পায়ের পেশিতে ব্যথা হলে ঘরোয়া সমাধান

পায়ের পেশিতে ব্যথা হলে ঘরোয়া সমাধান

পায়ের পেশিতে ব্যথা হতে পারে বিভিন্ন কারণে। ব্যক্তি বিশেষে ব্যথার কারণ ভিন্ন। ব্যথার মাত্রাও ভিন্ন। কী কী কারণে ব্যথা হয় এবং কোন উপায়ে তা থেকে মুক্তি মিলবে সেসব নিয়েই বলা হয়েছে লেখাটিতে।


পায়ের পেশিতে ব্যথা হওয়ার কারণ 

কেন পায়ে ব্যথা হচ্ছে তা অনেকেই নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পান না। হুট করে কোনো এক সময় হতে পারে ব্যথা, আবার হুট করেই সেরে যায়। 


মানবদেহের  মধ্যে সবচেয়ে বেশি নড়াচড়া করা হয় পা। পা যদি থাকে ব্যথায় টনটনে, তাহলে হাঁটাচলা ও ওঠাবসার কাজে হয় অসহ্যকর অবস্থা। কখনও কখনও তো ব্যথা অসহনীয় পর্যায়ে হয়, তখন ইমার্জেন্সি পেইন কিলার এর দ্বারস্থ হয় বেশিরভাগ ভুক্তভোগী। পেইন কিলারে আবার শরীরের অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি হবার আশঙ্কা থাকে। 

তাই ব্যথা উপশম করতে ঘরোয়া কিছু টোটকা হলো নিরাপদ মাধ্যম। সেসব টোটকা সম্পর্কে পরে বলা হয়েছে । পড়া চালু রাখুন।


কিন্তু ব্যথা কেন হয়?  এর কারণ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তাই তো অনেকেরই অজানা থাকে যে আসলে কেন তার পায়ে ব্যথা হচ্ছে। ব্যথার কিছু কারণ চিকিৎসক ও এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে। সেগুলো হলো -

১. পায়ের কোথাও আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া। হতে পারে উরু, হাঁটু, গোড়ালি, হাঁটুর নিচের নলি অর্থাৎ শিন, আঙুল যেকোনো স্থানে। পায়ের হাড় ভেঙে গেলে, হাড় ফেটে গেলেও হয়।

২. পায়ের মাংসপেশিতে খিল ধরলে বা টান পড়লে। যেটা " ক্র্যাম্প" বলা হয়। খেলোয়াড়েরা এই সমস্যায় বেশি পড়ে। 

৩. অনেকক্ষণ হাঁটার উপর থাকা। নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস না থাকলে হঠাৎ একদিন কিছু দূরত্ব হাঁটলে দিনশেষে পা ব্যথায় জর্জরিত অনুভূত হয়। আবার নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস থাকলেও অনেক দূরত্ব হাঁটলে ব্যথা হতে পারে। 

৪. টানা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে। কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে কোনো কাজ করলে পা বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পায় না। ফলে তার কারণে ব্যথার উৎপত্তি হতে পারে। 

৫. দেহে পর্যাপ্ত মিনারেল (খনিজ), ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এর অভাব থাকলে।

৬. পায়ে রক্ত প্রবাহ না হলে, রক্ত প্রবাহ কমে গেলে।

৭. বয়স বাড়লে বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সে মানবদেহের অস্থি / হাড় দূর্বল হতে শুরু করে। দূর্বল হাড়ের কারণে ব্যথার সমস্যায় ভুগতে দেখা যায় বয়স্কদের।

৮. কিছু কিছু রোগ যেমন- ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, আথারোসক্লেরোসিস এর জন্য ভুক্তভোগীরা পা এর এই সমস্যায় ভুগে। 

এই উল্লিখিত কারণগুলিই মূলত পা ব্যথার সৃষ্টি করে থাকে। 


এখন সমাধান সম্পর্কে বলা যাক।


পায়ের পেশিতে ব্যথা হলে ঘরোয়া সমাধান 

খেয়াল করলে দেখবেন বেশিরভাগ ভুক্তভোগীই সন্ধ্যার পর থেকে ব্যথায় ভুগে। এর কারণ হলো দিনের কোনো ঘটনায় এর সৃষ্টি হয়ে থাকে ফলে দিনশেষে পা একটু আরাম চায়। আরাম না পেলে ভুগতে হয় পায়ের অধিকারীকে। সুতরাং, পায়েরও আরাম প্রয়োজন হয়। আরাম পেলে তাহলে পা আপনাকে ভোগাবে না।


পা'কে আরাম করার সময় দিন। একটানা পায়ের উপর চাপ দিবেন না। পায়ে ভারী কোনো আঘাত যেন না লাগে, এক্সিডেন্ট না হয় সেদিকে সতর্ক থাকবেন।  তাহলেই দেখবেন ব্যথায় ভুগতে হবে না। এই হলো ব্যথা যাতে না হয়, তার জন্য পরামর্শ। কিন্তু যদি ব্যথা হয়েই যায়, তাহলে সমাধান কী? এখন জানুন ব্যথার সময় কোন ঘরোয়া সমাধান গুলো ব্যথা লাঘব করবে।


