পলিপস এর মেডিক্যাল ও ঘরোয়া চিকিৎসা

পলিপস এর মেডিক্যাল ও ঘরোয়া চিকিৎসা


পলিপস যাকে সবাই নাকের পলিপাস হিসেবে জানে, এটা একধরণের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। নাক, কান, গলা, জরায়ুর মতো জায়গায় এই কোষের অস্বাভাবিকতার জন্য মাংস বৃদ্ধি ঘটে। ব্যথ বিহীন, নরম মাংসের দলার মতো অংশটি যে কারও যেকোনো বয়সে হতে পারে। যথেষ্ট সচেতন না হলে তা পরবর্তী তে সার্জারির মাধ্যমে অপসারণ করার প্রয়োজন হতে পারে। 


এই আলোচনার মাধ্যমে তুলে ধরা হবে কেন নাকের পলিপস হয়,  কোন বয়সীদের বেশি হয়ে থাকে এবং কীভাবে এর পরিচর্যা করতে হবে। মেডিক্যাল চিকিৎসা করে না-কি ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে এটা অপসারণ করা যায় - এসব খুঁটিনাটি জানানো হবে।


পলিপস কেন হয়? 

এখন পর্যন্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এটি হওয়ার নির্দিষ্ট কারণ শনাক্ত করতে পারেনি বিধান এটি হওয়ার সঠিক কারণও বলা সম্ভব নয়। তবে কিছু কিছু বিষয় আছে যা এই অস্বাভাবিক কোষবৃদ্ধিকে আরও তাতিয়ে দেয়। কী সেই বিষয় তা জানতে পারবেন একটু পরই।


শুরুতে আমি বলেছি পলিপস হয়ে থাকে নাকে, কানে, গলায়, জরায়ুতে। মানবদেহ অসংখ্য কোষকলার সমন্বয়ে গঠিত। দেহে প্রতিনিয়ত চলে অগণিত কোষের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া। কোষের স্বাভাবিক অবস্থা যদি ব্যাহত হয়, অর্থাৎ কোষ অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে এবং এর বৃদ্ধিও অস্বাভাবিকভাবে হতে থাকে, তখন কোষের বৃদ্ধির নির্দিষ্ট জায়গায় একপ্রকার মাংসের পিণ্ড বা দলা তৈরি হতে শুরু করে। তা আস্তে আস্তে আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে, পরে এক সময় তা সেই নির্দিষ্ট জায়গার আশেপাশে দেয়ালের মতো বাঁধা সৃষ্টি করে। 


এমন অবস্থাকেই বলা হয় "পলিপস"। এখানে শুধু নাকের পলিপস নিয়েই বলা হবে। যদিও সকল অঙ্গে হওয়া পলিপস প্রায় একই হয়ে থাকে। তবে কিছুটা পার্থক্য থাকে। অন্যান্য অঙ্গ নিয়ে এই আলোচনা নয়, শুধু নাকেরটা নিয়েই এখানে বলা হয়েছে।

নাক ব্যবহার করা হয় শ্বাস কার্য সম্পন্ন করতে, ঘ্রাণ নিতে। দূষিত পরিবেশ থেকে শ্বাস, ঘ্রাণ নেওয়ার ফলে জীবাণু নাক দিয়ে প্রবেশ করে। এলার্জির জীবাণুই মূলত পলিপস সৃষ্টি করে। 


এটি হতে পারে দুই নাকের ছিদ্রপথেই,  অথবা একটির ছিদ্রপথে। যেকোনো বয়সী মানুষই এতে ভুগতে পারে। এতে ভোগার হার নির্দিষ্ট কিছু মানুষের মধ্যে বেশি হয়ে থাকে। এর কিছু কারণ রয়েছে যেগুলোর জন্য সেসব মানুষ এতে বেশি ভুগে। 


নাকে পলিপস হওয়ার কিছু নির্দিষ্ট কারণ

ধুলাবালি, দূষিত পরিবেশ, এলার্জি থাকা, নাক ঠিকমতো পরিষ্কার না করা, দীর্ঘদিন সর্দি-কাশি,  ধোঁয়া যুক্ত পরিেবেশে বেশিক্ষণ থাকা - এই কারণগুলিই সেই অস্বাভাবিক মাংস বৃদ্ধিকে আরও তাতিয়ে দিয়ে থাকে যা পলিপস এর বিস্তার ঘটাতে থাকে।

উল্লিখিত এই কারণগুলির মধ্যে এলার্জি থাকাকেই সবচেয়ে বেশি সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ধরা হয়।


