টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি করার ৪ উপায়
টেস্টোস্টেরন হরমোন, যাকে সেক্স হরমোনও বলা হয় যেটি পুরুষদের জন্য এক অতি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন। এই হরমোনের সমস্যা হলে পুরুষের পুরুষত্ব হ্রাস পেতে থাকে। খুবই ইমপোর্ট্যান্ট এই হরমোনটি যদি কোনো পুরুষের মধ্যে স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে, তাহলে সেই পুরুষের যৌনজীবন হয় সুখের। বয়স বাড়ার সাথে কমতে শুরু করে টেস্টোস্টেরন। প্রকৃত পুরুষ হতে চাইলে এই হরমোনটি যাতে বৃদ্ধি পায়, সেদিকে মনোযোগী হতে হবে।
টেস্টোস্টেরন হরমোন
পুরুষদের জন্য যত দরকারী ও গুরুত্বপূর্ণ অন্তঃ শারীরবৃত্তীয় উপাদান রয়েছে সেগুলোর মধ্যে টেস্টোস্টেরন একটি। এটাকে বলা প্রধান পুরুষ হরমোন। কারণ, একজন ছেলে শিশুকে পুরুষ হিসেবে গড়ে উঠার পেছনে টেস্টোস্টেরন মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
শুধু পুরুষ নয়, নারীদের সহ এবং প্রাণীজগতের যেসকল প্রাণীর যৌনতা আছে সকল প্রাণীতেই টেস্টোস্টেরন বিদ্যমান। পুরুষদের মধ্যে এটি বেশি ভূমিকা রাখে বলে এটাকে পুরুষদের প্রধান হরমোন বলা হয়।
টেস্টোস্টেরনের কাজ
এর কাজ মূলত শুরু হয় ছেলেদের বয়ঃসন্ধিকাল থেকে। ছেলেদের মধ্যে পুরুষালি বিভিন্ন পরিবর্তন ও পুরুষ হিসেবে তৈরি করতে এই হরমোনটি কাজ করে।
কণ্ঠস্বরকে পুরুষালি করতে, দাঁড়ি গোঁফ গজাতে, বগলে ও নাভীর নিচে লোম গজাতে, স্বপ্নদোষ ঘটাতে, বীর্য উৎপন্ন করতে, হাত-পা ও দেহের বিভিন্ন পেশিকে সবল করে তুলতে, যৌন সক্ষমতা বাড়াতে, রক্তকণিকার উৎপত্তিতে, শরীরের সর্বত্র চুল বৃদ্ধি করতে, হাড় শক্ত ও শক্তি বাড়িয়ে দিতে ও মানসিকতার গঠনে টেস্টোস্টেরন হরমোন অতীব প্রয়োজনীয়।
তাহলে দেখুন এই হরমোনটি কতটা প্রয়োজন। কিন্তু কিছু কারণে এই হরমোন কমে যেতে শুরু করে। প্রকৃতপক্ষে ৩০ বছরের পর থেকে ধীরেধীরে এর উৎপাদন ও গতি কমতে থাকে। সত্তরের পর একদমই আর টেস্টোস্টেরন কাজ করে না।
শেষ বয়সে যাওয়ার আগে যদি পুরুষত্ব ও যৌবন ধরে রাখতে চান, তাহলে টেস্টোস্টেরন সমস্যা আছে কি-না এবং কীভাবে টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি করা যায় সে ব্যাপারে মনোযোগ রাখতে হবে।
টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি করার ৪ উপায়
টেবলেট, ইনজেকশন ও চিকিৎসার মাধ্যমেও হরমোন উৎপন্ন করা যায় আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে। সব চাইতে সহজ উপায় হলো টেস্টোস্টেরন বাড়ায় এমন খাবার খাওয়া ও ব্যায়াম করা। ম্যাগনেশিয়াম, জিংক, প্রোটিন, ভিটামিন-ডি যুক্ত খাবারগুলো টেস্টোস্টেরন বাড়াতে অনেক কার্যকর।
টেস্টোস্টেরন বাড়ায় এমন ৪ উপায় -
১. টেস্টোস্টেরন বাড়ানোর খাবার
১.১ প্রোটিন :
চর্বিমুক্ত মাংস, ডিম, মাছ - এগুলো প্রোটিনের ভালো উৎস। ডিমকে বলা হয়ে থাকে একাধিক পুষ্টিতে ভরপুর এক খাবার। স্বাস্থ্যকর চর্বি, ভিটামিন-ডি, ওমেগা থ্রি ও প্রোটিন সহ আরও কিছু প্রয়োজনীয় উপাদান যুক্ত ডিম। টেস্টোস্টেরন বাড়াতে ডিমের সাদা অংশের চাইতে হলুদ অংশ অর্থাৎ কুসুম বেশি ভালো।
আর মাংসের মধ্যে চর্বি নেই বা কম চর্বি আছে এমন মাংস খাওয়া উচিত, তাতে কোনো স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে না। গরু, মহিষ, এগুলোর মাংসে অধিক চর্বি থাকে। মুরগির মাংস, ভেড়া, ছাগলের মাংস কম চর্বির। তাই এগুলো খান।
সামুদ্রিক মাছে ভিটামিন-ডি, জিংক, ওমেগা-থ্রি আছে। টেস্টোস্টেরন বাড়ানোর জন্য এগুলো খাবেন।
১.২. অ্যাভোকাডো সকল ফলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। এতে থাকে ম্যাগনেশিয়াম ও দেহের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু খনিজ উপাদান যা যেকোনো হরমোনের স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
