শসা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো

শসা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা



শসা নামক উদ্ভিদটি আমাদের খাবারের নিত্যদিনের তালিকায় থাকে। শসাকে আমরা অনেকেই এক ধরনের সবজি হিসেবে জেনে থাকি। কিন্তু এটি আসলে এক ধরনের ফল। শসার বেশ কয়েক জাত আছে। শসাকে কাঁচা হিসেবেও খাওয়া যায়, আবার রান্না করেও খাওয়া যায়। বেশিরভাগ মানুষ সালাদ হিসেবে খেয়ে থাকে। যেভাবেই খাওয়া হোক শসা খাওয়ার রয়েছে অনেক উপকার। শসার যে শুধু উপকারিতাই আছে তা কিন্তু একবারে ভুল। শসা খেলে যেমন উপকার হয়, তেমন এর অপব্যবহারেরও অপকারিতা আছে। 

তাহলে জেনে নিন শসা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো।


শসা কেন খাবেন?


 শসার উৎপত্তি ভারতবর্ষে হলেও এটি সব জায়গায় এখন পাওয়া যায়। বিশেষ করে গরমকালে বেশি পাওয়া যায়। নির্ভেজাল একটি ফল হলো শসা। এটি পাকা না খেয়ে কাঁচা-ই খাওয়া যায়। পাকানোর জন্য কোনো রাসায়নিক ব্যবহার করে ভেজালযুক্ত করা হয় না। খোসা ছাড়িয়ে খাওয়ার ঝামেলাও নেই। তবে ক্ষীরা বা এই ধরণের শসা খোসা ছাড়িয়ে খেতে হয়। মিষ্টি লাগে না, তেঁতো লাগে না, ঝাল লাগে না। একদম পানির মতোই স্বাদ।

শসার ৯৫ ভাগই পানি। যা জীবন বাঁচানোর কাজে পানির বিকল্প হিসেবেও খাওয়া যায়। 

শসাতে পানির পরিমাণ বেশি, ক্যালরি অনেক কম । একটি কাঁচা শসা'র খোসা সহ প্রতি ১০০ গ্রামে ক্যালরির পরিমাণ ২০ কিলো ক্যালরি। শসাতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি,ভিটামিন সি, ভিটামিন কে , ম্যাগনেসিয়াম, সিলিকা, পটাশিয়াম, ফাইবার ও মিনারেলসে ভরপুর উপাদান।

এসব উপাদান একজন মানুষের সুস্থ থাকার জন্য অনেক দরকার। কেন দরকার তা জানুন এখন।


শসা খাওয়ার যত উপকারিতা


১) ওজন নিয়ন্ত্রণ 

শসা নিয়ে লেখা আর্টিকেলে প্রথমেই ওজন নিয়ে বলা হবে না তা কী হয়? শসাতে যেহেতু ক্যালরি কম এবং পানির পরিমাণ বেশি থাকে তাই শসা ওবেসিটি ( ওজনাধিক্যতা), রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো রোগকে নিয়ন্ত্রণ করে। 

২) পানি শূন্যতায় শসা 

শরীরে যখন পানির অভাব দেখা দেয় তখন পানির বিকল্প হিসেবে শসা খুবই উপকারী খাবার । একটি শসায় প্রায় ৯৫ শতাংশ পানি থাকে, যা পানিশূন্যতার দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে ।

৩) শরীরের ভেতর-বাইরের তাপ শুষে নেয় শসা

অনেকেই আছেন যাদের শরীরের ভিতরে-বাহিরে জ্বালাপোড়া করে। এই অবস্থায় যদি একটি শসা খেয়ে নেন তাহলে শরীরের ভিতরে আর বাহিরের উত্তাপ ভাবটা কমবে। এ ছাড়াও যদি সূর্যের তাপে ত্বকের কোথাও জ্বালা অনুভব করেন তাহলে সেই স্থানে শসা কেটে ত্বকে আলতো করে ঘষে নিন। তাতে  হালকা ঠাণ্ডা অনুভব হবে আর আরাম লাগবে।

৪) কিডনির পাথর 

শসার তরল অংশ মানবদেহের দূষিত ও বর্জ্য পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। নিয়মিত শসা খেলে কিডনিতে থাকা পাথর গলে যায়। ব্লাডার, লিভার, ইউরিনারি ও প্যানক্রিয়াসের সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর শসা ।

৫) হজম শক্তি বাড়ায় 

 খালি পেটে শসা চিবিয়ে খেলে হজম ভালো হয়। শসাতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। তাছাড়াও শসা গ্যাস্ট্রাইটিস বা গ্যাস্ট্রিক বিষয়ক সমস্যা, আলসার ও অ্যাসিডিটির ক্ষেত্রেও বেশ উপকারী।

৬) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে

ইতিমধ্যেই উপরে বলেছি শসাতে আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ম্যাগনিসিয়াম, সিলিকা,পটাসিয়াম ও ফাইবার। যা শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। শসার মধ্যে থাকা উপাদান গুলো মানব শরীরের উচ্চ ও নিম্ন রক্তচাপ দুটোই নিয়ন্ত্রণ করে। এবং হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসের সমস্যার সমাধান করে ।

