PCOS কী? PCOS কীসের জন্য হয়? PCOS দূরীকরণের পদ্ধতিসমূহ
নারীজাতির ফিজিক্যাল গঠন পুরুষজাতির চেয়ে ব্যতিক্রম হওয়ায় নারীজাতির অসুখ-বিসুখেও রয়েছে ব্যতিক্রম। পুরুষজাতির চাইতে নারীজাতির রোগগুলিও জটিল। শুধু জটিলই নয়, কিছুতো অনেক ভয়াবহ মারাত্মক যাতে মৃত্যুও হয়। এই টপিকে আপনাদেরকে নারীজাতির অন্য তম জটিল একটি অসুখ নিয়ে জানাবো যার নাম PCOS (পিসিওএস)।
PCOS (পিসিওএস) কী? PCOS কীসের জন্য হয়? PCOS এর চিকিৎসার পদ্ধতিসমূহ নিয়েই থাকছে এই টপিকে।
এই টপিকে-
- PCOS (পিসিওএস) কী?
- PCOS কীসের জন্য হয়?
- যারা ঝুঁকিতে।
- PCOS হয়েছে কী ভাবে বোঝা যাবে?
- PCOS দূর করতে কী ব্যবস্থা?
- শনাক্তকরণ সিস্টেম।
- চিকিৎসার পদ্ধতিসমূহ
PCOS (পিসিওএস) কী?
মেয়েদের পিরিয়ডের সাথে ৪ টি হরমোন বিশেষভাবে যুক্ত থাকে। সেই ৪ হরমোনের মধ্যে সেক্স হরমোনও সংযুক্ত। সেগুলোতে প্রোজেস্টেরন( Progesterone) ও এস্ট্রোজেন(Estrogen) নামক দুটি মূল হরমোনও আছে। এরমধ্যে আবার এস্ট্রোজেন হলো মহিলাদের মূল হরমোন। এই দুই হরমোনের উৎপাদন হার কমার সাথে সাথে এন্ড্রোজেন নামক পুরুষ হরমোনের উৎপাদন বাড়তে থাকে। এই এন্ড্রোজেনের বাড়াতেই PCOS নামক রোগটি হয়। PCOS এর সম্পূর্ণরুপ পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম। পলি অর্থ আমরা জানিযে অনেক, বহু, অজস্র। সিস্ট (cyst) হচ্ছে একপ্রকার সংক্রমণ যেটায় ঘা হয়ে পুঁজ জমা হয়।
নারীদের যে ডিম্বাশয় থাকে, সেটার আশেপাশে পুঁজের দলা তৈরিই পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম বা PCOS. সুতরাং, পিসিওএস বা PCOS হলো হরমোনাল একটি ব্যাধি। কারণ এটা হরমোনের কারণে হয়।
PCOS কীসের জন্য হয়?
প্রতিবারের মাসিকে মেয়েদের ডিম্বাশয় থেকে একটি সুস্থ ডিম্বাণু নির্গমন করে। সেই ডিম্বাণুটি গর্ভদশায় পৌঁছে শুক্রাণুর সান্নিধ্যে এলে। আর যদি তা শুক্রাণুর সাথে না নিষেক ঘটায়, তাহলে পরেরবারে নিয়মমাফিক পিরিয়ড ঘটায়। কিন্তু যদি এন্ড্রোজেন বেড়ে যায়, তখন ডিম্বাশয়ের পাশে একাধিক পুঁজের দলা ( সিস্ট) সৃষ্টি হয়। এ-সব সিস্টের কারণে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণুর নির্গমনপথে বাঁধার সৃষ্টি হয়। বাঁধার পরিমাণ বাড়তে বাড়তে একসময়ে ডিম্বাণুর ডিমে স্ফোটন দশা একদম বন্ধ হয়ে যায়। এই দশাটিকে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম বা পিসিওএস (PCOS) বলে। এটি রোগব্যাধির সৃষ্টি করে বিধায় দশাটি পলিসিস্টিক ওভারি ডিজিজ (পিসিওডি) নামেও বলা হয়।
খুব মোটা, ফিজিক্যাল দূর্বলতা, জিনগতির জন্য এটি হয়ে থাকে।
যারা ঝুঁকিতে
প্রতিটি মেয়েই বয়ঃসন্ধিকালীনের শুরু থেকে পিরিয়ডের অভিজ্ঞতার স্বাদ পায়। পিরিয়ডেই ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণু আসে। পিসিওএস যেহেতু ডিম্বাশয়ের পথেই সৃষ্টি হয়, আর ডিম্বাশয়ে সেই দশাটি অর্থাৎ ডিম্বাণুর ডিমে পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়, সেহেতু PCOS মেয়েদের এই বয়স থেকেই শুরু হওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। ১৩ থেকে ৪০/৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত এটি হতে পারে। এমনকি মেনোপজও হয়ে গেলে হতে পারে। কিশোরী বয়সীদের এটি হবার ঘটনা নেই, ১৮ বছর বয়সকেই এটির শুরুর সময় ধরে নেওয়া হয়। নির্দিষ্ট বয়সের হিসাবে ১৮ - ৪৫ বছরের মাঝের যেকোনো অবস্থাতে পিসিওএস হতে পারে।
স্থুলস্বাস্থ্য, পরিবারের কারো পিসিওএস হওয়ার রেকর্ড থাকলে জিনগতি ও যথেষ্ট ফিজিক্যাল ওয়ার্কের ঘাটতি যাদের আছে, তারা পিসিওএসের ঝুঁকিতে।
পড়ুনঃ মেয়েদের কোন রোগ মারাত্মক
PCOS হয়েছে কী ভাবে বোঝা যাবে?
