রসুন খেলে যে উপকার ও ক্ষতি হয়
রসুন সাধারণত বেশি ব্যবহার করা হয় খাবারের স্বাদ বাড়াতে। রসুন যে একটি খুবই কার্যকারিতা সম্পন্ন মেডিসিন, তা কি জানেন? রসুন খেলে যে উপকারগুলো হয় তা জানলে প্রতিদিনের খাবারের পাশাপাশি রসুন আপনি রাখতে চাইবেনই। এবং রাখা উচিতও। কিন্তু রসুন খেলে কি উপকার বেশি না ক্ষতি?
রসুন এর গুণাগুণ
আদিকাল হতেই জ্ঞানী ব্যক্তিগণ বলে আসছেন যে, " নিজের খাবারকে ঔষধ হিসেবে খাও, ঔষধকে খাবার বানিও না।" যেসকল খাবারের ঔষধি গুণাগুণ আছে সেগুলো খাওয়া এবং সীমিত পরিমাণে খাওয়াকে বুঝানো হয় এই উক্তির দ্বারা।
রসুন তেমনই একটি খাবার, যার মধ্যে রয়েছে নানা গুণাগুণ। এতে রয়েছে অ্যালিসিন, এন্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স, সেলেনিয়ামের মতো অতি কার্যকরী ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
রসুন খেলে যে উপকার গুলো হয়
একাধিক গুণাগুণে ভরপুর রসুনের উপকারিতার তালিকায় অনেক রোগের নাম। সেসব ছোট-বড় রোগ থেকে এমনকি আয়ু বাড়াতেও রসুনের কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে।
রসুনের উপকারগুলো :
খাবারের স্বাদ
এটা তো সবাই জানে যে তরকারি, ভর্তা, ভাজিতে রসুন ছাড়া স্বাদ পাওয়া সম্ভব না। রসুনবাটা অথবা রসুনকুচি করে খাবারে দিলে খাবারের ঘ্রাণ, স্বাদ বৃদ্ধি পায় এবং তৃপ্তি নিয়ে খাওয়া যায়। রসুনের এই উপকারের কথা সবাই স্বীকার করবে।
কিন্তু এটার চেয়ে আরও যে উপকার আছে সেগুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্বের। দেখুন সেগুলো কী কী।
সর্দি-কাশির দূরীকরণে
এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, সাধারণ সর্দিকাশি ও জ্বরে রসুন খেলে এসব শারীরিক অসুস্থতা থেকে দ্রুত আরোগ্য হওয়ার হার ৭০ পারসেন্টের কাছাকাছি। আপনি যদি এসব অসুস্থতায় থাকেন, তাহলে নিশ্চিন্তে কয়েক কোয়ার মতো রসুন খেয়ে নিন। দেখবেন দ্রুতই আরাম পাচ্ছেন।
হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়াতে
অল্পতেই হয়রান হয়ে পড়া, বুকে ব্যথা, ও হৃদপিণ্ড জনিত কোনো সমস্যা থাকলে প্রতিদিন দুই থেকে তিন কোয়া খান। এতে হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়বে ও এরকম সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে
উচ্চ রক্তচাপ একটি মরণঘাতী রোগ। কারণ এটি হৃদরোগ, স্ট্রোকের মতো মারাত্মক রোগের কারণ। এসব রোগ প্রতিরোধ করতে হলে আগে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এটি নিয়ন্ত্রণ করার অনেক উপায় আছে। সহজ একটি উপায় হলো প্রতিদিন কয়েক কোয়া পরিমাণ রসুন খাওয়া।
কোলেস্টেরল ভালো রাখা
হৃদরোগের মতো মরণঘাতী রোগের জন্য দায়ী আরেকটি কারণ হলো কোলেস্টেরল। শরীরে ভালো কোলেস্টেরল ও খারাপ কোলেস্টেরল থাকে। কোনোভাবে ভালো কোলেস্টেরলে ঘাটতি হলে খারাপ কোলেস্টেরল বেড়ে গিয়ে শরীরে নানান জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। রসুন কোলেস্টেরলের সেই বেড়ে যাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার কাজ করে।
কোলেস্টেরল যেন না বাড়ে, অন্যান্য স্বাস্থ্য জটিলতা যেন না হয়, তারজন্য নিয়ম করে রসুন খাওয়ার অভ্যাস করুন।
ব্রেইনের রোগ দূর করতে
অক্সিজেন সমস্যা হলে ও ব্রেইন পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পেলে ব্রেইন সেল বা কোষগুলো দূর্বল হয়ে পড়ে। ফলে ভুলে যাওয়া, আলঝেইমার, ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
রসুন এই ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম। রসুনে থাকে এন্টি-অক্সিডেন্ট, যা দেহ ও ব্রেইনের অক্সিজেন ঘাটতি রোধ করে এবং পর্যাপ্ত অক্সিজেন সাপ্লাই করে কোষের সুস্থতা দান করে।
যৌনসক্ষমতার রক্ষায়
শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক না হলে সেটার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে সেক্স লাইফের উপর, ফলে যৌনসক্ষমতা কমে যেতে থাকে। রসুনে থাকা এন্টি-অক্সিডেন্ট ও এন্টিবায়োটিক এই সমস্যাকে দূর করবে। সেক্স পাওয়ারকে বাড়িয়ে তুলতে রসুনের উপকারিতার কথা অনেক মানুষ জানে। বিশেষজ্ঞদেরও এ বিষয়ে সমর্থন রয়েছে।
ফুসফুস সুস্থ রাখা
নিউমোনিয়া, ঠাণ্ডা, সর্দি-জ্বর, এলার্জির কারণে ফুসফুস অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। রসুন ফুসফুসকে অসুস্থতার হাত থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে সাহায্য করে। তাতে ঠাণ্ডা, নিউমোনিয়া, সর্দি-জ্বর ও এলার্জির মতো স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো সহজেই দূর করা যায়।
বয়সের ছাপ দূরীকরণ
এন্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের বিভিন্ন কোষগুলোকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কোষ সতেজ ও স্বাভাবিক থাকলে চেহারাও সতেজ থাকে। ফলে বয়স হয়ে যেতে থাকলেও চেহারায় সেই ছাপ সহজেই পড়বে না।
রক্ত বিশুদ্ধিকরণ
রসুনের বিভিন্ন উপাদান দেহ থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিয়ে রক্ত বিশুদ্ধ রাখে। বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে গেলে তা কিডনি, হৃদপিণ্ডসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সুস্থ থাকে।
কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি
অতীতকাল থেকে সুস্থ সবল থাকা ও কাজ করার ক্ষমতা বাড়াতে রসুন খাওয়ার নিয়ম চলে আসছে। বিশ্ববিখ্যাত ক্রীড়াবিদ সহ যারা ভারী পরিশ্রমে বেশিরভাগ সময় থাকেন, তারা নিজেদের শক্তি বাড়িয়ে নিতে রসুনের দ্বারস্থ হয়।
আয়ু বাড়াতে
সরাসরি আয়ু বাড়ানো নয়। রসুন যেহেতু হার্ট, কিডনি, রক্তচাপের মতো জীবন নাশকারী রোগগুলোর ঝুঁকি কমিয়ে আনতে সক্ষম, সেহেতু এই রোগগুলো না থাকলে ও নিয়ন্ত্রিত থাকলে মানুষের আয়ুকাল বেশি হয়ে থাকে।
রসুনের এসকল স্বাস্থ্য গুণাগুণ গুলো বিভিন্ন গবেষণায় পরীক্ষিত ও প্রমাণিত।
রসুন খেলে যে ক্ষতি হয়
রসুন সবার জন্যই উপকারী। কিন্তু প্রতিটি জিনিসেরই একটা সীমা থাকে। সীমা ছাড়িয়ে গেলে তখন কিছু প্রতিকূলতার সৃষ্টি হয়। রসুনের ক্ষেত্রেও তাই। অতিরিক্ত রসুন খেলে এটার বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেই প্রতিক্রিয়া মারাত্মকও হয়ে উঠতে পারে।
রক্তে বিষক্রিয়া
রসুনের "অ্যালিসিন" উপাদানটি একটি বিষাক্ত উপাদান। অতি পরিমাণে এই উপাদান খেলে সেটার বিষক্রিয়া দেখা দিবে। দেহের ভিতরে বিষক্রিয়া হলে সেটার প্রভাব পড়ে রক্তে, আর যকৃত রক্ত ছাঁকন, বণ্টন ও সরবরাহের কাজ করে। রক্তের বিষক্রিয়ায় যকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রেগন্যান্ট ও শিশুকে দুধ খাওয়ানো মেয়েদের জন্য ক্ষতি
সালফার, অ্যালিসিন ও অন্যান্য কিছু উপাদান গর্ভবতীদের পরিপাক ক্রিয়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। এই উপাদান গুলো রক্ত ও বুকের দুধের সাথে মিশে যায়। যদি এগুলো অধিক মাত্রায় দুধে মিশে, তাহলে দুধ স্বাদ পরিবর্তন করে শিশুর জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠবে।
উদরাময় জটিলতা
পেট একদম খালি থাকলে যদি তখন রসুন খাওয়া হয়, তাহলে সাময়িক মাথাঘোরানো, বমিভাব এমনকি বমি, বুক-পেট জ্বালা করা ও ব্যথা, গ্যাস্ট্রিক, ডায়রিয়া ইত্যাদি জটিলতা হতে পারে।
এলার্জি আক্রমণ
কারও এলার্জির কারণে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট থাকলে তার জন্য রসুন বিপদ ডেকে আনতে পারে।
রসুনের ক্ষতি তেমন দেখতে পাওয়া যায় না। কারণ, কেউ এটি কাঁচা অথবা কোনোভাবেই মাত্রাতিরিক্ত খায় না। তাই রসুন থেকে উপকার বেশি পাওয়া যায় এবং ক্ষতি হয় না বললেই চলে। তবুও সবার উচিত নিয়মিত রসুন খাওয়া এবং অতিরিক্ত না খাওয়া।