ব্রেস্ট টাইট করতে কোন কাজগুলো করবেন?
ব্রেস্ট, যেটাকে বাংলায় স্তন বলা হয়। এটি নারী দেহের গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় একটি অঙ্গ। আর এই অঙ্গটির আকার যদি ঠিক না থাকে, তাহলে খুবই অস্বস্তি ও বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হয় মেয়েদের । পছন্দ মতো পোশাক পরা যায় না, নিঃসংকোচে হাঁটাচলা করা যায় না। আর স্তন যদি ঝুলে যায় তাহলে তো চিন্তার শেষ নেই অনেকের। ব্রেস্ট টাইট করতে কোন কাজগুলো করবেন? - এ নিয়েই এখানে পড়বেন।
পরিবেশ,আবহাওয়া, খাদ্যাভ্যাস এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও বয়সের সাথে সাথে স্তন ঝুলে যাওয়া বা আকার পরিবর্তন হওয়া খুবই স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু, অনেকের খুব কম বয়সেই ঝুলে যায়। তা ছাড়াও ওজন বেড়ে গেলেও আর হঠাৎ করে অতিরিক্ত ওজন কমালে স্তন ঝুলে যেতে পারে।
কথাটি জেনে খারাপ লাগলেও, আপনি কখননোই আপনার স্তনের আসল আকার এবং আকৃতি পুরোপুরি ফিরে পাবেন না একবার যদি আকার পরিবর্তন হয়েই যায়। তবে ঘাবড়ানোর কিছু নেই বা এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। আপনি আপনার বক্ষ বা স্তন ঝুলে যাওয়া অবস্থা কিছুটা কমাতে পারবেন এবং শেইপ (আকার) উন্নত করার জন্য কিছু ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
আর তাই আপনাদের জানাবো কীভাবে খুব সহজ উপায় গ্রহণ করার মাধ্যমে আপনার ব্রেস্টের সঠিক শেইপ ফিরে পাবেন। নিচে কিছু টিপস তুলে ধরার চেষ্টা করছি, আশা করি তা ভালোভাবে মেনে চলবেন :
ব্রেস্ট শেইপ ফিরে পেতে ও ব্রেস্ট টাইট করতে
• ব্যায়াম
• পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাদ্য
• ভঙ্গিমা
• সঠিক বক্ষবন্ধনি (bra) নির্বাচন
• ম্যাসাজ / মালিশ করা
• বরফ ঘষা ( Ice rub)
• ব্রেস্ট প্যাক বা মাস্ক
ব্যায়াম
যেহেতু নরম এই মাংসল অঙ্গটিতে পেশী থাকে না, তাই আপনি ব্যায়ামের মাধ্যমে স্তনের টিস্যু শক্ত করতে পারবেন না। তবে , স্তনের নীচে তন্তুর ন্যায় সংযোগকারী টিস্যু এবং পেশী রয়েছে যা আপনার ব্রেস্টের সামগ্রিক চেহারা উন্নত করবে ব্যায়ামের মাধ্যমে।
কিছু ব্যায়াম আছে যা শুধুমাত্র ব্রেস্টের সাথে সংলগ্ন পেশীকেই উন্নত করে না, আপনার মনো-দৈহিক স্ট্রেস কমানোতেও ভূমিকা পালন করে । তাই এখানে কিছু সাধারণ ব্যায়ামের কথা তুলে ধরা হল:
সাঁতার
প্রতিদিন চেষ্টা করবেন ১০ থেকে ১৫ মিনিট সাঁতার কাটার । এতে আপনার ব্রেস্টের পেশি শক্ত হবে এবং আস্তে আস্তে সঠিক শেইপ ফিরে আসতে থাকবে। তাই আপনার অঙ্গটির সঠিক শেইপ ফিরে পেতে চাইলে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট সাঁতার কাটুন।
পুশ-আপ
আপনার ঝুলে পড়া ব্রেস্টকে সঠিক শেইপ দিতে সবচেয়ে সহজ এবং ইফেক্টিভ ব্যায়াম হলো পুশ-আপ। প্রতিদিন নিয়ম করে ১০ থেকে ১২ বার পুশ-আপ করবেন।
ডাম্বেল তোলা
চিৎ করে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার হাতদুটোর কনুইদ্বয় ভাজ করে বুকের কাছে এনে রাখুন। দু হাতে দুটো ডাম্বেল নিয়ে বুকের উপর মাঝ বরাবর সোজা ভাবে তুলবেন । বেশি ওজনের ডাম্বেল তুলতে হবে না। দুই হাঁটু ভাজ করে রাখবেন। তারপর সোজা হাতদুটো ছড়িয়ে আস্তে আস্তে করে খুলুন। তারপর আবার আগের ভাজ করা অবস্থায় আনুন। এভাবে করতে থাকবেন।
