অন্ত্র ও ভিতরের যন্ত্রগুলো ভালো আছে কি-না তা বোঝার উপায়

অন্ত্র ও ভিতরের যন্ত্রগুলো ভালো আছে কি-না


অন্ত্র ও অন্ত্রজনিত রোগ নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকেন। বদহজম, পেটে গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে ভোগা মানুষের পরিমাণ অনেক। আপনি যদি আপনার অন্ত্রের ব্যাপারে সচেতন না হোন, তাহলে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন সমস্যা ও রোগ। কীভাবে বুঝবেন অন্ত্র সুস্থ আছে? আপনার অন্ত্র ও ভিতরের যন্ত্রগুলো ভালো আছে কি-না তা বোঝার উপায় সম্পর্কে জানুন এই আর্টিকেলে।


যা জানবেন-

  • অন্ত্র কী?
  • অন্ত্র মানবদেহে কী কী কাজ করে? 
  • কীভাবে বুঝবেন আপনার অন্ত্র সুস্থ আছে? 
  • আপনার ভিতরের যন্ত্রগুলো ভালো আছে কি-না তা বোঝার উপায়।
  • অন্ত্র সুস্থ রাখতে করণীয়। 


অন্ত্র কী? 

ইংরেজিতে এটি Gut, Intestine নামে পরিচিত। সংজ্ঞায় বলা যায়- মানবদেহের মুখ থেকে শুরু করে পায়ুপথ পর্যন্ত ভিতরের অংশকে অন্ত্র বলা হয়। মূলত পাকস্থলী থেকে পায়ুপথ পর্যন্ত বিস্তৃত প্যাঁচানো নালির অংশ হলো অন্ত্র। অন্ত্রের দুই প্রকার রয়েছে। ক্ষুদ্রান্ত ও বৃহদান্ত্র। 


অন্ত্র মানবদেহে কী কী কাজ করে? 

অন্ত্রকে বলা হয় মানবদেহের " দ্বিতীয় মস্তিষ্ক (Second brain) "। কারণ মানুষের মস্তিষ্ক যেমন মানবদেহের অসংখ্য নিউরনের সঙ্গে সংযুক্ত, তেমনি অন্ত্রও লাখ লাখ নিউরনের সঙ্গে যুক্ত। তাই এটিকে " দ্বিতীয় মস্তিষ্ক " বলা হয়।

মানুষের শরীরে ৪০ ট্রিলিয়ন এরও বেশি ব্যাকটেরিয়া বাস করে, যার মধ্যে বেশিরভাগ ব্যাকটেরিয়া থাকে মানুষের অন্ত্রে। এত এত ব্যাকটেরিয়া মানবদেহের জন্য কিছু আছে উপকারী, আবার কিছু আছে ক্ষতিকর। গাট ফ্লোরা (Gut Flora) নামক ব্যাকটেরিয়া মানুষের জন্য উপকার ও ক্ষতি দু’টোই করতে পারে। 

আবার, আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় যুক্ত যত কোষ আছে, সেগুলোর ৭০% রোগ প্রতিরোধকারী কোষ আমাদের অন্ত্রে থাকে।

তাহলে বুঝতে পারছেন নিশ্চয় যে, অন্ত্র মানবদেহে কী কী কাজ করে এবং কতটা গুরুত্বপূর্ণ। 

এছাড়াও আমাদের সুস্থতা-অসুস্থতা, মুড বা মেজাজ, মানসিক স্বাস্থ্য, খাদ্য পরিপাক এর মতো কাজেও অন্ত্রের ভূমিকা রয়েছে।


কীভাবে বুঝবেন আপনার অন্ত্র সুস্থ আছে?

কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম, পেটে গ্যাস, পেট ফাঁপা, পেটে ব্যথা এই লক্ষ্যণগুলো Irritable Bowels Syndrome এর যা অসুস্থ পাকস্থলী ও অন্ত্রের অসুস্থতার প্রকাশ। 

বমি, পেটে গ্যাস, পেট ব্যথা, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য , পেট ফাঁপা, তীব্র ক্ষুধা, টয়লেট বা মলত্যাগে সমস্যা, হঠাৎ করে ওজনের ভারসাম্য না থাকা বা ওজন পরিবর্তন হওয়া, ত্বকে জ্বালাপোড়া, এলার্জি, মাইগ্রেন, মানসিক অবস্থা ভালো না থাকা এসমস্ত কারণগুলো অন্ত্রের অসুস্থতার জন্য হয়। 

আপনার মধ্যে যদি এই সমস্যাগুলো না থাকে, তাহলে বুঝবেন আপনার অন্ত্র সুস্থ আছে ও স্বাভাবিক আছে।


অন্ত্রের স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতন না হলে পেট ও পাকস্থলীর বিভিন্ন রোগ হয়ে অন্ত্রকে মারাত্মক ক্ষতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। অন্ত্রের একটি রোগ কোলন ক্যান্সার, এই ভয়ংকর রোগটি মানুষকে মৃত্যু পর্যন্ত নিয়ে যায়।


অন্ত্র ও ভিতরের যন্ত্রগুলো ভালো আছে কি-না
Good gut health

আপনার ভিতরের অন্ত্র ও যন্ত্রগুলো ভালো আছে কি-না তা বোঝার উপায়

টয়লেট বা মলত্যাগ: একটি সুস্থ অন্ত্রের লক্ষ্যণ হলো ঠিকভাবে টয়লেট হওয়া। মানুষের মলত্যাগ হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। সকাল, দুপুর, রাত যেকোনো সময় টয়লেট চাপতে পারে। কিন্তু সকালে টয়লেট হওয়াটা বেশি স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়। কারণ সকালে মানুষ ঘুম থেকে জাগলে অন্ত্রও জাগ্রত হয় আর আগের দিনের যত বর্জ্য জমা হয়েছে তা শরীর থেকে বের করার জন্য অন্ত্র কাজ শুরু করে দেয়।

