অল্প সময়ের মধ্যে ক্যালরি বাড়ানোর উপযুক্ত খাবার
Calorie gaining foods |
মানুষের শারীরিক শক্তির সাথে ক্যালরি বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ক্যালরি কমবেশি হওয়া শরীরের ওজন, শক্তি, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ইত্যাদিতে প্রভাব রেখে থাকে। তাই, শরীরে পর্যাপ্ত ক্যালরি থাকা সুস্থতার একটি নির্ণায়ক। এখানে আপনাদেরকে বলা হবে এমন কিছু খাবার সম্পর্কে যেগুলো আপনার শরীরে ক্যালরি বাড়াতে কাজ করবে। জানুন ক্যালরি বাড়ানোর উপযুক্ত খাবার গুলো সম্পর্কে।
সহজে বললে ক্যালরি বলতে দেহের শক্তিকেই বোঝানো হয়। কেউ ওজন বৃদ্ধি করতে পরিশ্রম করে, কেউ ওজন কমিয়ে আনতে পরিশ্রম করে। এই দু'টি কাজের সাথেই যে জিনিসটি জড়িত, সেটি হচ্ছে ক্যালরি। ক্যালরি বেশি বেশি গ্রহণ করলে যেমন ওজন বৃদ্ধিতে কাজ করে থাকে, তেমনি ওজন নিয়ন্ত্রণ রেখে ফিট থাকতে কম এবং উপযুক্ত মাত্রায় ক্যালরি নিতে হয়। এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো তে থাকে বেশি মাত্রার ক্যালরি। আপনি যদি ওজন বাড়াতে চান, তাহলে সেই খাবারগুলো হতে পারে আপনার সঙ্গী।
তাহলে দেখে নেওয়া যাক সেই খাবারগুলো সম্পর্কে...
ক্যালরি বাড়ানোর উপযুক্ত খাবার
ওহ! হ্যা, শেষের দিকে থাকছে চমক। মিস করবেন না কিন্তু। শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
স্টার্চ: এটি হলো শর্করাজাতীয় খাবার। এটা হয়তো জানেন যে, শর্করাযুক্ত খাবার মোটা হওয়ার ও বাড়তি ওজনের জন্য অন্যতম সহায়ক। স্টার্চযুক্ত খাবার শরীরে তাপ উৎপন্ন করে শক্তি জুগিয়ে থাকে। যার জন্য শর্করা বা স্টার্চকে শক্তি উৎপাদনের নিয়ামক হিসেবে বলা হয়। ভাত, রুটি, পরোটা, আলু, মিষ্টি আলু- এগুলো মূলত শর্করার ভালো উৎস।
এগুলো ছাড়াও কিছু ফলমূল থেকেও উচ্চ ক্যালরি পাওয়া যায়। এক কাপ সাদা ভাত থেকে ২০০ ক্যালরি পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়। আর এক কাপ বাদামী ভাতে থাকে ২৫০ ক্যালরি। তাহলে আপনি দিনে কত কাপ ভাত খান সেই হিসাব করেন কী? কত পরিমাণ ক্যালরি ঢুকছে আপনার শরীরে প্রতিদিন তা একবার অনুমান করে দেখুন!
