জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে পিল খাওয়ার ঝুঁকি, পিল সেবনের নিয়ম

জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে পিল খাওয়ার ঝুঁকি
জন্মনিয়ন্ত্রণের পিল


অনেক বছর যাবত অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপরিকল্পিত গর্ভসঞ্চার করা এড়াতে নারীরা বিভিন্ন রকমের পিল সেবন করে থাকে। মহিলারা জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য এই পদ্ধতিটিকেই সহজ ও উপযোগী হিসেবে গ্রহণ করেছেন। পিল খাওয়ার উপকারও ভালো, তাই এতেই আগ্রহী নারীরা। কিন্তু সবার জন্য পিল সেবন করা উপকারী না। আজকে জানাবো এব্যাপারেই।
জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে পিল খাওয়ার ঝুঁকি, কাদের জন্য পিল আর কাদের জন্য না, এর ঝুঁকির দিকগুলো সম্পর্কেই থাকবে আজকে।

থাকবে-
  • জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা বার্থ কন্ট্রোল পিল 
  • কাদের জন্য পিল সেবন করা উপকারী 
  • কাদের জন্য পিল উপকারী না
  • জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে পিল খাওয়ার ঝুঁকি
  • পিল সেবনের নিয়ম 

জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা বার্থ কন্ট্রোল পিল 

"জন্মনিয়ন্ত্রণ", "বার্থ কন্ট্রোল" নামগুলো দেখেই অনুমান করা যায় এটা কী আর কীসের জন্য। পিল হচ্ছে মুখে খেতে পারার বড়ির একধরণ, যা জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে বিভিন্ন বয়সী নারীরা ব্যবহার করে থাকে। যৌন মেলামেশার সময়ে অনিচ্ছায় ও অসতর্কতায় যদি পুরুষের বীর্য-পাত হয়ে যায় নারীর অঙ্গটিতে, এবং যদি তাদের সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা না থাকে, তাহলে সেই অপরিকল্পিত গর্ভধারণ এড়াতে নারীসঙ্গী মেলামেশা করার পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পিল সেবন করলে জন্মনিয়ন্ত্রণ করার পসিবিলিটি থাকে প্রায় শতভাগ। 

অনিরাপদ মেলামেশা করার পরের মিনিট থেকে শুরু করে ৩ /৫ দিনের মধ্যে পিল খেলে উপকার পাবার হার বেশি। তবে অবশ্যই খেতে হবে এই সময়ের মধ্যে, যদি পিলের সুবিধা নিতে চান। এটাও জেনে রাখা উচিত পিল কখনওই গর্ভপাত করাতে না, পেটে আসা সন্তান নষ্ট করে না। বরং এটি গর্ভতে সন্তান আসা থামিয়ে রাখে যাতে দেরিতে নিজেদের পরিকল্পনা মোতাবেক সন্তান নেওয়া যায়। 

এই পিল নেওয়ার সময় থেকে নিয়ে শুরু করে নিয়ম মেনে প্রতিদিন ও নিয়মিত সেবন করতেই হবে। ভুলক্রমে একদিনের পিলটি বাদ দেওয়া যাবে না। পিল সেবনের নিয়ম কার জন্য কেমন হয় তা কোনো ভালো গাইনিরোগ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে জেনে নিলেই সবচেয়ে ভালো হবে। এরকারণ বলা যায় পিলের একাধিক গ্রুপ থাকা। ইমার্জেন্সি ও সাধারণ গ্রুপে ভাগ করা হয় পিলকে, তাই আগে বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলে নেওয়ার জন্য বলা।

কাদের জন্য পিল সেবন করা উপকারী? 

অনিরাপদ, অপরিকল্পিত প্রেগন্যান্সির হাত থেকে নিরাপদ থাকার জন্য যেকোনো বয়সী নারীই তা সেবন করতে উপযোগী হোন। পিলগুলো বানানো হয় যেন তা সবার জন্য উপযোগী হয় ও কোনো ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া না থাকে। পিল সেবন করার বেশকিছু বেনিফিট আছে। অনিয়মিত মাসিকের সমস্যায় কেউ থাকলে, এই পিল তা রোধ করতে পারে। জন্ম নিরোধনের নিরাপদ এক মাধ্যম পিল। ব্রণ , রক্তস্বল্পতা, হাড়ক্ষয়, যোনিশুষ্কতা, মাইগগ্রেন রোধে পিল বেনিফিট দিয়ে থাকে। আরও কিছু বেনিফিট পাওয়া যায়, সেসবের মধ্যে জরায়ুর বা ওভারিয়ান ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দিতেও পিলের ভূমিকা পাওয়া গেছে গবেষণার মাধ্যমে। 

