কিডনি রোগের ১০ টি লক্ষণ যা গুরুতর

কিডনি রোগের লক্ষণ


কিডনি মানবদেহের অতি গুরুত্বপূর্ণ রেচন অঙ্গ। মানবদেহের পেছনের অংশে পিঠের নিচের দিকের মেরুদণ্ডের দুই পাশে কিডনি অবস্থিত। কিডনির কোনো সমস্যা হলে তার প্রভাব পড়ে মানুষের দেহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অংশে। কিডনিজনিত রোগ হওয়ার পেছনে ভূমিকা রাখে যদি কারও ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো দু'টি মরণঘাতী রোগ থাকে। কিডনি রোগ হবার কারণ কী? কিডনি রোগের ১০ টি লক্ষণ যা গুরুতর অবস্থা বোঝায় সম্পর্কে বলা হবে এই আর্টিকেলে।


জানবেন-
  • কিডনি রোগ হবার কারণ 
  • কিডনি রোগের কয়টি ধরণ 
  • কিডনি রোগের ১০ টি লক্ষণ যা গুরুতর
  • ক্রনিক বা দীর্ঘকালীন ধরে চলা কিডনি রোগের লক্ষণ
  • প্রস্রাবের রঙ দেখে কিডনি রোগ বোঝা
  • কিডনি রোগের প্রতিরোধ
  • কাদের ঝুঁকিপূর্ণ 
  • শেষকথা 

কিডনি রোগ হবার কারণ 

মানবদেহের বৃহৎ রেচন অঙ্গ হচ্ছে কিডনি, যা "বৃক্ক" নামেও পরিচিত। দেহের বর্জ্য পদার্থ ছেঁকে সেই বিষাক্ত পদার্থগুলোকে দেহ থেকে বের করে দেহকে সুস্থ রাখার কাজ করে কিডনি। প্রক্রিয়াটি হচ্ছে রক্তের ছাঁকন করে রক্ত থেকে দূষিত বর্জ্য পদার্থ জননাঙ্গের ব্লাডার ( মূত্রথলি) নামক স্থানে জমা করে। যখন ব্লাডার দূষিত পদার্থে পূর্ণ হতে থাকে তখন প্রস্রাব করার অনুভূতি হয়। পরে প্রস্রাব করলে প্রস্রাবের মাধ্যমে দূষিত পদার্থ বের হয়ে যায়। এই প্রকিয়া চলায় দেহ দূষণমুক্ত থাকে। 

রক্তের বিষাক্ত পদার্থ জমা হয়ে যাতে দেহের কোনো ক্ষতি করতে না পারে, সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজটিই করে কিডনি। যদি এই কাজ অর্থাৎ রেচন প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে না হতো, তাহলে দেহ বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থে ভরপুর হয়ে মৃত্যু ডেকে আনতো। 
মানুষের দেহে দু'টি কিডনি থাকে। একটি কিডনিই আসলে রেচন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে সক্ষম। কিন্তু যখন দু'টি কিডনিই সমস্যায় পড়ে তখন কিডনি তার স্বাভাবিক কাজ ঠিকঠাক করতে পারে না। 

কেন কিডনি সমস্যা সৃষ্টি হয়? 

প্রকৃতপক্ষে মানুষের প্রতিদিন করা বিভিন্ন কাজ ও অভ্যাসই কিডনির সমস্যা ও কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার কারণ। কী সেই কারণগুলো যা কিডনি রোগ সৃষ্টি করে?  সেসব কারণ নিম্নরুপে দেওয়া :

ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ: কিডনি রোগ হবার পেছনে যে দু'টি কারণ সবচেয়ে বেশি দায়ী বলা হয়, সেই দু'টি হলো যাদের ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ রোগ আছে। এই দু'টি রোগ যেমন নীরবে জীবনকে শেষ করে দেয়, কিডনি রোগও তেমনি চুপিচুপি বাসা বাঁধে আর জীবননাশ করার দিকে এগিয়ে নেয়। এজন্য এই ৩ টি রোগকে বলা হয় নীরব প্রাণনাশক। 

কিডনিতে রক্তপ্রবাহ: সুস্থ থাকার জন্য স্বাভাবিকভাবে রক্তপ্রবাহ হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রক্তপ্রবাহ বাঁধা প্রাপ্ত হলে তা দেহের জন্য ব্যাপক ক্ষতিসাধনের কারণ হয়। আমাদের দেহের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্তপ্রবাহ হয়। কিডনিতে রক্তপ্রবাহ যখন বাঁধার মুখে পড়ে বা রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যেতে থাকে, তখন কিডনির সমস্যা দেখা দেয়। হার্টের রোগ, এলার্জির সমস্যা, পানিশূন্যতার মতো সমস্যাগুলো কিডনিতে রক্তপ্রবাহে বাঁধা দিয়ে থাকে।