বীজজাত খাবার: বিভিন্ন বীজ, বীজের অংশ, বীজ থেকে সরাসরি ফলে পরিণত হওয়া খাবারগুলোকে বীজজাত খাবারের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শিম, ডাল, বাদাম, বরবটি, মটরশুঁটি ইত্যাদি এই খাদ্য উৎসের খাবার। এই উৎসের খাবার থেকে ভালো পরিমাণে আমিষও ( প্রোটিন) পাওয়া যায় যা শরীরে ক্যালরি জোগাতে প্রয়োজন হয়।
লাল মাংস: ইংরেজিতে এটাকে "রেড-মিড" বলে। গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, উট, শুকর ইত্যাদির মাংস লাল হয়। তাই এগুলোকে লাল মাংস বা রেড-মিট (Red Meat) বলা হয়ে থাকে। লাল মাংস মানবদেহের পেশি গঠনে অতি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এতে থাকে অতিমাত্রায় ফ্যাট ও ক্যালরি।
মুরগী: মুরগীর পা মানে উরুর অংশ যেটাকে "মুরগীর ঠ্যাং" বলে বাংলা ভাষাভাষী মানুষেরা। ১০০ গ্রাম ওজনের মুরগীর ঠ্যাং খাওয়ার মাধ্যমে আপনার শরীরে প্রবেশ করে ১৮০ ক্যালরিরও বেশি মাত্রার ক্যালরি। তাহলে এখানেও হিসাব করে দেখুন যদি আপনি একটি মুরগীর ঠ্যাং রোস্ট করে খান, তাহলে কত ক্যালরি পাচ্ছেন? - ৪৭০ এরও বেশি ক্যালরি!
মাছ: আমাদের দেশের মানুষের প্রতিদিনের প্রায় প্রতি বেলা খাবারেই খাবার তালিকাতে মাছ থাকেই। মাছ মানবদেহের জন্য অনেক দরকারী খাদ্য। প্রোটিন, আয়োডিন, ভিটামিন সহ বিভিন্ন খনিজ উপাদানও পাওয়া যায় মাছ থেকে। আপনার ক্যালরি বাড়ানো ও ওজন বৃদ্ধি করতে সঙ্গী করতে পারেন মাছকে। বিভিন্ন রকম মাছ পাওয়া যায় আমাদের দেশে। সেগুলো থেকে আপনার পছন্দমতো মাছ রাখুন খাবারের পাতে। বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ ও তৈলাক্ত মাছগুলো অতিরিক্ত ফ্যাট ও ক্যালরি জোগান দেয় শরীরে। ১৭০ গ্রাম স্যালমন মাছ ২৫০ ক্যালরি দিয়ে থাকে।
ডিম: শরীরের পেশি গঠন করতে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার হচ্ছে ডিম। উচ্চ পরিমাণে প্রোটিন, স্বাস্থ্য উপযোগী ফ্যাট ও আরও কিছু প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানে সমৃদ্ধ খাবার হলো ডিম। পুরো ডিমের চেয়ে ডিমের কুসুম হচ্ছে সবচেয়ে বেশি পুষ্টিকর। ৫০ গ্রাম ওজনের একটি সিদ্ধ ডিমে ৭৫ ক্যালরি পাওয়া যায়। ডিম খেতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। আপনি দিনে যদি ৩-৪ টা ডিম খেয়ে থাকেন, তাহলে তা সম্পূর্ণভাবেই স্বাস্থ্য উপযোগী।
দুধ: বড় বড় খাদ্য উপাদান, মিনারেল ও কত কত প্রয়োজনীয় উপাদানে গুণান্বিত খাবার দুধ। প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, বিভিন্ন ভিটামিন কতকিছুই না আছে দুধে। ওজন ও উচ্চতা বাড়াতে দুধ খুবই কার্যকর খাদ্য। এক কাপ দুধ থেকে প্রায় ৩০০ ক্যালরি পাবেন। এছাড়া দুধ পরিপাক ক্রিয়ায়ও ভূমিকা রাখে।
