শ্বাসকষ্ট রোধ করতে সহজ পদ্ধতি

শ্বাসকষ্ট রোধ করতে সহজ পদ্ধতি


শীত আসলেই কি শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেড়ে যায়?  দেখা যায় যে, যাদের ফুসফুস বা শ্বাসতন্ত্রের কোনো অস্বাভাবিকতা থাকে, শীতের সময় তাদের কষ্ট যেন আরও বেড়ে যায়। এর কারণও রয়েছে। শুধু শীতের সময়ই নয়, অন্যান্য দিনগুলোতেও কেন শ্বাসকষ্ট হয়, এর সাথে যুক্ত সব কারণ ও শ্বাসকষ্ট রোধ করতে সহজ পদ্ধতি কী সেসব জানবেন এখানে।


শ্বাসকষ্ট 

শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, পরিপূর্ণভাবে শ্বাসকার্য চালাতে না পারা, শ্বাস-প্রশ্বাস ছোট হওয়া এই ব্যাপারগুলোই শ্বাসকষ্ট। কারও শ্বাসকষ্ট হতে পারে হঠাৎ করেই, আবার কারও হতে পারে কারণ বশত। ফুসফুস তার স্বাভাবিক কাজে কোনো বাঁধার সম্মুখীন হলে তখন সে ঠিকমতো অক্সিজেন সাপ্লাই করতে পারে না। যার জন্য শ্বাসকষ্টের দেখা দেয়।


শ্বাসকষ্ট হওয়ার কারণ 

পরিবেশ, আবহাওয়া, জীবনপদ্ধতি,  কোনো রোগ - এসবের কারণে শ্বাসকষ্ট বা ফুসফুসের জটিলতা হয়। এখানে এর জন্য দায়ী মূল কারণগুলো দেওয়া হলো :

১. নিউমোনিয়া : এটি ফুসফুসের একটি রোগ, যার কারণে ফুসফুসে প্রদাহের ও তরল পদার্থের সৃষ্টি হয়ে সেখানে শ্বাসকার্য সম্পাদনে বাঁধা দিয়ে থাকে। 

২. এজমা : এজমা বা হাঁপানি যা-ই বলা হোক, এটি শ্বাসতন্ত্রের পথে সৃষ্টি হওয়া কোনো বাঁধা, প্রদাহের কারণে হয়। এজমার কারণে তখন শ্বাসতন্ত্রে বায়ু চলাচলে বিঘ্ন ঘটে, ফলে শ্বাসকষ্ট হয়। 

৩. দীর্ঘদিন ভুগতে থাকা ফুসফুসের সমস্যা : কারও যদি অনেকদিন যাবত ফুসফুস, শ্বাস নেওয়ার কাজে বাঁধা পড়ে এমন রোগে ভোগার ইতিহাস থাকে, তাহলে তার মধ্যে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয় । ফুসফুসের সেরকম কিছু সমস্যা হলো - অনেকদিন ধরে কাশি, শ্বাস নেওয়ার সময় শোঁ শোঁ আওয়াজ হওয়া, স্লিপ অ্যাপ্নিয়া, শ্বাসপ্রশ্বাস সংক্ষিপ্ত হওয়া। 

এই সমস্যা গুলোতে দীর্ঘদিন ভুগতে থাকলে তা একসময় স্থায়ী শ্বাসকষ্টে পরিণত হতে পারে। 

৪. হৃদ যন্ত্রের কোনো সমস্যা : হৃদপিণ্ড রক্ত পাম্প করার কাজ করে ও দেহে অক্সিজেন সাপ্লাই দেয়। যদি হৃদপিণ্ডের কোনো অসুবিধা বা সমস্যা থাকে, তাহলে অক্সিজেন সাপ্লাইয়ে ভারসাম্য থাকবে না। অক্সিজেন ঠিকঠাক না হলে ফুসফুসও ঠিক থাকতে পারবে না। তখন সেটা শ্বাসকষ্টের কারণ হয়ে যায়। 

৫. পরিবেশগত কারণ : পরিবেশে ধুলাবালির উপস্থিতি, ধোঁয়া, বায়ুর অপর্যাপ্ততা এই বিষয়গুলো পরিপূর্ণভাবে শ্বাস নিতে দেয় না।

৬. জীবনপদ্ধতি : জীবনপদ্ধতিতে এলার্জির উপস্থিতি থাকা, নাক ও গলার কোনো সমস্যা, ধুমপান করা, সবসময় স্ট্রেসের মধ্যে থাকা, অতিরিক্ত স্থুলতা ( অস্বাভাবিক ওজন), বায়ুপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে অবস্থান করা এই কারণগুলো শ্বাসকষ্টের জন্য দায়ী।

৭. করোনা ভাইরাস : ২০২০ সালে বিশ্বে আঘাত হানে ভয়ংকর এক মহামারী ভাইরাস সংক্রমণ। নাম হচ্ছে করোনা ভাইরাস। করোনা ভাইরাস এর একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হচ্ছে শ্বাসকষ্ট হওয়া।

৮. ফ্লু : ফ্লুয়ের কারণে হওয়া সর্দিতে নাক বন্ধ হয়ে শ্বাস নিতে না পারার পরিস্থিতিও হয়। এক নাক বন্ধ, আরেক নাক দিয়ে পরিপূর্ণভাবে শ্বাসক্রিয়া চালাতে না পারা, মাঝেমধ্যে দুই নাকই বন্ধ হয়ে আসা। ফ্লুয়ের জন্য হওয়া এসব সমস্যায়ও কারও শ্বাস কষ্ট হতে পারে।

