লাভ হ্যান্ডেল, পেটের মেদ কমানোর সেরা ব্যায়াম গুলো
lose belly fat. |
শুয়ে-বসে থাকতে থাকতে মানুষের শরীরে চর্বি স্তর বাড়তে থাকে, যার ফলে শরীর মোটা হতে থাকে ও ওজন বাড়তে থাকে। BMI অনুযায়ী সঠিক ওজনের বেশি ওজন হলে তা ব্যক্তির জন্য ক্ষতিকর। আবার শরীরে চর্বি বা ফ্যাট (Fat) জমার কারণে সৌন্দর্যে পরিবর্তন আসে, শারীরিক গঠনে পরিবর্তন আসে যা অনেককে হীনমন্যতায় ভোগায়। এই আর্টিকেল লিখা হয়েছে লাভ হ্যান্ডেল কী? লাভ হ্যান্ডেল, পেটের মেদ কমানোর সেরা ব্যায়াম গুলো নিয়ে।
যা যা থাকবে-
- লাভ হ্যান্ডেল কী?
- এটি কমানো নিয়ে কিছু তথ্য।
- লাভ হ্যান্ডেল , পেটের মেদ কমানোর সেরা ব্যায়াম।
লাভ হ্যান্ডেল কী? (What is Love Handle?)
অলস, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, শুয়ে-বসে থাকতে থাকতে মানুষের ওজন ও শরীরের চর্বি স্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে পিঠ, কোমর ও পেটের নিচের দিকে চর্বি জমে। পিঠ, কোমর ও পেটের এই অবস্থাকে লাভ হ্যান্ডেল বলে আধুনিক ভাষায়। সামান্য আর হালকা পরিমাণে যদি এই চর্বির মাত্রা থাকে, তাহলে দেখতে খারাপ দেখায় না বা কারও কাছে খারাপ লাগে না।
কিন্তু তা যদি অতিরিক্ত হয়ে যায়, তখন তা বেশিরভাগ মানুষকে শারীরিক গঠন নিয়ে চিন্তায় ফেলে। তখন লাভ হ্যান্ডেল বা সেই চর্বি স্তর কমানোর জন্য অনেক উপায় খুঁজতে থাকে। ডায়েট চার্ট ও কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমে এই অবস্থা কমানো যায় মাসখানেকের মধ্যেই। চেষ্টা করে যেতে হবে ধৈর্য্য ধরে, হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিলে হবে না।
জেনে নিন ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট।
কিছু তথ্য
প্রকৃতপক্ষে যেহেতু অতিরিক্ত ওজনের জন্য হওয়া চর্বি স্তর, সেহেতু ওজন কমানোর মাধ্যমেই এটি কমে যাবে। খাবারের তালিকায় ক্যালরি ঠিকঠাক পরিমাণে রাখা, কিছু ব্যায়ামের সাহায্যে এই অবস্থা দূর করা যায়। কিন্তু এটা ধরে নেওয়া যাবে না শুধু কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমে লাভ হ্যান্ডেল কমানো যাবে।
শরীরের এক অংশে এমন চর্বি জমা হওয়ায় তা শুধু কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমে সরানো যাবে না। পুরোপুরিভাবে তা কমাতে হলে নিজের শরীরের ওজন কমাতে হবে ও সঠিক ওজনে রাখতে হবে।
কিন্তু হ্যা, পেট ও কোমরের এমন কিছু কার্যকর ব্যায়াম আছে যেগুলো এই চর্বি স্তর কমিয়ে আনতে খুবই কার্যকর। ধৈর্য্য ধরে নিম্নোক্ত ব্যায়াম গুলো প্রতিদিন ৫-৬ মিনিট করে মাসখানেক করার ফলে আপনি এই অবস্থা কাটাতে সক্ষম হবেন বলে ফিটনেস ট্রেইনার ও বিশেষজ্ঞগণ মতামত দিয়েছে।
লাভ হ্যান্ডেল, পেটের মেদ কমানোর সেরা ব্যায়াম
১. কোমর ও নিতম্ব ওঠা-নামা : যেকোনো একপাশে কাত হয়ে শুয়ে যান সোজাভাবে। যেমন- বাম কাত হয়ে শুয়ে বাম হাত ও কনুইয়ের উপর ভর দিয়ে শোবেন। বাম পায়ের উপর ডান পা সোজা করে রাখবেন এবং পা থেকে মাথা পর্যন্ত সোজা হয়ে শুয়ে কোমর ও নিতম্ব উপরের দিকে উঠাতে-নামাতে থাকুন, এতে ভর থাকবে হাত, কনুই ও এক পায়ের উপর। এভাবে ৩০ সেকেন্ড করে তারপর ডান পাশ হয়ে শুয়েও এই ব্যায়ামটি করুন একই পদ্ধতিতে। এই ব্যায়ামে কোমরের দুই পাশের লাভ হ্যান্ডেল কমাতে কাজ করবে।
