প্লাসেন্টা প্রিভিয়া এর লক্ষণ ও এটি কাদের হয়ে থাকে
প্লাসেন্টা প্রিভিয়া, গর্ভবতী মহিলাদের জন্য আতংকের বিষয়। এর ফলে মা ও শিশু উভয়েই ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। তবে বেশি ঝুঁকি থাকে মা'য়ের জন্য। তাহলে, চলুন জেনে নেয়া যাক প্লাসেন্টা প্রিভিয়া কী, এটি কেন হয়, কাদের বেশি হতে পারে, এর লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত যাতে করে পূর্ব প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব হয়।
প্লাসেন্টা প্রিভিয়া কী?
প্লাসেন্টা হলো গর্ভফুল, যার মাধ্যমে বাচ্চা জরায়ু এর সাথে সংযুক্ত থাকে। প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল সাধারণত জরায়ু এর ভেতরে উপরের ডান বা বাম দিকে থাকে। যদি কোনো কারণে এই গর্ভফুল জরায়ু এর নিচের দিকে চলে আসে তাহলে থাকে প্লাসেন্টা প্রিভিয়া বলে।
গর্ভফুল নালির মাধ্যমে মায়ের সাথে শিশু'র সম্পর্ক গড়ে উঠে। শিশু কে সব প্রয়োজনীয় খাদ্য পুষ্টি পেতে সাহায্য করে এই গর্ভফুল।
গর্ভফুল যদি তার সঠিক স্থানে অবস্থান না করে জরায়ু এর মুখে অবস্থান করে, তাহলে গর্ভপাতের আগে এবং গর্ভপাতের সময় প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে পারে। যা মা'য়ের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির।
প্লাসেন্টা প্রিভিয়ার প্রকারভেদ
এটি সাধারণত তিন প্রকারের হয়ে থাকে। তা নিচে দেয়া হলো:
১. টোটাল প্লাসেন্টা প্রিভিয়া: গর্ভফুল জরায়ু মুখ পুরোপুরি বন্ধ রাখলে সেটা টোটাল প্লাসেন্টা প্রিভিয়া।
২. মারজিনাল প্লাসেন্টা প্রিভিয়া: গর্ভফুল জরায়ু মুখ আংশিক ঢেকে রাখা কে মারজিনাল প্লাসেন্টা প্রিভিয়া বলে।
৩. লো লায়িং প্লাসেন্টা প্রিভিয়া: জরায়ু মুখের আশেপাশে যদি গর্ভফুল থাকে কিন্তু জরায়ু মুখ'কে না ঢাকে তবে তাকে লো লায়িং প্লাসেন্টা প্রিভিয়া বলে।
প্লাসেন্টা প্রিভিয়া সমস্যা কাদের হয়ে থাকে?
আমেরিকান জার্নাল অফ অবস্টেট্রিক্স এন্ড গাইনেকোলজি'র গবেষণার ফল থেকে পাওয়া গিয়েছে যে, প্রতি ২০০ জন গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে থেকে ১ জনের এই সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
তবে পরিসংখ্যান দেখে নির্ভয়ে থাকার কোনো কারণ নেই। এই সমস্যা আপনার হয়তো দেখা দিতে পারে। চলুন, জেনে নিই কাদের হতে পারে এই সমস্যা:-
• বয়স: ধরা হয় ২০ বছরের কম এবং ৩৫ বছরের পর বাচ্চা নিলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
• বেশি বাচ্চা নেয়া: কম সময়ে অধিক বাচ্চা নেয়া বা পূর্বে জমজ বাচ্চা প্রসব করে থাকলে প্লাসেন্টা প্রিভিয়া দেখা দেয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।
• সিজারিয়ান ডেলিভারি: পূর্বে সিজারিয়ান ডেলিভারি করার ফলে পরবর্তী বাচ্চা প্রসবে এই সমস্যা হতে পারে। পড়ুন সিজার এর ঝুঁকি
• উচ্চ এলাকায় বাসস্থান: অল্প কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করে থাকেন উচ্চ এলাকায় বাসস্থান হওয়ার কারণে প্লাসেন্টা প্রিভিয়া সমস্যা হতে পারে।
• মাদকদ্রব্য গ্রহণ করা: গর্ভাবস্থায় মাদক গ্রহণ এটি হওয়ার একটি কারণ হতে পারে।
প্লাসেন্টা প্রিভিয়ার ফলে শিশু কোনো ঝুঁকিতে থাকে কি?
উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ। এই রোগের ফলে শিশু'র মধ্যে বেশ কয়েকটি সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিচে আলোচনা করা হলো:-
১. শিশু'র ওজনঃ গর্ভফুলের অবস্থান সঠিক না হওয়ার কারণে কম ওজনের শিশু হতে পারে।
২. জন্মগত ত্রুটিঃ শিশু বিকলাঙ্গ হবার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও তা খুব সীমিত সংখ্যক ঘটে।
৩. অকাল প্রসবঃ এই রোগের সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে অকালে প্রসব হওয়া। যা মা ও শিশু'র জন্য নানাবিধ ঝুঁকি নিয়ে আসে।
প্লাসেন্টা প্রিভিয়া এর লক্ষণ সমূহ
সাধারণ গর্ভধারণের ২০ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে এই সমস্যা থাকলে তা প্রকাশ পায়। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ব্যথা অনুভব হওয়া ছাড়াই যোনিপথ দিয়ে রক্তক্ষরণ হওয়া। তবে প্রথমেই এমন হওয়াকে প্লাসেন্টা প্রিভিয়া হিসেবে ধরে নেয়া উচিত নয়। কারণ যোনিপথ দিয়ে বিভিন্ন কারণে রক্তক্ষরণ হতে পারে। তাই এই লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
প্লাসেন্টা প্রিভিয়ার চিকিৎসা
যদিও এর চিকিৎসা করে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া। বিভিন্ন তথ্যসূত্র থেকে পাওয়া যায় ৩৬ সপ্তাহের কম গর্ভবতী মহিলার এই সমস্যা দেখা দিলে এবং রক্তের পরিমাণ কম হলে তারা যেন পুরোপুরি বিশ্রাম নেয় ও যৌন মিলন থেকে বিরত থাকে।
আর ৩৬ সপ্তাহের বেশি গর্ভবতী মহিলার উল্লেখযোগ্য রক্ত নির্গত হলে সিজারিয়ান ডেলিভারি এর মাধ্যমে শিশু প্রসব করা আবশ্যক।
লিখেছেন- তামিম রাহমান, সিলেট থেকে।