৯. এলার্জির কারণে শ্বাসতন্ত্রের উপর চাপ পড়ে। কারও এলার্জি থাকলে তার মধ্যেও শ্বাসক্রিয়ার সমস্যাটি হয়ে থাকে।


শ্বাসকষ্ট হওয়ার লক্ষণ ও যখন চিকিৎসকের নিকট যেতে হবে 

শ্বাসকষ্ট হওয়ার প্রধান ও মূল লক্ষণই হচ্ছে ঠিকমতো শ্বাস নিতে না পারা, দম বন্ধ হয়ে আসা। এছাড়াও আরও কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে কারও কারও।দ সেগুলো হলো :

  • শ্বাস নিতে এতটাই কষ্ট হওয়া যে কথা বলতে পারা যায় না। 

  • শ্বাস নিতে না পারার সাথে সাথে বুকে ব্যথা হওয়া।

  • শুয়ে থাকলে আরও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া ও শ্বাস নিতে খুবই কষ্ট। 

  • জ্বর, কাশি থাকা।

  • ঠোঁট ও নখের নিচে নীল রঙ ধারণ করা।

  • অনবরত শরীর ঘামা।
  • পা বিশেষ করে পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে গোড়ালি পর্যন্ত ফুলে যাওয়া, রস আসা।

  • শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় শোঁ শোঁ আওয়াজ। 

  • দম বন্ধ হয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।

শ্বাস ঠিকমতো নিতে না পারার সাথে যদি এই লক্ষণ গুলো দেখা যায় এবং অবস্থা আরও গুরুতর হতে থাকে, তাহলে বিলম্ব না করে রোগীকে চিকিৎসকের নিকট নিয়ে যেতে হবে। 


যাদের জন্য শ্বাসকষ্ট বিপদজনক 

এলার্জি, ফুসফুস ও হৃদপিণ্ডের রোগে দীর্ঘদিন ভোগা, অত্যধিক মানসিক চাপে থাকা, ওজনের দিক দিয়ে অতিরিক্ত স্থুল মানুষদের জন্য শ্বাসকষ্ট অনেক বিপদজনক।


শ্বাসকষ্ট রোধ করতে সহজ পদ্ধতি 

জীবনপদ্ধতি পরিবর্তন করা 

ধুমপান একদমই বাদ দেওয়া, ওজন স্বাভাবিক মাত্রায় আনা, এলার্জি তৈরি করে এমন কাজ ও জিনিস থেকে দূরে থাকা, নাক ও গলার কোনো অসুবিধা থাকলে ট্রিটমেন্ট নেওয়া, সর্দি কাশি যাতে ঘনঘন না হয় সেদিকে সচেতন থাকা, স্ট্রেস মুক্ত জীবনযাপন করা, ওজন নিয়ন্ত্রিত রাখা - এসব কাজগুলো করলে শ্বাসকষ্ট অনেকটা রোধ করা সম্ভব।


পরিচ্ছন্নতা

পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ধুলাবালি, ধোঁয়া ঢাকা পরিবেশে একদমই থাকা যাবে না। বিশুদ্ধ পরিবেশে থাকবেন।


সঠিক সময়ে চিকিৎসা নেওয়া

এনেমিয়া, হৃদরোগ, ফুসফুস এর সমস্যা এই রোগগুলো প্রাথমিক অবস্থায় থাকাকালীন সময়েই সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে। কারণ এগুলো শ্বাসকষ্টের জন্য দায়ী। 


ব্যায়াম

ব্যায়াম তথা পরিশ্রমের ফলে সারা শরীর তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে নিতে পারে। শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলো স্বাভাবিক ভাবে কাজ করতে পারে। শ্বাসকষ্ট রোধ করতে হলে নিয়মিত অথবা সপ্তাহে ৩-৪ দিন ব্যায়াম করা উচিত।

শুধু শারীরিক ব্যায়াম নয়, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামও করার চেষ্টা করুন। 

শ্বাস-প্রশ্বাস এর ব্যায়াম কীভাবে করতে হয় সে সম্পর্কে আমাদের সাইটের " এজমা " বিষয়ক পোস্টে বলা হয়েছে। 


শ্বাসকষ্টের সময় 

যাদের শ্বাসকষ্ট আছে, তারা যখন শ্বাসকষ্ট শুরু হবে তখন শান্ত ও চুপচাপ থাকার জন্য চেষ্টা করবেন। আশেপাশের মানুষেরও এটা করতে হবে। পরিবেশ শান্ত রাখতে হবে। 

শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে শুয়ে পড়বেন না। সোজা বসে অথবা দাঁড়িয়ে থাকবেন। এতে শ্বাসক্রিয়া স্বাভাবিক হতে থাকবে। শুয়ে থাকলে কষ্ট আরও বাড়তে পারে।


উপসংহার 

এতক্ষণ যা আলোচনা করা হলো, তা থেকে শ্বাসকষ্টের কারণ, লক্ষণ ঠিকমতো জানা থাকলে এই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা কমিয়ে রোগীকে এর ক্ষতি থেকে দূরে রাখা যাবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url