স্বপ্নদোষ হলে করণীয় কী? স্বপ্নদোষের উপকারিতা ও বন্ধ করার উপায়
prevent wet dream |
স্বপ্নদোষ হচ্ছে মানুষের একটি শারীরিক প্রক্রিয়া, যা ঘুমের মধ্যে ঘটে থাকে। ইংরেজিতে স্বপ্নদোষকে "ওয়েট ড্রিম (Wet Dreams)" বলা হয়। অনেকেই এই বিষয়টি নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে ও এটি নিয়ে দুশ্চিন্তা করে। সেসকল দুশ্চিন্তা হওয়া স্বাভাবিক কি-না তা এই আর্টিকেলে স্বপ্নদোষ কেন হয়? স্বপ্নদোষ হলে করণীয় কী? স্বপ্নদোষের উপকারিতা ও বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে জানতে পারবেন।
যেগুলো থাকছে-
- স্বপ্নদোষ কেন হয়?
- স্বপ্নদোষ হওয়ার কারণ কী?
- স্বপ্নদোষ হলে করণীয় কী?
- স্বপ্নদোষের উপকারিতা ও অপকারিতা।
- স্বপ্নদোষ প্রতিকার করা বা বন্ধ করার উপায়।
- চিকিৎসা।
স্বপ্নদোষ বিভিন্ন নামে পরিচিত। ভেজা স্বপ্ন(Wet dreams), রাতের নির্গমন, ধাতু নির্গমন ইত্যাদি। কিন্তু চিকিৎসকদের ভাষায় এটি "Nocturnal emissions" বলা হয়। Nocturnal মানে হলো রাতে, আর emissions অর্থ হচ্ছে নির্গমন হওয়া বা বের হওয়া।
স্বপ্নদোষ একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় ঘটনা। নারী-পুরুষ সবার জীবনের কোনো না কোনো সময় এটি হয়ে থাকে। বয়ঃসন্ধিকালের ১৩-১৯ বছর বয়সের মধ্যে স্বপ্নদোষ বেশি হয়। তবে বয়ঃসন্ধি শেষ হলেও এটি হয়ে থাকে এবং যা স্বাভাবিক।
স্বপ্নদোষ কেন হয়?
বয়ঃসন্ধিতে পড়লে ছেলে-মেয়ে উভয়েই এই শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। কিন্তু মেয়েদের মধ্যে এই ঘটনা খুব কমই ঘটে। প্রায় সকল পুরুষদের জীবনে ওয়েট ড্রিম হলেও, সকল নারীদের মধ্যে এটা হয় না।
বয়ঃসন্ধিকালে পদার্পণ করলে শরীরে বিশেষ করে ছেলেদের মধ্যে টেস্টোস্টেরন (Testosterone) হরমোন উৎপন্ন হওয়া শুরু হয়। টেস্টোস্টেরন উৎপন্ন হলে তা বীর্য ও শুক্রাণু তৈরি করে। বীর্য উৎপন্ন হয়ে বীর্যথলিতে ও শুক্রাণু অণ্ডকোষে জমা হয়। যখন বীর্যথলির ধারণক্ষমতার বেশি বীর্য জমা হয়, তখন তা শরীর থেকে বের হয়ে আসে। যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘুমের মধ্যে বের হয়, যেটাকে স্বপ্নদোষ বলে। ঘুমের রেম (REM - Rapid Eye Movement) অবস্থায় এমনটা হয়। এই অবস্থাটা হচ্ছে যখন মানুষ গভীর ঘুম ও হালকা ঘুমের মাঝামাঝি সময়ে স্বপ্ন দেখে।
জেনে রাখা ভালো- স্বপ্নদোষের মাধ্যমে বের না হলেও বীর্য প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে আসে, চরম উত্তেজনা অনুভব হওয়ার মুহুর্তে পিচ্ছিল তরল আকারে বের হয় এবং বীর্যথলির ধারণক্ষমতা সীমাবদ্ধ রাখে।
আর মেয়েদের ক্ষেত্রে স্বপ্নদোষ হলে অর্গাজম হতেও পারে, আবার না-ও পারে। মেয়েদের যোনিপথ পিচ্ছিল হওয়া স্বপ্নদোষের কারণে হয় না সবসময়, অন্য কারণেও যোনিপথ পিচ্ছিল হতে পারে।
ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা স্বপ্নদোষ হলে বেশি তৃপ্তি অনুভব করে। সাদাস্রাবও এই দোষে হয়ে থাকে।
স্বপ্নদোষ হওয়ার কারণ কী?