বর্জ্য নিষ্কাশন: দেহ থেকে দূষিত বর্জ্য ছেঁকে যখন কিডনি তা ব্লাডারে জমা করে, পরে তা যদি ব্লাডার থেকে বের না হয় অর্থাৎ প্রস্রাবে সমস্যা হয় তাহলে দেহ থেকে বর্জ্য নিষ্কাশন হতে পারে না। তখন ব্লাডারে সেই বর্জ্য জমা হয়ে কিডনির ক্ষতিসাধন করে।

কিডনি ও মূত্রথলির কিছু কন্ডিশন: কিডনিতে পাথর হওয়া, কিডনির আশেপাশে রক্ত জমাট বাঁধা, মূত্রনালীর সংক্রমণ, মূত্রথলি বা ব্লাডার এর গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া, প্রস্রাব দীর্ঘ সময় চেপে রাখা ইত্যাদি কন্ডিশনগুলোর কারণে তা কিডনির উপর খারাপ প্রভাব ফেলে।

প্রতিদিনের কিছু কাজ: ধুম, ড্রাগস, এলকোহল, দূষিত ও অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত পানি না পান করা, ঘনঘন এন্টিবায়োটিক ও অন্যান্য ব্যথানাশক মেডিসিন সেবন, কায়িক পরিশ্রমের ঘাটতি, অতিরিক্ত স্থুলতা( বাড়তি ওজন) এই সব কারণ কিডনিকে বিকল করার পেছনে অন্যতম দায়ী।


কিডনি রোগের কয়টি ধরণ 

কিডনি রোগের ৫ টি ধরণ আছে।


কিডনি রোগের ১০ টি লক্ষণ যা গুরুতর

কিডনিকে নীরব প্রাণনাশক বলার কারণ হলো এই রোগের আগাম কোনো নির্দিষ্ট লক্ষণ সহজে সবাই টের পায় না। টের না পাওয়ার কারণেই আস্তে আস্তে কিডনির সমস্যা আরও বাড়তে থাকে এবং মৃত্যুর দিকে ডেকে নেয়। তবে এমনকিছু লক্ষণ আছে যা কিডনি রোগ হবার সম্ভাব্য লক্ষণ ও গুরুতর হিসেবে ধরা হয়। সেই লক্ষণ গুলো: 

১. ক্ষীণ শ্বাসকর্ম হওয়া: আমরা কিডনি রোগ হবার কারণে জেনেছি যে কিডনি রক্ত থেকে দূষিত বর্জ্য ছেঁকে তা দেহ থেকে নিষ্কাশন করে। আর রক্ত আমাদের সারাদেহে অক্সিজেন সরবরাহের কাজ করে। প্রস্রাবের মাধ্যমে দূষিত বর্জ্য বের হতে না পারলে তা দেহকে বিষাক্ত করে তুলে ও লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন কমিয়ে দেয়। রক্তকণিকার ঘাটতিতে রক্ত স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ঠিকঠাক রাখতে পারে না। রক্তকণিকার ঘাটতিতে দেহে অক্সিজেন ঠিকমতো সরবরাহ হতে না পারায় তখন শ্বাসপ্রশ্বাস ক্ষীণ হতে থাকে। ছোট শ্বাসপ্রশ্বাস মানে পরিপূর্ণভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস চালানো যায় না। 

২. শরীরে ফোলা অবস্থা: কিডনি রোগের একটি লক্ষণ হচ্ছে শরীর ফুলে যাওয়া। যখন দেহ থেকে অতিরিক্ত তরল বর্জ্য পদার্থ বের হতে না পারে, তখন তা দেহে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ফলে পা, গোড়ালি, হাত, হাড়ের সংযুক্ত স্থল, চোখের নিচে এমনকি মুখমণ্ডলও স্ফীত হয়ে যায়,  ফুলে যায়।

৩. দূর্বলতা: শরীরে অক্সিজেন সংকট হয়ে যাওয়ায় শরীর অতি দূর্বল হয়ে পড়ে, শক্তি কমে যায়, সবসময় অবসাদ লেগে থাকা, মানসিক অস্থিরতা, বেশি বেশি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ার সমস্যা দেখা দেয়।

