কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে যা করবেন। সহজ উপায় জানুন
কোষ্ঠকাঠিন্য শব্দটার সাথে সবাই পরিচিত না থাকলেও কষা ও শক্ত মলত্যাগ শব্দ ঠিকই শুনেছেন। মিনিটের পর মিনিট টয়লেটে বসে থাকা লাগে শান্তিতে মলত্যাগ করতে। কিন্তু যখন মলত্যাগই হয় না, দিনে একাধিকবার টয়লেট করতে গিয়েও পেট পরিষ্কার হয় না। সেই মুহুর্তটা কতটা কষ্টকর তা শুধু এই যন্ত্রণায় যারা পড়েন, তারা বোঝেন। টয়লেট করতে কষ্ট? কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে যা করবেন - তা নিয়েই আমি আপনাদেরকে বলবো এখন।
যেসব জানানো হবে-
- কোষ্ঠকাঠিন্য বিষয়টা কী?
- কেন এটা হয়?
- এটার জন্য কী কী রোগ হতে পারে?
- কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে যা করবেন।
- প্রেগন্যান্সির সময় ও বাচ্চাদের কী করতে হয়?
- কখন চিকিৎসকের প্রয়োজন?
কোষ্ঠকাঠিন্য বিষয়টা কী?
এতক্ষণে হয়তো বুঝেই নিয়েছেন যে এটি কী। টয়লেটে বসে মলত্যাগ করার জন্য মলদ্বারে জোর খাঁটিয়ে, বল প্রয়োগ করে মল বিসর্জন করার যে নিরন্তর চেষ্টা, তখনকার মুহুর্তের কথা কী আর বলবেন? মনে হয় যেন মলদ্বার ফেটেই যাবে এমন অবস্থা! একটু শান্তিতে শৌচকার্য সম্পন্ন করার কতই না আকুতি থাকে তখন!
দুনিয়াতে প্রতিটি মানুষ কখনও না কখনও কোষ্ঠকাঠিন্যের বিভীষিকার মুহুর্তের মধ্যে পড়ে থাকেন। পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য বেশি দেখা যায়। আর পুরুষদের মধ্যে বয়স্কদের মধ্যে এটা বেশি হয়।
কেন কোষ্ঠকাঠিন্য হয়?
কনস্টিপ্যাশন হওয়ার যে কারণ বেশি দায়ী বলে চিকিৎসকগণ বলেন, তা হলো পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না খাওয়া এবং ফাইবার / আঁশ থাকে এমন খাবার না খাওয়া অথবা কম খাওয়া। এই দু'টি হচ্ছে মূল। এগুলো ছাড়াও যে কারণগুলি থাকতে পারে সেগুলো হচ্ছে- অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, অনেকক্ষণ অভুক্ত থাকা, হাঁটাচলার কমতি ইত্যাদি কারণেও এই সমস্যা হয়ে থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য কী কী রোগ হতে পারে?
এই সমস্যাটি হলে এতে ভুগতে থাকা ব্যক্তির স্বাভাবিক মলত্যাগ হওয়ায় ব্যাঘাত ঘটবে। নিয়মিত টয়লেট হওয়াকে অভ্যন্তরে থাকা অন্ত্র ভালো ও স্বাভাবিক আছে বলে ধরা হয়। কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার ফলে এই স্বাভাবিক অবস্থায় বাঁধা আসে। তখন মলত্যাগের পরিমাণ কমে যায়, সপ্তাহে ৩ বারের মতো মলত্যাগের পরিমাণ নেমে আসে। পেট ঠিকঠাক পরিষ্কার হয় না, মল হয় শক্ত। মলদ্বারে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি হয়। এই অবস্থা দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকলে অর্শ্বগেঁজ, পাইলস এর মতো রোগ হতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে যা করবেন
কী করবেন তার আসল কাজ কিন্তু ইতোমধ্যে বুঝতে পেরে গিয়েছেন। পানি ও ফাইবার খাওয়া। আরও ভালোভাবে জানুন যা করতে হবে-
১. অবশ্যই নিয়মিত কমপক্ষে দেড় লিটারের বেশি পানি পান করুন। শরীরে পানির ঘাটতি থাকলে, পানিশূন্যতা হলে কোষ্ঠকাঠিন্যের দেখা দিয়ে থাকে। তাই দৈনিক বেশি বেশি করে পানি পান করুন। হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস করে পানি গ্রহণ করুন। দিনের শুরু করুন সকালে খালি পেটেই পানি খাওয়ার মাধ্যমে। পর্যাপ্ত পানি পেলে শরীরের ভেতরের কার্যগতি ভালোভাবে চলতে পারে এবং শারীরিক বিভিন্ন কাজ স্বাভাবিকভাবে চলতে থাকে।