জন্মনিয়ন্ত্রণের যত পদ্ধতি আছে নারী এবংপুরুষের জন্য ( যেমন- কনডম, ডায়াফ্রাম), সেসবের ব্যবহারে কোনো ত্রুটি হলে ( ফেটে, ছিঁড়ে গেলে) তখন আর কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পিল সেবন করলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানো যায়। 

কাদের জন্য পিল উপকারী না 

সকল নারীই পিল সেবন করতে পারেন, এবং অল্পকিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়া ছাড়া পিলের সফলতার মানও ভালো। কিন্তু সকলের জন্যই যে তা উপকার করবে তেমনটা নয়। পিলের অপকারীতা আছে। তাই সকলের জন্য এটা বেনিফিট দেয় না। যাদের জন্য উপকারী না :
  • বয়স যাদের ৩৫ ও ৩৫ পার হয়েছে, তাদের পিল  সেবন করা নিরাপদ না।
  • মাইগগ্রেন ও ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকা কেউ।
  • ডায়া বেটিস, হাই ব্লাড প্রেশার, হার্টজনিত জটিলতা আছে। 
  • অতীতে ব্রেস্টক্যান্সার হয়েছিল। 
  • ইতিমধ্যেই সন্তান পেটে এসেছে এমন কেউ। 
  • যাদের বাড়তিওজন আছে।
  • ত ামাক, ধুমপানের অভ্যাস আছে যাদের।

এদের জন্য পিল সেবন করা মোটেই উচিত নয়। নিয়ম না মেনে সেবন করতে থাকলে ঝুঁকিতে পড়তে হতে পারে। 

জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে পিল খাওয়ার ঝুঁকি 

নিরাপদ এক প্রচলিত পদ্ধতিএটি। ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হবে এমনভাবে তা তৈরি করে না প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। পিলের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঘটনা থাকে, কিন্তু সকলের জন্য না। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভিন্নতা রয়েছে। যে প্রতিক্রিয়াগুলো হতে পারে.:
- পিল নেওয়ার পরে মাসিকে গরমিল, রেগুলার না হওয়া, রক্তপাতে পরিবর্তন। 
- মাথারব্যথা।
- চোখেরবর্ণ পরিবর্তন (লাল) হওয়া। 
সাদাস্রা ব পরিবর্তন, যোনিশুষ্কতা।
- বমি। 

ঝুঁকিগুলো 

১. একনাগাড়ে ৫ বছরের অধিক সময়ধরে পিল সেবন করা ঝুঁকিপূর্ণ।
২. ৩৫ বছর বা এই বয়স পার হয়ে গেলে কোনো মহিলার উচিত হবে না পিল নেওয়া।
৩. কাদের জন্য পিল বেনিফিট নিয়ে আসে না প্যারায় যাদের কথা বলা হয়েছে তাদের পিল খাওয়ার ঝুঁকি আছে। 

ঝুঁকি নিয়ে সেবন করায় যেগুলো হতে পারে

১. জরায়ুরবা ওভারিয়ান ক্যান্সার। 
৩. হাই ব্লাড প্রেশার, ডায়া বেটিস।
৪. পিত্তে পাথর।
৫. ওজনাধিক্যতা।
এগুলোই পিল খাওয়ার বড় ঝুঁকি।

পিল খাওয়ার পর নিচে উল্লেখ্য ব্যাপারগুলোর কোনোটি দেখা পাওয়া গেলে গাইনিরোগ বিশেষজ্ঞ সন্ধান করা জরুরি:
- তলপেটব্যথার তীব্রতা হলে।
- বুকব্যথা ও নিঃশ্বাস প্রশ্বাস ছোট হওয়ার সমস্যা একসাথে হলে।
- ঝাপসা দৃষ্টি, দৃষ্টিশক্তিতে পার্থক্য। 
- উরু ও পা ফুলে ব্যথা।