আসলে এটি একটি প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা কোনো রোগ নয়। বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছালে এটি যে কারও যে কোনো সময় হতে পারে, এমনকি কোনো কারণ ছাড়াই হতে পারে। স্বপ্নদোষ হওয়ার পেছনে মাত্র ৮% কারণ হয়ে থাকে বিভিন্ন যৌন বিষয়ক চিন্তাভাবনা ও কার্যকলাপ। যে কারণগুলো স্বপ্নদোষ ঘটাতে কাজ করে, সেগুলো হচ্ছে-
- মূল কারণ হিসেবে বলা যায় হরমোনের নিঃসরণ বেশি হওয়া। টেস্টোস্টেরন হরমোন এর জন্য বেশিরভাগ দায়ী।
- বেশিরভাগ সময় যৌন বিষয়ক চিন্তাভাবনা, যৌনতা নিয়ে ভাবা।
- যৌনতা বিষয়ক ভিডিও দেখা।
- পর্ণ দেখা, যৌনতা সম্পর্কিত বই পড়া।
- ঘুমানোর আগে প্রস্রাব না করা অর্থাৎ প্রস্রাবের বেগ নিয়ে ঘুমানো।
- উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা। বিশেষ করে ঘুমানোর সময় উপুড় হয়ে শোয়া।
- ঘুমের মধ্যে বিছানায়, উরুর সাথে, কাপড়ের সাথে গোপনাঙ্গের উপর চাপ দেওয়া বা চাপ লাগা।
এগুলো উল্লেখযোগ্য কারণ। কিন্তু এসব কারণ ছাড়াও স্বপ্নদোষ হয়ে থাকে। যেহেতু এটি একটি প্রাকৃতিক ব্যাপার, সেহেতু এটির উপর কারও হাত নেই।
স্বপ্নদোষ হলে করণীয় কী?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘুমের মধ্যে স্বপ্নদোষ হয়। দিনের বেলা এটি হওয়ার ঘটনা তেমন নেই বললেই চলে। স্বপ্নদোষ হলে তেমন কোনো করণীয় নেই। ঘুমের মধ্যে হলে ঘুম ভাঙলে লিঙ্গ বা লজ্জা স্থান ধুয়ে আবার ঘুমিয়ে যেতে পারেন।
আর যদি ঘুম থেকে উঠে যান, তাহলে ভালোভাবে সাবান ও পানি দিয়ে গোপনাঙ্গ পরিষ্কার করে গোসল করে নিলেই যথেষ্ট।
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন, পুষ্টিকর খাবার খান।
মুসলমানদের রোজার সময় যদি এটি হয়, তাহলে ভয় পাওয়ার বা ঘাবড়ানোর কিছু নেই। স্বপ্নদোষ হলে রোজা নষ্ট হয় না, রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। গোসল করে পবিত্র হয়ে নিলেই হবে।
উপকারিতা ও অপকারিতা
স্বপ্নদোষ এর উপকারিতা বলতে হচ্ছে এর মাধ্যমে দূর্বল শুক্রাণুগুলো বেরিয়ে যায় ও সবল শুক্রাণুগুলো থেকে যায়। এটা জানেন যে, সবল শুক্রাণু একজন পুরুষের পুরুষত্ব নির্দেশ করে যা সন্তান উৎপাদনে ভূমিকা পালন করে।
এছাড়া স্বপ্নদোষ হওয়ার পর শরীরে স্বস্তি বিরাজ করে, প্রফুল্লতা আসে, মন ভালো থাকে।
সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক একটা ব্যাপার স্বপ্নদোষ। তাই এর কোনো ক্ষতি নেই। তবে অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ হলে সচেতন হতে হবে।
কিছু মানুষ মনে করে যে,
- এটি হওয়া ভালো না।
- এর কারণে বীর্য কমে যায়।
- এটি অসুস্থতার কারণ।
- এটি হতে থাকলে লিঙ্গ ছোট হয়ে যায় ইত্যাদি।
এসব কিছুই ভ্রান্ত ধারণা আর কুসংস্কার। স্বপ্নদোষ জীবনের একটি স্বাভাবিক অংশ, এর কোনো ক্ষতি নেই। তাই লোকের ভুল ধারণা, কুসংস্কার বিশ্বাস না করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
