এলার্জির চুলকানি নিরাময় করতে করুন এগুলো
এলার্জির কারণে হওয়া চুলকানি তে শিশু বয়সী থেকে বৃদ্ধ বয়সের যেকোনো মানুষ ভুগতে পারে। যারা এলার্জিতে ভোগে, তারা জানে এটা কতটা কষ্টকর। এর জন্য পছন্দের খাবার খেতেও অনেকে মনের সাথে লড়াই করে, আবার কেউ পছন্দের খাবারটিই বাদ দিয়ে দেন। কেউকেউ পছন্দের খাবার খাওয়ার আগে এলার্জি যাতে না হয়, তার টেবলেটের জন্য। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে টেবলেট কাজ করে না। কীভাবে এলার্জির চুলকানি নিরাময় করা যাবে সে বিষয়ই থাকছে এই বর্ণনায়।
এলার্জি ও চুলকানি
দু'টি আসলে আলাদা ঘটনা। এলার্জি হলো মূল ঘটনা, আর চুলকানি হলো এলার্জির জন্য হওয়া বাহ্যিক প্রতিক্রিয়া। শরীরের ভিতরে ও বাহিরে যত সমস্যা হোক, সবকিছুর জন্যই আমাদের দেহ সেই সমস্যার কোনো না কোনো সংকেত, প্রতিক্রিয়া দেখায়। এলার্জি হচ্ছে সেরকমই একটি প্রতিক্রিয়া। এলার্জি হলো মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার একটি ভুল অবস্থা। শরীরের জন্য ক্ষতিকর বস্তুকে প্রতিরোধ করার জন্য শরীর নিজে থেকে অ্যাকশন নিয়ে থাকে।
কিছু হঠাৎ কিছু বস্তুকে ক্ষতিকর না হওয়া স্বত্বেও প্রতিরোধ ব্যবস্থায় সেটাকে ক্ষতিকর হিসেবে ধরে, মানে ভুল করে ফেলে। এই ভুলের প্রতিক্রিয়া হিসেবেই এলার্জির সৃষ্টি। এলার্জির উপসর্গসমূহের মধ্যে চুলকানি হলো সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ যা এলার্জিতে ভোগা সবার মাঝেই দেখা দিয়ে থাকে।
এলার্জির কারণ ও প্রকার
এটি মানুষের দেহের সুরক্ষা ব্যবস্থার একটি ভুল। কিন্তু কেন এই ভুলটি করে দেহের প্রতিরোধী সিস্টেম?
এই ভুলের পেছনে কারণ হলো পরিবেশ, জীবনযাপন, বস্তু সংবেদনশীলতা। কিছু খাবার, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, অতি স্বাস্থ্য সচেতনতা, কিছু জিনিসকে শরীর ভালোভাবে না নেওয়ার কারণে এলার্জির সূত্রপাত হয়। এলার্জি কয়েক প্রকারের হয়। উদাহরণস্বরূপে খাদ্যজনিত, পোকামাকড়ের কামড়ে, পরিবেশ, জীবনযাত্রার কারণে এলার্জি।
যেসব খাবারের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ এলার্জি হয়
আমাদের দেশে এলার্জির খুবই কমন একটি কারণ হলো গরুর গোশত, গরুর দুধ। আরও যে খাবারে এলার্জির ঘটনা দেখা যায় সেগুলো হলো ইলিশ, চিংড়িমাছ, বাদাম(চিনা), বেগুন, ডিম, দুধ। তবে এগুলোর মধ্যে কিছু আছে যেগুলোতে এলার্জি থাকলে তা বয়সের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যায়। যেমন দুধ ও ডিমে বিশেষ করে বাচ্চাদের এলার্জি হয়ে থাকে তবে খুবই কমসংখ্যক। পরে বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে দুধ, ডিমের এলার্জিও সেরে যেতে থাকে। এই খাবারগুলোতে এলার্জি ভারত উপমহাদেশে অথবা এশিয়া ও আফ্রিকার কিছু দেশে দেখা যায়। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের মানুষের মাঝে বাদাম(চিনা), চিংড়িমাছ, কাঁকড়াতে এলার্জি বেশি হয়।
পরিবেশগত
