সারাদিনের পরিপূর্ণ স্কিন কেয়ার রুটিন কেমন হওয়া উচিত?

সারাদিনের পরিপূর্ণ স্কিন কেয়ার রুটিন
Daily proper Skin Care routine.


বাহ্যিক ভাবে সৌন্দর্যকে কে-ই বা না ধরে রাখতে চায়। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস, পরিবেশ, শরীর ও মনের যত্নের অভাবে বয়সের আগেই বার্ধক্যের ছাপ পড়ে যায় অনেকের চেহারায়। ফলে বয়স যত হয়েছে, তার চেয়ে বেশি বয়স্ক লাগে দেখতে। তাই চেহারার তারুণ্য ও সতেজতা ধরে রাখতে নিজের জীবনযাপনে কিছু অভ্যাস গড়ে তুলুন। স্কিন কেয়ার আর খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করুন। এই আর্টিকেল আপনার সাপ্তাহিক ও সারাদিনের পরিপূর্ণ স্কিন কেয়ার রুটিন কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে আলোচনা করবে।

বিষয়
- সকালের স্কিন কেয়ার
- রাতের স্কিন কেয়ার 
- সাপ্তাহিক স্কিন কেয়ার
- গুরুত্বপূর্ণ তথ্য 
- সর্বশেষ



 স্কিন কেয়ার রুটিন 

তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক  কীভাবে প্রতিদিন এবং সাপ্তাহিক স্কিন কেয়ার করবেন-


সারাদিনের পরিপূর্ণ স্কিন কেয়ার রুটিন
Morning  skincare


সকালের স্কিন কেয়ার

১. ক্লিনজার (Cleanser)/ ক্লিনজিং (Cleansing): 

এর কাজ হচ্ছে ত্বকে লেগে থাকা সকল ধুলাবালি, ময়লা দূর করে দেয়া। এছাড়া যাদের তৈলাক্ত ত্বক, তাদের  ত্বকের অতিরিক্ত তেল  নিঃসরন কমিয়ে ত্বককে করে তুলে লাবণ্যময় ও সতেজ। আর ত্বকের ময়লা দূর করে ত্বকে উজ্জ্বলতা আনে। আপনার ত্বকের ধরণ অনুযায়ী উপযুক্ত ও সঠিক ক্লিনজার কিনে নিন। নিজে সঠিকটা নির্বাচন করতে না পারলে ত্বক বিশেষজ্ঞ কারও সাহায্য নিন।

২. টোনার (Toner):

ক্লিনজিংয়ের পরের ধাপ হচ্ছে টোনার। এটি ত্বককে গভীর থেকে পরিষ্কার করতে কাজ করে, আর  ত্বক টানটান ও সতেজ রাখে । এটি ত্বকের পিএইচ (PH) মানের ভারসাম্য বজায় রাখে। এ ছাড়া লোমকূপ সংকুচিত করে ব্রণের প্রবণতা কমাতে সহায়তা করে। টোনিং করলে তা ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং অতিরিক্ত তৈলাক্ত অবস্থা রোধ করে। ত্বককে আদ্র রাখতে অবশ্যই টোনার ব্যবহার করতে ভুলবেন না। আপনার ত্বক অনুযায়ী সঠিক ও উপযুক্ত টোনার ব্যবহার করুন।

৩. ময়েশ্চারাইজার (Moisturiser):

স্কিন কেয়ারে ময়েশ্চারাইজার অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। স্কিনের ধরণ অনুযায়ী ময়েশ্চরাইজার ব্যবহার করতে পারেন। এটি আপনার আপনার স্কিনের শুষ্কতা দূর করতে সাহায্য করবে, ব্রণ প্রতিরোধে কাজ করবে এবং চেহারা থেকে বয়সের ছাপ দূর করবে।

৪. সানস্ক্রিন (Sunscreen):