এর নির্দিষ্ট কয়েকটি লক্ষণ

নাকের অভ্যন্তরে অবস্থিত সাইনাসের কাছাকাছি স্থানে হয়ে থাকে এই সমস্যাটি। তাই সাইনাসে এর প্রভাব পড়বেই। তার জন্য সাইনোসাইটিসের দেখা দিতে পারে। 


সাধারণ কিছু লক্ষণ হচ্ছে - 


  • সবসময়ই সর্দি লেগে থাকা। টানা অনেকদিন পর্যন্ত সর্দি থাকা। 
  • নাক বেয়ে পানি পড়তে থাকা।
  • মাথাব্যথা হওয়া।
  • নাকে ব্যথা করা। দুই ছিদ্রপথেই হতে পারে ব্যথা, অথবা আক্রান্ত ছিদ্রতে।
  • ঠিকমতো শ্বাস কার্য করতে না পারা।
  • ঘুমের মধ্যে নাকডাকা। এ থেকে হতে পারে স্লিপ অ্যাপ্নিয়া। 
  • নাক দিয়ে ঘ্রাণ নেওয়ার অনুভূতি কমে যাওয়া। স্বাভাবিক প্রাণশক্তির হ্রাস। 
  • ছিদ্রপথে বোটার কিংবা দলার মতো দেখতে পাওয়া। নিজে নিজে এটা পর্যবেক্ষণ করা কঠিন,  কারও সাহায্য নিয়ে চেক করতে হয়।


পলিপস এর মেডিক্যাল ও ঘরোয়া চিকিৎসা 

প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা সম্ভব হলে বিনা অপারেশনেই এই সমস্যা দূর করা যায়। নির্দিষ্ট কারণগুলির কোনোটি যদি আক্রান্তের মধ্যে থাকে, তাহলে সেই কারণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ ও কিছু মেডিসিন দিয়েই কিছুদিনের মধ্যে এটি দূর করা সম্ভব। 


যদি পলিপসের আকার, আয়তন খুব বড় হয়ে যায় এ দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে অপারেশন করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। তাই সবার উচিত প্রাথমিক অবস্থায় থাকতেই সতর্ক হওয়া।


ঘরোয়া চিকিৎসা সমাধান হলো -

  • দূষিত পরিবেশ থেকে দূরে থাকা। বিশুদ্ধ, নির্মল পরিবেশে থাকা।
  • শীতকালে ও ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় শরীর উষ্ণ রাখা। নাক ঢেকে রাখা। 
  • যেসব উপাদান থেকে এলার্জির সূত্রপাত হয়, সেসব উপাদান বা বস্তু এড়িয়ে চলা।
  • নাক দিয়ে গরম পানির বাষ্প নেওয়া।
  • ঠাণ্ডা খাবার, ফ্রিজের অতিরিক্ত ঠাণ্ডা খাবার, কোল্ড ড্রিংকস না খাওয়া।
  • গ্রহণ করা অন্য মেডিসিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অবগত থাকা। 
  • ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী মেডিসিন নেওয়া। প্রাথমিক অবস্থায় থাকলে এলার্জি প্রতিরোধী মেডিসিন ও স্টেরয়েড যুক্ত মেডিসিন প্রেসক্রাইব করে দেয় ডাক্তাররা।


এই নিয়ম গুলো মেনে চলার মাধ্যমেই অল্প কিছুদিনের ভিতরে পলিপসের অবস্থান মিলিয়ে যেতে থাকে অর্থাৎ দূর হতে থাকে। 

কিন্তু যদি তা বেশিদিন ধরে চলতে থাকে, আকার আকৃতি বড় হয়ে যায়, তাহলে তা সহজে অপসারণ করা সম্ভব হয় না। তখন সিটি স্ক্যান, এমআরআই এর সাহায্যে সঠিক অবস্থান নির্ণয় করে অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে ডাক্তাররা। খুব জটিল ক্ষেত্রে অপারেশন করে তা অপসারণ করা হয়।

অপারেশনের পর নিয়ম অনুযায়ী থাকতে হবে। যেসব নিয়ম মানতে হবে তা ঘরোয়া চিকিৎসার অংশে বলা হয়েছে। 


উপসংহার 

অসাবধানতা, অবহেলা এই ব্যাপারগুলো বাদ দিয়ে সবার উচিত হলো নিয়মিত নিজের নাক, গলা পর্যবেক্ষণ করা। নাকে পলিপস এর কোনো লক্ষণ পর্যবেক্ষিত হলে দেরি না করে প্রাথমিক অবস্থায়ই চিকিৎসার শরণাপন্ন হতে হবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url