২. ফাইবার/ আঁশ পাওয়া যায় এমন খাবার যেমন- বিভিন্ন শাক ও সবজি, ফল-ফলান্তি বেশি করে খেতে চেষ্টা করতে হবে। রাফেজ বা আঁশ আপনার দেহের বিপাক, পরিপাক কার্য সঠিকভাবে হওয়াতে সাহায্য করে। এই উপাদানের খাবার খাওয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, পেট ভালো থাকে। সিজনাল বিভিন্ন ফল, শাক, সবজি সহ পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, ব্রকোলি, শিমের বিচি,মটরশুঁটি, ডাল, গাজর, আপেল, কলা প্রতিদিন খেতে চেষ্টা করবেন। বাদামী রঙের ভাত, ওটস, গম, বাদাম, মসুরের ডাল প্রতিদিন খাওয়ার জন্য রাখুন।
৩. হাঁটাচলা কম করলে বা একেবারে না করলে বিভিন্ন অঙ্গ তাদের কাজগুলো ঠিকঠাকভাবে করতে বাঁধা প্রাপ্ত হয়। মানুষের বেঁচে থাকতে খাবার খাওয়া যেমন প্রয়োজনীয়, হাঁটাচলা করা ও শারীরিক কিছু পরিশ্রমেরও তেমন প্রয়োজনীয়তা। ঘর, সংসারের কাজকর্ম না থাকলে অল্প কিছুক্ষণ ব্যায়াম করার চেষ্টা করবেন। তাতে পেটের ভেতরে থাকা বিভিন্ন অন্ত্র নড়াচড়ার ফলে সেগুলো নিজেদের কাজ সঠিকভাবে করতে পারবে। তখন পেট পরিষ্কার হতে পারবে স্বাভাবিক নিয়মেই। মুক্তি মিলবে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে।
৪. রাতে যখন ঘুমাতে যাবেন, তার আগে এক গ্লাস সামান্য গরম দুধ খাবেন। দিনের যেকোনো এক সময় একটু গরম পানি খাবেন।
৫. ঘুমাতে যাওয়ার সময় অন্তত ১ চামচ ইসবগুল এর ভুসি খেতে পারলে আরও ভালো হয়। ১ চামচ মধুও খেতে পারেন।
৬. চিপস, কেক, গরু-ছাগলের গোশত, ফ্রিজে রাখা অতিরিক্ত ঠাণ্ডা খাবার, ফাইবার নাই অথবা কম আছে এমন খাবারগুলো না খেতে চেষ্টা করুন কোষ্ঠকাঠিন্য চলাকালীন। কারণ, এসব খাবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়।
৭. দুশ্চিন্তার কবল থেকে বের হতে হবে। মেন্টালি ভালো থাকতে হবে।
৮. ভালো ঘুম হওয়া খুবই প্রয়োজন। প্রতিদিন পূর্ণ ঘুমানোর চেষ্টা করুন। ঘুমের ফলে বিপাক সম্পর্কিত কাজ সুষ্ঠুভাবে হয়।
প্রেগন্যান্সির সময় ও বাচ্চাদের বেলায় কোষ্ঠকাঠিন্য
প্রেগন্যান্সির শেষভাগ অর্থাৎ শেষ ৩ মাস এবং ডেলিভারি হওয়ার পর কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। বাচ্চাদের বেলায় মায়ের দুধ ছেড়ে যখন স্বাভাবিক খাবারের দিকে ঝুঁকবে তখন তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়ার যে প্রক্রিয়াগুলো বলা হয়েছে, এগুলো মেনে চললেই গর্ভধারণকারী ও বাচ্চাদের এটা থেকে সুস্থ রাখা যাবে।
কখন চিকিৎসকের প্রয়োজন?
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে ঘরোয়াভাবেই মুক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু কারও কারও বেলায় খুব খারাপ অবস্থা হতে পারে। মলদ্বারে প্রচণ্ড ব্যথা, পায়ুপথ দিয়ে রক্তপাত, মল একদম কালো হওয়ার মতো খারাপ অবস্থা হলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন।
শেষ লাইন
কোষ্ঠকাঠিন্য যেকোনো বয়সেই হয়, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে যা করার ব্যাপারে বললাম এগুলো মানলেই এই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।