চেহারা সুন্দর রাখতে বয়সের ছাপ সরান
চেহারা সুন্দর করতে চেহারায় যেন বয়সের ছাপ যেন না পড়ে, তার জন্য মানুষের প্রস্তুতির কমতি নেই। চেহারা সুন্দর মানে শুধু ফর্সা আর ধবধবে সাদা চামড়া হওয়া নয়। সুন্দর চেহারা হচ্ছে চেহারার মধ্যে সতেজতা থাকা, বয়সের ছাপ বোঝা না যাওয়া। চেহারায় যাতে তারুণ্য ভাব থাকে ও বয়স বোঝা না যায়, তার জন্য মানুষ কোনো না কোনো ব্যবস্থা ঠিকই প্রস্তুত করে রাখে এবং তা প্রয়োগ করে। বর্তমান এই যুগে তো চেহারা, ফিটনেসে মানুষের আগ্রহ আরও বেড়েছে। সুন্দর হওয়া, সতেজ চেহারা, সুঠাম বডি পাবার জন্য কত টাকা আর শ্রম খরচ করছে।
চেহারা সুন্দর রাখতে বয়সের ছাপ সরাতে হবে। কী উপায়ের সাহায্যে তা করবেন সে বিষয়েই বলা হবে।
পাঠকগণ, হয়ত বিষয়টি আপনার জানাও থাকতে পারে। কিন্তু সবকিছুই জানা আছে এই গ্যারান্টি দিতে পারবেন না। তাই বলবো শেষ অব্দি আর্টিকেলটি পড়ুন যাতে নতুন কিছু পেতেও পারেন।
চেহারায় বয়সের ছাপ কী কারণে পড়ে?
বয়স বাড়লে আমাদের শরীরে চামড়ায় বয়সের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হতে থাকে। এটা ভালো করে বোঝার জন্য একজন শিশু ও একজন বৃদ্ধ লোকের চেহারা দেখলেই বুঝতে পারা যায়। কিন্তু কেন বয়সের কারণে চেহারায় এমন হয়?
এমন হওয়ার কারণ শরীরে থাকা কোলাজেন নামক এক উপাদান যা শরীরে প্রোটিন হিসেবে কাজ করে ও চামড়ার স্থিতিস্থাপকতা ধরে রাখে। বয়স যখন বাড়তে চলে, তখন কোলাজেন উৎপন্ন ধীরভাব হয়ে যায়। যার কারণে আস্তে আস্তে চামড়া স্থিতিস্থাপকতা হারায়। তখন চামড়ায় ঝুলাভাব, চামড়া ঢিলে হওয়া, বলিরেখার আবির্ভাব হয়।
চামড়ার এই অবস্থা আরও বাড়িয়ে তুলে সূর্যালোক, পরিবেশ দূষণ, অপুষ্টি, কিছু নিত্যদিনকার অভ্যাস। শরীরের যেসব অংশে এরকম ছাপ, রেখা পড়ে সেসব হলো হাতের পিঠে ( তালুর বিপরীতে উপরের অংশে), কনুইয়ে, গালে, কপালে, পায়ের পাতায়, পিঠের চামড়ায়। কম বয়স্ক যেসকল মানুষজনের চেহারায় বয়সের ছাপ দেখা যায়, তা সাধারণত মুখমণ্ডলেই বেশি দেখা যায়। ৪০ পার করা দের উক্ত জায়গাগুলোয় দেখা যায়।
কোন বয়সে বয়সের ছাপ পড়ে?