স্বপ্নদোষ বন্ধ করার উপায়
স্বপ্নদোষ বন্ধ বা প্রতিকার করার কোনো উপায় নেই। কারণ এটি প্রাকৃতিক বিষয়। বয়ঃসন্ধিতে আসলে এটি সবার সাথে হওয়া স্বাভাবিক। তবে কিছু উপায় অবলম্বন করলে এটি হওয়ার পরিমাণ কমানো যায়। সেই উপায়গুলো নিম্নরুপ-
- উপুড় হয়ে শোয়ার কারণে বেশিরভাগ স্বপ্নদোষের ঘটনা ঘটে। তাই উপুড় হয়ে শোয়া ও পেটের উপর ভর দিয়ে শোয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
- ঘুমাতে যাওয়ার ২-৩ ঘণ্টা আগে ভারী খাবার খাওয়া ভালো।
- রাতে ঘুমানোর আগে মাংস কম খাওয়া।
- ঘুমানোর আগে প্রস্রাব করে তারপর ঘুমানো। প্রস্রাবের চাপ নিয়ে এবং প্রস্রাবের অনুভূতি নিয়ে ঘুমানো যাবে না।
- ঘুমাতে যাওয়ার আগে অশ্লীল ও যৌন ভাবনা, যৌন উদ্দীপনা দেয় এমন ভিডিও দেখা থেকে বিরত থাকতে হবে। যৌন বিষয়ক চিন্তাভাবনা স্বপ্নদোষ ঘটানোর অন্যতম কারণ।
- মাস্টারবেশন বা হস্তমৈথুনের মাধ্যমে অনেকেই স্বপ্নদোষ বন্ধ করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু হস্তমৈথুন করা ভালো না, এর কুফল রয়েছে। ধর্মীয় দৃষ্টিতে হস্তমৈথুন করা নিষিদ্ধ।
চিকিৎসা
প্রাকৃতিক ঘটনা হওয়ায় স্বপ্নদোষ নিয়ন্ত্রণ কারও পক্ষে সম্ভব নয়। মাসে ৪ বারের বেশি স্বপ্নদোষ হওয়াকে স্বাভাবিক বলা হয়। আবার সপ্তাহে ২-৩ বার হওয়াকেও স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়। তাই এটি নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই।
কিন্তু, যদি প্রতিদিন স্বপ্নদোষ হয় আর যদি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় ও ঘুমের ঘাটতি সৃষ্টি হয়, মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। ডাক্তার সমস্যাটি পর্যবেক্ষণ করে তা সমাধান করার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে থাকে।
অনেকেই হোমিওপ্যাথি মেডিসিনের মাধ্যমে অতিরিক্ত স্বপ্নদোষ থেকে সমাধান পেয়েছে বলে মতামত দেয়।
সঠিক ধারণা
চিন্তার কারণ নেই। কারও মাসে ৫/৬ বার হতে পারে, আবার কারও সপ্তাহে ২-৩ বার। আবার কারও বছরে ১ বারও হতে পারে। আর যদি কারও কখনোই স্বপ্নদোষ না হয়, তাহলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। স্বপ্নদোষ সবারই হবে এমনটার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারও বেলায় তা না-ও হতে পারে, সেটা কোনো সমস্যার কিছু না। ভয় পাবেন না।
উপসংহারে
স্বপ্নদোষ কেন হয়? স্বপ্নদোষ হলে করণীয়, স্বপ্নদোষের উপকারিতা, স্বপ্নদোষ বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে এতক্ষণ যা বলা হলো তা জানার পর নিশ্চয় স্বপ্নদোষ বিষয়ে আপনার কোনো ভুল ধারণা থাকলে তা বুঝতে পেরেছেন। ভুল ধারণা দূর করে সচেতন হয়ে নিজের যত্ন নিন, কোনো সমস্যার সৃষ্টি হলে ডাক্তারের সাথে কথা বলে সমাধান করুন।
Very informative and helpful for youngs
Thank you