কীভাবে শর্ট-টার্ম মেমোরি কে উন্নত করা যায় ?
আপনি রুমের মধ্যে হাঁটছেন, কিন্তু ভুলে গেছেন কেন হাঁটছেন!
অথবা আপনার মা আপনাকে বাজারে পাঠিয়েছেন কয়েকটি জিনিস বাজার করে আনার জন্য। আপনি বাজারে এসে মনে করতে পারছেন না কোন জিনিস গুলো বাজার করতে বলেছেন!
এই ভুলে যাওয়া সমস্যা আপনার একার না। এর মধ্য দিয়ে আমরা অনেকেই যাচ্ছি। এটি কতটা ভয়ানক হতে পারে ভেবে দেখুন, যখন আপনি মনে করতে পারবেন না তরকারি তে লবণ দিয়েছেন কিনা!
এই সমস্যার সমাধান রয়েছে কি?
উত্তর হচ্ছে, হ্যা। আমরা আজকের লেখায় শর্ট-টার্ম মেমোরি নিয়ে কথা বলবো। কীভাবে আপনার শর্ট-টার্ম মেমোরিকে উন্নত করতে পারবেন এবং এর জন্য কী কী করতে হবে এবং কোন কাজ গুলো থেকে বিরত থাকতে হবে। তাহলে চলুন, শুরু করা যাক!
শর্ট-টার্ম মেমোরি নিয়ে কথা বলার পূর্বে জেনে নিতে হবে আমাদের মেমোরি কত প্রকার?
মেমোরি সাধারণত তিন প্রকার। যথা:
- সেন্সরি মেমোরি: এই মেমোরি উঠা নামা করে এবং আধা সেকেন্ড এর কম সময় স্থায়ী হয়।
- শর্ট-টার্ম মেমোরি: শর্ট-টার্ম মেমোরি ফিল্টার হিসেবে কাজ করে এবং সাময়িক সময় সংরক্ষণ করে।
- লং-টার্ম মেমোরি: লং-টার্ম মেমোরি হচ্ছে এমন একটি জায়গা যেখানে ব্রেইন তথ্য কে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে গণ্য করে স্থায়ী ভাবে স্থান দেয়।
তাহলে এখন জেনে নেয়া যাক কীভাবে আমাদের শর্ট-টার্ম মেমোরি কে উন্নত করা যায় যাতে আমরা খুব সহজে কোনো জিনিস মনে রাখতে পারি। হতে পারে সেটা বাজারের লিস্ট বা রান্নার প্রক্রিয়া কিংবা যেকোনো তথ্য।
দেখুন- জেনেশুনে যেভাবে ব্রেইনের ক্ষতি করছেন
দ্রুত মাথাব্যথা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে
কীভাবে শর্ট-টার্ম মেমোরি কে উন্নত করা যায় ?
শর্ট-টার্ম মেমোরি কে উন্নত করতে কিছু বিষয় করতে হবে এবং কিছু বিষয় থেকে বিরত থাকতে হবে। জেনে নেয়া যাক সেগুলো...
যে বিষয় গুলো অনুসরণ করতে হবেঃ
১. ব্রেইন কে প্রশিক্ষণ দিনঃ ব্রেইন কে প্রশিক্ষণ দেয়া খুবই কার্যকরী একটি পদ্ধতি মেমোরিকে স্থায়ী করে তোলার জন্য।
ব্রেইন কে প্রশিক্ষণ দিতে যে কাজ গুলো করা উচিত
• নতুন শব্দ শিখুন।
• নতুন স্কিল চেষ্টা করুন শেখার।
• কাউকে স্কিল শেখান।
• একই কাজ কে বিভিন্ন উপায়ে করুন।
• নতুন ভাষা শিখুন।
২. জোরে বলুনঃ মনে আছে? আমরা যখন ছোট ছিলাম অনেকের মা'কে বলতে দেখতাম, জোরে পড় যাতে আমি রান্না ঘর থেকে শুনতে পারি। কোনো বিষয় জোরে বলার মাধ্যমে মেমোরিতে স্থায়ী করে তোলা যায়। কোনো কিছু মনে রাখতে চাচ্ছেন? তাহলে জোরে বলুন কয়েকবার।
৩. আপনার ব্রেইনকে সক্রিয় রাখুনঃ আপনার হাতের পেশির তাকিয়ে দেখুন। পেশি ছোট না বড়? ছোট হবার দ্বারা বুঝায় আপনি কম শক্তিশালী আর বড় হবার মানে বুঝায় আপনি বেশি শক্তিশালী। ঠিক তেমনি, যে ব্রেইন যত সক্রিয়, সে ব্রেইনের তত স্থায়িত্ব বেশি।
৪. পর্যাপ্ত ঘুমানঃ আমাদের মাঝে একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে যুবকদের ৬-৭ ঘণ্টা হচ্ছে পর্যাপ্ত ঘুম। এটি ভুল। যে পর্যন্ত একজন মানুষের ঘুম সম্পূর্ণ হয় তার ততটুকু ঘুমানো উচিত। কারো পর্যাপ্ত ঘুম ৪ ঘণ্টা হয়ে যেতে পারে আবার কারো ৮ ঘণ্টাও লাগতে পারে। তাই আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ঘুমান।