অতিরিক্ত ধুলাবালি, ময়লা, ধোঁয়া, অপরিচ্ছন্ন ও দূষণযুক্ত পরিবেশে এলার্জির প্রকোপ বেশি। সূর্যের তাপ, ঠাণ্ডা কিংবা গরম আবহাওয়ার জন্যও এটি হতে পারে। গরমের তুলনায় শীতকালেই এলার্জির ঘটনা বেশি হয়। বৃষ্টিতে ভিজলেও কারো কারো এটি হয়ে থাকতে পারে।
জীবনযাপন
জীবনযাপনের একটি অংশ খাবার, খাদ্যের এলার্জির কথা একটু উপরেই বলা হলো। অধিক ওজনের জন্যও কারো মাঝে এটি দেখা দিতে পারে। এর বাইরে জীবনযাপনের যে বিষয়গুলো এলার্জি সৃষ্টি করে সেগুলো হচ্ছে- অতি স্বাস্থ্য সচেতনতা ও পরিচ্ছন্নতা, গৃহে পালিত পশু (কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি), পাখি ( হাঁস, মুরগী,কবুতর ইত্যাদি), ফুল, এন্টিবায়োটিকের সাইড ইফেক্ট।
এক প্রকারের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুজীব ও পরজীবি রয়েছে যা সবারই বিছানা, বালিশ, ঘরের যেকোনো জায়গায় বাস করে।
যারা কৃষিকাজ করে তাদের কেউকেউ কৃষিকাজের কিছু সরঞ্জামের স্পর্শেও এলার্জির শিকার হয়।
পোকামাকড়ের কামড়
মৌমাছি, ছারপোকা ও আরও কিছু পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গের কামড়ে এলার্জির মতো চুলকানি সহ অন্যান্য অনুভূতি।
এসব বস্তু স্পর্শ করা, শ্বাসের সাথে গ্রহণ ও খাওয়ার মাধ্যমে এলার্জি হয়।
এলার্জি হবার বয়স
শিশুবয়সেও এলার্জি হতে পারে। এর নির্দিষ্ট কোনো বয়সসীমা নেই। শিশুকাল, কৈশোরকাল, বৃদ্ধকাল যে কোনো সময়ই হতে পারে। এলার্জি শুরু হতে পারে উক্ত বস্তুগুলোর সংস্পর্শে আসার সাথে সাথে অথবা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। আর এলার্জির উপসর্গের স্থায়ীত্ব হতে পারে কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েকদিন পর্যন্ত।
এলার্জির উপসর্গসমূহ
এলার্জিতে মৃদু থেকে মাঝারি এমনকি তীব্র মাত্রার উপসর্গও দেখা দিতে পারে। তীব্র মাত্রার উপসর্গসমূহ বিপদজনক। মৃদু ও মাঝারি যেসব উপসর্গ হয় :
চোখে যদি এলার্জি হয় তাহলে চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হওয়া, চোখের চারপাশে ফোলা, চোখে চুলকানি, চোখ কচলানোর উপসর্গ লক্ষ্য করা যায়।
আর অন্যান্য সব কারণে এলার্জি হলে যে উপসর্গ দেখা দেয় :
এই উপসর্গসমূহ ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন ভিন্ন হয়। একজনের মধ্যে সবগুলো অথবা একাধিক উপসর্গ সচরাচর হয় না।
বিপদজনক তীব্র উপসর্গসমূহ
- জিহ্বা ফুলে যায়, ঢোক গিলতে কষ্ট
- দাঁড়াতে না পারা, দাঁড়ালে মাথা চক্কর দিয়ে পড়ে যাওয়া
- বহিঃআবরণের কোথায় নীল বর্ণের সৃষ্টি ( চাকা অথবা চুলকানির জায়গাতে)
- খুব চুলকানির ফলে ত্বকে ক্ষত হওয়া কিংবা ফোসকা
- শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়া
- বমিবমিভাব, পাতলা পায়খানা
- অচেতন হয়ে পড়া
তীব্র এই উপসর্গ দেখলে বা হলে বিলম্ব না করে হাসপাতাল / স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় আরও বিপদজনক পরিস্থিতি হতে পারে।
কীভাবে এলার্জির চুলকানি নিরাময় করা যাবে?