৭) চোখের যত্নে শসা

চোখের যত্নে শসাকে অন্যতম কার্যকরী উপাদান হিসেবে বলা হয়। শসায় থাকা তরল অংশ চোখের শুষ্কতা দূর করতে সাহায্য করে। আর শসার তরল অংশে থাকে প্রদাহ নাশক উপাদান যা চোখের ফোলা ভাব কমায় এবং চোখের ক্লান্তি ভাব দূর করে।

৮) রূপচর্চায় শসা 

রূপচর্চার ক্ষেত্রে শসার ব্যবহারের কোনো জুড়ি নেই। ত্বকের দাগ দূর করতে, ত্বককে পরিষ্কার করে তুলতে, চেহারা থেকে মলিনতা কমাতে পানিযোজিত এই ফলটি অনেক কার্যকর। 

শসা ব্যবহার করার উপকারিতা তো জেনেছেন,  তো এখন জেনে নিন 

কীভাবে শসা দিয়ে রুপচর্চা করা যায়?  


টিপস ১ : ত্বকের সবচেয়ে স্পর্শকাতর জায়গার মধ্যে একটি হচ্ছে মুখ। মুখে কোনো দাগ লাগলে সহজে উঠতে চায় না। তাই পরিস্কার মুখে কচি শসার রস লাগান ১৫ মিনিটের জন্য, তারপর নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কিছুদিন করতে হবে। তারপর ফলাফল নিজেই দেখুন।

টিপস ২ : অনেকের চোখের নিচে কালো দাগ দেখা যায়। তা ঠিক করতে একটু শসার রস, আলুর রস ও সামান্য খাঁটি মধু মিশিয়ে চোখের নিচে লাগিয়ে রাখুন। তারপর ১০-১৫ মিনিটের পরে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত করতে হবে এটা। ২/১ দিনেই তো আর ফল পাওয়া যাবে না। ধৈর্য্য নিয়ে করতে হবে। তাহলে বুঝতে পারবেন কীভাবে আস্তে আস্তে দাগ দূর হচ্ছে।

টিপস ৩ : প্রথমে একটা মাঝারি আকারের শসা নিন, শসার রস বের করে তাতে তিন টেবিল চামচ গোলাপজল মিশিয়ে নিন। তারপর  পরিস্কার স্প্রে বোতলে ভরে নিন। যা প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে কাজ করে।

অথবা, 

একটা  মাঝারি আকারের শসার রসের সঙ্গে তিন থেকে চার টেবিল চামচ টাটকা অ্যালোভেরা জেল  মেশান, এরপর পরিস্কার স্প্রে বোতলে রাখুন ।

প্রতিবার যখন মুখ পানি দিয়ে পরিষ্কার করবেন, তখন পরিস্কার কাপড় দিয়ে মুখ মুছে মুখে এই স্প্রে করে নিন, চাইলে তুলায় করেও লাগাতে পারেন ।

এই দুই ধরনের প্রাকৃতিক টোনার আপনার ত্বককে করবে সতেজ এবং চকচকে । যা বেশিক্ষণ সময়ের জন্য আপনার ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখবে।


এতক্ষণ তো শুধু জেনেছেন উপকারিতার কথা ,  এখন আসা যাক শসার অপকারিতা কী কী হতে পারে??


শসা খাওয়ার অপকারিতা 


কথায় আছে কোনো কিছু অতিরিক্ত হওয়া  ভালো না। তা সেটা কোনো কাজ হোক বা খাওয়া হোক। 

আমাদের মধ্যেই অনেকে আছেন যারা মনে করেন, ওজন কমানোর মূল ঔষধ শসা। এছাড়াও তারা মনে করেন অন্য সব খাবার অল্প খেয়ে বা না খেয়ে থেকে প্রতিদিন এক গাদা শসা খেলে বুঝি ওজন কমানো যায়। না, এটা ভুল ধারণা। এতে উপকার হওয়ার চেয়ে বরং বেশি ক্ষতি হয় স্বাস্থ্যের। 

শসার মধ্যে বিদ্যমান উপাদানগুলো ওজন কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু তাই বলে শুধু শসা খেলে ওজন কমবে? অনেকেই আছেন অন্যসব পুষ্টিকর খাবার বাদ দিয়ে শুধু শসাই খেয়ে ওজন কমাতে চান।

যেহেতু শসাতে ক্যালরি কম থাকে সেহেতু শুধু শসাই না, শসা ছাড়া অন্য কোনো কম ক্যালরির খাবার যদি কেউ একনাগাড়ে খেতে থাকে তাহলে তার ওজন কমে যাবে। কিন্তু সেই সঙ্গে শরীরে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে আর অপুষ্টির শিকার হবে ।
  
অন্য সব পুষ্টিকর খাবার বাদ দিয়ে শুধু শসা খেলে উপকার তো হয়ই না, উল্টো পেটের সমস্যা যেমন: পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, বদহজম, গ্যাসের সমস্যা ইত্যাদি দেখা দেয়।


তাই বলা যায়, যা-ই খা খাওয়া হোক না কেন পরিমাণমতো খাওয়া উচিত। যত উপকারী খাবার হোক না কেন, পরিমাণ মতো খেলেই স্বাস্থ্যের জন্য সেটা উপকারী।


উপসংহার 

প্রতিদিন শসা রাখুন খাবারে। তরকারিতে না দিয়ে কাঁচা খান, সালাদ বানিয়ে খান। আর শসা খাওয়ার উপকারিতা পান।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url