দই: ১৭০ গ্রাম দই থেকে পাওয়া যাবে ১৬৫ ক্যালরি। দই পুষ্টিকর খাবারগুলোর একটি। হজম ক্রিয়া, পরিপাক ক্রিয়ায় দই সহায়তা করে। পেট ভালো রাখে দই।
বাদাম: ক্যালরি ও ওজন বৃদ্ধিতে উপযুক্ত একটি খাবার হলো বাদাম। কয়েক রকমের বাদাম রয়েছে। খেতে পারেন চিনাবাদাম অথবা কাজুবাদাম, আবার খেতে পারেন আখরোট। এক মুঠো কাঁচা কাজুবাদামে আপনি পেতে পারেন ১৭০ ক্যালরি।
চকোলেট: বিশেষ করে ডার্ক চকোলেট। উমমম... আপনার মেজাজকে, আপনার মুডকে ভালো করতে ডার্ক চকোলেট হতে পারে দারুণ ফ্রেন্ডলি একটি খাবার। মজা করেই খেয়ে নিতে পারেন একটু ডার্ক চকোলেট! ১০০ গ্রাম একটা চকোলেট বার ৬০০ ক্যালরির আশেপাশে দিয়ে থাকে।
আপেল ও অ্যাভোকাডো: আপেল উঁচু মানের একটি ফল। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সবল করতে একটি আপেল খুবই উপকারী। আর অ্যাভোকাডো হচ্ছে অন্যান্য ফলের তুলনায় বেশি উপাদানে ভরপুর একটি ফল। অ্যাভোকাডোয় থাকে বেশি পরিমাণ ক্যালরি। যা আপনার ক্যালরি বাড়ানোর উত্তম সহায়ক হতে পারে। একটা বড় অ্যাভোকাডো থেকে ৩২০ ক্যালরিরও বেশি পরিমাণ পাওয়া সম্ভব। অ্যাভোকাডোকে বলা হয় "বহুমুখী ফল" বা "Versatile Fruit"। কেন বলা হয় তা জানতে হলে পড়তে থাকেন।
এই খাবারগুলো খান যদি ওজন ও ক্যালরি বাড়াতে চান অল্প সময়ে।
চমক
এতক্ষণ বললাম একক খাবার নিয়ে। একক বা প্রতিটি আলাদা আলাদা খাবার থেকে বিভিন্ন মাত্রায় ক্যালরি পাওয়া যায়। কিন্তু যদি একাধিক খাবার একসাথে মিশিয়ে বানানো হয় তাহলে? তখন কত ক্যালরি পাওয়া যাবে? অবশ্যই বেশি। যেমন ধরুন দুধ দিয়ে দই, মাখন, পনির বানিয়ে খেলেন। তখন কিন্তু একাধিক খাবার মেশানোয় ক্যালরির মান বেড়ে যাবে এবং আপনি বাড়তি ক্যালরিও পাবেন সহজেই।
বিভিন্ন হোমমেড বা ঘরে তৈরি খাবার বানিয়ে আপনি পেতে পারেন বাড়তি ক্যালরি, পূরণ করতে পারেন ক্যালরির চাহিদা।
সেরকম কয়েকটি মিশ্র খাবার হলো-
- দই আর ফল মিশিয়ে তৈরি খাবার।
- দুধ ও দই মিশিয়ে।
- দই, মাখন ও চকোলেট দিয়ে তৈরি পুডিং।
- টফু।
- অ্যাভোকাডোর তৈরি স্যুপ, ভর্তা ও ভাজি, সালাদ, স্যান্ডউইচ।
- বিভিন্ন প্রোটিন উপাদান মিক্স করে তৈরি উপকরণ।
- চকোলেট, কলা, বাদাম দিয়ে তৈরি করতে পারেন শেক।
- পালংশাক, অ্যাভোকাডো, কলা, আনারস ও ভ্যানিলা মিক্স করে শেক বানাতে পারেন।
- বাদাম, খেজুর, চিয়া সীডস্ মিশিয়ে তৈরি করা যায় মিশ্র খাবার।
এরকম আরও মিশ্র খাবার বানানোর পদ্ধতি ও উপকরণ আছে যা ক্যালরি বাড়াতে ও স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অবদান রাখতে পারে।
শেষ করছি,
উপরে ক্যালরি বাড়ানোর কার্যকর খাবারগুলো সম্পর্কে যা আলোচনা করা হলো তা যদি আপনি বুঝতে পারেন ও সেভাবে খাবার গ্রহণ করেন, তাহলে অল্প সময়ের মধ্যেই আপনি ওজন ও ক্যালরি বাড়ানোর কাজে সফল হতে পারবেন।