৫. বর্তমানে মনোযোগ দিনঃ প্রায়ই দেখা যায় আমরা একটি কাজ করছি আর ভাবছি অন্য বিষয়। এর ফলে আমরা পর্যাপ্ত মনোযোগ দিতে পারি না কাজে। যার ফলস্বরূপ আমাদের কোনো জিনিস স্থায়ী ভাবে মনে থাকে না।
৬. বি এম আই ঠিক রাখুনঃ আপনার উচ্চতা অনুযায়ী ওজন রাখুন। নর্থ ওয়েস্টার্ন মেডিসিনের রিসার্চ থেকে জানা যায়, একজন ব্যক্তির প্রতি এক একক বিএমআই বাড়ার ফলে তার মেমোরি ক্ষমতা এক একক করে কমতে থাকে মডিফাইড মিনি মেন্টাল স্ট্যাটাস পরীক্ষায়। তাই আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন।
৭. বিষয় গুলো ভাগ করুনঃ প্রত্যেক টি বিষয়কে তার প্রকৃতি অনুযায়ী ভাগ করে ফেলুন। তাহলে মনে রাখা সহজ হবে।
৮. যা শিখতে চাচ্ছেন তাতে মনোযোগ দিনঃ যেকোনো বিষয় শেখার আগে ব্রেইনকে মেসেজ দিন আপনি কী শিখতে চাচ্ছেন। ফলে ব্রেইনের কার্যকারিতা বেড়ে যাবে।
৯. ব্যায়ামঃ দীর্ঘমেয়াদী মেমোরি তৈরি তে ব্যায়াম অনেক কার্যকর একটি পদ্ধতি। যে ব্যায়াম গুলো আপনি করতে পারেনঃ
• মাথায় অংক সমাধান করুন।
• প্রতিদিন একটু সময় খেলাধুলা অথবা ১০-১৫ মিনিট নিয়ম করে হাঁটা।
১০. ভিটামিন D টেস্টঃ ভিটামিন D এর পরিমাণ কমে গেলে ব্রেইনের কার্যকারিতা কমে যায়। তাই টেস্ট করে দেখুন আপনার ভিটামিন সঠিক পরিমাণে রয়েছে কিনা।
১১. লিখে রাখুনঃ আপনার যে জিনিস টি মনে রাখা প্রয়োজন তা লিখে,রাখুন। গবেষণা থেকে পাওয়া যায়, টাইপিং থেকে লিখা বেশি কার্যকরী মনে রাখার জন্য।
১২. খাদ্যঃ যে খাবার গুলো আপনার মেমোরিকে বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে: আদা, পানি, পাতা যুক্ত সবজি, বাদাম, ওলিভ ওয়েল, মাছের তেল, মাংস।
কোন জিনিস গুলো থেকে বিরত থাকতে হবে ?
আমরা জেনে নিলাম যে জিনিস গুলো করা উচিত আপনার মেধা বাড়ানোর জন্য। এখন চলুন জেনে নেয়া যাক যে জিনিস গুলো থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবেঃ-
১. সাদা চিনিঃ সাদা চিনি যেমন স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর তেমনি আপনার ব্রেইনের জন্যেও ক্ষতিকর। তাই এটি গ্রহণ করা যত তাড়াতাড়ি বন্ধ করবেন তত তাড়াতাড়ি আপনার শরীর ও ব্রেইনের জন্য উপকারী হবে।
২. মাল্টি টাস্ক করবেন নাঃ দেখা যাচ্ছে আপনি শুয়ে খবর শুনছেন আবার অন্য দিকে ফেসবুকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট পড়ছেন। এতে আপনার দুটো এর কোনোটাই ভালোভাবে করা হয়ে উঠবে না। মাল্টি টাস্ক করার মাধ্যমে আমরা ব্রেইনকে ফিল্টার করার সুযোগ দেই। এতে ব্রেইন বেছে নেয় কোন জিনিস গুলো সে মেমোরিতে রাখবে। তাই মাল্টি টাস্ক বন্ধ করুন।
৩. মাদক পরিহার করুনঃ মাদক দ্রব্য ব্রেইনকে ড্যামেজ করে দেয়। আপনার ব্রেইনের কার্যক্ষমতা থেকে শুরু করে মুড সুইং সমস্যা তৈরি করে এই মাদক। যা ধীরে ধীরে ডিপ্রেশনের দিকে নিয়ে পৌঁছায়।
উপরের আলোচনা থেকে জেনে নিলাম আমাদের ব্রেইনকে শর্ট-টার্ম থেকে লং-টার্ম মেমোরিতে রূপান্তর করার পদ্ধতি। এই গুলো মেনে চললে আশা করা যায় আপনার এই ভুলে যাওয়া সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাবেন।
🖤🖤🖤
Thank you.