ঠোঁটের কালচে ভাব কমিয়ে ঠোঁট উজ্জ্বল করার পদ্ধতি
ঠোঁটের কালচে ভাব দূর করা |
নরম ত্বকের উজ্জ্বল ঠোঁট নিয়ে হাসতে তো সবাই চায়। কিন্তু সবাই কি জন্মগতভাবেই উজ্জ্বল ঠোঁটের অধিকারী হয়?
ঠোঁটের কালচে ভাব, কালো ঠোঁট নিয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ নিজের মধ্যে হীনমন্যতায় থাকেন, কারও সামনে হাসতে ও কথা বলতে অস্বস্তিতে পড়েন। সেজন্য ঠোঁট উজ্জ্বল করার জন্য কত পদ্ধতিই না প্রয়োগ করে থাকে! কিন্তু আশানুরূপ রেজাল্ট সবাই পায় না। রেজাল্ট আশানুরূপ পেতে চাইলে আগে খুঁজতে হবে কেন ঠোঁটের কালচে ভাব হয়েছে। তারপর ব্যবস্থা নেওয়া। সমস্যার কারণ না জেনেই তো সমাধানে পোঁছানো যাবে না। আগে কারণ খুঁজে নিতে হবে। ঠোঁটের কালচে ভাব কমিয়ে ঠোঁট উজ্জ্বল করার কিছু সহায়তাকারী পদ্ধতি সম্পর্কেই আর্টিকেলটিতে বলা হবে।
আর্টিকেলটিতে-
- ঠোঁট কালচে হওয়ার পেছনে কারণ
- ঠোঁট উজ্জ্বল করার পদ্ধতি (সবার জন্য)
- মেয়েরা আলাদাভাবে যে পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করবে
ঠোঁট কালচে হওয়ার পেছনে কারণ
ঠোঁট কালো হওয়ার পেছনে কারও জীবনযাপন বা লাইফস্টাইলের ধরণই বেশি দায়ী। প্রাকৃতিকভাবে একটি কারণই হতে পারে সেটা হলো মানুষের দেহে থাকা মেলানিন নামক রঞ্জক উপাদানটি। এই রঞ্জক উপাদানটির পরিমাণ যার শরীরে যত বেশি হয়, তার চামড়ার বর্ণ তত গাঢ়, কালো হয়ে থাকে। সহজ একটি উদাহরণ হলো আফ্রিকা মহাদেশীয় জনগোষ্ঠী। এই মহাদেশীয় অঞ্চলের বেশিরভাগেরই শারীরিক বর্ণ কালো হওয়ার পেছনে মেলানিনের অধিক উপস্থিতি দায়ী। এই কারণটি ছাড়া কারও কৃত্রিম মাধ্যম, প্রতিদিনের জীবনযাপনের কিছু কারণও ঠোঁট কালো হওয়ায় ভূমিকা রাখে। আপনার জীবনযাপনের যে কারণগুলি ঠোঁটের কালচে ভাব আনতে পারে, সেগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
- মাত্রাতিরিক্ত সূর্যের তাপ
- ঠোঁটের জন্য উপযোগী নয় এমন টুথপেষ্ট, লিপস্টিক ও কসমেটিক ব্যবহার
- ত্বকে শুষ্কতা ও পানির অভাব
- ঠোঁটে অতিরিক্ত কিসিং ও ঠোঁট চোষা
- বিড়ি, সিগারেট, তামাক ব্যবহার
- খুব বেশি পরিমাণে চা,কফি পান করা
- ওয়েদার (আবহাওয়া) চেঞ্জ, বিশেষ করে শীতের সময়
- স্কিনের যত্নে অবহেলা
- ভিটামিনের অভাব
- কোনো অসুস্থতা
এই কারণগুলিই দৈনন্দিন জীবনে নিয়মিত করার ফলশ্রুতিতে ঠোঁট তার উজ্জ্বলতা হারাতে থাকে। আপনার ঠোঁট কালচে হওয়ার মূলে এখানে উল্লেখিত কোন কারণটির প্রভাব থাকতে তা আগে খুঁজুন। তারপর সমাধানের জন্য পদ্ধতি প্রয়োগ করবেন। যে কারণটির জন্য আপনার ঠোঁটের কালচে ভাব হয়েছে, সেটি বাদ দিয়ে দিন এবং ঠোঁটের যত্ন নিন।
ঠোঁট উজ্জ্বল করার পদ্ধতি (সবার জন্য)