মানবদেহতে যত রোগব্যাধিই হোক, সেগুলির বেশিরভাগেরই লক্ষণ জ্বর, শরীরব্যথা। কিন্তু পিসিওএসে তা হয় না। PCOS এর লক্ষণগুলো দেখেই বিলম্ব না করে ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। লক্ষণগুলো:
১. মাসিকসম্পর্কিত ব্যাধি হওয়ায় পিসিওএস হলে যে লক্ষণটি দেখা যাওয়া স্বাভাবিক, সেটা অনিয়মিত পিরিয়ড। এক বছরে ৯ বারের কম পিরিয়য়ড হলে, পরপর টানা ৩ মাস না হলে সেটা পিসিওএসের লক্ষণ হতে পারে।
২. ডিম্বাশয়ের পথে পুঁজের দলা বাড়া।
৩. পুরুষালী কিছু পরিবর্তন, যেমন- মুখমণ্ডলে ও বুকের মাঝখানে লোম, কণ্ঠস্বর পুরুষালী।
৪. মুখমণ্ডলে বেশি ব্রণ, বেশিবেশি চুলপড়া।
৫. ঘাড়ে, নিম্নাংশের বিভিন্ন অংশে ব্যথা-বেদনা।
৬. স্থুলতা বৃদ্ধি, কোমরের ও উদরের মেদ বেশি।
৭. ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপের, হৃদরোগের সমস্যায় পড়া।
৮. স্লিপিং ইস্যু।
৯. ঘনঘন মেজাজের পরিবর্তন।
১০. সন্তানধারণে ব্যাঘাত।
এগুলোকেই PCOS হয়েছে বলে ধরা যাবে না। এগুলো দেখা দিলে হসপিটালে গিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করে তবেই নিশ্চিত করা যাবে PCOS হয়েছে কি হয় নাই।
PCOS দূর করতে কী ব্যবস্থা নিবে?
এটি হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো কারণ না পাওয়ায় এটির কোনো চিকিৎসাও নাই। একাধিক কারণে এই ব্যাধিটি হয়, তাই নির্দিষ্টভাবে ট্রিটমেন্টও দেওয়া হয় না। লাইফের প্রতিদিনের কিছু অভ্যাসের, কিছু রুটিনের নিয়ন্ত্রিত ও পরিবর্তনের মাধ্যমেই এটি দূর করা সম্ভব।
যতসম্ভব স্থুলতা কমিয়ে ওজনও কম করতে পারা, অন্ততপক্ষে রেগুলার ২৫ মিনিট ব্যায়াম করা, খাবার-দাবারে হিসেবি হওয়া, স্ট্রেসমুক্ত থাকা, এগুলোতে গুরুত্ব দিলে PCOS দূর করা যায়। এগুলোর মাধ্যমে হরমোনাল ব্যালেন্স ঠিক রাখা যায়, এন্ড্রোজেন কন্ট্রোলে রাখা যায়।
খাবার-দাবার
অতিমোটা ও অতিওজন আছে যাদের, তারা ভাতের মতো উচ্চমানে কার্বো-হাইড্রেটযুক্ত খাদ্যোপদান কম খেলেই সুবিধা।
কৌটাজাত, প্রক্রিয়াজাত পণ্য না খাওয়া।
দুধের প্রস্তুতকৃত পণ্য এড়িয়ে চলবেন।
গ্রিন ভেজেটেবলস্, ফল-মূল, স্যামনমাছ, চিকেন, এসব খাবেন।
আর যে জিনিসটি করতেই হয়, তা হলো দৈনিকে ৮ - ১২ গ্লাস পরিমাণ পানি পান করতে পারা।
শনাক্তকরণ সিস্টেম
আল্ট্রা-সাউন্ড ইফেক্টের আল্ট্রাসনোগ্রাম যন্ত্রের মাধ্যমে ফিজিক্যাল চেকআপ করে PCOS শনাক্তকরণ করা যায়।
চিকিৎসার পদ্ধতিসমূহ:
পূর্বেই বলেছি PCOS এর কোনো চিকিৎসাপদ্ধতি নেই। কয়েকটা ঔষধের মাধ্যমে এটার প্রভাব হ্রাস করা যায়। জন্মনিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত পিল, ডায়বেটিসের ঔষধ গ্রহণে এই ব্যাধির প্রভাবটা দমানো যায়।
পিলগুলো রেগুলার মাসিক, ব্রণের দূরীকরণে, বুকের ও মুখের পুরুষালী লোম অপসারণে সহায়তা প্রদান করে।
ডায়বেটিসের ঔষধে রক্তে ইনসুলিনের কন্ট্রোল করা যায়।
এন্টি-এন্ড্রোজেন শ্রেণির ঔষধ নিয়েও ডিম্বাশয়ের অসুখটি নিবারণ করতে পারা যায় এবং এই ঔষধগুলোও ঋতুস্রাবের, ব্রণের ও পুরুষালী লোমের অপসারণ করে।
হ্যাঁ, যে ঔষধই নিন না কেন, আগে চিকিৎসকের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনেশুনে তারপর ঔষধ নিবেন।
শেষটায় বলি
কারো যদি PCOS হয়ে যায়, তাহলে ভয়ে না থেকে চিকিৎসকের দ্বারস্থে যান। PCOS কী, PCOS কীসের জন্য হয়, PCOS দূরীকরণের পদ্ধতিসমূহ বিষয়ক এই টপিকে পাঠকদের সহজভাবেই বোঝাতে চেষ্টা করেছি। কোনো ভুল তথ্য থাকলে মন্তব্য জানাবেন।