বয়স আঠারো হওয়ার পর দায়িত্ব কর্তব্য
বয়স আঠারো হয়ে গেলে মানুষের জীবনে ব্যস্ততা ভর করে, অনেক ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হয়। এই বয়স টা নিজেকে গড়ে তোলার বয়স, সফলতার দিকে এগিয়ে চলার বয়স। আঠারো বছর বয়স হার না মানার সময়। এই বয়সে এসে ব্যস্ততা ব্যতিরেকে এমনকিছু কাজ করা সবার উচিত যাতে বাকি জীবনে সুস্থ ও ভালোভাবে বাঁচা যায়।
বলবো সেরকম কিছু কাজ, দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে যেগুলো বয়স আঠারো হওয়ার পর থেকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত চালিয়ে গেলে আপনার শরীর এবং অন্যরা আপনাকে ধন্যবাদ দিবে।
বয়স আঠারো হওয়ার পর দায়িত্ব কর্তব্য
জীবনে গড়ে তোলার বয়স এই সময়টা। এই সময়ে করা ভুলগুলো সারাজীবন ভোগাতে পারে। তাই জীবন গড়তে হবে ভেবেচিন্তে। নিজের ব্যক্তিত্ব, মানসিকতা, শরীরের সুস্থতা যেন বজায় থাকে এসব মাথায় রেখেই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে অগ্রসর হতে হবে।
কিছু দায়িত্ব কর্তব্য থাকে নিজের প্রতি, কিছু থাকে পরিবারের প্রতি, কিছু থাকে সমাজের প্রতি। সব দায়িত্ব কর্তব্য সঠিকভাবে যে পালন করতে পারে, সে-ই তো প্রকৃত মানুষ।
যেসব দায়িত্ব কর্তব্য পালন করা উচিত :
শরীর ও স্বাস্থ্য
স্বাস্থ্য হচ্ছে সব সুখের মূল। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে সম্পদ দিয়ে কী হবে? বয়ঃসন্ধিকাল পেরিয়ে এই বয়সে এসে তেমন কোনো কাজ করবেন না যার জন্য নিজের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। সবসময় স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন থাকুন। সুস্থ থাকলেই জীবন উপভোগ সম্ভব।
শুধু শারীরিকই নয়, মানসিকতা স্বাস্থ্যও ভালো রাখতে হবে।
নিজের লক্ষ্য
সবারই জীবনে কোনা না কোনো লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকে। যাকে পাবার জন্য শ্রম, ধৈর্য্য, অধ্যবসায় থাকতে হয়। কেউ কারও লক্ষ্য পূরণ করে দিবে না, দিতে পারবে না। বড়জোর সঙ্গী হতে পারে কেউ। কিন্তু নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য নিজেকেই সবকিছু করতে হয়।
পথটি আপনার একার। তাই একাই সেই পথ পাড়ি দেওয়ার সাহস রাখুন। পরিবার, আপনজন আপনাকে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু তাঁদের দিকে আশা করে থাকবেন না। নিজের পথে একা হাঁটার সাহস রেখে কাজ করে যেতে হবে।
দক্ষতা বাড়ানো
স্কুল কলেজে থাকাকালীন সময় থেকেই নিজের পছন্দের কোনো কার্যক্ষেত্রে দক্ষতা লাভ করা শুরু করলে ভালো। আগে থেকে দক্ষ হয়ে উঠতে থাকলে কর্মজীবনে গিয়ে সেটার খুব ভালো প্রভাব পড়বে।
অযথা ঘুরাঘুরি, আড্ডা, অলস জীবনযাপন না করে নতুন কিছু শেখার, কোনো দক্ষতা অর্জনের ইচ্ছা রেখে এগিয়ে যেতে হবে।
ভয় না পাওয়া
ভয় না পাওয়ার মানসিকতা রাখতে হবে। কারণ ভয় ভিতরের সাহস, স্পৃহাকে কাবু করে রাখে। এই বয়স ভয় না পাওয়ার বয়স। কোনো কিছুকে ভয় না পেয়ে উপলব্ধি করার চেষ্টা করতে হবে।
ভয় পাওয়ায় নিজের শক্তি ব্যয় না করে নতুন কিছু শেখার, নতুন কিছু সৃষ্টি করার, নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখার জন্য শক্তি ব্যয় করতে হবে।
আশা রাখতে হবে শূন্যের কোঠায়
কারও প্রতি কোনো আশা করা যাবে না। আশা করে থাকলে হতাশা হবে, স্বপ্নভঙ্গ হবে। এমনকি আপনি কারও উপকার করেছেন, বিনিময়ে তার কাছ থেকে ফিরতি উপকার পাবার আশাটুকুও রাখবেন না আপনার মা-বাবার প্রতিও আশা রাখবেন না। কখন কীভাবে কেউ আশাহত করতে পারে তা অগ্রীম নিশ্চয়তা থাকে না।
সব আশা হবে নিজেকে নিয়ে। নিজে যেটা আশা করেন, নিজেই সেই আশা পূরণ করে নিন। তাহলেই সুখী থাকা যাবে।
পরিবার