ঠোঁট কালো হওয়া কোনো ক্ষতিকর অবস্থা নয়। তাই এর জন্য মানসিক দিক থেকে ভেঙে পড়ার কিছু নেই। ট্রিটমেন্ট নিতে হাসপাতালেও যাওয়ার দরকার নাই। আপনি নিজেই পারবেন। উপরে যে কারণগুলি বললাম, এগুলোর মধ্যে আপনি কোন অভ্যাসটি দৈনিক জীবনে বেশি করেন সেটি বাদ দিন অথবা আস্তে আস্তে কমিয়ে আনতে থাকুন। তারপর অবস্থা বোঝে কিছু ঘরোয়া টোটকা বা পদ্ধতি প্রয়োগ করে যাবেন, আপনার ঠোঁটের কালচে ভাব কমিয়ে ঠোঁট উজ্জ্বল হয়ে আসবে। সহজ কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি -
১. একটি তাজা লেবু কেটে নিয়ে একটি কাপে অথবা গ্লাসের মধ্যে চিনি রেখে লেবুর রস মিশিয়ে নিন। তারপর এই মিশ্রণ তরল ঠোঁটে ঘষুন কয়েক মিনিট। কাজটি করবেন রাতে ঘুমানোর আগে। রাতে ঠোঁটে মিশ্রণটি লাগিয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠে বেশি গরমও না আবার বেশি ঠাণ্ডাও না এমন স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে ঠোঁট সহ মুখ ধুয়ে ফেলবেন। এখানে মূল কাজটি করে লেবু, চিনি ঘর্ষণের কাজ করে। আপনি চাইলে শুধু লেবুই ব্যবহার করে ঠোঁটে ঘষতে পারেন নিয়মিত রাতে ঘুমানোর পূর্বে। যতদিন পর্যন্ত ঠোঁটের কালচে ভাব দূর না হয়, ততদিন এই পদ্ধতি চালিয়ে যেতে থাকবেন। বেশিদিন লাগবে না রেজাল্ট পেতে।
২. মধুর সাথে চিনি মিশিয়েও তা ঠোঁটে লাগাতে পারেন। এটা লেবুর রস আর চিনির মতো। শুধু লেবুর রসের কাজ আলাদা, আর মধুর কাজ আলাদা হবে। লেবুর রস দাগ সারায়, মধু উজ্জ্বল ও নরম করে।
৩. পান খেতে যে চুন লাগানো হয়, সেই চুন হতে পারে আপনার উজ্জ্বল ঠোঁট পাবার সঙ্গী। পানিতে চুন কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন, অতঃপর এক থেকে দেড় চামচ চুনের পানি নিন ( গলিত চুন যেন না থাকে), সাথে এক চামচ মধু ও গ্লিসারিন নিয়ে মিক্স বানান। রাতের ঘুমের পূর্বে মিক্সটি ঠোঁটের উপর লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। সকালে উঠে ধুয়ে ফেলুন। কয়েকদিন প্রয়োগ করবেন এটি।
৪. আঙুলের ডগায় একটু মধু নিয়ে ঠোঁটে মাখিয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়ুন। ঘুম ভাঙার পর ধুয়ে নিন। মধু কালচে ভাব কমিয়ে ঠোঁটকে নরম করতেও কাজ করে।
৫. হলুদ ত্বকের মেলানিনের মাত্রা কমায়। এক চামচ দুধের সাথে পরিমাণমতো হলুদের গুঁড়া ঢেলে নেড়ে মিক্স বানিয়ে নিন। ঠোঁটে এই মিক্সটি ৫ থেকে ১০ মিনিটের মতো লাগিয়ে পরে পানি দিয়ে পরিষ্কার করুন।
৬. অ্যালোভেরার আবরণ সরিয়ে অল্প করে এর জেল ঠোঁটে প্রতিদিন একবার লাগান। জেলটি ঠোঁটে শুকিয়ে গেলে ধুবেন।
৭. ঠোঁট উজ্জ্বল গোলাপি করার জন্য ব্যবহার করুন গোলাপ ফুলের পাপড়ি। পাপড়ি পানিতে বা দুধে ভিজিয়ে রেখে গোলাপজল তৈরি করে নিতে হবে। বাজারে রোজ ওয়াটার/ গোলাপজল কিনতে পাওয়া যায়। ২-৩ ফোঁটা গোলাপজল ও ৫-৬ ফোঁটা মধু একসাথে করে প্যাক বানান। দিনে ২-৩ বার তা ঠোঁটে প্রয়োগ করুন।
৮. ঠোঁট মালিশ করার মাধ্যমেও ঠোঁটের কালচে অবস্থা রিমুভ করা যায়। মালিশ করার জন্য প্রয়োগ করতে পারেন নারিকেল তেল, জলপাইয়ের তেল, শসার ফালি (স্লাইস) অথবা শসা থেকে নির্গত করা পানি। এই তিনটার যেকোনো একটা, যেটা আপনার হাতের কাছে পাবেন সেটাই নিতে পারেন। রাতে ঘুমোতে যাবার আগে শসা অথবা জলপাইয়ের তেল অথবা নারিকেল তেল ঠোঁটে লাগিয়ে ৫-৭ মিনিট মালিশ করবেন। এ থেকেও ঠোঁট উপকার পাবে।
৯. বেকিং পাউডার / সোডা তো অনেকের ঘরে, রান্নাঘরে থাকে। এই বেকিং পাউডার ২ চামচ নিয়ে একটি স্ট্রবেরি কয়েক টুকরা করে পেস্ট তৈরি করুন।শোবার সময়ে সেই পেস্ট ঠোঁটে মেখে ঘুমিয়ে যান, ঘুম থেকে উঠে ধুয়ে ফেলুন।
১০. প্রতিবার দাঁত ব্রাশ করার সময় আলতো করে ঠোঁটের উপর দিয়েও ব্রাশ করে নিবেন। এতে ঠোঁট থেকে মৃতকোষ সরে যাবে ও ঠোঁট পরিষ্কার থাকবে।
১১. ভেসলিনের সাথে লবণ মিক্সিং করে সেই মিক্সার ঠোঁটে ঘষবেন। এটা সপ্তাহে ২-৩ দিন একবার করে করলেই হবে। এর মাধ্যমে মৃত চামড়াগুলো উঠে ঠোঁটের উপর কালো প্রলেপ তুলে দিবে।
এখানে যে ১১ টি পদ্ধতি বললাম, এগুলো সহজ এবং বাড়তি খরচ করতে হয় না। এগুলো সব পরীক্ষিত পদ্ধতি যেগুলোর মাধ্যমে প্রায় সবাই ভালো রেজাল্ট পেয়েছে, যারা অনুসরণ করেছিল। এই পদ্ধতিগুলো সপ্তাহখানেক প্রয়োগ করতে থাকুন। রেজাল্ট পাবেন। সর্বোচ্চ ১ মাসের মতো লাগতে পারে কারও কারও ক্ষেত্রে রেজাল্ট পেতে। কারণ তো জানেনই একেক ব্যক্তির ফিজিক্যাল কন্ডিশন একেক রকম।
ঠোঁটের কালচে ভাব দূর করতে |
পাশাপাশি আর যে কাজগুলো করতেই হবে
১. প্রতি দিন কম করে হলেও ৮ গ্লাস পানি খেতেই হবে।
২. লিপস্টিক, ও এরকম অন্যান্য বস্তু বেশিক্ষণ ঠোঁটে লাগিয়ে রাখবেন না। কয়েক ঘণ্টা পর বা বাইরে থেকে এসে ঠোঁট থেকে লিপস্টিক তুলে পরিষ্কার করে নিবেন।
৩. ঠোঁট সবসময় ভেজাভাব রাখতে চেষ্টা করবেন। বারবার জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটবেন না, কামড়াবেন না।
৪. শীতকালে ঠোঁটে লিপজেল, লিপবাম, মেরিল, ভেসলিন লাগান। শীত ছাড়াও অন্যান্য সিজনেও এগুলো ব্যবহার করতে পারলে তা ঠোঁটের জন্যই ভালো।
৫. ধুমপান বাদ দিতে হবে। চা,কফি কমাতে হবে।
৬. ঠোঁটে হালকা শেডের লিপস্টিক লাগানো ভালো। ঘন শেড ব্যবহার না করাই ভালো।
৭. প্রচুর শাক, সবজি খেতে হবে।
মেয়েরা আলাদাভাবে যে পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করবে
আলাদা করে কোনো পদ্ধতি বলা হবে না। উক্ত পদ্ধতিগুলো সবাই নিয়মিত না মানলেও মেয়েদেরকে তা নিয়মিত মানা উচিত। নিয়মিত যেগুলো করবে মেয়েরা-
- সূর্যের ক্ষতিকারক বেগুনি রশ্মি থেকে ঠোঁটকে সুরক্ষায় রাখতে সূর্যের রশ্মি থেকে প্রোটেকশন দেয় এমন লিপবাম লাগিয়ে বাইরে যাবেন।
- ৮ নম্বর পদ্ধতিটি প্রতি রাতে প্রয়োগ করতে চেষ্টা করবেন।
- মৃত চামড়া দূর করতে ১ ও ২ নম্বর পদ্ধতি নিয়মিত প্রয়োগ করবেন।
শেষে বলবো,
ঠোঁট কালো হওয়ার পেছনে কারণ খোঁজে তারপর উক্ত পদ্ধতিসমূহ প্রয়োগ করলে আপনার ঠোঁটের কালচে ভাব কমিয়ে ঠোঁট উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। কোনো বাড়তি খরচ, ডাক্তার কোনো কিছুর প্রয়োজন পড়বে না।