স্তন ক্যান্সার হওয়ার কারণ ও স্তন বা ব্রেস্ট ক্যান্সার এর লক্ষ্যণ

স্তন ক্যান্সার হওয়ার কারণ



নারীদের জন্য মারাত্মক রোগ গুলোর তালিকা র মধ্যে স্তন ক্যান্সার (Breast Cancer) হচ্ছে দ্বিতীয়। কেউ এই রোগটির লক্ষ্যণ বুঝতে পারে আবার কেউ সন্দেহের মধ্যে থাকে। সন্দেহ ও অসচেতন নিয়ে থাকতে থাকতে রোগটি কঠিন পর্যায়ে পৌঁছে যায় এবং পরবর্তীতে তার চিকিৎসা করাও কঠিন হয়ে যায়। 
এই আর্টিকেল আপনাকে স্তন ক্যান্সার হওয়ার কারণ ও স্তন বা ব্রেস্ট ক্যান্সার এর লক্ষ্যণ, খাবার, সতর্কতা ও করণীয় নিয়ে জানাবে।


যা যা জানবেন
  • স্তন ক্যান্সার হওয়ার কারণ।
  • স্তন বা ব্রেস্ট ক্যান্সার এর লক্ষ্যণ।
  • স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ের পদ্ধতি। 
  • নিজে নিজে কীভাবে নির্ণয় করবেন?
  • স্তন ক্যান্সার এর ঝুঁকি কমাতে যে খাবারগুলো খাওয়া ভালো।
  • সতর্কতা ও করণীয়। 

স্তন ক্যান্সার হওয়ার কারণ 

স্তন ক্যান্সার হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো কারণ নির্ণয় করতে পারেনি গবেষকেরা। তবে কিছু কারণকে এই রোগের জন্য দায়ী ও সম্পৃক্ত হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ। কিছু কারণ নিম্নরুপ-
১. বংশগত কারণ এটির জন্য বেশি দায়ী। বংশের অর্থাৎ পরিবারের কারও এই রোগের ইতিহাস থাকলে তাহলে তা পরিবারের অন্য সদস্যদেরও হওয়ার সম্ভাবণা থাকে বেশি।

২. ৪০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের এটি হওয়ার ঘটনা ও সম্ভাবণা বেশি। আবার ৩০ বছরের পর সন্তান জন্ম দেওয়া মহিলাদেরও এটি হওয়ার সম্ভাবণা থাকে। 

৩. ৪০ উর্ধ্ব নারীরা অবিবাহিত ও সন্তানহীন থাকলে এটিও স্তন ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।

৪. সন্তান আছে এমন নারীরা সন্তানকে কখনও নিজের বুকের দুধ খাওয়ায়নি, অর্থাৎ সন্তানকে কখনও স্তন পান না করানো স্তন ক্যান্সার হওয়ার কারণ। আপনি হয়তো জানেন যে, স্তন পান করানোর মাধ্যমে স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেক অনেক কমে যায়। 

৫. যাদের পিরিয়ড অল্প বয়সে শুরু হয় ও মেনোপজ দেরিতে হয়, তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। অর্থাৎ এটিও একটি কারণ।

জেনে রাখা দরকার, উপরের কারণগুলোই এই রোগ হওয়া নির্দেশ করে না। যেহেতু স্তন বা ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি, সেহেতু উপরে উল্লিখিত কারণগুলোকে নিশ্চিত হিসেবে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। 

স্তন বা ব্রেস্ট ক্যান্সার এর লক্ষ্যণ

যেহেতু এটির নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই, তাই কিছু লক্ষ্যণ দেখে সচেতন হতে হবে। লক্ষ্যণগুলো নিচে দেওয়া হলো- 
  • ব্রেস্ট ক্যান্সার এর সবচেয়ে যে লক্ষ্যণটি বেশি থাকে, সেটি হচ্ছে স্তনের মধ্যে কোনো গোঁটা বা মাংসপিণ্ডের চাকা হওয়া। স্তনের মধ্যেও হতে পারে, আবার বগলেও হতে পারে। 
  • স্তনের আকার পরিবর্তন হয়ে যাওয়া। 
  • স্তন ফোলা। স্তনের মধ্যে গোঁটা না হলেও ফুলতে পারে। স্তনে ব্যথা অনুভব হওয়া। স্তনের ব্যথা পরবর্তী পিরিয়ডের পরও কমে না যাওয়া।
  • স্তন ফুলে তারপর বগল ও আশেপাশের অংশও ফুলে যাওয়া। 
  • স্তনবৃন্ত বা নিপলে ব্যথা করা। স্তন ও নিপল এরিয়া লাল বর্ণ ধারণ করা।
  • স্তনের ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া।
  • নিপল ভিতরের দিকে ঢুকে যাওয়া। নিপলে জ্বালাপোড়া, চুলকানি। 
  • নিপল দিয়ে রক্তের মতো পদার্থ অথবা সাদা কোনো তরল পদার্থ বের হওয়া। কিন্তু দুধ না।
  • স্তনের মধ্যে গোঁটা আস্তে আস্তে বড় হতে থাকা।