প্রতিদিন অবশ্যই সানস্ক্রিন লাগাতে হবে। বিশেষ করে আপনি যদি বাইরে বের হোন এবং হতে চান, তাহলে ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। সানস্ক্রিনে থাকে এসপিএফ (SPF)।  SPF এর মূল কাজ হচ্ছে সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রশ্মি (Ultraviolet rays) থেকে আমাদের ত্বককে সুরক্ষা দেওয়া। আলট্রাভায়োলেট রশ্মি বা সানবার্ন (Sunburn) থেকে স্কিনকে সুরক্ষা দেয়াই মূলত সানস্ক্রিনের কাজ। 


অবশ্যই দিনে ৩-৪ বার মুখ ধুতে হবে। অপরিষ্কার হাতে  মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে চেষ্টা করবেন। অনেক সময় আমরা অভ্যাস গত কারনে মুখে, চুলে হাত বুলাই। এই অভ্যাস বাদ দিতে হবে।

 কারণ, অপরিষ্কার হাতে নানারকম জীবাণুর উপস্থিতি থাকে যা মুখের ত্বকে হাত লাগলে আরও জীবানু প্রবেশ করতে পারে। তাই মুখে হাত দেয়ার আগে হাত ভালো ভাবে ধুয়ে নিবেন।


রাতের স্কিন কেয়ার রুটিন
Night skincare


রাতের স্কিন কেয়ার 

১. ডাবল ক্লিনজিং (Double Cleansing):

 একই ফেইসওয়াশ দিয়ে দুইবার মুখ ধোয়ার নাম ডাবল ক্লিনজিং নয়। শুকনো ত্বকে আলতো করে  তেল মাখা বা তেলযুক্ত ক্লিনজার দিয়ে মুখের মেকআপ উঠানোর পদ্ধতি হচ্ছে ডাবল ক্লিনজিং- এর প্রথম ধাপ । এতে মুখ থেকে মেকআপ তোলা সহজ হয়। আর মেকআপ না করলেও যদি শুধু সানস্ক্রিন ব্যবহার করে থাকেন তবু ক্লিনজার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করবেন । এরপর ক্রিম অনুযায়ী ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুতে হবে যাতে মেকআপের শেষ অংশটাও উঠে আসে।
 

২. টোনার (Toner): টোনার সম্পর্কে সকালের স্কিন কেয়ারে যা করলেন, রাতেও তা করুন।


৩. চোখের জন্য ক্রিম (Eye cream):

আই ক্রিম মূলত চোখের আশেপাশে ব্যবহার করা হয়। ফাইন লাইন (Fine line) , চোখের চামড়া কুঁচকে যাওয়া (Wrinkle), চোখে ফোলা ভাব (Puffiness), ডার্ক সার্কেল (Dark circle)  দূর করতে মূলত এটি ব্যবহার করা হয়।

৪. ময়েশ্চরাইজার (Moisturiser):

 রাতের স্কিন কেয়ারের শেষ ধাপ হল নাইট ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজারের ব্যবহার। নাইট ক্রিম (Night Cream) একটু ঘন হয় কারণ এটি সারারাত কাজ করে। তাই রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার আগে  ক্রিম বা ময়েশ্চরাইজার লাগালে ত্বকের আর্দ্রতা ফিরে আসে। সকালে ত্বক বা স্কিন সতেজ থাকে। তাই আপনার স্কিনের ধরণ অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন। তাতে আপনার মুখ নরম, কোমল ও দাগমুক্ত থাকবে।


সাপ্তাহিক স্কিন কেয়ার রুটিন
Weekly skincare


সাপ্তাহিক স্কিন কেয়ার

১. চামড়ার দাগ দূর করা (Exfoliation):

প্রতি ২৫-২৮ দিন অথবা ৩-৪ সপ্তাহ পরপর মানুষের ত্বকের উপরের মৃত কোষ উঠে গিয়ে জন্ম নেয় নতুন কোষ। কিন্তু এই মৃত কোষ ত্বকের সঙ্গেই আলগাভাবে লেগে থাকে, ফলে ত্বক বিবর্ণ  দেখায় ও সতেজতা হারায়। তাই নিয়মিত চামড়ার দাগ দূর করার (Exfoliation) মাধ্যমে ত্বকের মৃত কোষ তুলে ফেলা সম্ভব।

