যেসব কাজ ছাড়তে হবে সবার এবং ছাড়া উচিত

যেসব কাজ ছাড়তে হবে সবার


আমরা সবাই ভালো থাকতে চাই। ভালো থাকার জন্য কত চেষ্টা করি। কিন্তু নিজেরা এমনকিছু কাজ করি যেগুলো মোটেই ভালো নয়। কেননা, সেসব কাজের মধ্যে এমন কাজও আছে যা আপনার বড় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। তাই  নিজের ভালোর জন্য এই কাজ গুলো ছাড়তে হবে সবার।




ভালো ও খারাপ কাজ

যেকোনো জিনিসেরই দু'টি দিক থাকে। একটি হচ্ছে ভালো দিক, যা নিজের সবকিছুতেই ভালো প্রভাব রাখতে পারে এবং নিজেকে ভালো রাখে। অন্যটি হচ্ছে খারাপ দিক বা মন্দ দিক, যা নিজের ও নিজের আশেপাশের বস্তুর জন্য খারাপটা বয়ে আনে। এমনকি সেই খারাপ কাজের জন্য হতে পারে নিজের চরম ক্ষতিও। 

মানুষ আসলে অভ্যাসের গোলাম। নিজেদের কিছু অভ্যাস থাকে যা ভালো, আবার কিছু থাকে খারাপ। সেই অভ্যাস গুলো চালিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করতে হয়। তখন ভালো অভ্যাস চালু রাখতে করা কাজ গুলোকে ভালো কাজ, আর খারাপ অভ্যাসের জন্য করা কাজ হলো খারাপ কাজ।

সেসব খারাপ অভ্যাস, খারাপ কাজ ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ সবক্ষেত্রে হয়ে উঠতে পারে ক্ষতিকর। সেসব কাজের জন্য নিজের ব্যক্তিত্ব, মর্যাদা, সম্মান, অধিকার, মূল্যায়ন কমে যায় এবং ব্যক্তিকে করে দিতে পারে নিঃস্ব, করতে পারে বড় ধরণের ক্ষতি। 

সেরকম কিছু খারাপ বা বদঅভ্যাস সম্পর্কে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো। যদি সেগুলো আপনার মধ্যে থাকে এবং আপনি সেই কাজ গুলো করছেন বলে মনে হয়, তাহলে দ্রুত চেষ্টা করতে হবে সেই কাজ গুলো ছাড়ার।


নিজের ভালোর জন্য হলেও যেসব কাজ ছাড়া উচিত 


অতিরিক্ত ঘুমানো ও কম ঘুমানো : ঘুম সবার জন্যই অতি গুরুত্বপূর্ণ। ঘুম ঠিকমতো না হলে সুস্থ থাকা কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু ঘুম হতে হবে ঠিকঠাক। বেশিও না, কমও না। বয়সের হিসাব অনুযায়ী ঠিকঠাক ঘুমাতে হবে। অতিরিক্ত ঘুম ও কম ঘুম দুটোই ক্ষতিকারক। এর জন্য হার্টের সমস্যা, রক্ত চাপ, ডায়াবেটিসের মতো মরণঘাতী রোগ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাই ভালো কাজ হলো নিয়মিত ঠিকঠাক ঘুমানো।

মেডিসিনের ওভার ডোজ : সামান্য জ্বর বা মাথাব্যথা হলেই অনেকে মেডিসিনের খোঁজ করে। এটা ভালো কাজ নয়। কারণ স্টেরয়েড যুক্ত মেডিসিন অস্বাভাবিক মাত্রায় খেলে কিডনির ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। এসব মেডিসিন ছাড়াও আরও যত রোগের জন্য মেডিসিন রয়েছে সেগুলোর অবশ্যই নিয়মিত ডোজ নিতে হবে। কোনো ডোজ বাদ পড়লে একসাথে দুই বা ততোধিক ডোজ নেওয়া যাবে না। যেকোনো মেডিসিন নেওয়ার আগে অবশ্যই নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতন হয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। 

এক্সারসাইজ না করা : সুস্থ থাকার জন্য অবশ্যই কায়িক পরিশ্রম ও ব্যায়াম করা প্রয়োজন। ব্যায়াম শরীরের যাবতীয় ক্রিয়া সচল রাখে। হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ প্রতিরোধে ব্যায়াম ও কায়িক পরিশ্রম খুবই উপকারী। ওজন স্বাভাবিক রাখার জন্যও এটি কার্যকর। আপনার যদি সারাদিন শুয়ে-বসে কাটে, তাহলে ঘরেই হালকা কোনো ব্যায়াম করুন।

