সুস্থ থাকতে যে ব্যায়ামগুলো কার্যকর

সুস্থ থাকতে যে ব্যায়ামগুলো কার্যকর


আপনি যদি সুস্থ থাকতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে সুস্থ থাকার জন্য কাজ করতে হবে। সুস্থ থাকার অন্যতম একটি উপাদান হচ্ছে শারীরিক পরিশ্রম করা। শারীরিক পরিশ্রম বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। আপনি ব্যায়াম করেও শারীরিক পরিশ্রম করতে পারেন। ব্যায়ামের জন্য অনেকে জিমে ভর্তি হয়, জিমে হার্ড ওয়ার্ক করে থাকে। কিন্তু আমি এখানে আপনাদেরকে জানাবো জিমে না গিয়ে, এমনকি বাইরে না গিয়েও সুস্থ থাকতে যে ব্যায়ামগুলো কার্যকর, এবং যেগুলো আপনি ঘরে বসেই করতে সক্ষম হবেন।

যে সম্পর্কে এখানে বলা হবে-
- সুস্থ থাকতে যে ব্যায়ামগুলো কার্যকর 
- ঘরে বসে করা যায় এমন ২০ টি ব্যায়াম
- যে ব্যায়ামগুলো করতে কোনো উপকরণ লাগবে না। 

সুস্থ থাকার একটি সত্যি ব্যাপার হচ্ছে ওজন নিয়ন্ত্রিত রাখা। শারীরিকভাবে সুস্থতা রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো করার জন্য কায়িক শ্রমের প্রয়োজনীয়তা অনেক।

সুস্থ থাকতে যে ব্যায়ামগুলো কার্যকর

চলুন ঘরে বসে কী কী ব্যায়াম করা যায় তা দেখে নেওয়া যাক-

১. হাঁটা: প্রথমেই বলবো হাঁটার কথা। কারণ, হাঁটা হচ্ছে সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকর একটি ব্যায়াম। সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে যে, একজন মানুষ দৈনিক গড়ে ৬০০০-৯০০০ কদম বা ফুটস্টেপ হাঁটলে তার আয়ু বেশি হয়ে থাকে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারে। আপনি যেখানে-সেখানে হাঁটতে পারেন। যেহেতু এই আর্টিকেলে আমি ঘরে বসে করা যায় এমন ব্যায়াম সম্পর্কে বলছি, সেহেতু হাঁটার ব্যাপারেও তা-ই বলবো যে ঘরেই হাঁটুন। ঘরের এক মাথা থেকে আরেক মাথা বা এককোণ থেকে আরেক কোণ পর্যন্ত কয়েকবার চক্কর দেন, হাঁটুন।

২. পুশআপ: খুবই কার্যকর একটি ব্যায়াম। এটা কীভাবে করতে হয় তা নিশ্চয়ই জানেন। বুক-ডাউনও বলা হয়ে থাকে এটাকে। আপনি বিছানায় অথবা ফ্লোরেও এই ব্যায়ামটি করতে পারেন। দুই হাত ও দুই পায়ে শরীরের সমস্ত ভর রেখে দুই হাত দিয়ে শরীর বিশেষ করে বুক ওঠা-নামা করাতে থাকুন। এতে সমস্ত ভর ও চাপ পড়ে দুই হাতের উপর। এই ব্যায়ামে হাত, বাহু, কাঁধ, পিঠ, পেট, বুক, পা জড়িত থাকে। তাই এটির মাধ্যমে শরীরের একাধিক পেশির ব্যায়ামও হয় যার ফলে সুস্থতা বজায় রাখা যায় নিজের।

৩. শরীরকে সংকোচন করা: এটা বলা যায় শুয়ে উঠ-বস করা। চিৎ হয়ে শুয়ে দুই পা সোজা রেখে অথবা পা ভাজ করে দুই হাত মাথার নিচে রেখে শরীরের উপরের অংশ সামনের দিকে তুলতে চেষ্টা করুন। আবার এভাবেও করতে পারেন, পজিশন একইরকম হবে শুধু শরীর সামনের দিকে তোলার সময় শরীর বাঁকিয়ে নিবেন। যেমন- শরীর তোলার সময় একবার বাম পায়ের দিকে বাঁকিয়ে তুলবেন, আরেকবার ডান পায়ের দিকে। এভাবে ব্যায়ামটি করুন ১০-২০ বার করে। এতেও শরীরের একাধিক পেশির ব্যায়াম হয়। পেটের মেদ কমাতে তো এটি অনেক কার্যকর একটি ব্যায়াম। 


