কখন শরীরচর্চা করার সঠিক সময়?
দৈনন্দিন ব্যস্ততায় শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য পর্যাপ্ত শরীরচর্চা অর্থাৎ ব্যায়াম করা যেন আজকাল কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কখন, কোন সময়, কোন শারীরিক কসরত করে সুস্থ থাকার ব্যবস্থা নিতে হবে তা নির্ধারণ করা নিয়ে অনেকেই চিন্তা ও দোটানায় পড়ে যায়। এই কনটেন্টের মাধ্যমে কখন শরীরচর্চা করার সঠিক সময় সে নিয়ে বলবো।
এখানে-
- কখন শরীরচর্চা করার সঠিক সময়?
- খালি পেটে না-কি খাওয়ার পর শরীর চর্চা করা ভালো?
- নারী ও পুরুষ কার জন্য কোন সময় শরীরচর্চার মাধ্যমে উপকার পাওয়া যায়?
কখন শরীরচর্চা করার সঠিক সময়?
দিনকে ৩ ভাগে নিয়ে হিসাব করে প্রতি বেলার সুবিধা, অসুবিধা সম্পর্কে বলা হবে। ৩ ভাগ বা ৩ বেলা হলো সকাল, দুপুর থেকে সন্ধ্যা, রাত।
সকালে করার ক্ষেত্রে
আপনি যদি ভোরবেলা বা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে থাকেন মানে আর্লি বার্ড হোন, তাহলে আপনি দিন শুরু করতে পারেন শারীরিক চর্চা করার মাধ্যমে। কারণ, সকাল ৬ টা থেকে ৮ টার মধ্যবর্তী সময়কে শরীরচর্চার জন্য উপযুক্ত টাইম হিসেবে ধরা হয়। রাতে ঘুমানোর পর সকালে শরীর কিছুটা অলস থাকে তাই শরীর দূর্বল লাগে অনেকের কাছে। এই অলসতা ও দূর্বলতা কাটাতে দিন শুরু করা যায় ঘাম ঝরানোর মাধ্যমে।
সকালে ব্যায়ামের উপকারিতা নিয়ে বললে বলা যায় সকালে করার মাধ্যমে শরীরকে সতেজ অবস্থায় আনা যায় যা সারাদিন শক্তি জোগাবে ও কাজে মনোযোগী হতে সাহায্য করবে। এছাড়াও মেটাবলিজম / বিপাকের হার বাড়বে, বেশি করে ক্যালরি ঝরানো যাবে ফলে ওজন কমিয়ে ও শরীরের ফ্যাট কমিয়ে আনতে অনেক সহজ হবে।
একটা পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, যারা সকালে ৬ টা থেকে ৯ টার মাঝামাঝি সময়ে ব্যায়াম করেছে তাদের শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট কমার হার বেড়েছে অনেক। অর্থাৎ শরীরের বাড়তি ফ্যাট কমে গেছে। সকালে করার আরও একটি উপকার হলো রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত রাখতে পারা যায়।
সকালটা এভাবে শুরু করার মানে হচ্ছে আপনি এনডোরফিন (Endorphins) হরমোন দিয়ে দিন শুরু করছেন। এনডোরফিন মস্তিষ্ক থেকে নিঃসৃত হয়, ফলে আপনার মুড ভালো করতে এই হরমোন অবশ্যই একটি ভালো মাধ্যম। আপনাকে মানসিকভাবে ও শারীরিকভাবে ভালো রাখতে তাই সকালবেলার শরীরচর্চা দারুণ সুবিধাজনক সময়।
দুপুর থেকে সন্ধ্যা
এই সময়টা হচ্ছে বেলা ১২ টার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। বিশেষ করে দুপুর ২ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টার মধ্যের সময়। কাজের ব্যস্ততা না থাকলে, কাজ শেষ করে যারা এই সময়ে ফ্রী থাকে, তাহলে তারা এই সময়টাকে বেছে নিতে পারেন শরীরচর্চার জন্য।
দুপুর থেকে বিকেল সময়টুকুতে মানুষের শরীরের তাপমাত্রা থাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। এই সময়ে রক্ত চলাচল করার হার থাকে থাকে, এনজাইমের কার্যক্রম বেশি হয়, অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ফাংশন কার্যকর অবস্থার সর্বোচ্চ দশায় থাকে। তাহলে বুঝতেই পারছেন দুপুরের পর থেকে রাত হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ের মাঝামাঝিতে শরীরচর্চা করলে কেমন হবে।