এ ছাড়াও আরো কিছু এক্সারসাইজ আছে যা প্রতিদিন যদি আপনি করেন তাহলে আপনার ঝুলে যাওয়া স্তন আস্তে আস্তে সঠিক শেইপে আসবে । যেমন : চেস্ট প্রেস (এটা হলো নিজের চেস্ট অর্থাৎ ব্রেস্ট নিজে প্রেস করা বা টিপা), এলবো স্কুইজ, টি-প্লাঙ্কস ইত্যাদি। এইসব প্রতিদিন সঠিকভাবে ১০ থেকে ১২ বার করে করলে আস্তে আস্তে ফল পাবেন। মনে রাখবেন, যেকোনো কাজ ধৈর্য সহকারে করলে তার ফলাফল ভালো পাবেন।
পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাদ্য
ব্রেস্টের সঠিক শেইপ ফিরে পেতে তার জন্য আপনার প্রতিদিনের আহারের দিকেও নজর দিতে হবে । স্তনকে টাইট করার জন্য দরকার পর্যাপ্ত প্রোটিন এবং ফাইবার (আঁশ) । তাই এই জন্য আপনার প্রতিদিনের আহার প্রোটিন আর ফাইবার সমৃদ্ধ হতে হবে। তালিকায় অবশ্যই দুধ, ডিম, ডাল আর আঁশযুক্ত উপাদান অন্তর্ভুক্ত করবেন।
এছাড়াও আপনার ভিটামিন, মিনারেলস এবং ক্যালসিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ দরকার। যেমন : ফুলকপি, টমেটো, বাঁধাকপি, পটল, গাজর এবং টাটকা সবুজ সবজি যা এইসব খাবাবের মধ্যেই প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবেন।
আর হ্যাঁ, আপনার শরীরের স্থিতিস্থাপক এবং ভারসাম্য রাখার জন্য সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে শরীরের সঠিক ওজন বজায় রাখা । অতিরিক্ত ওজন আপনার ত্বকের টিস্যুর উপর চাপ সৃষ্টি করে যার ফলে স্তন ঝুলে যায়।
একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যের পাশাপাশি, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অপরিহার্য। তামাক জাতীয় দ্রব্য, ধূমপান আপনার ত্বকের পাশাপাশি আপনার স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। এটি স্তন ঝুলে যাওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে। তা থেকে বিরত থাকতে হবে।
তবে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা যা না বললে হয় না, আপনাকে সারাদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে এবং হাইড্রেটেড থাকতে হবে । পানি আপনার শরীরের সমস্ত কিছুকে শক্তি দেয় এবং আপনার ত্বককে সতেজ রাখবে এবং স্তনের টিস্যুর সামগ্রিক উন্নত করবে।
ভঙ্গিমা
খারাপ ভঙ্গিমাতে বসা , যেমন কুঁজ করা বা পিঠ বাঁকানো। তাতে স্তনগুলি তাদের নিজের ওজনের কারণে ঝুলে যেতে পারে, ব্রেস্ট টিস্যুতে আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং ঝুলে যেতে পারে।
চেষ্টা করবেন পিঠ সোজা করে কাঁধ পিছনে রেখে বসার কিংবা হাটার। যেহেতু আপনার শরীরের অবস্থান সমান, সেহেতু সেই অনুপাতে আপনার সমস্ত ওজন সমানভাবে বহন করবে আর আপনার স্তনকে আরও টানটান করবে এবং ঝুলে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করবে । তাই সঠিক ভঙ্গিমায় চলাফেরা, ওঠাবসা করুন, বিশেষ করে সামনের দিকে ঝুঁকে চলা, বসা থেকে বিরত থাকতে খেয়াল রাখবেন।
সঠিক বক্ষবন্ধনি (bra) নির্বাচন