এই লক্ষ্যণগুলো একেকজনের একেক রকম হতে পারে। সবার একইরকম লক্ষ্যণ না-ও দেখা দিতে পারে। তাই, উপরিউক্ত লক্ষ্যণগুলো দেখা দিলেই যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। 

স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ের পদ্ধতি 

এই রোগ নির্ণয়ের জন্য যে পদ্ধতিগুলো ডাক্তাররা ব্যবহার করে থাকেন, সেগুলো হলো- 
১. ম্যামোগ্রাম (Mammogram)।
২. আল্ট্রাসাউন্ড (Ultrasound), আল্ট্রাসনিক (Ultrasonic) বা আল্ট্রাসমোগ্রাম (Ultrasonogram)।
৩. বায়োপসি (Biopsy)। 
৪. এমআরআই (MRI)।

নিজে নিজে কীভাবে নির্ণয় করবেন? 

আয়নার সামনে বসে বা দাঁড়িয়ে প্রথমে এক স্তনে লক্ষ্য করুন ভালোভাবে। স্তনে কোনো ফুস্কুড়ি, লালবর্ণ, ব্যথা ও উপরে বলা লক্ষ্যণগুলো আছে কি-না পর্যবেক্ষণ করুন। এভাবে অন্য স্তনটিও পর্যবেক্ষণ করুন। 
আয়নার সামনেও করতে পারেন, অথবা নিজেই নিজের স্তনের দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে ধরে করতে পারেন।
উপরের কোনো লক্ষ্যণ যদি পাওয়া যায়, তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।


স্তন ভালো রাখার খাবার



স্তন ক্যান্সার এর ঝুঁকি কমাতে যে খাবারগুলো খাওয়া ভালো

স্বাস্থ্যকর ও উপযুক্ত ডায়েট চার্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা উন্নত করতে অনেক কার্যকর। সাথে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে আনতেও খাবারের ভূমিকা রয়েছে। ব্রেস্ট ক্যান্সার এর ঝুঁকি কমাতে যে খাবারগুলো দরকারী, সেগুলো হচ্ছে-
প্রোটিন, ভিটামিন, আয়রন, ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, বীজজাতীয় ও আঁশযুক্ত (Fiber) খাবারগুলো নারীদেরকে এই রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে খুবই কার্যকর। এই উপাদান গুলো পাওয়া যায় এমন খাবার গুলো হচ্ছে- সবুজ শাক-সবজি, আপেল, স্ট্রবেরি, জাম, মুরগির মাংস, ডিম, সামুদ্রিক ও তৈলাক্ত মাছ (যেমন- স্যামন, রুপচাঁদা, তেলাপিয়া), মাশরুম, ব্রকোলি, পালংশাক, বাঁধাকপি, দই, কিমচি, পেঁয়াজ, রসুন। 

এই খাবারগুলো প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। 



Cautions for breast
Cautions for breast

সতর্কতা ও করণীয়

- যাদের বংশগত ও পারিবারিক ইতিহাস আছে এই রোগের, তারা ৪০ বছরের পর প্রতি বছরে একবার করে স্তন পরীক্ষা  ম্যামোগ্রাম করা খুবই জরুরি। 

- ৩০ বছর বয়সীরা প্রতি মাসে পিরিয়ড শেষ হওয়ার পর ভালোভাবে স্তন বা ব্রেস্ট পর্যবেক্ষণ করুন। 

- সন্তান নিতে চাইলে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে নিতে চেষ্টা করতে হবে। 

- সন্তানকে নিজের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।

- নিজের স্তন সুরক্ষিত রাখতে সচেতন থাকতে হবে। 

- ধুমপান ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকতে হবে। 

- অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড, ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া কমাতে হবে। না খেলে বেশি ভালো।

- গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া এসব প্রাণীর মাংস কম খেতে হবে।

- ডায়াবেটিস, রক্তচাপ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। 


উপসংহারে

স্তন ক্যান্সার হওয়ার কারণ, স্তন বা ব্রেস্ট ক্যান্সার এর লক্ষ্যণ, খাবার, সতর্কতা ও করণীয় সম্পর্কে যা যা জানলেন এই বিষয়গুলো মেনে চললে ও সচেতন থাকলে এই মারাত্মক রোগটি প্রতিরোধ করা সম্ভব ও সহজ হবে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url