সুস্থ থাকতে যে ব্যায়ামগুলো কার্যকর
Belly lifting

৪. পেট উপরে তোলা: চিৎ হয়ে শুয়ে দুই পা ভাজ করে দুই হাত ফ্লোরে সোজা করে রাখুন। এরপর হাত ও পায়ের উপর ভর দিয়ে কোমরের অংশ উপরের দিকে তুলতে চেষ্টা করুন। তুলে ১০-১২ সেকেন্ড রাখুন। এভাবে কয়েকবার ব্যায়ামটি করুন। দম বাড়াতে, পায়ের ও পেটের পেশি মজবুত করতে এটি কার্যকর ব্যায়াম। পেটের মেদ কমাতেও এটি কাজ করে। 

৫. শুয়ে হাঁটা: দুই হাত ও দুই পায়ের উপর ভর রেখে কোমর ও নিতম্ব কিছুটা উপরের দিকে রাখুন, তারপর স্বাভাবিক হাঁটার মতো করে দুই পা ব্যবহার করুন।

৬. কিকিং: সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে এক পা দিয়ে লাথি বা কিক মারুন কয়েকবার, তারপর অন্য পা দিয়েও মারুন। আবার দৌড় দিয়েও এটা করতে পারা যায়। আস্তে করে দৌড়ের বেগে গিয়ে উপরের দিকে বা শূন্যে লাফ দিয়ে এক পা দিয়ে সামনের দিকে কিক মারুন, তারপর শূন্য থেকে নেমে আবার দৌড় দিয়ে অন্য পা দিয়ে কিক করুন। এটি কয়েকবার করে করুন।


সুস্থ থাকতে যে ব্যায়ামগুলো কার্যকর
Leg kicking

৭. শুয়ে এক পা দিয়ে কিক: বাম কাত হয়ে সমস্ত শরীর সোজা করে শোবেন, দুই পা একটি অন্যটির উপর বরাবর সোজা করে। বাম কাত হয়ে বাম হাতের কনুই ভাজ করে শরীরের ভর সেই কনুইয়ের উপর রাখবেন। তারপর ডান পা কিছুটা উপরে তুলে সামনের দিকে কিক করতে থাকুক ১০-২০ সেকেন্ড। পরে পাশ পরিবর্তন করে ডান কাত হয়ে বাম পা দিয়ে এভাবে কিক করুন।

৮. মেরুদণ্ড সামনে প্রসারিত করা: মেরুদণ্ডের পেশির জন্য উপযুক্ত ব্যায়াম এটি। দুই পা সামনে মেলে বসে সামনের দিকে ঝুঁকে দুই হাত দিয়ে পায়ের আঙ্গুল ধরতে চেষ্টা করবেন, এবং গভীরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস চালাবেন। পা সামনে ফাঁক করে দুই পা আলাদা আলাদাভাবে ধরেও এটি করতে পারেন। এভাবে ১৫-২০ সেকেন্ড করবেন।

৯. কোবরার মতো শরীর প্রসারিত করা: হাত ও নিম্নাঙ্গের দৃঢ়তা দান করে এই ব্যায়াম। দুই হাতে ভর দিয়ে পা থেকে কোমর পর্যন্ত ফ্লুরের সাথে লাগিয়ে কোমর থেকে মাথা পর্যন্ত উপরে তুলে শোয়া। ১৫-২০ সেকেন্ড করে করুন এটি।

১০. এক পায়ের উপর দাঁড়ানো: সহজ একটি ব্যায়াম যা আপনার পেট ও নিম্নাঙ্গের পেশির গঠন দৃঢ় করতে সাহায্য করবে। এক পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে অন্য পা তুলে এবং দুই হাত সোজা আকাশের দিকে প্রসারিত করে রাখবেন। এভাবে ৩০-৬০ সেকেন্ড করে কয়েকবার ব্যায়ামটি করবেন।


সুস্থ থাকতে যে ব্যায়ামগুলো কার্যকর
Bow pose

১১. শরীর ধনুকের মতো করা: মাংসপেশি ও বাহু সবল করতে এই ব্যায়ামটি উপকারী। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাত নমস্কার করার ভঙ্গিতে সোজা করে মাথার উপর তুলবেন, আর এক পা ফ্লুরের সমান্তরালে আর অন্য পা সামনে হাঁটু গেড়ে বসার মতো করবেন। এই ব্যায়ামে ফ্লুরের সমান্তরালে পা রাখা কঠিন ও কষ্টসাধ্য হতে পারে। 