২. ত্রিভুজাকার পোজ : সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কোমরের উপরের অংশ বাঁকিয়ে হাত সোজা করে এক হাত আকাশের দিকে, আরেক হাত পায়ের দিকে সোজা করে পোজ নিবেন। দেখতে ত্রিভুজাকৃতির হবে। এভাবে দুই পাশেই করুন ১০ সেকেন্ড করে। এতে কোমর ও বগলের নিচে পিঠের অংশের চর্বি স্তর কমাতে সাহায্য করবে।
৩. পেট উপরে তোলা : চিৎ হয়ে শুয়ে দুই হাত পিঠ বরাবর রাখুন। দুই পা ভাজ করে পাশাপাশি লাগিয়ে আনুন। তারপর পিঠ বরাবর হাত সোজা করে ফ্লুরে ভর দিয়ে পেট উপরের দিকে তুলতে চেষ্টা করুন। পেট উপরের দিকে তুলে ১০ সেকেন্ডের মতো রাখুন। এটি কয়েকবার করুন। পেট ও পিঠের ফ্যাট কমাতে কার্যকর এই ব্যায়ামটি।
৪. পা উপরে তোলা : এটি কঠিন একটি ব্যায়াম। চিৎ হয়ে শুয়ে দুই হাত সোজা করে ফ্লুরে ভর দিয়ে দুই পা উপরের দিকে উঠাতে চেষ্টা করুন। পা যত উপরের দিকে তুলতে থাকবেন ততই ঘাড়ের উপর ভর দিতে হবে। ১০ সেকেন্ড করে করুন ২-৩ বার।
৫. শুকনো জায়গায় সাঁতার : পেটের উপর ভর দিয়ে শুয়ে দুই পা ও দুই হাত সোজাসুজি ফ্লুর থেকে উপরে তুলুন। সম্পূর্ণ ভর থাকবে পেটের উপর। ১০-১২ সেকেন্ড এভাবে ভর দিয়ে হাত-পা সোজা তুলে রাখুন। দেখতে সাঁতার কাটার মতো হওয়ায় এটিকে শুকনো জায়গায় সাঁতার বলা যায়।
৬. শরীর বাঁকানো : বসে দুই পা সামান্য ভাজ করে সামনের দিকে ফ্লুর থেকে উপরে রাখুন যাতে পা ফ্লুর স্পর্শ না করে। দুই হাত ও ঘাড় শরীরের ডানদিকে বাঁকিয়ে আনুন এবং ৫-৬ সেকেন্ড থাকুন। তারপর বামদিকে বাঁকিয়ে আনুন এবং ৫-৬ সেকেন্ড থাকুন। পা ফ্লুরে স্পর্শ করানো যাবে না। এতে পিঠ, কোমর ও পেট তিন জায়গারই ব্যায়াম হয়।
৭. কোমর উপরে তুলে কিক মারা : ১ নম্বর ব্যায়ামের মতো করে অবস্থান নিন। একইরকম পজিশন নিয়ে এক পা দিয়ে সোজা বরাবর কিক করতে থাকুন। ২০-৩০ সেকেন্ড এক পা দিয়ে করার পর পাশ পরিবর্তন করে অন্য পা দিয়ে করুন একইভাবে। কোমর ও নিতম্ব যেন ফ্লুর স্পর্শ না করে।
৮. শরীর সংকোচন : চিৎ হয়ে শুয়ে দুই পা কিছুটা ভাজ করে দুই হাত মাথার নিচে রাখুন। এরপর শরীরের উপরের অংশ তুলে ডানদিকে বাঁকিয়ে বাম কনুই দিয়ে ডান হাঁটু স্পর্শ করার মতো করুন। আবার শুয়ে শরীরের উপরের অংশ তুলে বামদিকে বাঁকিয়ে ডান কনুই দিয়ে বাম হাঁটু স্পর্শ করার মতো করে করুন। এভাবে দ্রুত গতিতে করতে চেষ্টা করবেন।
৯. পুশআপ : এটি নিশ্চয় জানেন কীভাবে করতে হয়। উপুড় হয়ে শুয়ে দুই হাতের ও পায়ের উপর ভর দিয়ে শরীরের উপরের অংশ কনুই বাঁকিয়ে অনবরত ওঠা-নামা করা।
১০. শুয়ে হাঁটা : উপুড় হয়ে দুই হাত ও পায়ের উপর ভর দিয়ে হাঁটার মতো করে পা একটার পর একটা চালাতে থাকুন। ৩০ সেকেন্ড করে কয়েকবার ব্যায়ামটি করবেন।
১১. একপাশ উপরে তোলা : কাত হয়ে এক হাত ও কনুই এর উপর এবং এক পায়ের হাঁটুর উপর ভর দিয়ে আরেক হাত কোমরে ধরে অন্য পা সোজা করে উপরে তোলা। এটাতেও কোমর ও নিতম্ব ফ্লুর স্পর্শ করবে না।
এই ব্যায়াম গুলো পিঠ, কোমর ও পেটের জন্য উপকারী যদি আপনি লাভ হ্যান্ডেল কমাতে চান। প্রতিদিন ৫ মিনিট করে ব্যায়াম গুলো করে যান অন্তত এক মাস।
উপসংহার
লাভ হ্যান্ডেল কী? লাভ হ্যান্ডেল, পেটের মেদ কমানোর সেরা ব্যায়াম গুলো নিয়ে যা বলা হলো আপনার মনে হতে পারে যে এগুলো তো সহজ আর আগে থেকে জানা বিষয়। কিন্তু, এগুলো চেষ্টা করে দেখেছেন কতদিন? ধৈর্য্য নিয়ে মাসখানেক ব্যায়াম গুলো চালিয়ে যান, চর্বি ঝরিয়ে ফিট হবেন।