নির্দিষ্ট কোনো বয়স ধরে বলা যায় না। পরিবেশ, জীবনযাপনভেদে বিভিন্ন বয়সেই এই অবস্থা হতে পারে। সাধারণত ২০ বছরের পর এমনটা শুরু হওয়ার সম্ভাবণা, আর ৩০ এর পর সেই সম্ভাবণা আরও বাড়ে। বিশেষ করে ৪০ বছরের বেশি বয়সী যারা, তাদের মধ্যে চামড়ায় এমন পরিবর্তন বেশি পরিলক্ষিত হয়।
চেহারা সুন্দর করতে বয়সের ছাপ সরানোর পদ্ধতি সমূহ
যেগুলো বলবো সেগুলো আপনাদের কিছু জানা থাকতে পারে, আবার নাও পারে। তাই সবগুলোই পড়ে নিন:
খাবারে মনোযোগ: আপনি যা খান, তা-ই আপনি। অর্থাৎ যা খাচ্ছেন প্রতিদিন, সেগুলোই আপনার শরীরকে গড়ে তুলছে দিনকে দিন। শরীর গঠনে অবশ্যই খাদ্যের ভূমিকা রয়েছে। অপুষ্টিতে থাকায় ও পুষ্টিহীনতার কারণে চেহারায় বেশি বয়স হবার আগেই পড়তে পারে বয়সের ছাপ, বলিরেখা। যদি বয়সের ছাপ সরাতে চান, তাহলে ভিটামিন সমৃদ্ধ পুষ্টি যোগানো খাবার খান। প্রদাহবিরোধী ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাবারগুলোয় বয়সের ছাপ দূরীকরণের উপাদান থাকে। ওমেগা৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বককে স্থিতিশীলতা দেয়। এই খাদ্যোপাদান গুলো কোথায় পাবেন?
ওমেগা৩ পাওয়া যাবে সামুদ্রিক বিভিন্ন মাছগুলোতে। স্যালমন, রুপচাঁদা, জলপাইয়ের বা ওলিভ অয়েল থেকে পাবেন ওমেগাথ্রি।
তিসি, কালোজিরা, অ্যাভোকাডোসহ এরকম কিছু ফল (কলা, আপেল, কমলা, আঙুর), শাক-সব্জি যেমন- (ব্রকোলি, গাজর, পুঁই শাক), গ্রীণ টি, চকোলেট, দই এগুলো বেশি করে রাখবেন খেতে।
যেগুলো বাদ দিবেন:
১. মিষ্টি খাওয়া যত পারেন কমিয়ে দিবেন। মিষ্টিজাতীয় জিনিস খেলে ওজন বাড়ে ফলে চেহারা বয়সের তুলনায় বেশি বয়স্ক দেখায়, অতিরিক্ত মিষ্টিতে শরীরের কোলাজেন এর স্থিতিস্থাপক অবস্থা হ্রাস পেতে থাকে। সুগারযুক্ত পানীয়ও বাদ দেওয়া ভালো।
২. মাংসের পোড়া অংশ, অতি ঠাণ্ডা ও প্যাকেটের খাবারগুলোয় খামতি দিন। প্যাকেটের প্রক্রিয়া জাত খাবারের কারণে রক্তচাপের সমস্যা, কিডনির সমস্যা, হৃদ রোগের মতো সমস্যা হতে পারে।
৩. লবণ ও লবণযুক্ত খাবার গ্রহণে সীমিত হোন।
৪. বাইরের বিভিন্ন মুখরোচক ফাস্টফুড, ভাজাপোড়াতেও সীমিত হোন।
৫. কফিতে সীমা রাখবেন। অতিমাত্রায় কফি খাবেন না। ক্যাফেইনে চামড়া শুষ্ক করে দিতে পারে। চামড়া শুষ্ক হলে সেখানে কোনো রেখার ছাপ স্পষ্ট হতে পারে।
শরীর খাটান: প্রতিদিনই কমেও ২০ মিনিটের জন্য ব্যায়াম করবেন। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য, রক্ত চলাচল ভালো রাখার জন্য, ব্রেইনকে সুস্থ রাখতে প্রতিদিনের এইটুকু ব্যায়ামই দারুণ কার্যকারিতা দিবে। এগুলো ঠিকঠাকভাবে হলে কম বয়সে চেহারার মধ্যে বার্ধক্যের ছাপ পড়বে না।
ময়েশ্চারাইজ: ত্বকের লাবণ্য ভাব, সতেজতা রক্ষায় ময়েশ্চারাইজারগুলো ভালো কাজে দেয়। ভিটামিন-সি আছে তেমন ময়েশ্চারাইজ করার ক্রিম ও উপাদানগুলোর ব্যবহার করতে পারলে বেশি ভালো। রাতে বিছানায় যাওয়ার আগে ময়েশ্চারাইজার লাগান। এতে স্কিন আরও নরম ও মসৃণ হবে, বার্ধক্যজনিত ছাপও থাকবে না।
সূর্যালোক: সূর্যের তাপের কারণে ত্বক তার সতেজতা হারিয়ে ফেলতে থাকে। আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মিতে চুল, ত্বকের ক্ষয়ক্ষতি হয়। বাইরে বের হওয়ার আগে সূর্য দেখে বের হোন। তাপমাত্রা কেমন জানুন। বাইরে গেলে সানস্ক্রিনের ব্যবহার করতে ভুলবেন না। সাথে নিতে পারেন বড় টুপি, যেগুলো মাথাসহ মুখ ঢেকে রাখে।
ধুমপান: এটার সম্পর্কে নতুন করে বলতে হবে না। সবাই এর ক্ষতি সম্পর্কে জানে। বিড়ি, সিগারেট, হুঁকা ইত্যাদির ধোঁয়ায় থাকে বিষাক্ত পদার্থ যেগুলো চামড়ার সংস্পর্শে আসলে চামড়ায় থাকা রক্তনালীগুলো সরু হয়ে যেতে থাকে। তখন চামড়ায় ঠিকমত রক্ত প্রবাহিত হওয়া বাঁধা পায়। রক্ত প্রবাহ ঠিকমত না হলে বলিরেখা পড়ে আর চামড়া তার অসুস্থতার কথা জানান দেয়। সুতরাং ধুমপানে ক্ষান্ত দিন।
মদ: শুধু মদ না, অ্যালকোহলজাত অন্যান্য বস্তুগুলোও বাদ দিতে হবে। এগুলোর রক্তনালীকে বাঁধাগ্রস্ত করে। অ্যালকোহল গ্রহণের কারণে পানিশূন্যতার, চোখের নিচে দাগ, শরীরের অন্যান্য চামড়ায় বলিরেখার আবির্ভাব হয়। তখন বয়সের ছাপ স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে। বড় বড় রোগের ঘটনা তো ঘটেই।
মুখে হাত দেওয়া: যখনতখন মুখে হাত দেওয়ার স্বভাবটি বাদ দিবেন। হাত দিয়ে কতকিছু ধরতে হয়, সেসব থেকে অসংখ্য জীবাণুও হাতে লেগে যায়। এমতবস্থায় যদি হাত মুখে লাগান, তাইলে সেই জীবাণুগুলোও চামড়ায় লাগবে। ক্ষতিকারী জীবাণুতে হতে পারে কোনো সংক্রমণ।
পানিই সব: আসলেই তো তা-ই। আমাদের শরীরের কোন কাজে পানি না লাগে? প্রতিটিতেই পানির গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকেই। রক্ত প্রবাহের স্বাভাবিকতায়, বিপাকীয় ভূমিকায়, পানিশূন্যতার নিরসনে পানির তুলনা আর কিছু নেই। আর এই কাজগুলোর স্বাভাবিক হওয়াটা প্রভাব বিস্তার করে চামড়ায়। এই কাজগুলো সঠিকভাবে হলে চামড়ায় তার ভালো প্রভাব পড়বে, ফলে বয়সজনিত ছাপ দেখা যাবে না।
ঘুমের বিকল্প নাই: সারাদিন কর্মব্যস্ত থাকার কারণে শরীরে চাপ পড়া, দূর্বলতা, টায়ার্ড হয়ে শরীর ঠিক থাকতে পারে না। এমন চলতে থাকার ফলে কোনোসময়ে বলিরেখার, চামড়ায় কুঁচকানোর অবস্থা হবে। এই অবস্থাগুলো থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রয়োজন ঘুম। ২০ বছরের বেশি যাদের, তাদের উচিত হলো কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা ঘুমানো।
