মাইগ্রেনের সমস্যা থেকে উপশম পাওয়ার সঠিক উপায়সমূহ
মাইগ্রেনের সমস্যার উপশম |
মাথাব্যথা প্রতিটি মানুষের জীবনে একবারের জন্য হলেও হয়ে থাকে। এর রয়েছে বিভিন্ন প্রকারভেদ। মাইগ্রেন হলো মাথাব্যথার কমন একটি নাম। মাইগ্রেন ব্যথার কিছু কারণ থাকে যা মাইগ্রেনের ব্যথাকে আরও আশকারা দেয়। কী কারণের জন্য মাইগ্রেনের ব্যথা আশকারা পেয়ে বাড়ে, সেগুলো পরে বলা হবে। আপনি কি মাইগ্রেনে ভোগেন? মাইগ্রেনের সমস্যা থেকে উপশমের সঠিকতর উপায় খুঁজছেন? তাহলে এই লিখাটি হবে আপনার জন্য উপকারী।
পাবেন-
- মাইগ্রেন ব্যথা কেমন হয়?
- কাদের মাইগ্রেন বেশি হয়?
- মাইগ্রেনের ব্যথা কেন হয় এবং বাড়ার কারণ।
- মাইগ্রেনের সমস্যা থেকে উপশমের সঠিকতর উপায়।
মাইগ্রেন ব্যথা কেমন হয়? কীভাবে মাইগ্রেন ব্যথা নির্ণয় করবেন?
মাথাব্যথার প্রতিটি প্রকারের ভিন্ন কিছু লক্ষ্যণ থাকে। যা থেকে কোনটি কোন ব্যথা তা বুঝতে পারা যায়। তেমনি মাইগ্রেন ব্যথা বোঝারও লক্ষ্যণ আছে। মাথা ব্যথা হওয়া মানেই কিন্তু মাইগ্রেন ব্যথা না। মাইগ্রেনের ব্যথা অন্যসব মাথাব্যথা থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম। এটি একটি ভয়াবহ রকমের ব্যথা। এই ব্যথা মাথার যেকোনো একপাশে, এক অংশে, এক দিকে হয়। বিশেষ করে কপালের দিকে। পরবর্তীতে ব্যথা সারা মাথায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। তখন খুবই ভয়ংকর অবস্থায় পড়তে হয়। মাইগ্রেন ব্যথা নির্ণয় করার কিছু সাইন -
- মাথার যেকোনো একপাশে হবে। কপালের বামপাশে কিংবা ডানপাশে। পরে ব্যথা কপালের সামনে ও চোখের দিকেও চলে আসে।
- একপ্রকার হালকা স্পন্দন বা কম্পন, মাথার তালু ও যেখানে ব্যথা সেখানে টনটন করা অনুভূতি হয়।
- ঔষধ নেওয়া ছাড়া ব্যথা ৪ ঘণ্টা যাবত চলে। সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টা পর্যন্তও থাকতে পারে ব্যথা।
- মাঝারি থেকে তীব্র ব্যথার দিকে ধাবিত হয়।
- আলো, রুমের লাইট সহ্য করতে কষ্ট হয়। চোখ তখন আলো সহ্য করতে পারে না। অন্ধকার বা আবছা আলোর পরিবেশে অনেকটা আরাম পাওয়া যায়।
- বমিভাবও হতে পারে, এমনকি বমিও।
- কানে যেকোনো শব্দের তীব্রতা বেড়ে যায়, শব্দ সহ্য করতেও সমস্যা হয়।
কাদের মাইগ্রেন বেশি হয়?
মাইগ্রেনকে বংশগত কারণও বলা হয়ে থাকে। পরিবারের সদস্য কারও মাইগ্রেন হওয়ার ইতিহাস থাকলে, অন্যান্য সদস্যদেরও এটা হয়। একটি রিসার্চ থেকে দেখা গিয়েছে পুরুষদের তুলনায় নারীদের মাইগ্রেন বেশি হয়। নারীদেরই এটা বেশি হওয়ার জন্য যেকারণ গুলো সে গুলো হলো পিরিয়ড, গর্ভবর্তী অবস্থা ইত্যাদি। ১৫ বছরের পরের বয়সীদের মধ্যে মাইগ্রেন দেখা দিতে পারে।
মাইগ্রেনের ব্যথা কেন হয় এবং বাড়ারকারণ
অনেক রিসার্চ চলছে মাইগ্রেন কেন হয় তা সঠিকভাবে নির্ণয় করতে। তাই এখন আপাতত কোনো নির্দিষ্ট কারণ পাওয়া যায়নি মাইগ্রেন হওয়ার। কিছু গবেষক মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক কার্যকলাপকে মাইগ্রেন হওয়ার একটি কারণ হিসেবে বলেছেন। পারিবারিক কারও মাইগ্রেন হয়ে থাকলে অন্য ফ্যামিলি মেম্বারদের ক্ষেত্রেও তা হওয়ার আরেকটি কারণ। এই ব্যথা হওয়ার কোনো নির্দিষ্ট ও নির্ধারিত কারণ না থাকলেও যে কাজগুলো আর যে বিষয়গুলো মাইগ্রেন ব্যথা বাড়িয়ে দিয়ে থাকে সেইগুলো সম্পর্কে জানা গিয়েছে। যেগুলো মাইগ্রেন ব্যথাকে আশকারা দেয়-
- পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব।
- মনো-দৈহিক জটিলতা। চাপ, দুশ্চিন্তা, ক্লান্তিবোধ।
- অতিমাত্রার শব্দ ও অসহনীয় আলোর মাত্রা।
- আশেপাশে থাকা কোনো বস্তু, পদার্থের গন্ধ।