নখ কামড়ানো : অভদ্রতার কাজ এটা। কিছু মানুষের একটা মুদ্রা দোষ আছে তারা দাঁত দিয়ে নখ কাটে, নখ কামড়ায়। এতে নখের জীবাণু মুখে প্রবেশ করে শরীরেও ছড়িয়ে যায়। দাঁতের ও নখের চামড়ার ক্ষয় হয়। জনসম্মুখে এই কাজটি করা অভদ্রতার শামিল। কেউ মানসিক চাপের কারণেও এই বাজে অভ্যাসে জড়িত থাকতে পারে। কিন্তু এটা বাদ দিতে হবে। যদি নিজে থেকে বাদ দেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাতে হবে।

অতিরিক্ত খাওয়া ও তাড়াতাড়ি খাওয়া : অতিরিক্ত খাবারে ওজন অতিরিক্ত হয়ে যেতে থাকে। ওজন যদি অতিরিক্ত হয়ে যায়, তাহলে বাড়তি ওজনের কারণে হওয়া যত রোগব্যাধি হয় সেগুলো হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। যেমন- হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ। আবার খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে না খেয়ে তাড়াতাড়ি খাওয়াও এরকম সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কারণ,  খাবার ভালোভাবে না চিবালে তা হজমে ব্যাঘাত ঘটায়, তা থেকে অন্যান্য জটিলতার উদ্ভব হয়। এই কাজ বাদ দিতে হবে। ধীরেধীরে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। তাতে সওয়াবের কাজও হবে।

বাইরের আলো-বাতাসে সময় না কাটানো : যারা শহরে থাকে, তাদের এই সুযোগ টা কম হয়। ইটের দালান-কোঠার মাঝে প্রকৃতির মাঝে কিছুক্ষণ সময় কাটানোর সুযোগ তেমন পাওয়া যায় না। বাইরের আলো-বাতাসে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী অনেক উপাদান রয়েছে। সূর্যের আলো থেকে পাওয়া যায় ভিটামিন-ডি সহ আরও কিছু প্রয়োজনীয় উপাদান। ঘরে আবদ্ধ না হয়ে সুযোগ বের করুন কিছুক্ষণ বাইরে সময় কাটানোর। বিশেষ করে সকালের সূর্যের আলো গায়ে মাখানোর।

নেতিবাচক চিন্তা : সবসময় মনমরা, প্রয়োজন নেই তবুও অযথা কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করা, ওভার থিংকিং, নেতিবাচক খবরাখবর বেশি পড়া বা গ্রহণ করা এই কাজ গুলো ভালোভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। নিজেকে ভেতর থেকে দূর্বল করে দেয়। সুস্থ ভাবে কোনো কিছু ভাবা, পরিকল্পনা করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। তাই চেষ্টা করতে হবে অতিরিক্ত নেগেটিভ বা নেতিবাচক খবরাখবর এর মধ্যে না থাকার। সোশ্যাল মিডিয়া হোক, টিভি হোক, যেখানেই হোক, নেতিবাচক খবরাখবর কম গ্রহণ করার চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত চিন্তা বাদ দিন।

দীর্ঘসময় বসে থাকা : মেটাবলিজমকে ধীরগতির করে দেয় একটানা অনেকক্ষণ বসে থাকলে। আধুনিক যুগে মানুষের বেশিরভাগ সময় কাটে বসে থেকেই। কম্পিউটার, মোবাইল, টিভি ব্যবহারের সময় বসেই থাকে একটানা অনেকক্ষণ। এটি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। মেটাবলিক হার কমে গেলে খাবার পরিপাক, হজমে অস্বাভাবিকতা হবে এবং তা থেকে ওজন বাড়বে। ওজন বাড়লে তখন বাড়তি ওজনের জন্য হওয়া রোগব্যাধিও হুমকি দিতে থাকবে। 

