খুশকি দূর করতে চুলে কী ব্যবহার করবেন

খুশকি দূর করতে চুলে কী ব্যবহার করবেন


খুশকি - ছেলে ও মেয়ে সবার জন্যই বিব্রতকর এক সমস্যা। মাথায় খুশকি নিয়ে বাইরে বের হওয়া যেন এক লজ্জার বিষয়। বিশেষ করে মেয়েরা খুশকি নিয়ে বেশি সেনসেটিভ ও চিন্তাশীল। এই চিন্তাশীলতার জন্যও বাড়তে পারে খুশকি। হ্যা, আসলেই এটা সত্যি। দুশ্চিন্তার কারণেও হয় এটি। কেন, কীভাবে হয় এবং খুশকি দূর করতে চুলে কী ব্যবহার করবেন - এই আলোচনা-ই হবে এখানে।


খুশকি হওয়ার কারণ

খুশকি মাথার ত্বকের উপর হওয়া মৃত বা মরা চামড়ার কোষ। মাথায় ও চুলের গোঁড়ায় হয়ে থাকে খুশকি। চুল পড়া আটকাতে চুলের যত্নের কমতি থাকে না, কিন্তু চুল ঝরার একটি কারণই যে চুলের গোঁড়ায় হওয়া খুশকি সেই খেয়াল কয়জনই বা রাখে। মাথার স্কাল্প বা ত্বক তৈলাক্ত হয়ে থাকলে, সেই তৈলাক্ত অবস্থা যদি নিয়মিত পরিষ্কার করা না হয়, তখন তৈলাক্ত অবস্থার তেল ত্বকে জমে গিয়ে খুশকির উৎপন্ন করে। 

আবার শীতকালে বাইরের আবহাওয়া ও ঘরের আবহাওয়ার সাথে ত্বক ঠিকমতো খাপ না খেলে ত্বক শুকনা হয়ে যায়। শুষ্ক ত্বকে তখন ত্বকে উৎপন্ন হওয়া নতুন কোষের পাশাপাশি মৃত কোষগুলোও জমা হতে থাকে। সেই মৃত কোষগুলো জমা হয়েই খুশকির তৈরি করে। খুশকির এই ধরণটি তে ত্বকে চুলকানিরও সৃষ্টি করে। 

ম্যালাসেজিয়া নামক একধরণের ছত্রাকের কারণেও খুশকির সমস্যা দেখা দেয়। এই ছত্রাকটি নতুন কোষের সৃষ্টি করে। যদি ত্বক অপরিচ্ছন্ন থাকে, তেল জমে থাকে তখন নতুন কোষ উৎপন্ন হওয়ার সময় মৃত কোষগুলো নিজে থেকে ঝরে পড়তে পারে না। তখন মৃত কোষগুলোও নতুন কোষের সাথে জমতে থাকে। ফলাফল হিসেবে হয় খুশকি।

তেলতেলে মাথারত্বক, অতিশুষ্কতা, অনিয়ম করে শ্যাম্পুর ব্যবহার, মাথার তালুতে ময়লা ধুলাবালি জমে থাকার কারণে সাধারণত খুশকি হয়। 
এই কারণগুলো ছাড়াও পারিবারিক কারণেও এটি হতে পারে। 

কাদের খুশকি হয়?

প্রতি প্রাপ্তবয়স্ক অর্থাৎ ১৮ বছর থেকে এর উপরের বয়সের যে কারো মাথায় খুশকি হতে পারে। বাচ্চা দের খুশকি হওয়ার ঘটনা তেমন দেখা যায় না। অপরিচ্ছন্ন, ত্বক ও চুলের যত্ন না নেওয়া মানুষদের খুশকি হওয়ার হার বেশি।

খুশকির জন্য কী রোগ হয়?

খুশকির মাত্রা অনেক হলে এবং মাথার তালু বেশি অপরিচ্ছন্ন থাকায় সেখানে কিছু স্কিন ডিজিজ দেখা দিতে পারে। তালুর চামড়ায় ফুসকুড়ি, সোরাসিস, সেবোরেইক ডার্মাটাইটিস, মাত্রাতিরিক্তভাবে চুলকানোর মতো সমস্যাগুলোর সৃষ্টি করতে পারে। 


খুশকি দূর করার উপায়


খুশকি দূর করতে চুলে কী ব্যবহার করবেন?