মুখে মৃত কোষ জমতে থাকলে তা লোমকূপ বন্ধ করে দিতে পারে। ফলে ব্রণের সমস্যা দেখা দিতে পারে।  এই জন্য সপ্তাহে দুই বার ফেইস স্ক্রাব ( Face scrubs) ব্যবহার করতে পারলে সহজেই এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। তাতে ত্বকের মরা কোষ উঠে গিয়ে আপনার ত্বককে প্রাণবন্ত ও সতেজ দেখাবে। 

২. ফেইসপ্যাক (Face packs):

ত্বকের ধরণ বোঝে ফেইসপ্যাক ব্যবহার করা উচিত। ধরণ অনুযায়ী ফেইসপ্যাক ব্যবহার করলে ত্বকের অনেক সমস্যার সমাধান করা সহজ হয়। আজেবাজে প্যাক ব্যবহার করলে তা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

 ব্রণের জন্য বাজারে অনেকরকম ফেইসপ্যাক পাওয়া যায়। সঠিক ফেইসপ্যাক নিয়ে তা মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পরিষ্কার করুন। ফেইসপ্যাক লাগালেই হয়তো ব্রণ পুরোপুরি ভালো হয়ে যাবে না। তবে সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে।

তৈলাক্ত, শুষ্ক, মিশ্র ও স্বাভাবিক  ত্বকের জন্য ঘরোয়া উপায়ে আপনি নিজেই ফেইসপ্যাক বানাতে পারেন। চেষ্টা করবেন প্রাকৃতিক ও ভেষজ গুণ সম্পন্ন উপাদান দিয়ে ফেইসপ্যাক বানানোর।

সপ্তাহে ৩-৪ দিন ফেইসপ্যাক ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন। 


৩. ফেইসমাস্ক (Face masks):

ফেইসমাস্ক কয়েক রকমের হয়। কিন্তু ত্বকের ধরণ অনুযায়ী অনেকেই নিজের ত্বকের জন্য সঠিক ফেইসমাস্ক নির্বাচন করতে পারেন না। আসলে কার কোন ফেইসমাস্ক দরকার তা নির্ভর করে ত্বকের সমস্যার উপর। ফেইসমাস্ক গুলো নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হল -

পিল-অফ মাস্ক (Peel off masks):

যাদের ত্বক তৈলাক্ত আর ব্রণের সমস্যা আছে, তাদের জন্যই পিল-অফ মাস্ক। পিল-অফ মাস্ক অনেকটা জেলের মতো দেখতে  যা মুখে লাগানোর পর শুকিয়ে যায় আর তা টেনে তুলতে হয়। মাস্ক টেনে তোলার সময়ই মুখে জমে থাকা সমস্ত মৃত কোষ ও ময়লা মাস্কের সঙ্গেই উঠে আসে। তাই ব্রণের সমস্যা থাকলে, আর তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী হলে  নিশ্চিন্তে বেছে নিন পিল-অফ মাস্ক।

স্লিপিং মাস্ক (Sleeping masks):

স্লিপিং মাস্ককে ওভারনাইট মাস্কও (Overnight masks) বলা যায় । এই মাস্ক মুখে লাগিয়ে আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবেন। শুষ্ক ত্বকে আর্দ্র অবস্থা ফিরিয়ে আনাই হচ্ছে এই মাস্কের কাজ । এটা রাতে লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন, সকালে উঠে ধুয়ে ফেলুন। 


শীট মাস্ক (Sheet masks):

আপনার হাতে সময় কম? কিন্তু দ্রুত ত্বকে লাবণ্য ও সতেজ অবস্থা আনতে চান? তাহলে আপনার জন্য শীট মাস্ক হয়ে ইঠবে দারুণ কার্যকর। আপনি চাইলে নিয়মিত এটি ব্যবহার করতে পারেন অথবা সপ্তাহে ২ দিন বা ১৫ দিনে ১ বার করতে পারেন।  শীট মাস্ক হচ্ছে মানুষের মুখের আকার বা আকৃতি অনুযায়ী তৈরি পাতলা ফেব্রিক্স বা পেপার, যেটা একটি প্যাকেটে পুরোপুরি সিরামে (Seram) ভেজানো থাকে। প্যাকেটজাত ফেসিয়াল মাস্ক বলা যায় এই ধরণের মাস্ককে। 

