ভিটামিন-সি এর অভাবজনিত রোগ ও কোন খাবারে ভিটামিন-সি পাওয়া যায়
সবচেয়ে নিরাপদ খাবারের তালিকা করলে ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার সবার উপরে থাকবে। পানিতে দ্রবণীয় এক ধরণের জৈব অ্যাসিড হলো ভিটামিন-সি যা শরীরের কোনো ক্ষতি করে না বরং তা শরীরের জন্য আরও ভালো। এই ভিটামিনটির ব্যাপারে অনেকেই অবগত নয়। ভিটামিন-সি এর অভাবজনিত রোগ ও কোন খাবারে ভিটামিন-সি পাওয়া যায় এ বিষয়ে সঠিক ধারণা দিতেই এই লেখাটি লিখছি।
ভিটামিন-সি
এই ভিটামিন একধরণের অ্যাসিড, যার কোনো ক্ষতিকর প্রভাব নেই বললেই চলে। রাসায়নিকভাবে এই ভিটামিনের নাম "এসকরবিক অ্যাসিড"। সবচেয়ে নিরাপদ ও স্বাস্থ্য উপযোগী উপাদান ভিটামিন-সি। আমাদের দেহে এই ভিটামিন অত্যন্ত বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। দেহের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি, রোগ থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা, প্রতিরক্ষা সুরক্ষিত করার মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে এটি।
ভিটামিন-সি এর অবদান
যতরকমের এন্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়, সেগুলোর মধ্যে ভিটামিন-সি একটি। কারও সর্দি কাশি হলে লেবু, আপেল, কমলা ইত্যাদি ফলগুলো বা এসব ফলের জুস খেলে সর্দিজনিত সমস্যা থেকে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে ভিটামিন-সি কাজ করে। বয়স বেশি না হতেই চেহারায় বয়স্ক হওয়ার ছাপ দেখা যাওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি মিলে নিয়মিত এই ভিটামিন খেলে।
পাকস্থলীতে এই অ্যাসিড খাদ্য পরিপাক ও হজমে সাহায্য করে এবং পরিপাকক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে। রক্তের চলাচল বাড়াতে এসকরবিক অ্যাসিড অনেক কাজের।
দেহের কোথাও কেটে গেলে বা কোনো আঘাত পেলে রক্ত পড়া বন্ধ করে দ্রুত রক্ত জমাট বাঁধাতেও এর অবদান। ঠোঁটের কোণায় ঘা সারাতে, দাঁতের নড়বড়ে অবস্থা কাটাতে, রক্তাল্পতা প্রতিরোধে ভিটামিন-সি খুব কার্যকরী।
সর্বোপরি শরীরের সমস্ত রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আরও সবল ও শক্তিশালী করতে ভিটামিন-সি সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে। স্ট্রোক, হার্টজনিত সমস্যা, ক্যান্সার, আর্থ্রাইটিসের মতো মারাত্মক রোগগুললোর প্রতিরোধ ও স্বাস্থ্যের সার্বিক উন্নয়নেও এটি সহায়তা করে।
সি ভিটামিনের ঘাটতি হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দূর্বল হয়ে পড়তে থাকে।
ভিটামিন-সি এর অভাবজনিত রোগ
এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ভালো রাখে বিধায় এটির অভাব হলে সেটার ক্ষতিকর প্রভাব শরীরে পড়বেই অবশ্যম্ভাবী। প্রতিরক্ষা ভালো না হলে সহজেই বিভিন্ন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া আক্রমন করতে পারে ও রোগের সৃষ্টি করে। ভিটামিন-সি এর অভাব হলে যে সমস্যা ও রোগগুলির আক্রমণ বেশি করে -
- ঠোঁটের কোণায় ঘা হয়, যা স্কার্ভি রোগ নামে পরিচিত। এর সাথে অস্বস্তি, ঝিমানো, দূর্বলতা হয়।
- দাঁতের গঠন নড়বড়ে হয়ে যায়।
- মাড়ি ফোলা, মাড়ি থেকে রক্ত বের হওয়া।
- হাড় শক্তিশালী না থাকা।
- স্কিনে দাগ ও ফুসকুড়ির দেখা দেয়।
- ত্বকে বয়সের চিহ্ন স্পষ্ট হতে থাকে।
- দেহের বাইরের অংশে শুষ্কতা। যেমন- ত্বকে, চুলে।
- কোথাও কেটে গেলে বা ক্ষত হলে তা সহজে সারতে চায় না, রক্ত জমাট বাঁধে না।
- রক্তাল্পতা বা দেহে রক্তের ঘাটতি।
- মনমেজাজ ভালো না থাকা।
- শক্তি কমে যাওয়া।
- রোগ প্রতিরোধ করার স্বাভাবিক ক্ষমতা কমতে থাকে ফলে সহজেই যেকোনো রোগে আক্রমণ করতে পারে।
- এর অভাবে আকষ্মিকভাবে ওজন হ্রাস পাওয়ার ঘটনাও ঘটতে পারে।
- অবস্থা বেশি খারাপ হলে জন্ডিস, স্ট্রোকের সম্ভাবণাও থাকে।
কোন খাবারে ভিটামিন-সি পাওয়া যায়?
ভিটামিন-সি মূলত শাকসবজিতে ও ফলমূলে বেশি পাওয়া যায়। যেসব উৎস থেকে ভিটামিন-সি পাওয়া যায় :
যেসকল ফলমূলের মধ্যে ভিটামিন-সি :
- আম,
- আপেল,
- অ্যাভোকাডো,
- আমড়া,
- আমলকী,
- আনারস
- আতাফল
- লেবু,
- জাম্বুরা,
- পেয়ারা,
- পেঁপে,
- কমলা
- জলপাই,
- বরই,
- জাম,
- লিচু
- তরমুজ
- স্ট্রবেরি
যেসকল শাকসবজিতে পাওয়া যায় :
- পুঁইশাক
- মুলা শাক
- ডাঁটাশাক
- কচু শাক
- সরিষার শাক
- লাউ শাক
- লাল শাক
- কুমড়াশাক
- পালংশাক
- কাঁচা মরিচ
- বাঁধাকপি
- ফুলকপি
- আলু (মিষ্টি)
- কুমড়া
- টমেটো
- পুঁইশাকের ডাটা
- ব্রকোলি
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ভিটামিন সেবনেও সীমিত থাকা উচিত। কোনো কিছুই অতিরিক্ত হওয়া ভালো নয়। ভিটামিন-সি এর বেলায়ও তাই। প্রতিদিন ২০০০ মিলিগ্রামকে স্বাভাবিক মাত্রায় ভিটামিন-সি গ্রহণ করা হিসেবে ধরা হয়। এর বেশি পরিমাণ গ্রহণ করলে ডায়রিয়া, পাতলা পায়খানা, বমিভাব, মাথার ব্যথা হওয়া, অ্যাসিডিটিও হতে পারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া স্বরূপ।
তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সবার ক্ষেত্রে হয় না। খুবই কম মানুষেরই হয় এই ভিটামিন অতিরিক্ত গ্রহণ করার কারণে। এছাড়া ভিটামিন-সি সবার জন্যই উপকারী।
ইতিকথা
সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিনে খাদ্যের তালিকায় ভিটামিন-সি রাখুন। ভিটামিন-সি এর অভাবজনিত রোগ দূর করতে কোন খাবারে ভিটামিন-সি পাওয়া যায় তা জেনে নিজে এবং পরিবারের সদস্যরা গ্রহণ করা সমীচীন হবে।