নাক দিয়ে রক্ত পড়ার কারণ ও দ্রুত সমাধান
নাক দিয়ে রক্ত বিভিন্ন কারণেই পড়তে পারে। নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ দের মত অনুযায়ী নাক দিয়ে রক্ত পড়ার কারণ নির্ণয় করা কঠিন। প্রায় নব্বই শতাংশ মানুষের বেলায়ই এর নির্দিষ্ট কারণ খোঁজে পাওয়া যায় না। বাকি শতাংশের মধ্যে কিছু কারণ পাওয়া যায় যেগুলিকেই রক্ত পড়ার বেশিরভাগ কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এর কারণ ও দ্রুত সমাধান কীভাবে পাওয়া যাবে সে কথাগুলোই থাকছে এখানে।
নাক দিয়ে রক্ত পড়ার মূল কারণ
শুষ্ক ও আদ্র আবহাওয়া, নাকে কোনো আঘাত লাগা, নাকে কোনো রোগসংক্রমণ, সাইনাসজনিত, নাকের ভিতরের ঝিল্লি বা মেমব্রেন ফেটে যাওয়া, মেমব্রেন শুকিয়ে যাওয়া, নেশাদ্রব্য সেবন, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে, একনাগাড়ে ঘনঘন হাঁচি, বাইরের ক্ষতিকর কোনো বস্তু নাকে ঢোকা, ক্ষতিকারক কেমিক্যাল এর সংস্পর্শে আসা ও শ্বাসের সাথে প্রবেশ করা, শ্বাসতন্ত্রের কোনো সমস্যা হলে, এলার্জির প্রতিক্রিয়ায়, ব্যথানিবারণকারী ওষুধ অনেকদিন ধরে সেবনের মতো কারণগুলোর জন্য নাক দিয়ে রক্ত পড়ার ঘটনাটি হয়।
আরও দেখা যায় এসি ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে থাকার কারণে অক্সিজেনের ভারসাম্যহীনতার কারণেও রক্ত পড়ে থাকে। আঙুল বা কোনো কিছু নাকের ভিতর ঢুকিয়ে নাক পরিষ্কার করার সময় জোরে আঘাত লেগেও এমনটা হয়।
দেশ, আবহাওয়া, বংশগতি এসব কারণেও নাক দিয়ে রক্তপাত ঘটতে দেখা যায়।
নির্দিষ্ট করে বললে শীতকাল ও এরকম শুষ্ক আবহাওয়াতে নাক দিয়ে রক্ত ঝরার হার বেশি।
মূলত এসব কারণকে নাক এর এমন হওয়ার জন্য দায়ী করা হয়। তবে ব্যক্তি ও ক্ষেত্র বিশেষে কারণ ভিন্ন হয়।
নাক দিয়ে রক্ত পড়ার বয়স
শিশু, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ যেকোনো বয়সের মানুষজনই এই অভিজ্ঞতার মধ্যে পড়ে। কিছু দেশ যেমন কোরিয়া তে ছেলেমেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালের কোনো এক সময় বা এই সময়ের শেষের দিকে নাক দিয়ে রক্ত ঝরে। এমন হওয়াকে কোরিয়ায় প্রাপ্তবয়স হওয়া হিসেবেও মনে করা হয়।
কিন্তু সব দেশেই যেকোনো বয়সের যেকেউ এটার সম্মুখীন হয় কোনো না কোনো কারণে।
নাকের রক্তপাতের ধরণ
সাধারণত দুইটি ধরণ আছে নাক দিয়ে রক্ত পড়ার।
একটি ধরণ হলো নাকের সামনের অংশ থেকে কোনো কারণে রক্তপাত হওয়া। এমন হলে নাকের দুই ছিদ্র ও ছিদ্রপথ এর কোথাও থেকে রক্ত আসে। এটা গুরুতর সমস্যা নয়। কিছু পদ্ধতি প্রয়োগ করলেই এই ধরণের রক্তপাত বন্ধ করা যায়।
অন্য ধরণটি হলো নাকের ভিতরে পেছনের অংশ থেকে রক্ত আসা। এমনটা সচরাচর দেখা যায় না। বড় কোনো আঘাতে নাকের ভিতর ও গলার কোনো বড় ক্ষতি হলে, নাক ও নাক সম্বন্ধীয় অংশের হাড় অথবা কোনো আবরণ ভেঙে গেলে এমন হয়। এটা গুরুতর। এক্ষেত্রে ঘরোয়া কোনো প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বন্ধ করা সম্ভব হয় না, তাই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
নাক দিয়ে রক্ত পড়া বন্ধ করার দ্রুত সমাধান
নাকে রক্তপাত হলে অনেকেই ভয়ে ঘাবড়ে যায়। কী করে রক্ত পড়া বন্ধ করবে সেই বোধ তখন থাকে না। ভয় না পেয়ে কিছু ঘরোয়া প্রাথমিক চিকিৎসা করলেই এটি দ্রুত সমাধান করা সম্ভব। পদ্ধতি প্রয়োগের আগে রক্ত পড়ার ধরণ ও কারণ খেয়াল করতে হবে।