এলার্জি দূর করার সবচেয়ে সুফল ও সফল উপায় হলো যে জিনিসে এলার্জি হয় সে জিনিসের কাছে না যাওয়া, সেটি না খাওয়া, না ধরা। হ্যা, এটাই একমাত্র সহজ ও সফল উপায়। কারণ, এলার্জি সম্পূর্ণভাবে নিরাময় করা যায় না, তারমানে হলো কারো এলার্জি হলে তা কখনোই ভালো হবে না। প্রতিবার এলার্জির সৃষ্টিকারী বস্তুর কারণে এলার্জি হবেই। ঔষধ খেয়ে শুধু উপসর্গসমূহ নিয়ন্ত্রিত করে রাখা যায়। নিরাময়ের জন্য যা করতে হবে -
- দেহে সুরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করে এমন খাবার খেতে হবে। ভিটামিন-ডি এক্ষেত্রে খাওয়া ভালো।
- যেখানে চুলকানি হয় সেখানে চা গাছ থেকে পাওয়া তেল, আপেল সাইডার ভিনেগারের প্রলেপ লাগিয়ে কিছুক্ষণ রাখা। দু'টো একসাথে না, যেটা পাওয়া যাবে সেটাই লাগাতে পারবেন। এগুলোতে চুলকানি নিরাময়ের ও ফোলা কমানোর উপাদান রয়েছে।
- ত্বককে মসৃণ রাখতে হবে সবসময়। শুষ্ক ত্বকে এলার্জির প্রতিক্রিয়া বেশি থাকে। ময়েশ্চারাইজিং করে ত্বকের শুষ্ক অবস্থা দূর করুন। এ জন্য ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম, অ্যালোভেরা, নারকেল তেল ব্যবহার ও বেশি করে পানি পান করা যায়।
এলার্জির ঔষধ
এই সাইট থেকে কোনো পণ্য ও ঔষধের প্রচার এবং সাজেশন করা হয় না। এর কারণ হলো, প্রতিটি মানুষের ইমিউন বা সুরক্ষা ব্যবস্থার ধরণ আলাদা। কোন ঔষধটি ভুক্তভোগীর জন্য সঠিক, তা শুধু ডাক্তারই ভালো জানে। এজন্য এই সাইট কোনো নির্দিষ্ট ঔষধের নাম ও সাজেশন দেয় না। আপনার এলার্জি থাকলে ঔষধ নেওয়ার পূর্বে ডাক্তার এর পরামর্শে নিবেন।
এলার্জি থেকে দূরে থাকা
এলার্জিতে ভুগতে না চাইলে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিলে এটি থেকে দূরে থাকা যায়। এর থেকে দূরে থাকার জন্য -
যেসব বস্তু এলার্জির সৃষ্টি করে, সেসব থেকে বিরত ও দূরে থাকতে হবে।
- যে খাবারে এলার্জি, সেটা বাদ দেওয়া।
- ধুলাবালির মধ্যে গেলে নাকমুখ ঢেকে রাখা, মাস্ক পরা।
- বসতবাড়িতে পালিত পাখি, পশু ধরার আগে ও সেগুলোর বিষ্ঠা পরিষ্কার করার পূর্বে হাত, নাকমুখ কাপড়ে আবৃত করা, গ্লাভস পরা।
- বাসাবাড়ির চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখা।
- ঘরের ব্যবহার্য কাপড়-চোপড়, আসবাবপত্র মাসে একবার বা দুইবার ধোয়া।
- সাবান, শ্যাম্পুতে প্রতিক্রিয়া হলে সেই সাবান, শ্যাম্পু পাল্টে ত্বক উপযোগী পণ্য ব্যবহার করা।
শেষকথায়
এলার্জির চুলকানি নিরাময় করার জন্য ঔষধ নেওয়ার পূর্বে নিজে এখানে বলা উপায়ে চেষ্টা করে দেখুন। তীব্র মাত্রার হলে ডাক্তারকে দেখানো আর এলার্জি যাতে না হয়, তার জন্য এলার্জির সৃষ্টিকারী বস্তুগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে।