সাদা স্রাব বন্ধ করতে চান? সাদা স্রাব এর ক্ষতি থেকে বাঁচুন।
সাদা স্রাব |
শারীরিক গাঠনিক কাঠামো ও অভ্যন্তরস্থ গঠনের পার্থক্য থাকায় পুরুষদের চাইতে নারী জাতির মধ্যে রোগের ধরণ ও মাত্রা বেশি হয়ে থাকে। নারী জাতির একটি শারীরিক প্রক্রিয়া হচ্ছে সাদা স্রাব। এর জন্য অনেক নারীরা হতাশায় আর চিন্তায় থাকে।
এই আলোচনাতে আমি সব ডিটেইলস নিয়ে বলতে চেষ্টা করবো কেমন করে সাদা স্রাব বন্ধ করবেন এবং সাদা স্রাব এর ক্ষতি থেকে বাঁচবেন।
থাকবে-
- সাদা স্রাব কী জন্য?
- যে উপসর্গগুলো ক্ষতি নির্দেশ করে
- এর ক্ষতি থেকে বাঁচার পন্থা
- সাদা স্রাব হলে কী করবেন আর কী করবেন না?
সাদা স্রাব কী জন্য?
নারীদেহের যত প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হয় ও চলমান থাকে সেগুলোর মধ্যে সাদা স্রাব একটি। সম্পূর্ণভাবেই প্রাকৃতিক একটি দৈহিক প্রক্রিয়া, যা যৌনাঙ্গ সম্পর্কিত। নারীর যৌনাঙ্গকে পরিষ্কার রাখতে ও যৌনাঙ্গের বিভিন্ন রোগ বা ইনফেকশনের হাত থেকে সুস্থ রাখতে সাদা স্রাব হয়। এটি একধরণের তরল পদার্থের নিঃসরণ, যোনিপথে বের হয়ে আসে। এস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রার তারতম্যের জন্য সাদা স্রাব হয়। মেয়ে শিশু জন্মের পর শিশুরও এটি হতে পারে। বয়ঃসন্ধিকালের হরমোন নিঃসরণ বাড়া, সহবাস বা সেক্স করার সময়, মাস্টারবেশনের সময়, যৌনতা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার সময় সাদা স্রাব বের হতে পারে।
এটি হয় মানসিক অবস্থায় ভালো না থাকলে, রেস্ট ও খাওয়াদাওয়ায় পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব হলে, যোনি অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় থাকলে, বার্থ কন্ট্রোল করতে বিভিন্ন পিল/ ট্যাবলেট খাওয়ার ফলে।
তাহলে বুঝলেন তো , সাদা স্রাব কী জন্য হয়? এটি কখনও বন্ধ করা সম্ভব না। জন্মের পর থেকে নিয়ে শুরু করে মেনোপজ দশায় যাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি নারীর মধ্যে এটা চলতে থাকে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এটি, তাই এটা নিয়ে হতাশা আর চিন্তিত থাকার কোনো কারণ নেই।
মেয়েরা সাদা স্রাবের যে ব্যাপারটি নিয়ে বেশি চিন্তা করে, সেটা হলো অতিরিক্ত সাদা স্রাব হওয়া। আসলে এর জন্য চিন্তা করার কিছু নেই। অতিরিক্ত পরিমাণে সাদা স্রাব যেসময়ে দেখা যায় -
এই সময়গুলোতে অতিরিক্ত স্রাব আসতে পারে। স্বাভাবিক স্রাবের পরিমাণ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। কারও কম পরিমাণে হয়, কারও বেশি পরিমাণে।