খুশকি পুরোপুরি দূর করা যায় না। পুরোপুরি দূর করা তখনই যাবে, যখন ত্বক ও চুল সবসময় পরিষ্কার আর যত্নের মধ্যে থাকবে। এমন কয়েকটি প্যাক ও পদ্ধতির কথা আপনাদেরকে বলবো, যেগুলো চুলে ব্যবহার করলে অবশ্যই খুশকির প্রতিকার করতে পারা যাবে। 
যা ব্যবহার করবেন:

শ্যাম্পু: আপনার যদি শ্যাম্পু ব্যবহার করার অভ্যাস থাকে, তাহলে যে শ্যাম্পুটি ব্যবহার করছেন সেটা আদৌ আপনার ত্বকের সাথে ম্যাচ করে কি-না তা লক্ষ্য রাখবেন। উপযোগী না হলে শ্যাম্পু পরিবর্তন করতে হবে। জিংক উপাদানযুক্ত শ্যাম্পু নিতে হবে এবং নিয়মের সাথে ব্যবহার করতে হবে। অতিমাত্রায় শ্যাম্পু ব্যবহার না করা উচিত। সপ্তাহে ১ দিন অথবা ২ দিন শ্যাম্পু দিবেন চুলে।

কোকোনাট: নারিকেল বা কোকোনাট অয়েল, চুলের ও ত্বকের জন্য খুবই কার্যকারিতা থাকা এক উপাদান। বলা হয় এই তেলটি ময়েশ্চারাইসার এর কাজ করে ও ত্বককে শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা করে।  
তেল একটু গরম করে মাথার তালুতে কিছুক্ষণ ধরে মালিশ করবেন। চুলে নয়, তালুর চামড়ায় মালিশ। তারপর চুলে তেল চাইলে  মাখতে পারেন। এই তেলের সাথে লেবুর জুস (রস) পরিমাণ মতো ( ২ চামচ কোকোনাট অয়েল আর ১ চামচ জুস) মিশিয়ে পুরা তালুতে মাখবেন। সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টা রেখে তারপর শ্যাম্পু দিয়ে সমস্ত মাথা ধুয়ে নিবেন।

টক দই ও মেহেদি: টক দইয়ের সাথে ১ চামচ মেহেদির পাতা বেটে তা মাখুন। ১ চামচ মেহেদির সাথে ৫-৬ চামচ দই মিশাবেন। তারপর ভালোভাবে গুলিয়ে তালুতে ও চুলে মাখুন। আধঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। মাসে কয়েকবার এই প্যাকটি দিলে খুশকি তো দূর হবেই, সাথে চুলও হবে ঝলমলে। শুধু টক দইও মাখতে পারবেন ত্বকে। মেহেদি পাতা বেটে দেওয়ার চাইতে মেহেদি পাতার রস দিলে ভালো হবে। কারণ, পাতা বাটা চুলের গোঁড়ায় আটকে থাকতে পারে। পরে তা পরিষ্কার না হলে খুশকি দূর না হয়ে উল্টো আরও খুশকি জমবে।

ব্যাকিং সোডা: সোরাসিসের মতো রোগের প্রতিরোধ করার জন্য ব্যাকিং সোডা ভূমিকা রেখে থাকে। ভেজা চুলে তালুসহ সরাসরি ব্যাকিং সোডা মালিশ করে নিতে হবে। ২ মিনিটেই তা শ্যাম্পুর সাহায্যে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেওয়া লাগবে। বেশিক্ষণ রাখা যাবে না।

পেঁয়াজ: পেঁয়াজের গুণাগুণ সম্পর্কে জানেন হয়তো। খুশকি দূর করতে ও চুল পড়া প্রতিরোধে পেঁয়াজের রস ভালো উপকার করে। পেঁয়াজ বেটে, পিষে রস বের করে সেই রস পুরো তালুতে লাগাতে হবে। আধঘণ্টা রাখার পর শ্যাম্পুর ব্যবহার করে ধুয়ে ফেলতে হবে। লক্ষ্য রাখবেন পেঁয়াজের রস যেন চোখে না লাগে।