ভুল মাপের ব্রা ব্রেস্ট শেইপ যেমন নষ্ট করে, আবার গুণগতমানের সঠিক মাপের ব্রা শেইপ ঠিক রাখে যা আপনার স্তনে থাকা টিস্যু এবং পেশীগুলির উপর চাপ কমায় । তাই ব্রা সিলেকশনে ভুল করা চলবে না। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ ব্রা পরে থাকলে শেইপ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। আবার একেবারেই ব্রা পরা বাদ দিলেও শেইপ নষ্ট হয়ে যাবে।
তাই একবারে দীর্ঘক্ষণ ব্রা পরে থাকবেন না, আবার একবারেই পরা বাদ দিবেন না। সারাদিন পরে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ব্রা খুলে ঘুমাবেন, তাতে ব্রেস্টের উপর চাপ কমবে আর কমফোর্ট জোনে থাকবে।
ম্যাসাজ / মালিশ করা
ব্রেস্ট ম্যাসাজের ক্ষেত্রে অলিভ অয়েল, নারিকেল তেল বা অ্যালোভেরার জেল ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিদিনের ম্যাসাজে আপনার স্তনে থাকা পেশীগুলো শক্ত হতে থাকবে । কয়েক ফোটা অলিভ ওয়েল, নারিকেল কিংবা অ্যালোভেরার জেল (হাতের কাছে যেটা পান, সেটা দিয়েই শুরু করুন) দিয়ে প্রতিদিন ৫-৬ মিনিট আপনার বুকের ও ব্রেস্টের আশেপাশে আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করুন। তাতে আপনার সেখানে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে আর আপনার ঝুলে যাওয়া স্তন ফিরে আসবে সঠিক শেইপে ।
স্তনে বরফ ঘষা (Ice rub)
স্তনে বরফ ঘষা! শুনতে অবাক লাগছে, তাই না? এটি একটি খুবই কার্যকরী প্রক্রিয়া। এটি আপনার ব্রেস্টের সাথে যুক্ত পেশীকে শক্ত করতে এবং এর আশেপাশের সেলুলাইটের সাথে লড়াই করতে সাহায্য করবে।
কয়েক টুকরো বরফ নিন এবং তা পাতলা পরিষ্কার কাপড়ে নিয়ে আপনার ঐ জায়গার চারপাশে প্রায় ১-২ মিনিটের জন্য বৃত্তাকার গতিতে আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করুন। প্রতিদিন নিয়ম করে যদি কেবলমাত্র ১-২ মিনিট এই প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করেন, তাহলে আপনার ঝুলে যাওয়া ব্রেস্টের সঠিক শেইপ ফিরে পাওয়ার সম্ভাবণা বাড়বে।
ব্রেস্ট প্যাক বা মাস্ক
ব্রেস্টমাস্ক ১: ১ টেবিল চামচ টক দই, ১ টেবিল চামচ ভিটামিন-ই ক্যাপ এবং ১টি ডিম একসঙ্গে ফেটিয়ে নিন। এবার এই দই, ডিম, ই-ক্যাপের মিশ্রণটি গোসলের আগে চারপাশে মেখে আধা ঘণ্টা রেখে দিন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ।
ব্রেস্টমাস্ক ২ : ৩ টেবিল চামচ শসার রস এবং একটি ডিমের কুসুম মিশিয়ে প্যাকটি বানিয়ে নিন । পূর্বের প্যাকটির মতো এই প্যাকটিও গোসলের আধা ঘন্টা আগে স্তনের চারপাশে ভালোভাবে মেখে রেখে দিতে হবে । তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ।
এক সপ্তাহ প্রতিদিন প্যাকটি ব্যবহার করলে পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন।
এই কাজগুলো আপনি ব্রেস্ট টাইট করতে অনুসরণ করুন। রেজাল্ট নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারবেন। কিন্তু অবশ্যই ধৈর্য্য নিয়ে পূর্ণ চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। দুইদিনেই আশাহত হয়ে যাওয়ার মন নিয়ে থাকলে তো কোনো কিছু তে ফল পাওয়া মুশকিল।