সাদা স্রাবের রঙ কয়েক প্রকারের হয়। একদম সাদা পিচ্ছিল তরল রঙ, ধুসর, হলদেটে সবুজ, সবুজ, বাদামী, রক্তবর্ণের মতো। সাদা স্রাবের স্বাভাবিক রঙ হচ্ছে - সাদা স্রাব হবে রঙহীন স্বচ্ছ পদার্থের মতো তরল এবং দুধের মতো রঙের। এই দুই রঙের স্রাব স্বাভাবিক।
স্রাবের রঙের পরিবর্তন দেখে সাবধান হতে হবে।
যে উপসর্গগুলো ক্ষতি নির্দেশ করে
মূলত এটি ন্যাচারাল প্রক্রিয়া হওয়ায় এর কোনো ক্ষতি নেই। সাদা স্রাব কম বা বেশি পরিমাণে হওয়া কোনো দোষের না। কিন্তু কিছু উপসর্গ হতে পারে সুপ্ত কোনো রোগের। রঙের পরিবর্তন, গন্ধের পরিবর্তন এই উপসর্গগুলো দেখে সতর্ক হতে হবে। উপর্সগগুলো নিম্নে দেওয়া হলো-
সাদা স্রাব যদি স্বাভাবিক সাদা অথবা রঙহীন পানির মতো না হয়, রঙ ধুসর অথবা অতিরিক্ত সাদা হয়, তরল যদি খুব ঘন ও শক্ত ধরণের হয় এবং মাছ পঁচে গেলে যেমন গন্ধ হয় তেমন গন্ধের মতো হয়, তাহলে তা ভ্যাজাইনার বা যৌনাঙ্গে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে হওয়া কোনো ইনফেকশন নির্দেশ করে। ডাক্তারি ভাষায় এই ইনফেকশনকে ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস বলে। এই ইনফেকশন হলে উল্লিখিত উপসর্গ থাকতে পারে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গ না-ও থাকতে পারে।
ভ্যাজাইনায় চুলকানো, ব্যথা, জ্বালা-পোড়া হওয়া, প্রস্রাব করতে সমস্যা, ভ্যাজাইনা ফোলা হওয়া, সহ্য করা যায় না এমন দুর্গন্ধ।
ভ্যাজাইনাতে ইস্ট ইনফেকশন হওয়া। ইস্ট ইনফেকশন হলে ঘন স্রাব, ভ্যাজাইনায় চুলকানো, জ্বালা-পোড়া হয়ে থাকে। এই ইনফেকশনের স্রাবে কোনো গন্ধ হয় না সাধারণত। এই ইনফেকশনটি মানসিক হতাশা, চাপ, ডায়াবেটিস, বার্থ কন্ট্রোল পিল সেবন করা, গর্ভধারণ অবস্থায় বাড়তে পারে।
গনোরিয়া একটি যৌনবাহিত রোগ। গনোরিয়ার উপসর্গ হলদেটে সবুজ বা একদম সবুজ রঙের স্রাব, অথবা কালচে মেঘের মতো রঙ হওয়া, জরায়ুতে গনোরিয়া রোগের জীবাণু প্রবেশ করলে অস্বাভাবিক পরিমাণে স্রাব আসা, প্রস্রাবের সময় ব্যথা ও জ্বালা-পোড়া হতে পারে, সেক্সের পর ভ্যাজাইনার পথ দিয়ে রক্ত আসতে পারে, এক পিরিয়ড থেকে পরবর্তী পিরিয়ডের মাঝামাঝি সময়ে ভ্যাজাইনায় রক্তপাত হতে পারে, পেটে ও পাকস্থলীতে ব্যথা হতে পারে।
অসহ্যকর গন্ধের সাথে বাদামী, রক্তবর্ণের স্রাব বের হওয়া, পিরিয়ডের সময় রক্তপাত হওয়া, সেক্সের পর রক্তপাত হওয়া, প্রস্রাব করতে ব্যথা- এই উপসর্গগুলো জরায়ুর ক্যান্সার নির্দেশ করতে পারে।
পিরিয়ডের শুরুতে রক্তবর্ণ বা লাল রঙের স্রাব হয়, যা স্বাভাবিক। কিন্তু পিরিয়ড শেষ হওয়ার পর যদি স্রাবের রঙ লাল ও রক্তবর্ণ হয় তাহলে তা ক্ষতিকর কোনো কিছু নির্দেশ করতে পারে।