মলত্যাগ হওয়ার যেমন নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই, দিনে কার কতবার টয়লেট হবে সেটারও নির্দিষ্ট মাত্রা নেই। কারণ তা মানুষের অভ্যাসের উপর নির্ভর করে। দিনে সর্বোচ্চ ৩ (তিন) বার টয়লেট হওয়াকে স্বাভাবিক বলা হয়। কারও একবারও হতে পারে, দুইবারও হতে পারে আবার তিনবারও হতে পারে। কিন্তু যদি তা ৩ বা এর চেয়ে বেশি বার হয় এবং ঘনঘন হয় তাহলে তা ডায়রিয়া ও পেটের কোনো সমস্যার জন্য হয়।

পেট ডাকা: পেটে গুড়গুড় শব্দ হওয়া, যেটাকে পেটে ডাকা বলা হয়- এটাও সুস্থ অন্ত্রের লক্ষ্যণ। অনেকে মনে করে যে পেটে ডাকা তা পেটের কোনো সমস্যার জন্য হয়ে থাকে। কিন্তু আসলে তা ঠিক নয়। খাবার খাওয়ার ঘণ্টাখানেক পর থেকে পেটে খিদে লাগতে থাকে ও সেই গুড়গুড় শব্দ হতে থাকে। এটি আসলে অন্ত্র ঠিকঠাকভাবে কাজ করছে ও সুস্থ আছে তা নির্দেশ করে। এতে পেট পরিষ্কার হয় ও অন্ত্র স্বাভাবিক থাকে।

পেট ও পাকস্থলীর অবস্থা: এটা নিয়ে উপরেই বলা হয়েছে যে পাকস্থলীতে আর পেটে সেই সমস্যা গুলো যদি না হয়, তাহলে বোঝে নিবেন অন্ত্র ভালো আছে। 

মানসিক স্বাস্থ্য: মানসিক স্বাস্থ্য হচ্ছে মানসিক চাপ, মেজাজ, হতাশা, দুশ্চিন্তা, অবসাদ এগুলো। অন্ত্র ভালো না থাকলে পেটে জ্বালা যন্ত্রণা, অস্বস্তিকর পরিবেশ হয়, তা মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলে। মানসিকভাবে ভালো থাকাও সুস্থ অন্ত্রের প্রকাশ করে। 

ক্লান্তিমুক্ত ও স্বতঃস্ফূর্ত থাকা: দুপুরে খাওয়ার পর অনেকেরই তন্দ্রাভাব জাগে। তখন খানিকটা ঘুমিয়ে নিতে পারলেই যেন ভালো লাগবে। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে যদি দুপুরের খাবার খাওয়ার পর কারও ঘুম পায়, তন্দ্রাভাব হয় তাহলে সেটা তার অন্ত্রের অসুস্থতা নির্দেশ করে। সুস্থ অন্ত্রের কারও খাওয়ার পরপরই ক্লান্তি আসবে না। হজমশক্তি দূর্বল, খাদ্য পরিপাক হতে সমস্যা, প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে অন্ত্র অসুস্থ হয়ে পড়ে। আপনার যদি এমন অবস্থা অর্থাৎ দুপুরের খাবার খাওয়ার পর ক্লান্তি ও ঘুম না পায়, তাহলে বোঝে নিবেন অন্ত্র সুস্থ ও ভালো আছে। 

এই বিষয়গুলো খেয়াল করলেই আপনার অন্ত্র ও ভিতরের যন্ত্রগুলো ভালো আছে কি-না তা সহজেই বুঝতে পারবেন।


অন্ত্র সুস্থ রাখতে করণীয়

শারীরিক পরিশ্রম ও মানসিক স্বাস্থ্য অন্ত্র সুস্থ রাখার নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। শরীর ও মন একে-অপরের সাথে জড়িত। তাই শরীর ও মনের সুস্থতাই একজন মানুষের ভালো থাকা নিশ্চিত করে। অন্ত্র ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু করণীয়গুলো-

- বিভিন্ন রকম খাদ্য উপাদান সমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। ভিটামিন-ডি বেশি এবং পর্যাপ্ত মাত্রায় গ্রহণ করা। কারণ, ভিটামিন-ডি অন্ত্রের জন্য উপকারী। 

- শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম করা। প্রতিদিন সম্ভব না হলেও সপ্তাহে ২/৩ দিন ব্যায়াম করতে চেষ্টা করুন। 

- মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া।

- অতিরিক্ত ভাজাপোড়া ও মসলাদার খাবার বেশি না খাওয়া।

- ধুমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা।

- দৈনিক ৮-১২ গ্লাস পানি পান করা। 

- পর্যাপ্ত ঘুম হওয়া। কীভাবে ভালো ঘুম পাওয়া যায়?

এগুলো খেয়াল করে সচেতন হলেই আপনার দেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ অংশ অন্ত্রের অসুস্থতা রোধ করতে পারবেন।


উপসংহার

মানবদেহের "দ্বিতীয় মস্তিষ্ক " অন্ত্র সুস্থ না থাকলে মানবদেহও সুস্থ থাকতে পারে না। তাই আপনার অন্ত্র ও ভিতরের যন্ত্রগুলো ভালো আছে কি-না তা বুঝতে চেষ্টা করুন। অন্ত্রের সুস্থ থাকা নিশ্চিত রাখুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url