৪. ব্যথা: শরীরের বিশেষ করে পিঠের উপরের অংশে, পাখনার দিকে ব্যথা হয়। কিডনিতে পাথর হলে অথবা কিডনির কোনো রোগ হলে এমন হয়। সেই ব্যথা সারা পিঠেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। বুকেও হতে পারে ব্যথা, অথবা বুকে সবসময় চাপ অনুভূত হওয়াও কিডনির সমস্যা নির্দেশ করতে পারে। 

৫. মাংসপেশির খিঁচুনি: হাড়ের জোড়াস্থলে, মাংসযুক্ত স্থানে প্রায় প্রায়ই খিল ধরা, খিঁচুনি, নাচানাচির মতো হয়।

৬. প্রস্রাব কমে যাওয়া: একজন সুস্থ মানুষের দিনে ৬ থেকে ১০ বারের মতো প্রস্রাব হওয়াকে স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়। কিডনি কোনো সমস্যায় পতিত হলে প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়। দিনে প্রস্রাব একেবারেই না হওয়া, অথবা ২-৩ বার হওয়া, এবং প্রস্রাব করতে কষ্ট, ঠিকমতো না হওয়া, ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব হওয়া। আবার ঘনঘন প্রস্রাব বিশেষ করে রাতের বেলায় ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া মূত্রথলির কোনো সমস্যার কারণে হতে পারে। 

৭. ত্বকে প্রভাব: কিডনি আক্রান্ত হলে তার প্রভাব দেখা যায় শরীরের আয়নাতেও অর্থাৎ ত্বকে। শুধু কিডনি রোগের জন্যই নয়, শরীরের ভিতরে কোনোকিছু হলে তা শরীরের বাইরেও, ত্বকে দেখা যায়। কিডনি আক্রান্ত হওয়ায় ত্বকে ফুসকুড়ি, লাল লাল দাগ হওয়া, চুলকানো ও ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। 

৮. প্রস্রাবের সাথে রক্ত: যেহেতু রক্তপ্রবাহ বাঁধা প্রাপ্ত হয়, ফলে বিষাক্ত পদার্থসমূহ ছেঁকে বাইরে দিতে পারে না কিডনি। তখন রক্তও দূষিত হতে থাকে। যখন প্রস্রাব করা হয়, তখন তাই প্রস্রাবের সাথে রক্তও আসতে পারে। যদি রক্ত আসে তাহলে বুঝতে হবে তা কিডনি রোগের লক্ষণ। আবার প্রস্রাবে অনেকসময় বেশি বেশি বুদবুদযুক্ত ফেনার অবস্থা হয়। পানি গরম করলে যেমন পানির উপর বুদবুদ তৈরি হয়, তেমন বুদবুদ বা বাবলস পড়ে প্রস্রাবে।

৯. ঘুমজনিত সমস্যা: অক্সিজেন সরবরাহ ঠিকমতো হয় না, তাই ঘুমও ঠিক হয় না। কারণ, রক্তে বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতি শরীর আর মাথাকে স্বস্তি দেয় না। ফলে ঘুমজনিত সমস্যা হয়। ঘুমের ঘোরে নাক ডাকা, শ্বাসপ্রশ্বাসে ব্যাঘাত, বোবায় ধরা ইত্যাদি ঘুমজনিত সমস্যা হতে পারে। 

১০. খাবারে অরুচি: একসময় যে খাবারটা সবচেয়ে পছন্দ ছিল, সেই খাবারটাতেও আগের মতো পছন্দ থাকে না। সব খাবারেই রুচি কমে যায়। খাবারও খেতে চায় না এমন অবস্থা হয়।

আরও যে লক্ষণসমূহ দেখা দিতে পারে- বমিবমি ভাব হওয়া, বমি হওয়া, প্রায়ই মাথা ব্যথা হওয়া।

ক্রনিক বা দীর্ঘকালীন ধরে চলা কিডনি রোগের লক্ষণ

কিডনির সমস্যা যদি এক বছরেরও অধিক সময় চলতে থাকে এবং আরও জটিল হতে থাকে, তখন সেটাকে ক্রনিক কিডনি রোগ বলা হয়। এই অবস্থারও লক্ষণ উপরের গুলোর মতোই। তবে যেহেতু দীর্ঘকাল থাকায় আরও জটিল হয়ে পড়ে, তাই ক্রনিক কিডনি ফেইলিউরে কিছু ব্যতিক্রম লক্ষণও দেখা যায়। সেগুলো হচ্ছে: 
  • ডায়াবেটিসের ও হাই ব্লাড প্রেশারের অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হতে থাকা।
  • ত্বকের রঙ গাঢ় অথবা আরও উজ্জ্বল হয়ে যেতে পারে। 
  • অস্থিসন্ধিতে অসাড় অনুভব হওয়া, হাড়ে ব্যথা।
  • মুখে দুর্গন্ধ । 
  • হেঁচকির পরিমাণ বেড়ে যাওয়া।
  • অনিয়মিত মাসিক হওয়া।

এগুলোই কিছু বাড়তি লক্ষণ যা ক্রনিক বা দীর্ঘকালীন কিডনি রোগে হয়ে থাকে।


প্রস্রাবের রঙ দেখে কিডনি রোগ বোঝা 

প্রস্রাব কিডনি সম্পর্কিত বিষয় হওয়ায় কিডনির কোনো সমস্যা হলে প্রস্রাবে সেটার প্রকাশ পাওয়া যাবেই। প্রস্রাবের স্বাভাবিক রঙ বর্ণহীন অর্থাৎ পানির মতো বর্ণহীন রঙ হয় স্বাভাবিক প্রস্রাবের। হালকা হলুূদ রঙের মূত্রও দেখা যায় মাঝেমধ্যে, তা মূলত অনেকক্ষণ রোদে থাকায় ও পর্যাপ্ত পানি পান না করায় হয়। এছাড়া কিডনি রোগ হলে প্রস্রাবের রঙে যে পরিবর্তন আসে-

ঘন হলুদ: পানিশূন্যতার জন্য প্রস্রাবের রঙ এমন হয়। আবার হলদে সবুজও হতে পারে। পানিশূন্যতা যেহেতু কিডনির জন্য ক্ষতির কারণ, তাই প্রস্রাবের এই রঙ দেখে সাবধান হওয়া উচিত। 

গোলাপি অথবা রক্তবর্ণ: এই লেখাতেই দেখেছেন যে, প্রস্রাবের সাথে রক্ত আসা কিডনি রোগের লক্ষণ। সুতরাং প্রস্রাবের রঙ এরকম হলে প্রস্রাব বা ইউরিন টেস্ট করে ব্যবস্থা নেওয়া অবশ্যই উচিত। 

প্রস্রাবে ফেনা: অতিরিক্ত বুদবুদযুক্ত ফেনা হওয়া মূত্রথলি অথবা মূত্রনালীর কোনো সংক্রমণ নির্দেশ করতে পারে।


কিডনি রোগের প্রতিরোধ


কিডনি রোগের প্রতিরোধ

কিডনি বিকল হয়ে গেলে এর চিকিৎসা ব্যয়বহুল। তাই ইমপোর্ট্যান্ট এই  রেচন অঙ্গকে সুস্থ রাখতে হলে কিছু বিষয় সতর্কতার সাথে মানতে হবে। বেশি কিছু না, কয়েকটা বিষয়ই মেনে চললে কিডনির স্বাভাবিকতা বজায় রাখা যাবে। কিডনি পুরোপুরি বিকল হওয়ার আগপর্যন্ত ৫টি ধাপ থাকে। আগেভাগেই সতর্ক হলে শুরুর ধাপেই গুরুতর এই রোগটির প্রতিরোধ করা যায়।
নিম্নবর্ণিত প্রতিরোধী ব্যবস্থা নিয়ে কিডনি ভালো রাখা যায়-

  • পানি পানের যদি অনিয়ম থাকে, অর্থাৎ সঠিক পরিমাণে পানি খাওয়ার অভ্যাস না থাকে, তাহলে কিডনির জন্য তা ক্ষতিকারী। ডেইলি ১ লিটারের বেশি ( ৭ গ্লাসের অধিক) পানি গ্রহণ করতে হবে। পানিগ্রহণ স্বাভাবিক হলে কিডনিও তার কাজ করার স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে।
  • প্রতিদিন ডায়েটে শাকসব্জি, আমিষ, স্বাস্থ্যকর চর্বি, আঁশ, ভিটামিন রাখতে হবে। মাছ, মুরগির মাংস, দুধ, বাদাম, ডিম ( ভালো হবে সাদা অংশ),  আনারস, আপেল, আঙুর, আম, জাম, পেয়ারা ফলগুলো - এই খাবার সমূহ খান প্রতিবেলা।
  • লবণে থাকে সোডিয়াম, এটি কিডনিকে মারাত্মকভাবে আঘাত করতে পারে। ডেইলি ১ চা চামচের বেশি লবণ কখনোই নিবেন না। 
  • ধুম ও অ্যালকোহল সেবন থেকে বিরত থাকা। 
  • পানিস্বল্পতা তৈরি করে এমন পানীয় চা, কফির, কোল্ড ড্রিংকসের দিকে লিমিট রাখতে হবে। এসব না খাওয়া-ই উত্তম। 
  • জেনেছেন ডায়াবেটিস আর উচ্চ-রক্তচাপের কারণে কিডনির ক্ষতি হয়। কিডনির সমস্যা যাতে না হয় ও প্রতিরোধ করা যায় তার জন্য এই রোগদুটি নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। পাশাপাশি রক্তের গ্লুকোজও নিয়ন্ত্রিত রাখা লাগবে।
  • মূত্রনালীর ও যৌন কোনো সংক্রমণ থাকলে তা চেপে না রেখে ডাক্তার দেখাতে হবে। 
  • স্বাস্থ্যসম্মত ওজন রাখা। বিএমআই অনুযায়ী ওজন রাখা সবারই উচিত। 
  • ভারী পরিশ্রম না করলেও অন্ততপক্ষে ইজি কিছু ব্যায়াম করতে হবে। প্রতিদিনই সম্ভব না হলেও সাত দিনের মধ্যে তিনদিন করা উচিত।
  • সামান্য জ্বর অথবা কোথাও ব্যথা হলেই অনেকে ব্যথার টেবলেট বা ঔষধের জন্য ছুটে। এটা মোটেও ভালো নয়। ব্যথা নাশক প্রায় বেশিরভাগ ঔষধই স্টেরয়েড বিহীন (নন স্টেরয়েড)। এসব ঔষধ কিডনির জন্য খুবই বিপদজনক। ব্যথার ঔষধ ঘনঘন নেওয়া উচিত নয়।
  • মনকে সুস্থ রাখতে হবে। ট্রেস, দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকবেন, ডিপ্রেশন কাটাতে হবে।
  • সুস্থতার নিশ্চায়নে ঘুমের বিকল্প কিছু আছে কি? অবশ্যই নেই। ভালোভাবে ঘুমান। প্রতিরাতে ছয় ঘণ্টার ঘুম হওয়া প্রতি প্রাপ্ত বয়সী মানুষেরই প্রয়োজন।
  • যাদের কিডনি রোগের লক্ষণ বোঝা গেছে, তাদের উচিত হলো নিয়মিত চেকআপ করা ও তদানুসারে চলা। রোগীদের বছরে এক থেকে দুইবার, এবং সুস্থদের দুই বছরে একবার করে চেকআপ করা উচিত।

এই উপায়সমূহের মাধ্যমে কিডনি রোগের প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিডনিকে সুস্থ রাখতে এগুলো গুরুত্বের সাথে নিতে হবে।

কিডনি বিকল হলে চিকিৎসা

ব্যয়বহুল চিকিৎসা-ব্যবস্থায় অনেকদিন রুটিন চেকআপ, ঔষধের মধ্যে থাকতে হয়। কিডনি বিকল হলে দুই ধরণের চিকিৎসার প্রয়োগ করা হয়। 
এক. ডায়ালাইসিস, যা ব্যয়বহুল। ডায়ালাইসিসে সবসময় থাকতে হয় পুরোপুরি কিডনি বিকল হওয়া রোগীর।

দুই. কিডনি প্রতিস্থাপন। কিডনি ব্যাংক অথবা কারও কাছ থেকে কিডনি কিনে তা রোগীর দেহে স্থাপন করা হয়। আবসর যদি কেউ স্বেচ্ছায় কিডনি দান করে ( যেমনটা অনেকে মরণোত্তর কিডনি সহ অন্য কোনো অঙ্গ দান করে যায়), তাহলেও তা রোগীর মধ্যে স্থাপন করা হয়।

জটিল ও ব্যয়বহুল চিকিৎসা-ব্যবস্থার মধ্যে যেতে না চাইলে সুস্থ অসুস্থ সবার কর্তব্য কিডনিকে সুস্থ রাখা।

ঝুঁকিপূর্ণ 

ষাটোর্ধ্ব মানুষের জন্য এটি অধিক ঝুঁকির। ডায়বেটিস, হাই ব্লাড প্রেশার, হৃদযন্ত্রের রোগ, অতিস্থুল দেহ, বিভিন্ন ব্যথানাশক অতিরিক্ত সেবন, ধূমপানকারী ব্যক্তিরা এই রোগের ঝুঁকিতে বেশি।

শেষকথা

লক্ষণ দেখে আগে আগে সতর্কতার ব্যবস্থা না নিলে কিডনি রোগ একসময় ভয়াবহতার পর্যায়ে চলে গেলে তা আর ভালো করা যায় না। তখন রোগী মৃত্যুর দিকেই অগ্রসর হয়। তাই কিডনি রোগের লক্ষণ জেনে সুস্থ ও অসুস্থ সবারই সতর্ক হওয়া উচিত।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url