মনোযোগ দিলে দেখবেন সবগুলো উপসর্গগুলোতে চুলকানি, দুর্গন্ধ, ঘন স্রাব, প্রস্রাবে সমস্যা, ভ্যাজাইনায় ব্যথা এই বিষয়গুলো আছে। এ থেকে বোঝে নিবেন যে যদি সাদা স্রাব এর সময় এই উপসর্গগুলো দেখা যায়, তাহলে অবশ্যই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হয় কোনো গাইনি ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
এগুলো ব্যতীত আরও যে উপসর্গগুলো দেখা গেলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, সেগুলো -
- পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত জ্বর।
- মেনোপজ হওয়ার পরও রক্তপাত।
- সবসময় অবসাদগ্রস্থতা।
- বিষ্ময়করভাবে ওজন কমে যাওয়া।
- প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া।
এর ক্ষতি থেকে বাঁচার পন্থা
পুরোপুরি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হওয়ায় এটি সাদা স্রাব বন্ধ করা যায় না। সাদা স্রাব কোনো ক্ষতিকর কিছু না, বরং এটি ভ্যাজাইনাকে ভালো রাখে। হয়তো নিজের ভুলেই কেউ কেউ সাদা স্রাবকে ক্ষতির পর্যায়ে নিয়ে যায়। সাদা স্রাব এর ক্ষতি থেকে বাঁচতে কিছু কাজ করতে হবে। কাজগুলো জানুন নিচে বর্ণিত অংশে।
সাদা স্রাব হলে কী করবেন আর কী করবেন না?
কী করবেন
১. পরীক্ষা করুন সাদা স্রাব স্বাভাবিক আছে কি-না। স্বাভাবিক স্রাব বুঝবেন যেভাবে-
- স্রাবে অসহ্যকর ও কড়া কোনো গন্ধ নেই।
- স্রাব পরিষ্কার, রঙহীন স্বচ্ছ বা সাদা রঙের।
- আঠালো ও পিচ্ছিল তরল।
২. নিরাপদ সেক্স করা।
৩. পরিষ্কার পানি ও সাবান দিয়ে ভ্যাজাইনার চারপাশ পরিষ্কার করা ও শুকনো রাখা।
৪. পুষ্টিমান যুক্ত খাবার খাওয়া। সাদা স্রাবের সমস্যা দূর করতে ঢেঁড়স, আমলকী, পেয়ারা, ভাতের মাড় ও ভিটামিন--সি বেশি করে খেতে পারেন।
৫. ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে মেডিসিন নিবেন।
কী করবেন না
১. ভ্যাজাইনায় কোনো সুগন্ধিযুক্ত উপাদান ব্যবহার করবেন না।
২. ভ্যাজাইনার ভিতরে কোনো কিছু প্রবেশ করিয়ে পরিষ্কার করতে যাবেন না। এককথায় ভ্যাজাইনার ভিতরে কোনো কিছু দিয়ে পরিষ্কার না করা।
৩. অতিরিক্ত চাপা, শক্ত, টাইট পেন্টি, শর্টস ও পায়জামা পরবেন না।
৪. উদ্বিগ্নতা, হতাশা, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় থাকবেন না।
৫. যৌনাঙ্গে কোনো সমস্যা পরিলক্ষিত হলে চেপে থাকবেন না। ডাক্তারের কাছে যান।
উপসংহার
সাদা স্রাব এর ক্ষতি থেকে বাঁচতে এই পন্থাগুলো মেনে চলুন। সাদা স্রাব বন্ধ করা যাবে না। এর কোনো সমস্যা দেখতে পেলে গাইনি ডাক্তারের কাছে গিয়ে সঠিক ট্রিটমেন্ট নিন।