পিল সেবনের নিয়ম

জানলেন তো পিলের ঝুঁকি আর বেনিফিট সম্পর্কে। এখন যদি আপনি পিল শুরু করতে চান, তাহলে নিশ্চয়ই আপনাকে সেবন করার নিয়ম মেনে সেবন করতে হবে। অনেকরকম পিল পাওয়া যায়। আপনার জন্য কোনটি ভালো হয়, তা গাইনিরোগ বিশেষজ্ঞের কনসালট্যান্ট নিয়েই সেবন করবেন। পিল দুই ধরণের হয় তা উপরেইতো জানলেন। ইমারজেন্সি বা জরুরি পিল আর সাধারণ পিল। সাধারণ পিলের সেবনপদ্ধতিই একরকম, আর জরুরি পিলেরই আরেকরকম। তো, নিয়ম তো মানতেই হবে। 

আমাদের দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পাওয়া পিল হচ্ছে "সুখী বড়ি"। গ্রাম-শহরের বেশিসংখ্যক নারীই এই পিলটির সাথে পরিচিত। ফেমিকন, নোরেট, ফেমি সহ আরো কয়েকরকম পিল পাওয়া যায়। সাধারণ পিলগুলোয় ২১ কিংবা ২৮ দিনের জন্য বড়ি থাকে, যেহেতু পিরিয়ডচক্র ২৮ দিনের। আসলে বড়ি হলো ২১ দিনের জন্যই, বাকি ৭টি খয়েরী বড়ি থাকে যা আয়রন বা লৌহযুক্ত।

২১ দিনের সাধারণ পিল সেবন করা

ঋতু-স্রাব শুরুর দিন থেকে ৫ দিনের মধ্যে সাদাবড়ি দিয়ে সেবন শুরু করতে হবে। ২১ দিনে ২১ টি পিল শেষ করবেন। প্রথম দিন যেসময় পিল খেলেন, সকালে অথবা রাতে ঘুমানোর আগমুহুর্তে, চেষ্টা করতে হবে পরের পিলগুলোও সেই একইসময়ে সেবন করার। ২১ দিনের মধ্যে যদি কোনোদিনের কোনো পিল সেবন বাদ পড়ে যায়, তাহলে পরেরদিন যখনই মনে পড়বে তখনই পিলটি নিয়ে নিবেন এবং সেদিনের পিলটি বরাবরের মতো একইসময়ে নিবেন।

যদি ২১ দিনের মধ্যে দুইদিনের দুইটি পিল সেবন বাদ পড়ে যায় আর তা সেবনের ৭ - ২১ দিনের হয়, তাহলে পরেরদিন মনে পড়লেই খাবে, অথবা পরেরদিনের পিলের সাথে একসাথে দুইটি খাবে এবং যৌনসংসর্গের সময় সেক্সসঙ্গীকে কনডম ইউজ করতে হবে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভ-সঞ্চার এড়াতে।
 
শেষ ৭ দিনের কোনো পিল বাদ পড়লে, তখন পিল নেওয়ার প্রয়োজন নেই। অপেক্ষা করুন পরের মাসিক পর্যন্ত, যদি মাসিক হয় তাহলে আগের মাসের পিলেরপ্যাক ফেলে দিয়ে নতুন শুরু করেন। আরযদি মাসিকটি না হয়, এবং আপনি নিশ্চিত হোন গর্ভসঞ্চারকরণ হয়নি, তাহলেও পরের মাসের ডোজগুলো শুরু করেন। গর্ভসঞ্চারে পৌঁছালে তো পিল সেবন বন্ধ করেই দিতে হবে। 

যে পিলগুলোতে খয়েরী বড়ি থাকে, সেগুলো ২১ দিনের পিল শেষ হলে খাবে। খয়েরী পিলগুলোতে আয়রন রয়েছে, যা আপনার দেহের লৌহের / আয়রনের ঘাটতি পূরণ করবে।

এভাবেই পিল চালিয়ে যাবেন এখনই বাচ্চা নিতে না চাইলে।

ইমারজেন্সি বা জরুরি পিল সেবনপদ্ধতি সাধারণ পিলের মতো না। জরুরি পিল জরুরি কাজ করতেই লাগে। যৌনক্রিয়ার সময় স্পার্ম যোনিপথের ভিতর পড়ে গেলে তখন জরুরি পিল নিতে হয়। স্পার্ম পড়ার পর থেকে ৩ - ৫ দিনের মধ্যে জরুরি পিল নিলে ভালো কাজ হয়।


সবশেষে 

পিল সেবন করা শতভাগ নিরাপদের হলেও, জটিলতা থাকা মানুষের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার ঝুঁকি আছে। নিয়ম মেনে, সচেতনতার সাথে পিল সেবনে মনোযোগী হোন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url