যে ফলগুলো যে রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে

যে ফলগুলো যে রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে


ফলমূল এর কাজ এবং উপকার সম্পর্কে সবাই কমবেশি নিশ্চয় অবগত। প্রতিটি ফলেরই রয়েছে গুণাগুণ, রোগ ভালো করার গুণ। কাঁচা, আধপাকা, পাকা যে অবস্থার ফলই হোক, আপনি সেই ফল থেকে ঠিকই পুষ্টি ও গুণাগুণ পাবেনই। আজকে আপনাদেরকে সেরকম কিছু ফল (Fruits) নিয়ে বলবো যে ফলগুলো যে রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। 


  কোন ফল কোন রোগের ওষুধ 

আমরা তো অনেক ধরণের ফল খাই। কলা, কাঁঠাল, কামরাঙা, জাম্বুরা, আঙুর, আম, আনারস, আপেল, ড্রাগন ফ্রুট, ডালিম, ডেউয়া, স্ট্রবেরি, লিচু, জাম ইত্যাদি আরও কত ফল। হাজার প্রজাতির ফলফলাদি আছে এই দুনিয়ায়। একেক পরিবেশ ও আবহাওয়ার বৈচিত্র্যের কারণে একেক দেশে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির ফল জন্মে। মানুষের ঘরেঘরে তো ফল থাকেই। ফলের বেশি কদর দেখা যায় রোগী দেখতে গেলে, আত্মীয় বাড়ি বেড়াতে গেলে।
 তো, আর এসব না বলে সরাসরি আসল বক্তব্যে চলে যাই যে ফলগুলো যে রোগের প্রতিরোধ করতে কাজ করে। 

আম: আমকে তো বলা হয় ফলের রাজা। "কিং অব ফ্রুটস ", শুনেছেন নিশ্চয়। রাজা বলার পেছনে তো রাজার মতোই গুণ থাকতে হয়, তাই না? আমে থাকে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি৬, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ই, ভিটামিন-কে, পটাসিয়াম, ফাইবার (আঁশ) সহ আরও মহামূল্যবান উপাদান। থাকে এন্টিঅক্সিডেন্ট, প্রদাহ প্রতিরোধী কিছু উপাদান যা শরীরকে বিভিন্ন প্রদাহজনিত সমস্যার সমাধান দেয়।

দীর্ঘকালীন রোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিক, হার্ট সংক্রান্ত সমস্যা, আলঝেইমার বা ভুলে যাওয়া রোগ, পার্কিনসন সহ নির্দিষ্ট কিছু ক্যান্সারের প্রতিরোধে আমের গুণাগুণ প্রতীয়মান হয়েছে কিছু গবেষণায়। আমে অ্যাসিড থাকে বিধায় এটি  হজমক্রিয়ায় ভালো সহায়তা করে আপনার পেটকে ভালো রাখে।

জাম: বিশেষ করে কালোজাম। জাম গলিয়ে লবণ, মরিচ দিয়ে ভর্তা করে টকটক স্বাদের জাম খেতে কতই না মজা! জাম আপনার মুড, মেজাজ ভালো করার কাজ করে, হজমে সহায়তা দেয়। উচ্চ রক্তচাপ, টাইপ-২ ডায়াবেটিক, হার্ট সংক্রান্ত, অতিরিক্ত স্থুলতা বা ওভারওয়েইট এর মতো সমস্যাগুলো থেকে পরিত্রাণ দিতে পারে এই ফলটি।

আনারস: রসালো ফল, খেতেও দারুণ। আনারসের গুণাগুণ প্রায় আমের মতোই। আনারস ভিটামিন-সি ও ম্যাঙ্গানিজ সমৃদ্ধ একটি ফল। থাকে এন্টিঅক্সিডেন্ট। রাগ, ক্ষোভ, দুশ্চিন্তা কমাতে আনারসের এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ম্যাঙ্গানিজ কাজ করে। প্রদাহ প্রতিরোধ, মেটাবলিক মাত্রা, রক্তে সুগার বা গ্লুকোজ নিয়মিত হওয়া, হজমক্রিয়ার কাজে আনারস খুব ভালো সাপোর্ট দিয়ে থাকে।

অ্যাভোকাডো: এটিকে বলা অলরাউন্ডার ফল। নানাবিধ গুণাগুণ নিয়ে অন্য ফলগুলোর তুলনায় এটি এগিয়ে আছে। ব্লাড কোলেস্টেরল ম্যানেজ, ওজন ম্যানেজ, চোখের স্বাস্থ্য ভালো করতে, ডায়াবেটিক ও হার্ট ডিজিজ প্রতিরোধে অ্যাভোকাডোর সফলতা প্রমাণিত। 