এই সময়ে আপনার কাজ করার ক্ষমতা, শক্তি প্রয়োগের মাত্রা থাকে বেশি, দ্রুত কাজ করার সক্ষমতাও থাকে ভালো। এই সময়টা ভারী কাজ করার উপযোগী সময়। কাজ শেষে, কাজের চাপে একটু অবসর নিয়ে যদি দিনের এই টাইমে শারীরিক ব্যায়াম করতে পারেন তাহলে আপনার দেহে কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিন হরমোনের মাত্রা বাড়বে। এই হরমোন দু'টি স্ট্রেস, হতাশা, দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ দূর করে মুডকে ভালো করে তুলে।
সন্ধ্যার সময়ে করা শরীরচর্চা রাতে ভালো ঘুম পেতে সাহায্য করে। ভালো ঘুম পাওয়ার দিক থেকে দেখলে সকালের চেয়ে সন্ধ্যার শরীরচর্চা বেশি উপকার করে।
রাতে
যারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শরীরচর্চার জন্য সময় বের করতে পারে না, তারা কেউ রাতের বেলাকে বেছে নেয়। সারাদিনের চাপ, ক্লান্ত ভাব, বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা নিয়ে রাত হচ্ছে আরাম করার সঠিক সময়। দিনশেষে তখন কোনো ব্যস্ততা থাকে না, তাড়াহুড়ো থাকে না কোনো কাজের। এই সময় যদি ব্যায়ামের জন্য নির্ধারণ করেন, তাহলে তা আপনাকে বাড়তি এনার্জি দিবে। সারাদিনের ক্লেশ, ক্লান্তি, শরীর ব্যথা দূর করে মনকে ফ্রেশ করে তুলবে। যা রাতে ভালো ঘুম হওয়ায় সাহায্য করবে।
রাতের ব্যায়ামও ওজন ও ফ্যাট কমাতে ভূমিকা রেখে থাকে। তবে, রাতে ডিনার করার কমপক্ষে ঘণ্টাখানেক পর এবং ঘুমাতে যাওয়ার কিছুক্ষণ সময়ের আগে করা ভালো।
তিনবেলায় কখন শরীরচর্চা করলে কী হবে, কী কী সুবিধা পাওয়া যাবে তা পড়ে তো জানলেনই। যেকোনো সময়কে নির্বাচন করা যেতে পারে যদি ব্যস্ততা ও অসুস্থতা না থাকে।
আসল কাজ হচ্ছে শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করা। আপনি যখনই করেন না কেন কোনো সমস্যা নাই সময়ের ব্যাপারে। আপনার ব্যস্ততা, তাড়াহুড়ো, অসুস্থতা না থাকলে যেকোনো সময়কে শরীরচর্চার জন্য রাখতে পারেন। সময়ের উপরে শরীরচর্চার সুবিধা-অসুবিধা নির্ভর করে না। সুবিধা-অসুবিধা নির্ভর করে আপনার ব্যস্ততা, কাজের চাপ, ও সময় বেছে নেওয়ার উপর।
খালি পেটে না-কি খাওয়ার পর করা ভালো?
খালি পেটে থাকে মানুষ সকালে। রাতের ঘুমের পর নাস্তা করার পূর্ব সময় পর্যন্ত খালি পেটে থাকে। সেক্ষেত্রে সকালে ব্যায়ামের বেলায় খালি পেটে থাকতে হয়। রিসার্চ থেকে দেখা গিয়েছে যে, খালি পেটে শারীরিক ব্যায়াম করলে বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যায়। ক্যালরি বেশি খরচ করা যায় যা ওয়েইট কমাতে কাজ করে। দেহের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
শুধু সকালেই নয়, খালি পেটে থাকার যেকোনো মুহুর্তেই যদি করা হয়, তখনও এই সুবিধাগুলো পাওয়া যায়। কিন্তু, শারীরিক জটিল রোগ আছে এমন ব্যক্তিদের বিশেষ করে ডায়াবেটিসে ভোগা রোগীদের খালি পেটে না করাই সবচেয়ে ভালো।
নারী ও পুরুষ কার জন্য কখন শরীরচর্চার মাধ্যমে উপকার পাওয়া যায়?
রিসার্চে পাওয়া গিয়েছে নারীদের জন্য উপযুক্ত সময় হচ্ছে সকাল। সকাল ৬ টা থেকে ৯ টার মধ্যবর্তী সময়ে করা কমপক্ষে ২০ মিনিটের শরীরচর্চা নারীদের উপকার বয়ে আনে। যেমন, ফ্যাট কমানো, ওয়েইট লস।
আর পুরুষদের জন্য তাদের ব্যস্ততা ও সুবিধা অনুযায়ী বেছে নেওয়া যে কোনো টাইমে করা যেতে পারে।
নারীদের জন্য সকালে বেশি উপকারী হওয়ার কারণ হলো নারী এবং পুরুষের দেহের বাহ্যিক ও ভিতরের গঠনে ভিন্নতা।
কমপক্ষে ৩০ মিনিটের শরীরচর্চা অনেক সুফল দিয়ে থাকে শরীরকে।
পরিশেষে বলা যায়
কখন শরীরচর্চা করার সঠিক সময় তা নিয়ে না ভেবে আপনার যখন সুবিধা হবে, যখন ব্যস্ততামুক্ত থাকবেন সেই সময়কেই বেছে নেন।