১.৩. মধুকে প্রাকৃতিক ঔষধ বলা যায়। কারণ এর কত পুষ্টিগুণ তা সবার জানা নেই। অনেক জায়গায় দেখা যায় কারও যৌন স্বাস্থ্য উন্নত করতে মধু ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। আসলেই মধু ব্যবহারে যৌন স্বাস্থ্য ভালো হয়। যৌনাঙ্গের পেশিকে সবল করে যৌনাঙ্গ / লিঙ্গকে পুরোপুরি উত্থান হওয়াতে মধু ভূমিকা রাখে। যারা ধ্বজভঙ্গ বা লিঙ্গ পুরোপুরি শক্ত না হওয়ার সমস্যায় থাকে, তারা মধু ব্যবহার করার মাধ্যমে উপকার পায় এবং পেয়েছে বলেও বেশিরভাগের মতামত।
১.৪. সবুজ শাকসবজি বেশি বেশি খাওয়া শুধু যৌন স্বাস্থ্যের জন্যই নয়, সবরকম স্বাস্থ্যের জন্যই ভালো। পুঁইশাক, বাঁধাকপি, পালংশাক এগুলো টেস্টোস্টেরনের জন্য সহায়ক। সজিনা, ঢেঁড়স, পুঁইশাকের ডাটা বীর্য উৎপাদন বাড়াতে টেস্টোস্টেরন হরমোনকে সাহায্য করে।
১.৫. রসুন, আদা এগুলো জিংকে ভরপুর। যদি কেউ প্রতিদিন ১-২ কোয়া করে রসুন খায়, তাহলে তার যৌন স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত থাকতে হবে না। এটা গবেষণা বলে। আদার ক্ষেত্রেও এটা বলা যায়। বীর্য উৎপাদন করার কাজে টেস্টোস্টেরনকে সাহায্য করে রসুন ও আদা। সহজপ্রাপ্য দু'টি সামগ্রী, যা সবার রান্নাঘরে থাকে। দিনে ১-২ টা কোয়া খেয়ে নিন রসুনের, আর ২-৩ কুচি আদা। তা আপনার জন্যই ভালো।
১.৬. কলা, কমলা, আঙুর, জাম, এরকম টকজাতীয় ফলে থাকে একাধিক খনিজ, পুষ্টি উপাদান ও এনজাইম যা সেক্স হরমোনকে বাড়িয়ে দিয়ে সেক্স লাইফকে করবে সুখময়।
১.৭. বাদাম প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বির এক খাবার। কাঠবাদাম, চিনাবাদাম, কাজুবাদাম নিয়মিত খেলে সেক্স হরমোন বাড়বে।
২. এই উপায়টি হলো ব্যায়াম করা বিষয়ে
ভারোত্তোলন, কিকিং, লাফানো, পুশআপ, সাঁতারের মতো ভারী ব্যায়াম টেস্টোস্টেরনকে প্রভাবিত করে থাকে। ভারী ছাড়াও কিছু সহজ ব্যায়াম ও নিয়মিত করতে থাকলে তা শুধু হরমোন নয়, শারীরিক মানসিক বিভিন্ন জটিলতা কাটাতেও উপকার করে।
৩. সঠিক ও উপযোগী ঘুম
বয়স আপনার যতই হোক, ঘুম যদি ভালোভাবে না হয় তাহলে সেটি হবে এক বিরাট ক্ষতি। সেসব ক্ষতিগুলোর মধ্যে হরমোনের ক্ষতিও আছে। তাই ৭ ঘণ্টার অধিক ঘুমানো প্রয়োজন।
৪ নম্বর উপায় হবে কিছু করণীয় ও বর্জনীয় নিয়ে
করণীয়
- যদি টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধি করে এমন খাদ্য পাওয়া সম্ভব না হয় সবসময়, তাহলে সেসব খাদ্যের উপাদানগুলোর সাপ্লিমেন্ট বা পরিপূরক খেয়ে চাহিদা পূরণ করতে পারা যায়। জিংক, ভিটামিন-ডি এসব উপাদানের পরিপূরক বাজারে পাওয়া যায়।
- রাসায়নিক দ্রব্য সতর্কতার সাথে সেবন ও গ্রহণ করা একটি করণীয়। কারণ, কিছু রাসায়নিক আছে যেগুলো এস্ট্রোজেন হরমোন বাড়িয়ে দিয়ে টেস্টোস্টেরনের উৎপাদনকে ব্যাহত করে।
বর্জনীয়
- অ্যালকোহল গ্রহণের আধা ঘণ্টা পর থেকেই টেস্টোস্টেরন লেভেল কমতে শুরু করে। আরও জানা গিয়েছে যে, নিয়মিত ৫ দিন বিয়ার এর মতো অ্যালকোহল পণ্য গ্রহণ করলে সেক্স হরমোন লেভেল কমে যায়। তাই এসব বর্জন করতে হবে।
- অতিরিক্ত চিনি ও মিষ্টিযুক্ত খাবারে সীমিত হওয়া উচিত।
- খাবার খাওয়া ও সংরক্ষণ করে রাখার জন্য প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ব্যবহার না করে কাচের জিনিসপত্র ব্যবহার করলে ভালো হয়। কেননা, প্লাস্টিকের জিনিসপত্রে এমনকিছু রাসায়নিক থাকে যা হরমোনের স্বাভাবিকতায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। প্লাস্টিকের থালাবাসন, পাত্র, বয়াম, ইত্যাদি ব্যবহারে সাবধান হতে হবে। যদি সম্ভব হয় তাহলে প্লাস্টিক ব্যবহার বর্জন করে দিন।
যৌন জীবন প্রতিটি মানুষের জন্য পরম ও চরম উপভোগ্য একটি বিষয়। নিজের ভুলে যৌন জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে না চাইলে টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি যাতে ব্যাহত না হয় সেদিক নজর রাখা প্রয়োজন।