শোয়ার ধরণ: কাত হয়ে অথবা উপুড় হয়ে শুইলে মুখমণ্ডলের উপর চাপ পড়ে, তা থেকে চামড়া কুঁচকে গিয়ে চেহারায় কোনো রেখা বা ছাপ বসতে পারে। শোবার সময় কাত বা উপুড় না হয়ে, চিৎ হয়ে শুইলে এমন হবে না। বালিশের কভার নির্বাচনেও খেয়াল দিন। নরম কাপড়ের কভার ব্যবহার করলে ভালো হয়।
ঘরে তৈরি কিছু প্যাক বা উপকরণ
চেহারা থেকে কোনো ছাপ সরাতে ঘরে তৈরি কিছু সহজ উপকরণ লাগাতে পারেন, চাইলে সেগুলো দিয়ে প্যাক বানিয়েও লাগাতে পারেন। উপকরণগুলো ব্যবহার করলে চেহারায় উজ্জ্বলতা আসবে, সতেজতা থাকবে। সেরকমই কিছু উপকরণ হলো,
১. অ্যালোভেরার ব্যাপারে অনেকেই জানে। ত্বকের জন্য অ্যালোভেরা কতটা কেমন উপাদান, তাতে কেউ দ্বিমত করবে না। যেখানে চামড়া জড়ো হয়ে কোনো ছাপ দেখা যায়, সেখানে অ্যালোভেরা থেকে আবরণ ছাড়িয়ে জেল বের করে সেই জেল লাগান। দিনে একাধিকবার লাগাতে পারেন। ফলাফল কয়দিন পরই দেখবেন।
২. পাকা কিন্তু বেশি মজে যাওয়া কলা না, স্বাভাবিক পাকা। সেই কলা চটকে পেস্টের মতো গলিয়ে ছাপের জায়গায় লাগিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। এটা আপনি দিনের বা রাতের যেকোনো সুবিধা জনক সময়ে লাগাতে পারবেন। শুকিয়ে যাওয়া কলার পেস্ট পরে ধুয়ে নিবেন।
৩. একটা ডিম ভেঙে সাদা অংশ মুখে লাগান। চাইলে যেখানে রেখা পড়েছে সেখানে লাগান, কিন্তু মুখমণ্ডলে এটি বেশি ফলাফল দেয়।
৪. জলপাই এর তেল মালিশ করতে পারেন রেখা পড়ার জায়গাতে। কয়েক মিনিট করলেই যথেষ্ট। প্রতিদিন এই মালিশটা করলে ভালো কিছু হবে।
৫. লেবুকে কী বলেন? লেবু কিন্তু একটি প্রাকৃতিক ব্লিচ, যা চেহারা থেকে যেকোনো দাগ সারাতে ভালো কাজ করে। লেবু কেটে মুখমণ্ডলে ঘষে লাগান, অথবা চিপে রস বের করে রসও লাগাতে পারেন।
৬. আলু কেটে খোসা ফেলে না দিয়ে সেগুলো চামড়ায় ঘষবেন। চামড়া থেকে যেকোনো দাগই দূর করার সামর্থ্য আছে সেই খোসায়।
পাঠক সকল, এই পদ্ধতি গুলোর বাইরে আর কোনগুলো আপনারা ব্যবহার করে ভালো ফলাফল পেয়েছেন তা জানিয়ে দিতে পারেন কমেন্ট করে।
ক্রিম এর ক্ষেত্রে আপনার স্কিনের ধরণ অনুযায়ী ক্রিম লাগাবেন। কোনো মেডিসিনের সাহায্য নিতে চাইলে আগে চর্ম বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাজেশনে তা করুন।
শেষ কথা
চেহারা সুন্দর করতে বয়সের ছাপ সরাতে হবে যদি অল্প বয়সেই চেহারার মধ্যে বার্ধক্যের ছাপ রাখতে না চান। যে পদ্ধতি গুলো বললাম, এগুলো যদি কাজে লাগাতে পারেন, তাহলে অবশ্যই ফলাফল পাওয়া যাবে।