একটানা বসে না থেকে মাঝেমধ্যে কয়েক মিনিট হাঁটুন। তারপর আবার বসুন।

বেশিক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা : ডিজিটাল ডিভাইস গুলোই যেন এখন মানুষের প্রকৃত সঙ্গী। মানুষের বেশিরভাগ সময়ই কাটে মোবাইল, কম্পিউটার, টিভির দিকে তাকিয়ে। এসব ডিভাইস থেকে নিঃসৃত হয় ক্ষতিকারক নীল রশ্মি বা ব্লু-লাইট। এই নীল রশ্মি চোখের ও মস্তিষ্কের জন্য খারাপ। মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা কমানোর পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষতিও হতে পারে এই নীল আলোকরশ্মি থেকে। ওজনজনিত রোগ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ঘুম না হওয়ার মতো সমস্যা গুলোর জন্য ডিজিটাল ডিভাইসের ব্লু-লাইট দায়ী।

এসব ডিভাইস বেশিক্ষণ ব্যবহার না করা ভালো। ব্যবহারের মাঝে বিরতি নিন। অন্ধকারে ডিভাইস ব্যবহার না করলেই ভালো।

মাল্টিট্যাস্কিং : একসাথে একাধিক কাজ করাকে মাল্টিট্যাস্কিং বলে। আপনি কম্পিউটারে কাজ করছেন, সাথে মোবাইলে আরেকজনের সাথে চ্যাটিং বা কলে কথা বলছেন। এমনটা করায় আপনার কাজও শেষ হতে সময় লাগছে, আবার মোবাইলে অপর পাশের মানুষের সাথেও মনোযোগী হতে পারছেন না। এমন করলে কোনো কাজই ঠিকঠাকভাবে করা যায় না। কাজ শেষ করতে দেরি হয়। এটা খারাপ একটি দিক। আপনার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। যেকোনো একটা আগে শেষ করে পরে অন্য কাজ করবেন।

ভুল মানুষের সঙ্গ : আপনাকে মূল্যায়ন করে না, আপনার কাজকে মূল্যায়ন করে না, আপনাকে ও আপনার কাজকে প্রশংসা করে না, বাঁকাভাবে দেখে এমন মানুষের সঙ্গ না থাকায় ভালো। এসব ভুল মানুষের সঙ্গে থাকলে মনের শান্তি নষ্ট হয়ে যায়, নিজের কনফিডেন্স কমে যায়। এমন মানুষের সাথে থাকুন যে বা যারা আপনাকে ও আপনার কাজকে ভালোভাবে দেখে। তাহলে আপনি নিজের কনফিডেন্স পাবেন, মনে শান্তি পাবেন।

ধুমপান করা : ধুমপানের ক্ষতি সম্পর্কে অজানা থাকার কথা না কারও। ধুমপান এমন একটি খারাপ কাজ ও খারাপ অভ্যাস যেটা যে ধুমপান করে সে এবং ধুমপানকারীর আশেপাশে যারা থাকে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে। এটি খুবই খারাপ। আপনার অধিকার আছে আপনার নিজের ক্ষতি করার। কিন্তু আপনার কোনো অধিকার নাই অন্যের ক্ষতি করার। নিজের এবং নিজের আশেপাশের মানুষের ভালোর জন্য ধুমপান ত্যাগ করতে হবে। 

অ্যালকোহল নেওয়া : অ্যালকোহল স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ। জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। এটার ক্ষতি সম্পর্কে নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই, সবাই জানেন।


অন্যান্য কিছু বদ অভ্যাস 

এসব বর্ণনা করা কাজের বাইরেও আরও কিছু বদ অভ্যাস ও কাজ করে থাকে কিছু মানুষ, সেগুলোও ছেড়ে দিতে হবে। 

  • সকালের নাস্তা না করা
  •  নিজের ইনকামের তুলনায় বেশি টাকা খরচ করা
  • তিক্ত রিলেশন, তিক্ত দাম্পত্য জীবন 
  • চা, কফি বেশি পান করা
  • চড়া ও আক্রমণাত্মক মেজাজে থাকা

এই কাজ গুলো ছাড়তে হবে।


উপসংহারে 

নিজের এবং আশেপাশের মানুষ, বস্তুর ভালোর কথা ভেবে হলেও উক্ত কাজ গুলো ছেড়ে দেওয়া প্রতিটি সচেতন, স্বশিক্ষিত ও সুশিক্ষিত বুদ্ধিমান মানুষেরই উচিত।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url