গর্ভবতী হওয়ার লক্ষ্যণ ও গর্ভবতী মহিলাদের সতর্কতা
গর্ভে সন্তান এসেছে কি-না এ নিয়ে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে পড়েন। কারণ, একেকজনের শরীরে একেক রকম উপসর্গ দেখা দেয় সময়ের ব্যবধানে। তাই কেউ নিশ্চিত হয়ে উঠতে পারে না যে- গর্ভে সন্তান এসেছে কি-না। জেনে নিন গর্ভবতী হওয়ার লক্ষ্যণ ও গর্ভবতী মহিলাদের সতর্কতা সম্পর্কে।
Symptoms of pregnancy and cautions during pregnancy.
এই আর্টিকেলে
- গর্ভবতী হওয়ার লক্ষ্যণ কী কী?
- গর্ভবতীদের খাবার
- গর্ভবতী মহিলাদের করণীয়
- গর্ভবতী মহিলাদের সতর্কতা
গর্ভধারণ প্রতিটি নারীর জীবনের মহা খুশির এক গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়টাতে দরকার সঠিক পরিচর্যা ও সতর্কতা। এই সময়ে গর্ভবতী মা প্রাত্যহিক জীবনে যা যা করবে, সেগুলোর প্রভাব পড়বে অনাগত সন্তানের উপর। তাই এই সময় বাড়তি সতর্ক থাকা গর্ভবতী ও তার পরিবারের সবার উচিত।
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষ্যণ
সকল নারীদের মধ্যে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষ্যণ একরকম হয় না। প্রথম বার গর্ভধারণ এর লক্ষ্যণ একেকজনের একেক রকম হতে পারে। তবে যে সকল লক্ষ্যণ দেখা দিলে বোঝা যাবে যে গর্ভবতী হওয়ার সময় হয়েছে, সেগুলো হলো-
১. জরায়ুতে শুক্রাণু দ্বারা ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার ১ সপ্তাহ পর ব্লিডিং (Bleeding) হয়। সেই রক্তের রঙ গোলাপি অথবা বাদামি হয়ে থাকে। সাধারণ পিরিয়ড কালার এর মতোই হয় সেই ব্লিডিং। সেই সাথে যোনিপথ দিয়ে একধরণের পিচ্ছিল সাদা তরলও বের হতে পারে কারও কারও।
২. বমি বমি ভাব, কিন্তু সবসময় বমি হয় না। বেশিরভাগ সময় সকালে এমন অবস্থা হয়ে থাকে।
৩. স্তন বা ব্রেস্ট এর আকার পরিবর্তন হওয়া। স্তন বড় হতে থাকা, ভারী লাগা, নরম হওয়া, নিপলের রঙ আরও গাঢ় হতে থাকা এসব পরিবর্তন দেখা দেয়।
৪. পিরিয়ড বন্ধ হওয়া। পিরিয়ড বন্ধ হওয়া গর্ভবতী হওয়ার আবশ্যক একটি লক্ষ্যণ। পড়ুন মাসিক না হওয়া ও বন্ধ হওয়ার কারণ।
৫. পছন্দের খাবারের প্রতি হঠাৎ অপছন্দ চলে আসা। পছন্দ করে না বা সচরাচর খাওয়া হয় না এমন খাবারের প্রতি আগ্রহ হওয়া। খিদের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া।
৬. মুড সুইং ঘনঘন হওয়া।
৭. ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া।
৮. খিল ধরার মতো অবস্থা হওয়া।
৯. অবসাদগ্রস্থতা। হরমোনের নিঃসরণ, রক্তচাপ, রক্তে গ্লুকোজ এর জন্য অবসাদ হয়ে থাকে।
১০. পেট ফাঁপা।
১১. মাথা ব্যথা, কোমরে ব্যথা হওয়া। তবে এটা অন্য কারণেও হতে পারে।
১২. চোখে ঝাপসা দেখার সমস্যা হতে পারে।
১৩. হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে গিয়ে বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেওয়া।
এগুলো গর্ভে সন্তান আসার প্রাথমিক লক্ষ্যণ বলে বিবেচিত। তবে এগুলোই আবশ্যক লক্ষ্যণ নয়। এগুলো সবার ক্ষেত্রে না-ও হতে পারে। শুধুমাত্র কারও প্রেগন্যান্সি টেস্ট, রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই নিশ্চিত হওয়া যাবে যে সে গর্ভবতী হয়েছে। উপরের লক্ষ্যণগুলো দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে টেস্ট করাতে হবে। তবেই বুঝতে পারা যাবে।