এই মাস্কে সিরাম সহ বিভিন্ন উপকারী উপাদান মেশানো থাকে যা ত্বকে প্রয়োজনীয় এন্টিঅক্সিডেন্ট (Antioxidants) এর জোগান দেয়। আপনার ত্বকের ধরণ অনুযায়ী উপযুক্ত ও সঠিক শীট মাস্ক ব্যবহার করবেন।


কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

এই তথ্যগুলো নারী ও পুরুষ সবার জন্য দরকারী। 

জীবনযাপন: আপনার জীবনযাপনের অস্বাস্থ্যকর ও খারাপ অভ্যাস যদি পরিবর্তন করতে না পারেন, তাহলে আপনি যত রকমের উন্নত আর ভালো ভালো প্রসাধনী বা রূপচর্চার সামগ্রী ব্যবহার করুন না কেন- সঠিক ফলাফল পাওয়া যাবে না।

রাত জাগা যাবে না: গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত রাত জাগেন তাদের হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, শারীরিক স্থূলতা বা ওজনজনিত সমস্যা এমনকি স্ট্রোকের সম্ভাবণা বেশি থাকে। রাত জাগার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে থাকে।  এই জন্য অল্প বয়সে ত্বক বুড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবণা থাকে। তাই রাত না জাগার চেষ্টা করুন। রাত ১২ টার আগেই ঘুমানোর এবং সকাল ৭ টার দিকে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস করুন। প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৯ ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করবেন। ভালো ঘুম পাওয়ার চেষ্টা করুন।

পানি পান করা: প্রতিদিন  কমপক্ষে ২-৩ লিটার বা ৮-১২ গ্লাস পানি পান করবেন। মানবদেহের জন্য অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে পানি। শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পানির ভূমিকা রয়েছে। আর ত্বক বা স্কিন হচ্ছে শরীরের আয়না। শরীরে কোনো রোগ ও সমস্যা দেখা দিলে সেটার প্রভাব স্কিনে দেখা যায়।  পানি যদি ঠিক মতো না পান করেন তাহলে নিজেই সুস্থ থাকবে কীভাবে আর ত্বকই  সুস্থ রাখবেন কীভাবে? প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে পাচকতন্ত্র পরিষ্কার হয়, মেটাবলিজম বা বিপাক হার বৃদ্ধি পায়,  ব্রণ হওয়া থেকে বাঁধা দেয়। তাই পরিমাণ মতো পানি পান করতেই হবে সুস্থ থাকতে চাইলে।

শারীরিক পরিশ্রম:  শারীরিক ভাবে পরিশ্রম বা ব্যায়াম করতে হবে। বেশি বেশি শুয়ে বসে থাকলে শরীর ও মন ভার হয়ে পড়ে। তাতে চেহারায় মলিনতা ও ফ্যাকাসে ভাব দেখা দেয়। তাই সুযোগ পেলেই ওয়ার্কআউট বা ব্যায়াম করবেন। তাতে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে এবং চেহারায় তারুণ্য ভাব বজায় থাকবে। মানসিকভাবে ভালো থাকার চেষ্টা করুন।


সর্বশেষ

সাপ্তাহিক ও সারাদিনের পরিপূর্ণ স্কিন কেয়ার রুটিন কেমন হওয়া উচিত তা আপনি এই আর্টিকেল পড়ে জানতে পারলেন। আপনাকে বোঝাতে চেষ্টা করা হয়েছে কীভাবে পরিপূর্ণ ভাবে আপনার স্কিন কেয়ার করবেন। সতর্কতা হিসেবে আপনি যে প্রডাক্ট,  কসমেটিকস বা রূপচর্চার সামগ্রী ও স্কিন কেয়ার পণ্য ব্যবহার করবেন তা যেন আপনার ত্বকের ধরণ অনুযায়ী হয়। ত্বকের ধরণ অনুযায়ী উপযুক্ত ও সঠিক পণ্য ব্যবহার করার ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url