পা'কে আরাম করতে দেওয়া  

সবচেয়ে দরকারী করণীয় এবং সমাধান হলো পা'কে আরাম করতে দেওয়া অর্থাৎ বিশ্রাম করা। একনাগাড়ে দাঁড়িয়ে না থেকে, টানা অনেকক্ষণ হাঁটার মধ্যে না থেকে একটু বিরতি নিন। কিছুক্ষণ বসে নিজেকে বিশ্রাম দিন। যদি টানা কাজের মধ্যে থাকায় ব্যথার উৎপত্তি হয়ে থাকে, তাহলে কিছুক্ষণ বিরতি নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।


পর্যাপ্ত রক্ত প্রবাহের ব্যবস্থা করা

পায়ের শিরা ধমনীতে রক্ত প্রবাহের অসামঞ্জস্যতা হলে ব্যথা করে। তাই বিশ্রাম নেওয়ার সময় পায়ে রক্ত চলাচল হওয়ার ব্যবস্থাও নিতে হবে।  এরজন্য একবার ঠাণ্ডা পানিতে কিছুক্ষণ পা ডুবিয়ে, তারপর কিছুক্ষণ গরম পানিতে পা ডুবিয়ে রাখতে পারেন। পা টিপতে অথবা কাউকে দিয়ে পা টিপানোর মাধ্যমেও রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করা যায়। 

বরফ চেপে ধরে রাখা, বরফ দিয়ে আলতো ঘষে পা মালিশ করাতেও রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক হয়।


চাপ দেওয়া

পা টিপার মাধ্যমেই চাপ দেওয়া হয়ে যায়। এছাড়া ব্যথার স্থানে কাপড়  শক্ত করে পেঁচিয়ে রাখা, চেপে রাখে এমন মোজা পায়ে দেওয়ার সাহায্যেও এই কাজটি করা যায়। 


উপরে তোলা

নিচের দিকে রাখার ফলেও রক্ত প্রবাহে অসামঞ্জস্য হতে পারে। তাই পা কিছু সময় উপরের দিকে তুলে রাখুন। চিৎ হয়ে পায়ের নিচে কয়েকটা বালিশ অথবা কোনো উঁচু বস্তু রেখে, অথবা বসে পা সামনে কোনো উঁচু বস্তুর উপর রাখুন। আর আলতো করে টিপতে থাকুন। দেখবেন আরাম পাচ্ছেন। 


পায়ের ব্যায়াম 

পায়ের জন্য কিছু ব্যায়াম আছে যেগুলো করায় রক্ত চলাচল ঠিক করা যায়।


ঘুমানো

ক্লান্তি, অতিরিক্ত চাপের ফলে শরীর কিছু বাহ্যিক প্রতিক্রিয়া দেখা, পায়ে ব্যথা সেরকমই একটি প্রতিক্রিয়া। তাই আরামদায়ক ঘুম দিন। সব ক্লান্তি, চাপ ঝরে যাবে। ব্যথাও কমে যাবে। বেশিরভাগ মানুষ ব্যথা নিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার পর ঘুম থেকে উঠে অনুভব করে আর ব্যথা নেই। অর্থাৎ ঘুম একটি সহজ ও কার্যকর সমাধান।


ব্যথানিবারণকারী ট্যাবলেট 

এসপিরিন, প্যারাসিটামল জাত ট্যাবলেট কয়েক মিনিটের মধ্যেই ব্যথা নিবারণ করতে পারে। তাৎক্ষণিক সমাধান পেতে তাই এই ধরণের ট্যাবলেট নিতে পারেন।

কিন্তু পরামর্শ থাকবে, কোনো ট্যাবলেট না নেওয়ার। কারণ, অধিকাংশ ব্যথানিবারণকারী ট্যাবলেট স্টেরয়েডের উপাদান। স্টেরয়েড দেহের ভিতরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে কিডনির জন্য। তাই ব্যথা হলেই পেইন কিলার সেবন করার মাত্রা একদমই সীমিত রাখা উচিত। 


পায়ের পেশিতে ব্যথা প্রতিকার 

কিছুদিন পরপরই যেন এমনটা না হয় তারজন্য কিছু ব্যবস্থা আগে থেকেই নিয়ে রাখলে এ থেকে প্রতিকার পাওয়া যাবে। 

প্রতিদিন ব্যায়ামের চেষ্টা করতে হবে। প্রতিদিন যদি সম্ভব না হয়, তাহলে সপ্তাহে ৩-৪ দিন। 

ওজন যাতে নিয়ন্ত্রিত থাকে, রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস যেন স্বাভাবিক থাকে সেদিকে যত্নশীল হতে হবে।

ক্যালসিয়াম জাতীয় উপাদান ডায়েট লিস্টে রাখতে হবে প্রতিদিন।


যখন চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে 

পায়ের কোনো ক্ষত, আঘাত সারতে দেরি হলে, এক পা অথবা উভয় পা'ই ফুলে গেলে ও ফোলা না কমলে, পা অনেক গরম হয়ে অনেকটা লালবর্ণ ধারণ করলে, হাঁটাচলা করতে কষ্ট হলে, পা নাড়াতে না পারলে বিলম্ব না করে চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।


শেষ কথা

এই কাজগুলো করার মাধ্যমেই পায়ের পেশির ব্যথা থেকে স্বস্তি মিলবে এবং প্রতিকার করা যাবে। আর যদি অবস্থা বেশি খারাপ হতে থাকে ও চিকিৎসার দরকার পড়ে, তাহলে অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থা এড়াতে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url