১২. সিঁড়ি বেয়ে ওঠা-নামা: আপনার বাসায় সিঁড়ি থাকলে এই ব্যায়ামটি করতে পারেন।


সুস্থ থাকতে যে ব্যায়ামগুলো কার্যকর
Triangular pose

১৩. ত্রিভুজাকৃতির অবস্থান: খুবই পরিচিত একটি ব্যায়াম এটা। নিয়মিত যারা এক্সারসাইজ করে তারা ছাড়াও, যারা ব্যায়াম সম্পর্কে ধারণা রাখে তারাও এটা সম্পর্কে জানে। ১৮ নম্বরে এটা কীভাবে করতে হবে তা বলা হয়েছে, পড়া চালিয়ে যান।

১৪. উঠ-বস করা: দুই পা সামান্য ফাঁক করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুই পাত সামনের দিকে সোজা করে রাখুন। তারপর দ্রুত উঠ-বস করতে থাকুন ২০-৩০ সেকেন্ড। এতে হাত, পা, কোমর ও পেটের বেশির জন্য কার্যকর ব্যায়াম হয়।

১৫. সাইকেল চালানো: যেহেতু খালি হাতের ব্যায়াম নিয়ে বলছি, সেহেতু এই ব্যায়াম করেও কোনো উপকরণ অর্থাৎ সাইকেল লাগবে না। চিৎ হয়ে শুয়ে দুই হাত সোজা করে উপরের দিকে ও দুই পা ভাজ করে উপরের দিকে রাখুন। এরপর সাইকেল চালানোর মতো করে পা দিয়ে প্যাডেল করতে থাকুক অনবরত। ২০-৩০ সেকেন্ড সেভাবে প্যাডেল করতে থাকুন।

১৬. পা উপর বরাবর তুলে ধরে রাখা: জটিল একটি এক্সারসাইজ এটা। কেমন করে এটা করতে হয় তা জানতে ১৮-তে দেখুন।

১৭. কোমর ধরে উঠ-বস: এটা বুঝতেই পারছেন কীভাবে করতে হয়। ১০ নম্বরের মতো করেই করবেন, শুধু দুই হাত কোমরে ধরে। আবার দুই পা ফাঁক করে সামান্য সামনে-পেছনে নিয়ে দুই হাত কোমরে রেখে উঠ-বস করতে থাকবেন ২০-৩০ সেকেন্ড। 

১৮.খালি বা শুকনা জায়গাতে সাঁতার কাটা: সাঁতার কাটার অবস্থান নিয়ে ব্যায়ামটি পানি ছাড়া জায়গায় করতে হয় বলে এটাকে শুকনা জায়গাতে সাঁতার কাটাও বলা হয়। এটার বিস্তারিত এবং ১৩ ও ১৬ নম্বর কীভাবে করবেন তা ভালোভাবে বুঝতে এই পোস্টটি  পড়ে নিতে পারেন।

১৯. নাচা বা ড্যান্সিং: সবাই তো আর নাচতে পারে না গানের তালে। কিন্তু নিজের ঘরে এলোমেলো ভাবে নাচতে তো অভিজ্ঞতা লাগে না, কোনো বাঁধাও থাকে না। নিজের ঘরে কোনো মিউজিক ছেড়ে দিয়ে অথবা মিউজিক ছাড়াই যেকোনো ভাবে এলোমেলো করে নাচতে পারেন। নাচার মতো মতো ভঙ্গি করতে পারেন সারা শরীর ব্যবহার করে।

২০. যোগব্যায়াম বা ইয়োগা: শরীর ও মন ভালো করতে এবং ভালো রাখতে যোগব্যায়াম বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত কার্যকর ব্যায়াম। বিভিন্ন প্রকারের যোগব্যায়াম আছে। আপনি আপনার সুবিধা মতো কোনো যোগব্যায়াম বেছে নিয়ে সেভাবে করবেন। গুগলে ও ইউটিউবে যোগব্যায়ামের বিভিন্ন তথ্য পেয়ে যাবেন।



শেষকথা

উপরে সুস্থ থাকতে কার্যকর সেরা ব্যায়াম সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা আসলেই কার্যকর এবং উপকারী। আপনি যদি এগুলো প্রতিদিন সম্ভব না হলেও সপ্তাহে ২-৩ দিন করে করুন, তাহলে আপনি নিজেই নিজের সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারবেন কোনোরকম খরচ ছাড়াই। জিমে না গিয়ে, এমনকি বাইরে বের না হয়েও এই ব্যায়ামগুলো আপনি করতে পারেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url