check-up for pregnant |
গর্ভবতীদের খাবার
গর্ভধারণ ছাড়া অন্যান্য সময় যা যা খাওয়া হয়, সেগুলোই খাওয়া যাবে। ক্যালসিয়াম, আয়রন সমৃদ্ধ খাবার একটু বেশি করে খেলে ভালো। প্রোটিন, শর্করা, আঁশ বা ফাইবার, ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ( বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ ও তৈলাক্ত মাছ) আছে এমন খাবারগুলো খাবেন। তবে কিছু খাবারের বেলায় সতর্ক হতে হবে। সে সকল খাবার গর্ভবতীদের খাওয়া উচিত নয় এবং খাবারে যে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে-
- রান্না করা ছাড়া কোনো প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। রান্না ছাড়া কাঁচা মাছ, কাঁচা মাংস, কাঁচা ডিম এগুলো খাওয়া যাবে না। এমনকি আধা-কাঁচাও খাওয়া উচিত হবে না। এগুলো খেতে হলে অবশ্যই রান্না করে খেতে হবে।
- কাঁচা দুধ, প্যাকেটজাত দুধ, পনির খাওয়া যাবে না। দুধ গরম করে তারপর খাওয়া যাবে। যেহেতু দুধ থেকে ক্যালসিয়াম এর বড় অংশ পাওয়া যায়। গরুর দুধ গরম করে খাওয়া বেশি ভালো হয়।
- বাইরের খোলামেলা খাবার না খাওয়া ভালো।
- কোনো ফলমূল, শাক-সবজি খেতে হলে তা ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে খেতে হবে।
- ঠাণ্ডা পানীয় বা কোল্ড ড্রিংকস খাওয়া উচিত নয়।
গর্ভবতী মহিলাদের করণীয়
১. ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। ওজন অতিরিক্ত বাড়ে এমন কিছু করা ও খাওয়া যাবে না। প্রথম ৩ মাসে আপনার প্রয়োজনের তুলনায় ১০০-২০০ ক্যালরি বেশি গ্রহণ করবেন। শেষ ৩ মাসে ৩০০-৫০০ ক্যালরি বেশি গ্রহণ করবেন। তবে কোনোভাবে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করা যাবে না। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট চার্ট অর্থাৎ খাবার তালিকা তৈরি করে নিলে সবচেয়ে ভালো হয়।
২. ব্যায়াম করা গর্ভধারণকালে ভালো প্রভাব ফেলে মা ও শিশুর মধ্যে যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই গর্ভবতীর উচিত প্রতিদিন হালকা কিছু ব্যায়াম করা। ঘুমানোর আগে একটু হাঁটাহাটি করা অনেক উপকারী একটি ব্যায়াম। এছাড়া দিনের অন্যান্য সময়ে পেট ও কোমরের জন্য যেসকল হালকা ব্যায়াম গুলো আছে সেগুলো করা যায়। ব্যায়াম করলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা যায়। যা গর্ভবতী ও গর্ভে আসা সন্তানের জন্য খুবই উপকারী।
৩. সেক্স বা যৌন সম্পর্ক করা গর্ভকালীন সময়ে উপকারী। স্বামীর সাথে সম্মতিক্রমে ঝুঁকিমুক্ত পজিশনে সহবাস করা যাবে। তবে যদি গর্ভবতীর কোনো সমস্যা দেখা দেয় তাহলে সচেতন থাকতে হবে।
৪. পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। বিশ্রাম নেওয়া এই সময়ে খুব প্রয়োজন। আর ঘুম হচ্ছে সবচেয়ে ভালো বিশ্রাম। ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমাতে চেষ্টা করতে হবে। কীভাবে ভালো ঘুম পাওয়া যায়?