মেথি: আগের রাতে মেথি বীজ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পরেরদিন নরম হওয়া মেথি শিলপাটায় বা এরকম কোনো উপকরণ দিয়ে বাটুন। ভালোভাবে নরম করে বাটবেন যেন তরলীকৃত করার মতো হয়। পরে তা মাথার তালুতে মিনিট ত্রিশেক লাগিয়ে রাখতে হবে ও পরে পরিষ্কার করে নিতে হবে। সপ্তাহের মধ্যে অন্তত ২ বার এভাবে লাগালে ভালো।

লেবুর জুস: এটার সাথে বাড়তি কোনো উপকরণ যোগ না করেও শুধু লেবুর জুসই ব্যবহার করা যায়। ঘনঘন এটি ব্যবহার না করাই উত্তম। কারণ, এটার ব্লিচি পদার্থের জন্য ত্বক অতি শুষ্কতায় পড়তে পারে। ৭ দিনে ১ বার এবং লাগিয়ে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট রাখলে সুবিধা। 

নিম পাতা: পানিতে নিম পাতা সিদ্ধ করার পর পানি ঠাণ্ডা হলে তা মাথায় ব্যবহার করলে সহজে খুশকি দূর হয়। অনেকেই এই পদ্ধতিটির পক্ষে সমর্থন দিয়েছে। 

আমলকি গুঁড়া: পানিতে আমলকির গুঁড়া ঢেলে নেড়ে নিন। তারপর তা ১ ঘণ্টার মত তালুতে দিয়ে  ধুয়ে নিন।

চা পাতা: ত্বকের উপকারী একটি বস্তু হলো চা পাতা। পাতা গুঁড়ো করে লিকার করে লেবুর জুসের সাথে মেখে তারপর তালুতে মাখুন। 

ডিমের প্যাক: শুধু ডিম নয়। ডিমের হোয়াইট বা সাদা অংশের সাথে একটু টক দই ও সামান্য লেবুর জুস একসাথে করে প্যাক বানান। ২০-২৫ মিনিট রেখে পরিষ্কার করবেন। মাসে ৩/৪ বার এই প্যাক ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। 

অ্যালোভেরার জেল: এটি তালুর পুরা চামড়ায় মাখতে হবে। ১ ঘণ্টা রাখুন। তারপর ধুয়ে নিবেন। এই জেলের সাহায্যে তালুতে খুশকির উপস্থিতি কমবে, শীতলতা বিরাজ করবে, আরাম লাগবে ও চুলকানি কমবে।

এই কাজগুলোও মেনে চলবেন

১. বি-ভিটামিন, জিংক, ওমেগা৩ যুক্ত খাদ্যগ্রহণ করতে হবে। গরু, মহিষ, ছাগলের মাংস, চিপস, পাস্তা, চিনিমিশ্রিত বেভারেজ এসবে লিমিট রাখতে হবে।

২. তালুর চামড়ার ধরণ অনুযায়ী শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। তেলতেলে চামড়া হলে ৭ দিনে ৩-৪ বার, শুকনা হলে ২ বার শ্যাম্পু দেওয়া উচিত। শ্যাম্পু নির্বাচনেও খেয়াল রাখতে হবে। 

৩. ঘনঘন তেল ব্যবহার বাদ দিতে হবে। ৭ দিনে ১ বার তেল দিলেই যথেষ্ট। 

৪. মাথার তালু ও চুল সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। ব্যাকব্রাশ, সাইডব্রাশ না করে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ান। ব্রাশ না করলে ভালো।

৫. সূর্যের মৃদু তাপ, বিশেষ করে সকালবেলার তাপ গায়ে, চুলে লাগতে দিন।

৬., মানসিক দিকের যত্ন নেওয়া দরকার। দুশ্চিন্তা, বিষন্নভাব খুশকি হওয়াতে প্রভাব রাখে।

এখানে বলা প্যাক, পদ্ধতি, আর কাজগুলোকে অনুসরণের মাধ্যমে মাথাকে খুশকি মুক্ত রাখতে পারা যাবে। 

সর্বশেষে

খুশকি দূর করতে চুলে কী ব্যবহার করবেন আর কোন কাজগুলো খেয়াল রাখবেন - এই বিষয়ে যা যা বলা হলো তা পালনে ঘরোয়াভাবেই খুশকি তাড়ানো সম্ভব। মাত্রা ছাড়ানো খুশকি হলে ও স্কিন ডিজিজ এর মতো কিছু দেখা দিলে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url