আপনি কোন পরিবার থেকে এসেছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আপনি কেমন, এবং আপনি নিজে যে পরিবার গড়ে তুলেছেন সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের সদস্যদের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখুন, সুন্দর একটি পরিবার গড়ে তোলার চেষ্টা করুন।
ইচ্ছা, পরিকল্পনা গোপন থাকুক
এগুলো কারও সাথে শেয়ার করার কিংবা কোথাও প্রকাশ না করলেই সবচেয়ে ভালো। বর্তমানে যে বন্ধু, ভবিষ্যতে সে শত্রু হয়ে উঠবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
তাই আপনার সকল ইচ্ছা, পরিকল্পনা নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখুন। সে অনুযায়ী কাজ করে যান। পরিকল্পনা সার্থক হলে আপনার কাজই তা প্রমাণ দিবে।
উপভোগ করুন
আপনি সারাজীবনই তরুণ, চঞ্চল, শক্তিমান থাকবেন না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আপনার সাধ-আহ্লাদ, শক্তি কমতে থাকবে।
তাই প্রতিটি মুহুর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করুন। দুশ্চিন্তা, হতাশা নিয়ে ডুবে থাকবেন না।
আবেগ বশীভূত রাখা
মানুষের নিজের আবেগই অনেকসময় কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন। রাগ, ক্ষোভ, কান্না, হাসিখুশি, বিষন্নতা ইত্যাদি বশীভূত রাখতে হবে। আবেগ নিয়ন্ত্রিত রাখা ম্যাচুরিটির বহিঃপ্রকাশ। আবেগ যত কম প্রকাশ করা যায়, ততই ভালো।
'সমাজ কী বলবে' এই এই ভাবনা কখনোই না
সমাজ কী বলবে, সমাজের মানুষ কী বলবে, সমাজের মানুষের পরামর্শ, তাদের আদেশ ও উপদেশ নিয়ে জীবন চলবে না। সমাজের মানুষেরা নিজেরাই জানে না তারা যা করছে সেটা ঠিক না-কি ভুল। তাহলে সমাজের পরামর্শ সঠিক হবে কীভাবে?
জীবনে ভালো থাকলে চাইলে সমাজের এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। ভ্রূক্ষেপই করবেন না। আপনার ভালোমন্দ আপনিই সবার চেয়ে ভালো জানেন। তাই, সমাজ নিয়ে মাথা ঘামানো বাদ দিয়ে নিজের কাজ করে যান।
কাউকে পরিবর্তন করতে যাবেন না
যার যার জায়গায় সে থাকুক। আপনার পছন্দমতো কাউকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করবেন না। বরং, আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্যের মানুষের সাথে মানিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য নিজের মধ্যে তৈরি করতে হবে।
সঠিক মানুষদের সান্নিধ্য
আপনার কাজে, সফলতায় যারা মন খারাপ করে, হিংসা পোষণ করে, খুঁত ধরে - এমন মানুষের সঙ্গ ত্যাগ করে চলবেন। এমন মানুষেরা বিপদজনক। এদের কোনো প্রয়োজন নেই আপনার জীবনে।
আপনাকে মূল্যায়ন দেয়, আপনার কাজকে সম্মানের চোখে দেখে, আপনার সফলতায় নিঃস্বার্থভাবে খুশি হয়, সাহায্য করে - এমন মানুষেরা হচ্ছে সঠিক সঙ্গী। এমন মানুষদের সান্নিধ্যে থাকুন।
বেশি মানুষ লাগবে না। এমন একজনকে যদি পাওয়া যায়, সেই একজনকেই সান্নিধ্যে রাখুন।
ভেঙ্গে পড়বেন না
কেউ সহজে সফল হয় না। দৃঢ়তা, সাহস, শ্রম দিয়ে সফলতা অর্জন করতে হয়। সফল হওয়ার পথে বাঁধাবিঘ্ন, ব্যর্থতা আসেই সবার। তাতে ভেঙে না পড়ে আরও চেষ্টা ও ধৈর্য্য রাখতে হবে।
ব্যর্থ, ব্যথিত কাউকে স্বান্তনা, সহমর্মিতা দেখাতে গিয়ে নিজে ব্যথিত ও ভেঙে পড়বেন না। আবেগ নিয়ন্ত্রণে রেখে তাদের স্বান্তনা দিবেন।
আত্মবিশ্বাস
যত কিছুই ঘটুক, আপনার উপর বিশ্বাস রাখবেন। আপনার সামর্থ্য, শক্তিকে আরও শাণিত করে তুলবেন। নিজের কোনো ভুল কাজ, ভুল স্বভাব পরিবর্তন করতে হবে। পুরো বিশ্বাসের সাথে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানোর মানসিকতা থাকতে হবে।
পরিশেষে
বয়স আঠারো হলে সবারই উচিত এই দায়িত্ব কর্তব্য সমূহ পালন করা এবং এগুলো অনুযায়ী জীবন গঠন করা। তাহলেই সারাজীবন উপকার পাওয়া যাবে।