরকম ফ্যাকাসে ভাব বিরাজ করে ও চোখের নিচের ত্বক পাতলা হওয়ায় সহজেই ডার্ক সার্কেল সৃষ্টি হয়ে যায়। এ সমস্যা থেকে প্রতিকার পেতে অবশ্যই দৈনিক কমপক্ষে ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
শসা ব্যবহার করার মাধ্যমেঃ খুবই সহজ একটি উপায় এটি। প্রায় সব ত্বক বিশেষজ্ঞ ও ডাক্তাররা চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে এটি করার পরামর্শ দিয়েছেন। শসা স্লাইস বা ফালি আকারে কেটে চোখের উপর ১০-১৫ মিনিট রেখে তারপর মুখমণ্ডল পানি ধুয়ে ফেলুন। এটি সমস্যা থাকাকালীন পর্যন্ত দিনে ২ বার করে করুন।
শুধু শসা ব্যবহার করেও সমাধান পাওয়া যায়, আবার শসার রসের সাথে লেবুর রস মিশিয়েও করতে পারেন।
সতর্ক থাকবেন যেন লেবুর রস চোখের ভিতর না ঢুকে।
ঠাণ্ডা স্পর্শঃ এটি হচ্ছে ঠাণ্ডা কিছু যেমন বরফ কয়েক টুকরা করে নিয়ে কাপড় বা নরম কিছুর মধ্যে রেখে চোখের উপর রাখা। এভাবে না করলেও ফেইস মাস্ক ও চায়ের ব্যাগ ব্যবহার করেও এটা করা যায়। মাস্ক ও ব্যাগ ব্যবহার করলে আগে মাস্ক ফ্রিজে কিছুক্ষণ রেখে ঠাণ্ডা করে নিতে হবে। মুখে ও চোখের নিচে এমন ঠাণ্ডা স্পর্শ করানোর মাধ্যমে মুখের ত্বকে আরাম পাওয়া যায়, ত্বকের ফোলা অবস্থা কমে, ডার্ক সার্কেল দূর হয়। এটিও দিনে ২ বার ব্যবহার করতে পারেন ১০ মিনিট করে।
আলুঃ আলু তো সহজলভ্য ও সহজপ্রাপ্য একটি বস্তু। সবার রান্নাঘরে এটি থাকে। প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক হিসেবে আলুর নাম আছে কারণ এতে থাকে প্রাকৃতিক ব্লিচিং (Bleaching) উপাদান। কাঁচা আলু গলিয়ে রস সহ পেস্ট বানিয়ে কিছুক্ষণ ফ্রিজে রেখে তারপর চোখের নিচে ১০-১৫ মিনিট মাখিয়ে রাখুন। পরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।চাইলে পুরো মুখেই মাখাতে পারেন, কারণ এতে ত্বকের ফোলা অবস্থা কমে আর ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
টমেটোঃ টমেটো ত্বক নরম করতে সাহায্য করে। সাথে চোখের নিচের কালো দাগ অপসারণ করতেও এটি সহায়ক। তবে টমেটোর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে তা ব্যবহার করতে হবে। টমেটো ও লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে ১০-১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন, তারপর ধুয়ে ফেলুন। দিনে ২ বার এটি ব্যবহার করুন ভালো ফলাফল পেতে।
সতর্ক থাকবেন যেন রস যেন চোখের ভিতর না ঢুকে।
বাদাম ও নারিকেল তেলঃ রাতে ঘুমানোর আগে বাদাম বিশেষ করে কাজুবাদামের তেল চোখের চারপাশে মালিশ করুন ২-৩ মিনিট করে, তারপর ১০-১২ মিনিট তেল রেখে ধুয়ে ফেলুন। নারিকেল তেলও এভাবে ব্যবহার করতে পারেন।
বাদাম ও নারিকেলে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন-ই আছে, যা ত্বকের ক্ষতি ও কালো দাগ দূর করতে কার্যকর।
দুধঃ ঠাণ্ডা দুধে কটনবাড বা তুলো ভিজিয়ে চোখের চারপাশে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রাখুন ও তারপর ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ও ডার্ক সার্কেল দূর করতে এটিও একটি সহজ ঘরোয়া উপায়।
গোলাপজলঃ গোলাপজল আর দুধ মিশিয়ে কটনবাড বা তুলো সেই মিশ্রণে ভিজিয়ে চোখের চারপাশে মাখুন। ১৫-২০ মিনিট পর তা ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের কোমলতা বজায় রাখতে গোলাপজল কার্যকর একটি উপাদান।
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারঃ সব ময়েশ্চারাইজারই ত্বকের জন্য ভালো না। ডার্ক সার্কেল দূর করতে এমন কিছু ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে যেগুলোতে এন্টিঅক্সিডেন্ট, এন্টিব্যাকটেরিয়া, অ্যালোভেরা, ভিটামিন-ই, ভিটামিন-সি, রেটিনল (Retinol) উপাদানগুলো আছে।
চিকিৎসা ও মেডিসিন
কোনো মেডিসিন নেওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ও পরামর্শ অনুযায়ী তা নিতে হবে। চিরতরে চোখের নিচের কালো দাগ দূর করার যে চিকিৎসাগুলো আছে সেগুলো হলো-
- ত্বকের বর্ণের পরিবর্তন করতে পিগমেনটেশন ( Pigmentation)।
- লেজার সার্জারির মাধ্যমে চামড়ার ফোলা ও ঝুলে পড়া দূর করে চামড়া শক্ত ও নমনীয় করা।
- ট্যাটু। এটা পাতলা চামড়ায় করে চামড়ার বর্ণ পরিবর্তন করতে করা হয়।
- ফ্যাট রিমুভাল।
- সার্জিক্যাল ইমপ্ল্যান্ট।
চিকিৎসা ও মেডিসিন না নিয়েও ঘরোয়া উপায়েই এই সমস্যা দূর করা যায়।
সাবধানতা
- ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। বিশেষ করে ভিটামিন-বি, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ই ত্বকের জন্য উপকারী।
- পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। রাত জাগা কমাতে হবে, বেশি রাত না জাগা ভালো।
- অন্ধকারে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার না করাই ভালো।
- ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো মেডিসিন নেওয়া যাবে না। এমনকি নিজে ভালো মানসম্মত ক্রিম নির্বাচন করতে না পারলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ক্রিম ব্যবহার করতে হবে।
- অতিরিক্ত রোদ আর তাপ থেকে দূরে থাকতে হবে।
শেষে
চোখের নিচের কালো দাগ দূর করার উপায় কী এবং ডার্ক সার্কেল দূর করার ঘরোয়া উপায় ও চিকিৎসা সম্পর্কে উপরে যা বলা হয়েছে তা খুবই কার্যকর। নিজে নিজেই চোখের নিচের কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেল দূর করতে পারবেন উপরিউক্ত সহজ উপায়গুলোর মাধ্যমে। একদিনেই ফলাফল না পেলে ধৈর্য্য ও যত্ন সহকারে কয়েকদিন করলে অবশ্যই ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।