৫. পানি পান করতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে। দৈনিক ৮-১২ গ্লাস পানি পান করতে হবে।
৬. মানসিকভাবে ভালো থাকতে ও রাখতে হবে। কারণ গর্ভাবস্থায় মা যদি ডিপ্রেশনে থাকে, হতাশা, দুশ্চিন্তায় থাকে তাহলে তা শিশুর মানসিক গঠনের উপর প্রভাব ফেলে। ডিপ্রেশন থেকে মুক্ত থাকা তাই প্রতিটি গর্ভবতীর কর্তব্য।
pregnancy test |
গর্ভবতী মহিলাদের সতর্কতা
১. তামাকজাত পণ্য ব্যবহার করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে। আশেপাশে কেউ যেন বিড়ি, সিগারেট ও অন্যান্য তামাকজাত পণ্য ব্যবহার না করে সেদিকেও সতর্ক হতে হবে। এতে সচেতন না থাকলে গর্ভবতীর জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
২. চা, কফি দিনে ২ কাপের বেশি খাওয়া যাবে না। না খেলেই ভালো।
৩. অ্যালকোহল গ্রহণ করা যাবে না একদমই। এসব দ্রব্য গর্ভবতীর অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করে।
৪. বাসাবাড়িতে করা রঙের সংস্পর্শে থাকা যাবে না। কারণ তা থেকে বিভিন্ন ক্ষতিকারক রাসায়নিক দেহে প্রবেশ করে ক্ষতিসাধন করতে পারে।
৫. চুলে রঙ করা থেকেও বিরত থাকতে হবে। কারণ এর মাধ্যমেও বিভিন্ন ক্ষতিকারক রাসায়নিক প্রবেশ করে থাকে।
৬. অন্যান্য কেমিক্যাল পণ্য বা রাসায়নিক উপাদান থেকে দূরে থাকতে পারলে ভালো।
৭. বিড়ালকে খাবার দেওয়া, বিড়ালের বিষ্ঠা পরিষ্কার করা গর্ভবতীর জন্য উচিত নয়। যদি গর্ভবতীকেই এসব করতে হয় তাহলে অবশ্যই হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক ব্যবহার করে করতে হবে। পরিবারের অন্য কাউকে দিয়ে এ কাজ করানোই ভালো হবে।
৮. কোনো মেডিসিন নেওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো মেডিসিন, ব্যথানাশক সেবন করা ঠিক হবে না। পিল নিতে চাইলে ।
৯. এক্স-রে করা যাবে না। এক্স-রে করতে হলে আগে ডাক্তারকে বলে নিতে হবে। তারপর ডাক্তার সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবে। গর্ভবতী মহিলাদের এক্স-রে করানো নিরাপদ নয়।
১০. একটানা দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না, আবার একটানা দীর্ঘসময় বসে থাকাও যাবে না।
১১. ব্যায়াম করার সময় সঙ্গে একজনকে রাখতে হবে। কারও সাহায্য নিয়ে ব্যায়াম করতে হবে।
১২. গরম পানিতে গোসল না করাই ভালো। প্রয়োজন হলে কুসুম গরম পানিতে অল্প সময়ের মধ্যে গোসল করে নেওয়া যাবে, কিন্তু বেশিক্ষণ ধরে গোসল করা যাবে না।
১৩. ঢিলেঢালা জামাকাপড় পরিধান করলে তা আরামদায়ক ও সুবিধাজনক হয়। উঁচু জুতা বা হিল পরা ঠিক হবে না। স্যান্ডেল, পাতলা জুতা পরবেন।
১৪. অতিরিক্ত সূর্যের আলো থেকে দূরে থাকতে হবে।
১৫. গর্ভবতীর কষ্ট হয় ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব পড়ে এমন কিছু করা যাবে না।
১৬. প্রসব ব্যথা উঠলে ও গর্ভে পানির চাকা ভেঙে গেলে প্রসবকালীন ব্যবস্থা নিতে সতর্ক হতে হবে। প্রসবকালীন সতর্কতা, নবজাত শিশু ও মায়ের জন্য করণীয় সম্পর্কে পরবর্তীতে অন্য একটি আর্টিকেলে বলা হবে।
উপসংহার
গর্ভধারণের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গর্ভবতী মা ও শিশুর সবধরণের ক্ষতি এড়াতে সর্বোচ্চ সচেতন থাকতে হবে। গর্ভবতী হওয়ার লক্ষ্যণ ও গর্ভবতী মহিলাদের সতর্কতা সম্পর্কে আরও ভালোভাবে নিশ্চিত ও সচেতন হতে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলা প্রতিটি গর্ভবতী ও তার পরিবারের সবার উচিত।
Very informative post for all Women ❤️❤️...please Keep going and fulfill your dreams
...In sha Allah you will go far ❤️
InshaAllah.
Thank you very much.