আপেল: আপলের কথা জানেনই যে, প্রতিদিন একটি করে আপেল খাওয়া মানে ডাক্তার থেকে দূরে থাকা। অর্থাৎ রোগমুক্ত থাকা যায়। 

ড্রাগন ফ্রুট: নামী-দামী ফল। সব জায়গায় পাওয়া যায় না। এটিকে স্বাস্থ্য উন্নত করার ফল বলে অনেকেই বলে থাকে। এতে পাওয়া যায় ভিটামিন-সি, ভিটামিন-কে, আয়রন (লৌহ), ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম, বিটা ক্যারোটিন। 

আঙুর: আঙুরে দু'টি উপাদানই বেশি পাওয়া যায়, সেগুলো ভিটামিন-কে এবং পটাসিয়াম। এই দু'টি উপাদান হার্টজনিত রোগের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে, নির্দিষ্ট কিছু ক্যান্সারের প্রতিরোধে অবদান রাখে। হাড়ের ক্ষয় রোধেও আঙুর কাজ করে। 

পেয়ারা: ভিটামিন-সি তে ভরপুর ফল। এতে আরও থাকে বেশি পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট। চোখের, স্কিনের, হার্টের ও কিডনির বিভিন্ন সমস্যার প্রতিকার করতে পেয়ারার সমতূল্য ফল কমই আছে। যারা হরমোন জনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে, পাকা পেয়ারা এই সমস্যার প্রতিকার দিতে পারে অনেকাংশেই। 

কমলা: ভিটামিন-সি, পটাসিয়াম, ফাইবার, থায়ামিন সহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এন্টিঅক্সিডেন্টে যুক্ত ফল কমলা বা অরেঞ্জ। কোলেস্টেরল, ব্লাড প্রেশার, খাওয়ার পর রক্তের শর্করা ও প্রদাহের মাত্রা কমাতে এই ফল ভূমিকা রাখতে পারে। আর নিউমোনিয়া রোগের ট্রিট করতে তো কমলা চমৎকার একটা ফল।

কলা: পটাসিয়ামে টইটম্বুর ফল। সাথে থাকে ভিটামিন-বি৬, ভিটামিন-সি, ম্যাগনেসিয়াম। মুড ভালো করতে, উদর অভ্যন্তরে অর্থাৎ অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি বাড়াতে কলা কাজ করে। 

তরমুজ: পানিতে ভরা ফল, বাইরে সবুজ ভিতরে লাল। ইউনিক ফল বলতে পারেন এটাকে। ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, বিটা ক্যারোটিন সহ এন্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত। টাইপ-২ ডায়াবেটিক, হৃদরোগ, ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগগুলি প্রতিরোধ করে পানিযোজি এই ফলটি। স্ট্রেস কমাতে, মুখ ও গায়ে সূর্যের তাপে হওয়া দাগ সরাতে তরমুজ ভালো কাজ করে। 

স্ট্রবেরি: ম্যাঙ্গানিজ ও ভিটামিন-সি যুক্ত ফল। সাথে আরও এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে এতে। দীর্ঘকালীন কোনো রোগ থেকে সুরক্ষা, সুগার লেভেলে প্রভাব ফেলার কাজ করে ফলটি।

লেবু ও জাম্বুরা: রয়েছে ভিটামিন-সি, ফাইবার, বিটা ক্যারোটিন, পটাসিয়াম ও আরও বিভিন্ন এন্টিঅক্সিডেন্ট। কোলেস্টেরল ঠিক রাখা, ওজন লস করা, প্রদাহ মাত্রা কমানো, পোড়া দাগ রিমুভ করতে কাজ করে লেবু ও লেবুবর্গীয় ফলগুলো। 

পেঁপে: মিষ্টিযুক্ত বড় একটি ফল। পেট ভালো রাখতে, পাইলস সমস্যা সারাতে পাকা পেঁপে খাওয়ার মাধ্যমে উপকার পাওয়া যায়। 

সব ফল সম্পর্কে তো বলা সম্ভব না, তাই সচরাচর যে ফলগুলো বেশি চলে এবং বেশি খাওয়া হয় মানুষের, সেগুলো ও সেগুলোর গুণাগুণ নিয়েই বললাম। 

উপসংহার 
বললাম যে ফলগুলো যে রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে সম্পর্কিত কিছু কথা। নিয়মিত ফল খান। দামী ফল খেতে হবে না। আপনার সামর্থ্যের মধ্যে ও হাতের কাছে পান এমন ফল খান। সব ফলই উপকার করে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url