যদি নাকের সামনের অংশ থেকে রক্ত আসে, তাহলে দ্রুত সমাধান পেতে নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলোর প্রয়োগ করুন :
১. সোজা হয়ে বিছানায় বা চেয়ারে বসে সামনের দিকে কিছুটা মাথা নিচু করে দুই হাত দিয়ে নাকের দু'টি ছিদ্র চেপে ধরে কয়েক মিনিট বসে থাকতে হবে। নাক দিয়ে শ্বাসকর্মের বদলে মুখ দিয়ে শ্বাসকর্ম সম্পাদন করুন। পারলে এসময় নাকের আশপাশের অংশে ঠাণ্ডা জলপট্টি অথবা বরফ ধরে রাখলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
২. রক্তচাপজনিত কারণে যদি রক্ত পড়ে, তাহলে গোল মরিচের গুঁড়ো পানিতে গুলিয়ে খেয়ে নিলে সেটা রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে। এবং নাক দিয়েও রক্ত আসা বন্ধ হবে।
৩. শীতকালে কিংবা শুষ্ক আবহাওয়ার সময় রক্ত আসলে ঠাণ্ডা পানির ভাপ নিলে নাক শুষ্কতা থেকে মুক্তি পাবে। গরম পানির মতো ঠাণ্ডা পানির ভাপ হয় না। কিন্তু গরম পানিতে যেভাবে ভাপ নেওয়া হয় নাক-মুখ দিয়ে, সেভাবেই ঠাণ্ডা পানির উপর নাক-মুখ রেখে ঠাণ্ডা শ্বাস নেওয়া।
এগুলোর সাথে সতর্কতার জন্য কিছু পদ্ধতি গ্রহণ করলে এই সমস্যা দূর করা যায়।
সতর্কতা ব্যবস্থা
১. যখন নাক দিয়ে রক্ত আসবে তখন শোয়া যাবে না। এতে রক্ত বের হতে না পেরে গলা দিয়ে বেয়ে পেটে অথবা নালিকা দিয়ে মস্তিষ্কেও রক্ত চলে যেতে পারে। তাই শোয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
২. রক্ত পড়ার সময় ও রক্ত পড়া বন্ধ হওয়ার কমপক্ষে ১ ঘণ্টা মাথা নিচু করে বুক বরাবর আনা যাবে না। এতে ফুসফুসে প্রভাব পড়বে।
৩. রক্তপাতের সময় ও বন্ধ হয়ে যাওয়ার কিছু সময় পর পর্যন্ত মাথা পেছনের দিকে নেওয়া যাবে না। অর্থাৎ উপরের দিকে মুখ তোলা যাবে না। এতেও রক্ত গলা বেয়ে পেটে গিয়ে অসুস্থতার সৃষ্টি করতে পারে।
৪. নাকের ভিতর কোনো কিছু ঢুকানো যাবে না। আঙুল দিয়ে খুঁটিয়ে নাক থেকে শ্লেষ্মা পরিষ্কার করার বদঅভ্যাস পরিত্যাগ করলে ভালো।
৫. রক্ত বন্ধ হওয়ার পর বিশ্রামে থাকা। অন্তত ২৪ ঘণ্টা বিশ্রাম নিন। ভারী কাজ, খেলাধুলা করা বাদ রাখুন একদিন পর্যন্ত।
৬. শিশুরা যখন-তখন নাকে কোনো কিছু ঢুকাতে পারে৷ সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যখন-তখন আঙুল নাকে ঢুকিয়েও দিতে পারে, তাই নখ কেটে দিতে হবে। বড় নখ, কোনো বস্তু নাকে প্রবেশ করালে শিশুদের কোমল নাক ও মেমব্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রক্তপাত হতে পারে। তাই সতর্কতার জন্য এগুলো করুন।
৭. রক্তপাত না হলেও শুষ্ক আবহাওয়াতে নাক এর ভিতরের অবস্থা স্বাভাবিক ও ভেজা-ভেজা রাখতে লবণ ও চিনি পানিতে মিশিয়ে সেই পানিতে একটু তুলো ভিজিয়ে নিয়ে দুই ছিদ্রে তুলো কয়েক মিনিট দিয়ে রাখা। এটা করলে নাক শুষ্কতার কবল থেকে রেহাই পাবে।
৮. এসপিরিনসহ অন্যান্য ব্যথা নাশক ওষুধে সীমিত থাকা উচিত।
৯. চেষ্টা করুন সবসময় শুষ্ক থাকে না এমন পরিবেশে থাকার।
পরামর্শ
নাক দিয়ে রক্ত পড়ার ধরণ পর্যবেক্ষণ করুন। ২০ মিনিট বা তারও বেশি সময় ধরে রক্ত পড়তে থাকলে এবং রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে আবার কিছুক্ষণ পরপর রক্ত পড়লে ঝুঁকি না নিয়ে নাক, কান, ও গলা বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে।
উপসংহার
নাক দিয়ে রক্ত পড়া দেখে ভয় না পেয়ে ঘরোয়াভাবেই এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করুন। রক্ত পড়া বন্ধ হবে।