- একনাগাড়ে টানা অনেকক্ষণ মোবাইল, কম্পিউটার, টিভি, ভিডিও গেমিং ডিভাইসসহ এরকম বস্তুর সামনে থাকলে।
- খালি পেটে বা না খেয়ে থাকলে। পানির শূন্যতা থাকলে।
এই কাজগুলো মাইগ্রেনের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে তুলে। শীতের ঠাণ্ডায়, সাইনাসজনিত কারণেও মাইগ্রেন হয়।
মাইগ্রেনের সমস্যা থেকে উপশমের সঠিকতর উপায়
নাই, মাইগ্রেন পুরোপুরিভাবে সারানোর কোনো উপায় নেই। একবার মাইগ্রেন হলে তা জীবনে পরবর্তীতেও হতে থাকে কোনো না কোনো সময়ে। তবে কেউ চাইলেই এই ব্যথা উপশমের জন্য কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে, যা ব্যথা হ্রাস করবে। পদক্ষেপসমূহ দেখুন আর মানুন। পদক্ষেপসমূহ:
১. অবশ্যই ভালো ঘুম দিন। ঘুম পর্যাপ্ত আর ভালো হলে চোখের অস্বস্তি, ক্লান্তি দূরীভূত হয়ে বডি রিল্যাক্স থাকে যা মাইগ্রেন কমাবে।
২. ব্যথা শুরু হলে যে কাজ করছিলেন তা তখনই বন্ধ করে দিন। কাজ বন্ধ করে রেস্ট নিয়ে নিলে মাইগ্রেন থেকে কিছুটা আরাম পাওয়া যায় তাৎক্ষণিক।
৩. যেখানে ব্যথা হচ্ছে সে জায়গার রগের উপর আর চারপাশে আঙুল দিয়ে চেপে ধরে ম্যাসেজ করলে একটু আরামবোধ হবে।
৪. আদা খান। আদা দিয়ে চা-ও খেতে পারেন। আরও খাবেন ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত বিভিন্ন খাদ্য। গাজর, বাঁধাকপি, বাদাম, ডার্ক-চকোলেট, মিষ্টি আলু, সবজির ও ফ্রুটসের সালাদ, মাশরুম
খাবেন। এই ফুডসগুলো ব্যথা নিবারকের কাজ করে।
৫. একটি/ দুইটি পাকা কলা ( যেকোনো কলা, বিশেষ করে বিচি কলা) খেয়ে চোখ বোজে কিছুক্ষণ আলোহীন পরিবেশে শুয়ে থাকুন চুপচাপ। এই পদ্ধতিতে অনেকেই অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যথা থেকে আরাম পেয়েছে বলে মতামত দিয়েছে।
৬. অন্ধকারময় অথবা আবছা আলোকময় ও কোলাহলমুক্ত পরিবেশে শুয়ে রেস্ট নেন কিছুক্ষণ, পারলে ঘুমিয়ে নেন। অতি আলোর পরিবেশে থাকবেন না ব্যথার সময়।
৭. মৃদু গরম অথবা ঠাণ্ডা পানি ঢালুন মাথায় কিছুক্ষণ। পানি দিতে না চাইলে পানিপট্টি লাগিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ।
৮. অনেকক্ষণ কম্পিউটার, টিভি, ভিডিও গেমিংয়ে থাকতে হলে চোখে চশমা ব্যবহার করবেন। এসব ডিভাইসের স্ক্রিন থেকে নির্গত হওয়া নীল আলো চোখের জন্য ক্ষতিকর যা মাইগ্রেনও বাড়ায়। নীল আলো প্রতিরোধী চশমা, লেন্স ব্যবহার করুন। প্রখর সূর্য তাপে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হলে সানগ্লাস পরে নিবেন।
৯. অল্প পরিমাণে কফি, চা পান করা যায়। এগুলোয় থাকা ক্যাফেইন ব্যথা উপশমে উপকার করে। ব্ল্যাক টি/ চা নিবেন, দুধ ও চিনির চা নিবেন না।
১০. এসপিরিন, প্যারা সিটামল সেবন করুন চিকিৎসক এর সাজেশন মতো। ওভারডোজ সেবন করবেন না। প্রেগন্যান্ট ও বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান এমন কেউ কোনোভাবেই চিকিৎসক এর সাজেশন ছাড়া কোনো ঔষধ সেবন করবেন না।
১১. প্রচুর পানি খাবেন। পানির ঘাটতি না থাকলে পানিশূন্যতার রেহাই হবে, মাইগ্রেন ব্যথা কমবে।
এই পদক্ষেপ গুলোর সাহায্যে সাময়িকভাবে মাইগ্রেনের ব্যথা উপশম করা যায়। সাময়িক বলতে যেদিন (যখন) ব্যথা হয় সেদিন (তখন) ব্যথা দূরীকরণ হয়। কিন্তু কিছুদিন পর বা জীবনের কোনো সময়ে তা পুনরায় হতে পারে। যখনই এই ব্যথা হোকনা কেন, এই পদক্ষেপগুলো নিলে উপশম মিলবে।
যার মাইগ্রেন হয়, কখন হয় এবং কী কারণে হয় তা এতে ভোগা ব্যক্তি জানে ও বোঝে। একটু উপরেই মাইগ্রেন ব্যথা বাড়ার যে কারণগুলোর কথা বলা হয়েছে, সেই কাজ আর বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতে ট্রাই করবেন আর উক্ত পদক্ষেপসমূহ মেনে চললে মাইগ্রেনের সমস্যা উপশম হবে।